বিহারে তরুণ আর জেন-জিদের ক্ষোভ কি সামলাতে পারবেন মোদি
Published: 13th, November 2025 GMT
ভারতের বিহার রাজ্যের মুজাফফরপুর জেলার বাসিন্দা ২০ বছরে অজয় কুমার চিন্তিত মুখে নিজের মুঠোফোন স্ক্রল করে যাচ্ছিলেন। তিনি সরকারি চাকরির একটি পরীক্ষায় অনিয়ম হওয়ার খবর শুনেছেন, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ঘেঁটে সেই খবরের সত্যতা নিশ্চিত হতে চাইছেন এই তরুণ। কারণ, সরকারি চাকরি নামের সোনার হরিণ হাতে পেতে তিনি প্রতিযোগিতামূলক ওই পরীক্ষায় অংশ নিয়েছেন।
অজয় নিম্নবর্ণের দলিত সম্প্রদায়ের তরুণ। ভারতে দলিত সম্প্রদায়ের মানুষদের নানা সামাজিক বঞ্চনা ও ধর্মীয় বৈষম্যের শিকার হতে হয়। পিছিয়ে পড়া এই সম্প্রদায়ের মানুষের জন্য ভারতে কোটা বা সংরক্ষণের ব্যবস্থা রয়েছে।
অজয়ও দলিতদের জন্য এই কোটার আওতায় একটি সরকারি চাকরি পাওয়ার আশা করেছিলেন। এ জন্য গত বছরের ডিসেম্বরে তিনি সরকারি চাকরির ওই পরীক্ষা দেন। কিন্তু কয়েক দিন পর তিনি শুনতে পান, পরীক্ষার প্রশ্নপত্র আগেই ফাঁস হয়ে গিয়েছিল।
চরম হতাশ অজয় যখন চাকরির পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁস হওয়ার খবর নিশ্চিত হতে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ঘোরাফেরা করছিলেন, ঠিক তখন তাঁর সামনে একটি ভিডিও আসে। ভিডিওতে তিনি দেখতে পান, তাঁর সমবয়সী শিক্ষার্থীরা তাঁর মতো একইভাবে ক্ষুব্ধ হয়ে আছেন, পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁসের বিরুদ্ধে শিক্ষার্থীরা রাজ্যের রাজধানী পাটনায় বিক্ষোভ করছেন।
মুজাফফরপুর থেকে পাটনার দূরত্ব ৭৫ কিলোমিটার। সেখানে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের খবর পেয়ে সঙ্গে সঙ্গে বাসে চেপে বসেন অজয়, সারা রাত ভ্রমণ করে সকালে নিজেকে হাজার হাজার তরুণ বিক্ষোভকারীর মধ্যে দেখতে পান।
তারপর প্রায় ১০০ দিন হাড়কাঁপানো শীত উপেক্ষা করে সড়কে বিক্ষোভ করে গেছেন অজয়। প্রায় সময়ই তিনি খোলা আকাশের নিচে অন্য শত শত শিক্ষার্থীর সঙ্গে গুটিসুটি মেরে ঘুমিয়েছেন। তাঁদের দাবি ছিল সোজা—নতুন করে পরীক্ষা নেওয়া হোক।
কিন্তু এ বছরের এপ্রিলে ভারতের সুপ্রিম কোর্ট শিক্ষার্থীদের পুনঃ পরীক্ষার দাবিতে করা পিটিশনটি খারিজ করে দেন।
রাগে-ক্ষোভে ফুঁসে ওঠা অজয় কয়েক মাস ধরে নিজের ক্রোধ চেপে ছিলেন। নভেম্বরে বিহারের বিধানসভা নির্বাচনে এই তরুণ নিজের রাগ উগরে দেন। গত ৬ নভেম্বর দুই ধাপের নির্বাচনের প্রথম ধাপের ভোট অনুষ্ঠিত হয়। সেদিন অজয় ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনের (ইভিএম) বোতাম এত জোরে চেপে ধরেন যেন তাঁর ভোট তাঁর ও তাঁর মতো ক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীদের লড়াইয়ের প্রতিশোধ নিতে সহায়তা করতে পারে।
চরম হতাশ অজয় যখন চাকরির পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁস হওয়ার খবর নিশ্চিত হতে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ঘোরাফেরা করছিলেন, ঠিক তখন তাঁর সামনে একটি ভিডিও আসে। ভিডিওতে তিনি দেখতে পান, তাঁর সমবয়সী শিক্ষার্থীরা তাঁর মতো একই রকমভাবে রাগান্বিত হয়ে আছেন, পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁসের বিরুদ্ধে শিক্ষার্থীরা রাজ্যের রাজধানী পাটনায় বিক্ষোভ করছেন।চাকরি-শিক্ষা নিয়ে ক্ষোভ ও হতাশা
পুষ্টি, শিশু মৃত্যুহার, শিক্ষা, মাতৃত্বকালীন স্বাস্থ্যসেবাসহ ভারতের বহুমাত্রিক মানব উন্নয়ন সূচকের বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই সারা দেশের মধ্যে বিহারের অবস্থান তলানিতে।
২০ বছর বয়সী প্রথম কুমার দক্ষিণ বিহারের জেহানাবাদ জেলার বাসিন্দা। তাঁর বাড়ি যে শহরে, সেখানে কলেজগুলো ‘শুধু ডিগ্রি দেয়, শিক্ষা নয়’। এ কারণে লেখাপড়া করতে তিনি রাজধানী পাটনায় চলে আসতে বাধ্য হন।
কিন্তু পাটনায়ও কুমারের জন্য লেখাপড়া করা কঠিন হয়ে গেছে, বলেন এই তরুণ।
বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রাবাসগুলোতে পরিষ্কার পানির ব্যবস্থা নেই, ওয়াই-ফাই রাউটার মাসের পর মাস অকেজো পড়ে থাকে। তাঁর মতো শিক্ষার্থীদের প্রায়ই তাঁদের ছাত্রাবাসের সংকীর্ণ মাঠের ঘাস কাটতে হয়। কারণ, এসব কাজের জন্য পর্যাপ্ত কর্মী নেই।
ক্ষোভের সঙ্গে এই তরুণ বলেন, ‘বিহারের সবখানেই শিক্ষার মান এতটাই খারাপ যে কেবল কাগজে ডিগ্রি পেতে কলেজে ভর্তি হওয়া যায়। কিন্তু যদি সত্যিই কিছু শিখতে চান, তবে অতিরিক্ত অর্থ খরচে প্রাইভেট কোচিং ক্লাসে ভর্তি হতে হয়।’
তাই প্রথমবারের মতো কুমার নিজের রাজ্য ছেড়ে অন্য কোথাও চলে যেতে চাইছেন। বিহারের লাখ লাখ ছাত্র ও বেকার তরুণের সামনে এটাই একমাত্র বিকল্প।
বিহারে নভেম্বরের বিধানসভা নির্বাচন ঘিরে বিজেপির ভোটের প্রচারণা। অক্টোবর মাসে তোলা.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: র জন য চ কর র প টন য় সরক র র খবর
এছাড়াও পড়ুন:
জাপানের প্রধানমন্ত্রী ২ থেকে ৪ ঘণ্টা ঘুমান
জাপানের প্রধানমন্ত্রী সানা তাকাইচি জানিয়েছেন, তিনি প্রতি রাতে মাত্র দুই থেকে চার ঘন্টা ঘুমান। বৃহস্পতিবার আইনসভা কমিটিকে তিনি এ কথা বলেছেন।
গত সপ্তাহে সংসদীয় অধিবেশনের প্রস্তুতির জন্য তাকাইচি তার অফিসে ভোর ৩টার কর্মী সভার আয়োজন করেন। এ ঘটনায় সমালোচনার মুখে পড়েন তিনি।
জাপানের কুখ্যাত দীর্ঘ কর্মঘণ্টা হ্রাস করার গুরুত্ব সম্পর্কে প্রশ্ন করা হলে তাকাইচি বলেছেন, “আমি এখন প্রায় দুই ঘন্টা ঘুমাই, সবচেয়ে বেশি সময় চার ঘন্টা। আমার মনে হয় এটি আমার ত্বকের জন্য খারাপ।”
জাপান দীর্ঘদিন ধরে একটি সুস্থ কর্মজীবন ভারসাম্য বজায় রাখতে লড়াই করছে। অনেক কর্মী অফিসে প্রচণ্ড চাপের সম্মুখীন হচ্ছেন। এমনকি অতিরিক্ত কাজের কারণে মারা যাওয়া লোকদের জন্য ‘কারোশি’ শব্দটিও রয়েছে।
অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিকে উৎসাহিত করার জন্য ওভারটাইম কাজের সর্বোচ্চ সীমা বাড়ানোর বিষয়ে তার সরকারের আলোচনার ব্যাখ্যাও চাওয়া হয়েছিল তাকাইচির কাছে।
তিনি আলোচনার পক্ষে যুক্তি দিয়ে তিনি জানান, শ্রমিক ও নিয়োগকর্তাদের বিভিন্ন চাহিদা রয়েছে। কিছু মানুষ জীবিকা নির্বাহের জন্য দুটি চাকরি করতে পছন্দ করে, অন্যদিকে ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলো ওভারটাইমের উপর কঠোর সীমা আরোপ করে। তবে যেকোনো পরিবর্তন নিশ্চিত করবে যে শ্রমিকদের স্বাস্থ্য সুরক্ষিত থাকবে।
তিনি বলেন, “প্রকৃতপক্ষে, যদি আমরা এমন একটি পরিস্থিতি তৈরি করতে পারি যেখানে লোকেরা তাদের ইচ্ছানুযায়ী শিশুর যত্ন নেওয়ার দায়িত্বের মধ্যে সঠিকভাবে ভারসাম্য বজায় রাখতে পারে ও কাজ করতে, অবসর সময় উপভোগ করতে এবং আরাম করতে সক্ষম হয় - তাহলে তা আদর্শ হবে।”
তাকাইচি গত মাসে জাপানের প্রথম মহিলা প্রধানমন্ত্রী হিসেবে ক্ষমতায় আসেন।
ঢাকা/শাহেদ