কিশোরগঞ্জের ভৈরবে সাবেক রাষ্ট্রপতি জিল্লুর রহমানের বাড়ি ‘আইভি ভবন’। তার স্ত্রী আইভি রহমান ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলায় নিহত হওয়ার পর তার স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা রেখে বাসভবনের এ নামকরণ করা হয়। একসময় এ বাড়িতে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের সরব উপস্থিতি থাকত। 

গত বছরের ৫ আগস্টের পর চিত্র পাল্টে পায়। ‘আইভি ভবন’ এখন সানফ্লাওয়ার কিন্ডারগার্টেন স্কুলে রূপ নিয়েছে। বাসার সামনে ঝুলছে স্কুলের নামফলক, চলছে শিক্ষা কার্যক্রম। বাইরে থেকে শোনা যায় শিশুদের পড়ার আওয়াজ। 

সোমবার (১৪ অক্টোবর) দুপুরে ভৈরবের এ বাড়ির বিষয়ে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, কিন্ডারগার্টেন স্কুলের মূল মালিক ভৈরবের প্রবীণ শিক্ষক অধ্যক্ষ আবদুল বাসেত বাড়িটির নিচতলা ভাড়া নিয়েছেন। তবে, দোতলা ভাড়া দেওয়া হয়নি। সাবেক রাষ্ট্রপতি জিল্লুর রহমানের চাচাত ভাই মরহুম তারা মিয়ার ছেলে নইম মোল্লা এই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের অংশীদার। তার সহায়তায় বাসভবনটি ভাড়া নেওয়া হয়েছে। 

২০২৪ সালের ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতন ঘটলে সারা দেশের মতো আইভি ভবনেও দুর্বৃত্তরা ভাঙচুর, লুটপাট ও অগ্নিসংযোগ করে। এর পর থেকে প্রায় এক বছর বাসাটি তালাবদ্ধ অবস্থায় পরিত্যক্ত হয়ে পড়ে ছিল। ভৈরবে জিল্লুর রহমানের আত্মীয়-স্বজন থাকলেও ওই বাড়িতে কেউ যেতেন না এবং সেটি সংস্কারও করা হয়নি। তবে, অনেকে পরিত্যক্ত বাড়িটি দেখতে যেতেন, ছবি তুলতেন। হঠাৎ এলাকাবাসী ও গণমাধ্যমকর্মীদের চোখে পড়ে তার বাসভবনের সামনে কিন্ডারগার্টেন স্কুলের নামফলক। 

এ বিষয়ে কিন্ডারগার্টেন স্কুলের মালিক অধ্যক্ষ আবদুল বাসেত বলেছেন, আমার স্কুলটি ১৯৮৭ সাল প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। তখন জিল্লুর রহমানের চাচাত ভাই তারা মিয়া আমার ব্যবসার অংশীদার ছিলেন। তিনি মারা যাওয়ার পর তার ছেলে নইম মোল্লা এখন অংশীদার হিসেবে আমার সঙ্গে আছেন। মূলত, নইম মোল্লাই জিল্লুর রহমানের বাসাটি ভাড়ার জন্য ব্যবস্থা করে দেন। তারপর তার সাথে শর্ত মোতাবেক নিজ অর্থায়নে ভবনের সংস্কার করে নিচতলায় স্কুল পরিচালনা করছি। বাড়ি সংস্কার ও মেরামতে যে টাকা খরচ হয়েছে, সেটি প্রতি মাসের ভাড়া থেকে কেটে রাখা হচ্ছে। 

এ বিষয়টি জানতে জিল্লুর রহমানে পরিবারের বা তার আত্মীয়-স্বজন কাউকে খোঁজ করে পাওয়া যায়নি। তার দুজন মেয়ে আছেন। তবে, তারা কোথায় থাকেন, সে বিষয়েও নিশ্চিত কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি। 

বিষয়টি নিয়ে মুঠোফোনে কথা হয় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) শবনম শারমিনের সঙ্গে। তিনি বলেন, বিভিন্ন মাধ্যমে আমি বিষয়টি জানতে পেরেছি। এখন পর্যন্ত আমাকে এ বিষয়ে কেউ লিখিতভাবে কিছু জানাননি বা অভিযোগও করেননি। যদি কেউ লিখিত অভিযোগ দেন, তাহলে অবশ্যই আইনগতভাবে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

জিল্লুর রহমানের কিশোরগঞ্জের ভৈরবপুর উত্তর পাড়ায় জন্মগ্রহণ করেন। স্বাধীনতার পর তিনি পাঁচবার কিশোরগঞ্জ-৬ (ভৈরব-কুলিয়ারচর) আসন থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন। তিনি আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতা ছিলেন। ২০০৯ সালে বাংলাদেশের ১৪তম রাষ্ট্রপতি হন তিনি। এরপর থেকে ওই আসনে তার একমাত্র ছেলে নাজমুল হাসান পাপন চার বার সংসদ সদস্য হয়েছেন। একসময় তিনি বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিবি) সভাপতি ছিলেন। 

নাজমুল হাসান পাপনের পরিবারের সবাই ঢাকার গুলশানে বসবাস করেন। ভৈরবের পৈতৃক বাড়িতে তাদের আসা-যাওয়া কম। শুধু রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডের জন্য ভৈরবের বাসায় যেতেন নাজমুল হাসান পাপন। একজন কেয়ারটেকার ‘আইভি ভবন’ দেখাশোনা করতেন। 

ঢাকা/রুমন/রফিক 

.

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ক ন ড রগ র ট ন স ক ল জ ল ল র রহম ন র র ষ ট রপত ভ রব র

এছাড়াও পড়ুন:

চট্টগ্রামে কলেজে ‘আওয়ামী লীগের দোসর’ অ্যাখ্যা দিয়ে শিক্ষককে লাঞ্ছনার অভিযোগ

চট্টগ্রাম সরকারি কলেজে এক শিক্ষককে শারীরিকভাবে লাঞ্ছনা করা হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। কলেজে পাঠদান করতে গেলে তাঁকে শিক্ষার্থীরা শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করেছে বলে অভিযোগ করেছে ৪০তম বিসিএস শিক্ষা ক্যাডার অ্যাসোসিয়েশন। আজ মঙ্গলবার এক বিজ্ঞপ্তিতে এ ঘটনার প্রতিবাদ জানিয়ে ক্যাম্পাসে শান্তিপূর্ণ একাডেমিক পরিবেশ নিশ্চিতের দাবি করেছে অ্যাসোসিয়েশন।

কলেজ সূত্রে জানা যায়, এক মাস আগে সন্দ্বীপ সরকারি কলেজ থেকে চট্টগ্রাম সরকারি কলেজে বদলি করা হয় প্রভাষক গণিত বিভাগের তপেশ দেবকে। এক মাসে যোগদান করলেও তিনি গত রোববার ক্যাম্পাসে আসেন পাঠদানের উদ্দেশ্যে। অধ্যক্ষের কার্যালয় থেকে বের হওয়ার সময় ৩০-৪০ জন শিক্ষার্থী তাঁকে ঘিরে ধরে লাঞ্ছনা করেন। তাঁকে ‘আওয়ামী লীগের দোসর’ অ্যাখ্যা দিয়ে হট্টগোল করেন তাঁরা।

তপেশ দেব প্রথম আলোকে বলেন, ‘এক মাস আগে যোগ দিলেও এখনো কোনো ক্লাস নিতে পারিনি। রোববার অধ্যক্ষের কক্ষ থেকে বের হওয়ার পর ৩০-৪০ জন শিক্ষার্থী আমাকে ঘিরে ধরে এবং বারবার প্রশ্ন করে কেন আমি এখানে এসেছি। তাঁরা যেহেতু আমার কলেজের শিক্ষার্থী, তাই আমি এ বিষয়ে কোনো অভিযোগ করিনি।’

জানতে চাইলে চট্টগ্রাম সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ মোজাহিদুল ইসলাম বলেন, ‘কিছু শিক্ষার্থী তাঁর নিয়োগের বিরোধিতা করছিল। আমি তাঁকে যোগদান করতে বলেছি। সিসিটিভি ফুটেজ ও অন্য শিক্ষকদের কাছ থেকে আমি তথ্য নিয়েছি। ওই শিক্ষককে কেউ আঘাত করেনি। সমস্যার সমাধানে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।’

সম্পর্কিত নিবন্ধ