ট্রাম্পবিরোধী জনমত আগের চেয়ে বেড়ে গেছে। এত দিন তা বিভিন্ন জরিপে উঠে এসেছিল; কিন্তু গত মঙ্গলবার নিউইয়র্কের মেয়র, নিউ জার্সি ও ভার্জিনিয়ার গভর্নর নির্বাচনের ফল সে চিত্রই তুলে ধরেছে। বিষয়টি রিপাবলিকান পার্টির নেতা ও মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বুঝতে পেরেছেন। তিনি এখন এসব নির্বাচনে নিজের ভূমিকা খাটো করে দেখাচ্ছেন।

তিন নির্বাচনে ডেমোক্রেটিক পার্টির তিন প্রার্থীর কাছে হার রিপাবলিকান পার্টির জন্য দুশ্চিন্তার কারণ হয়ে উঠেছে। গত শুক্রবার হোয়াইট হাউসে ট্রাম্প বলেন, ‘আমি নির্বাচনটা দেখেছি। তবে এসব ব্যাপারে আমি তেমনভাবে জড়িত ছিলাম না।’ নির্বাচনে প্রার্থীদের সমর্থন করার কথাও অস্বীকার করেছেন তিনি। ট্রাম্প বলেন, ‘আমি ভার্জিনিয়ার গভর্নর প্রার্থীকে সমর্থন করিনি। নিউ জার্সির প্রার্থীকেও খুব একটা সহায়তা করিনি। নিউইয়র্ক সিটির মেয়র প্রার্থী অ্যান্ড্রু কুমো সম্পর্কে আমাকে প্রশ্ন করা হলে আমি বলেছিলাম—আপনি কি একজন “ঠগ” চান, নাকি একজন “বামপন্থী”?’

ট্রাম্প নিজেকে যতই দূরে রাখার চেষ্টা করুন না কেন, মঙ্গলবারের নির্বাচনে জনগণ আসলে তাঁর বিরুদ্ধেই ভোট দিয়েছেন। বলা চলে, ভোটের ব্যালটে ট্রাম্পের নাম না থাকলেও এর আগে কখনো কোনো নির্বাচনে এতটা স্পষ্টভাবে তাঁর বিরুদ্ধে ভোট দিতে দেখা যায়নি।

ট্রাম্পপন্থী ভোট কমেছে

এ সপ্তাহে সবচেয়ে বড় লক্ষণীয় বিষয় হলো, ট্রাম্পবিরোধী ভোট আগের চেয়ে শক্তিশালী হয়েছে এবং ট্রাম্পপন্থী ভোট আগের চেয়ে কমেছে। নির্বাচনের আগেই গত সোমবার সিএনএনের করা এক সমীক্ষায় বিষয়টি স্পষ্ট হয়ে উঠেছিল। ওই সমীক্ষায় দেখা যায়, নিবন্ধিত ভোটারদের ৪১ শতাংশ কংগ্রেস নির্বাচন হলে ট্রাম্পের বিরোধিতা জানানোর জন্য ভোট দেওয়ার কথা বলেন। অপর দিকে মাত্র ২১ শতাংশ ভোটার ট্রাম্পকে সমর্থনের কথা বলেন; অর্থাৎ ট্রাম্পবিরোধী ভোট প্রায় দ্বিগুণ। এটা স্বাভাবিক নয়। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে অজনপ্রিয় প্রেসিডেন্টরা এ রকম পরিস্থিতির মুখোমুখি হয়েছেন। কিন্তু সিএনএনের সমীক্ষা অনুযায়ী, গত প্রায় ২০ বছরে এ রকম বড় ফারাক আর দেখা যায়নি।

এর আগে ২০০৬ সালে প্রেসিডেন্ট জর্জ ডব্লিউ বুশের বিরুদ্ধে ভোট দেওয়ার কথা বলেছিলেন ৩৬ শতাংশ মানুষ আর মাত্র ১৫ শতাংশ বলেছিলেন তাঁর পক্ষে। ২০১৮ সালের ট্রাম্পের প্রথম মধ্যবর্তী নির্বাচনের আগেও এই ব্যবধান এতটা বড় ছিল না। তখন ট্রাম্পবিরোধী ছিলেন ৩৮ শতাংশ। ট্রাম্পপন্থী ছিলেন ২৫ শতাংশ।

এত দিন সমীক্ষায় ট্রাম্পবিরোধী ভোট বাড়ার কথা বলা হলেও গত মঙ্গলবারের নির্বাচনের ফলও সেটা প্রমাণ করেছে। সারা দেশে ভোট না হলেও, ভার্জিনিয়া ও নিউ জার্সির বুথফেরত জরিপের তথ্য বলছে, ট্রাম্পবিরোধী ভোটের ব্যবধান বেড়েছে।

২০১৭ সালে ভার্জিনিয়ায় ট্রাম্পবিরোধী ও ট্রাম্পপন্থী ভোটের ব্যবধান ছিল ১৭ পয়েন্ট (৩৪%-১৭%), এবার তা বেড়ে ২২ পয়েন্টে (৩৮%-১৬%) দাঁড়িয়েছে। নিউ জার্সিতে ব্যবধান আরও বেড়েছে। ২০১৭ সালে ট্রাম্পবিরোধী ও ট্রাম্পপন্থী ভোটের ব্যবধান ছিল ১৭ পয়েন্ট (২৮%-১১%)। এবার ২৮ পয়েন্টে (৪১%-১৩%) পৌঁছেছে।

‘নো কিংস’

ট্রাম্পবিরোধী ভোট বেড়ে যাওয়ার দুটি কারণ উঠে এসেছে। একটি হচ্ছে ‘নো কিংস’ আন্দোলন। প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের নীতি ও কর্তৃত্ববাদী আচরণের বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রজুড়ে গত মাসে এ আন্দোলন ছড়িয়ে পড়ে। এ আন্দোলন ঘিরে যে সমাবেশ হয়েছিল সেগুলো নিছক কাকতালীয় ছিল না। এসব ট্রাম্পবিরোধী আন্দোলন এখনো আগের মতোই শক্তিশালী, আশাব্যঞ্জক এবং সক্রিয়। এই আন্দোলনের সদস্যরা হয়তো এখন ডেমোক্রেটিক পার্টিতে খুব আস্থাশীল নন, কিন্তু তাঁরা রাজনীতি থেকে দূরে সরে যাননি; বরং ভোট দিতে প্রস্তুত।

দ্বিতীয় বিষয় হলো, ট্রাম্পের রাজনৈতিক আধিপত্য থাকা সত্ত্বেও তাঁর মূল ভোটারগোষ্ঠী এখন তেমন উৎসাহী নন।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: আগ র চ য় ব যবধ ন

এছাড়াও পড়ুন:

মামদানি একই সঙ্গে ভারতের গর্ব, আবার মোদির মতো নেতাদের কঠোর সমালোচক

জোহরান মামদানি এই সপ্তাহে নিউইয়র্ক নগরের প্রথম দক্ষিণ এশীয় বংশোদ্ভূত মেয়র হিসেবে নির্বাচিত হয়ে ইতিহাস সৃষ্টি করেছেন। বিজয় ভাষণের বক্তৃতায় তিনি আধুনিক ভারতের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা জওহরলাল নেহেরুকে উদ্ধৃত করেছেন। এমনকি বলিউডের জমজমাট একটি গানের তালে তালে মঞ্চ থেকে বিদায় নিয়েছেন।

ভারতীয় বংশোদ্ভূত অভিবাসীর এই মুসলিম ছেলের বিজয় মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রতি শক্তিশালী এক জবাব হিসেবে দেখা হচ্ছে, যিনি যুক্তরাষ্ট্রে অভিবাসন কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণ করতে চেয়েছিলেন। নাইন–ইলেভেনের পর ইসলামভীতির গভীর ক্ষত বহনকারী এই নগরে জোহরানের জয়ের বৃহত্তর এক তাৎপর্য রয়েছে।

জোহরানের সাফল্যের ঢেউ আট হাজার মাইলেরও বেশি দূরে বিশ্বের সবচেয়ে জনবহুল দেশ ভারতের শহরে শহরে অনুভূত হচ্ছে। সেখানে তাঁর উত্থান একই সঙ্গে উদ্‌যাপিত এবং সমালোচিত হচ্ছে।

ভারতের মুম্বাই শহরের ৪৮ বছর বয়সী গুলফাম খান হুসেন বলেন, ‘আমরা দীর্ঘদিন ধরে খ্যাতির কেন্দ্র থেকে বঞ্চিত ছিলাম।’

শিল্পী তানিয়া লালওয়ানি বলেন, ‘দক্ষিণ এশীয় বংশোদ্ভূত কেউ এত দূর এসেছেন দেখে সত্যিই ভালো লাগছে।’

জোহরান মামদানির বিজয় তাঁকে আন্তর্জাতিক স্তরের এমন একদল প্রবাসী নেতার কাতারে দাঁড় করিয়েছে, যাঁরা সাম্প্রতিক বছরগুলোতে রাজনীতির বাধা ডিঙিয়েছেন। কমলা হ্যারিস যুক্তরাষ্ট্রে সরকারের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ পদে পৌঁছেছেন; আটলান্টিকের ওপারে ঋষি সুনাক যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী হয়েছেন আর সাদিক খান লন্ডনের মেয়র হয়েছেন।

অন্যদিকে লিও ভারাদকার আয়ারল্যান্ডের নেতৃত্ব দিয়েছেন এবং হামজা ইউসুফ স্কটল্যান্ডের সরকারের প্রধান হয়েছেন।

তবে জোহরানের নির্বাচন তাঁর রাজনৈতিক পরিচয়ের একটি কেন্দ্রীয় নীতিকে আরও জোরালো করেছে। সেটি হচ্ছে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সরকার এবং তার হিন্দু জাতীয়তাবাদী এজেন্ডার কট্টর সমালোচনা।

‘উগান্ডা, ভারত, যুক্তরাষ্ট্রের মিশ্রণ’

নিউইয়র্ক অঙ্গরাজ্যের আইনসভার টানা তিনবারের নির্বাচিত সদস্য জোহরান মামদানি যে এলাকার প্রতিনিধিত্ব করছেন (কুইন্সের অংশবিশেষ, যা নিউইয়র্ক নগরের জাতিগত ও ভাষাগতভাবে সবচেয়ে বৈচিত্র্যময় অঞ্চলগুলোর একটি), তিনি নিজেই তাঁর রাজনৈতিক প্রতিমূর্তি।

জোহরান উগান্ডার একজন অভিবাসী। তাঁর ভারতীয় বাবা-মা ভারতেই জন্মগ্রহণ করেছিলেন। প্রথমে দক্ষিণ আফ্রিকার বর্ণবাদ-পরবর্তী কেপটাউনে তাঁর শৈশব কাটে, এরপর তাঁর পরিবার নিউইয়র্ক নগরে বসতি স্থাপন করে।

জোহরান কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রখ্যাত পোস্ট-কলোনিয়াল স্টাডিজের অধ্যাপক মাহমুদ মামদানি ও বিখ্যাত ভারতীয় চলচ্চিত্র নির্মাতা মীরা নায়ারের ছেলে। মীরা নায়ারের ‘মিসিসিপি মাসালা’, ‘দ্য নেমসেক’ এবং ‘মনসুন ওয়েডিং’-এর মতো কাজে প্রবাস, স্থানচ্যুতি এবং পরিচয়ের বিষয়গুলো তুলে ধরা হয়েছে। মঙ্গলবার তাঁর বিজয় ভাষণে জোহরান তাঁর এই পরিচয়ের কথা উল্লেখ করেন।

নিউইয়র্ক নগরের মেয়র নির্বাচনে জয়ী হওয়ার পর এক সমাবেশ মঞ্চে ডেমোক্র্যাট প্রার্থী জোহরান মামদানি এবং তাঁর স্ত্রী রামা দুয়াজি। ব্রুকলিন, নিউইয়র্ক, ৪ নভেম্বর ২০২৫

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • মামদানিকে ঠেকাতে নাগরিকত্ব বাতিলের কথা বলছেন রিপাবলিকানরা, তা কি সম্ভব
  • ডেমোক্র্যাটরা সাবধান! ট্রাম্প প্রতিশোধের ছক কষছেন
  • আমার সঙ্গে হাত মেলানোর জন্য হাত বাড়িয়ে দাঁড়িয়ে ছিলেন মামদানি
  • নিউইয়র্কের মেয়রের নতুন ঠিকানা কি গ্রেসি ম্যানশন
  • এক কক্ষের বাড়ি থেকে ‘রাজপ্রাসাদে’
  • জোহরান মামদানি কেন নিজ এলাকা কুইন্সে কম ভোট পেলেন
  • কারো চোখে পানি, ফেলছেন স্বস্তির শ্বাস: মামদানির জয়ে কী বললেন গার্ডিয়ানের পাঠকেরা
  • যুক্তরাষ্ট্রে ট্রাম্পের একচ্ছত্র ক্ষমতা ম্লান হলো মাত্র দুই দিনেই
  • মামদানি একই সঙ্গে ভারতের গর্ব, আবার মোদির মতো নেতাদের কঠোর সমালোচক