দেশ বদলাতে হলে মেধাবীদের রাজনীতিতে আসার আহ্বান জানিয়েছেন সড়ক পরিবহন, বিদ্যুৎ ও রেলপথ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান। রাজনীতিকে রীতিমতো পেশা হিসেবে বেছে নেওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন তিনি। না হলে দেশের মানুষ যে পরিবর্তনের প্রত্যাশা করে, তা কখনোই বাস্তবে হবে না।

মেধাবীদের রাজনীতিতে আসার এই আহ্বান ফাওজুল কবির খান জানিয়েছেন ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাবর্তন অনুষ্ঠানের প্রধান বক্তা হিসেবে বক্তৃতা করার সময়। গত বৃহস্পতিবার এই সমাবর্তন অনুষ্ঠান হয়।

১৮ কোটি মানুষের দেশে একজনের বেশি কেউ নোবেল পুরস্কার না পাওয়ায় আক্ষেপ করেন ফাওজুল কবির খান। সম্পদ অর্জনের জন্য দুর্নীতির পথ বেছে না নেওয়ারও অনুরোধ করেন তিনি।

শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে ফাওজুল কবির খান বলেন, ‘অনুগ্রহ করে রাজনীতিকে একটি পেশা হিসেবে বিবেচনা করো। এরপর তোমাদের সামনে উদ্যোক্তা হওয়ার পথও খোলা আছে। আর সবশেষে সরকারি চাকরি বেছে নেওয়া উচিত। যে পেশাটি আমি নিজে বেছে নিয়েছিলাম।’

রাজনীতিকে একটি সম্মানজনক ও জরুরি পেশা হিসেবে ভেবে দেখার তাগিদ দিয়ে সরকারের এই উপদেষ্টা বলেন, ‘রাজনীতি শুধু ক্ষমতার খেলা নয়, এটি মানুষের জীবন বদলানোর একটি দায়িত্বও। তাই রাজনীতিতে দরকার মেধাবী ও সৎ মানুষ। কারণ, সঠিক নেতৃত্ব ছাড়া যে পরিবর্তনের কথা আমরা সব সময় বলি, তা কখনোই বাস্তব হবে না।’ এ সময় তিনি নিউজিল্যান্ডের সাবেক প্রধানমন্ত্রী জেসিন্ডা আরডার্নের প্রসঙ্গ উল্লেখ করেন এবং শিক্ষার্থীদের তাঁর আত্মজীবনী পাঠ করার পরামর্শ দেন।

‘ধনী হও, কিন্তু দুর্নীতির পথে নয়’

শিক্ষাজীবন শেষে সবাই সম্পদ অর্জনের পথে যাবে—এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু সম্পদ অর্জনের পথ কী হবে, সে বিষয়ে কথা বলেন ফাওজুল কবির খান। তিনি বলেন, অর্থ উপার্জনের দুটি পথ রয়েছে। একটি হচ্ছে উৎপাদন, উদ্ভাবন ও পরিশ্রমের পথ। অন্যটি হচ্ছে ঘুষ, দুর্নীতি ও ক্ষমতার কাছাকাছি থাকার পথ। তরুণদের প্রথম পথটি বেছে নেওয়ার আহ্বান জানান তিনি।

এ বিষয়ে শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে ফাওজুল কবির বলেন, ‘ধনী হও, কিন্তু স্টিভ জবস বা বিল গেটসের মতো সৃষ্টির মাধ্যমে। ক্ষমতার করিডরে ঘুরে ধনী হয়ো না।’ এ সময় তিনি দেশের কিছু ব্যবসায়ী-ধনকুবেরের ভূমিকা নিয়ে পরোক্ষ সমালোচনাও করেন। তিনি বলেন, সবাই এমন নয়। তবে কিছু কিছু ব্যবসায়ী কর না দিয়ে বা ব্যাংকঋণ ফেরত না দিয়েও প্রভাবশালী হয়ে উঠেছেন।

শুধু ভালো ফল বা সিজিপিএ কারও ভবিষ্যৎ নির্ধারণ করে না বলেও মন্তব্য করেন ফাওজুল কবির খান। তিনি বলেন, প্রকৃত দক্ষতা, নৈতিকতা ও সাহসই মানুষকে সামনে এগিয়ে নেয়।

সমাবর্তনে অংশ নেওয়া গ্র্যাজুয়েটদের উদ্দেশে উপদেষ্টা ফাওজুল কবির খান বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিগ্রি অর্জন করলেই জীবনের যুদ্ধ শেষ বলে ধরে নেওয়ার সুযোগ নেই। এই ডিগ্রি হচ্ছে চাকরির বাজারে ঢোকার একটি পাসপোর্ট। কিন্তু আপনি কত দূরে যাবেন, সেটা নির্ভর করবে আপনি কী পারেন, তার ওপর। তিনি ভালো ফল করা শিক্ষার্থীদের আত্মতুষ্টিতে না ভোগার এবং প্রত্যাশা অনুযায়ী ফল না পাওয়া শিক্ষার্থীদের হতাশ না হওয়ার পরামর্শ দেন।

জুলাই অভ্যুত্থানের প্রসঙ্গ ও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূমিকা

বক্তব্যের শুরুতেই ফাওজুল কবির খান ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের শহীদদের স্মরণ করেন। পাশাপাশি তিনি গত বছরের জুলাইয়ে ছাত্র-জনতার গণ-অভ্যুত্থানে নিহত ও আহতদের প্রতিও শ্রদ্ধা জানান।

এ প্রসঙ্গে ফাওজুল কবির খান বলেন, ওই আন্দোলনে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর—বিশেষ করে ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের ভূমিকা ছিল উল্লেখযোগ্য এবং তা ইতিহাসে স্মরণীয় হয়ে থাকবে।

১৮ কোটির দেশে নোবেল নেই কেন?

দেশের শিক্ষাব্যবস্থা নিয়ে কিছু প্রশ্নও উত্থাপন করেন ফাওজুল কবির খান। তিনি বলেন, এত বড় জনগোষ্ঠী থাকা সত্ত্বেও বাংলাদেশে এখনো বিজ্ঞানে কোনো নোবেলজয়ী নেই—এটা ভাবনার বিষয়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের কাছে নোবেল জেতার স্বপ্ন নিয়ে প্রশ্ন করলে কেউ হাত তোলেননি বলে জানান তিনি।

এ বিষয়ে শিক্ষকদের উদ্দেশে উপদেষ্টা বলেন, শিক্ষার্থীদের মধ্যে বড় স্বপ্ন দেখার সাহস তৈরি করতে হবে। শুধু পরীক্ষার ফল নয়, বৈশ্বিক উৎকর্ষের স্বপ্ন দেখাতে হবে। অভিভাবকদের উদ্দেশে তিনি বলেন, সন্তান গ্র্যাজুয়েট হলেও মা-বাবার দায়িত্ব শেষ হয়ে যায় না।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: দ র উদ দ শ র জন ত ত উপদ ষ ট র জন র আহ ব ন সরক র

এছাড়াও পড়ুন:

গানের তালে তালে অনুশীলন আজারবাইজানের মেয়েদের

ঘড়িতে তখন বিকেল ৫টা বেজে ৫০ মিনিট। জাতীয় স্টেডিয়ামের ভিআইপি গেটে আজারবাইজানের টিম বাস। তখনো মাঠে অনুশীলনে ব্যস্ত মালয়েশিয়ার নারী ফুটবল দল। বাস থেকে নেমেই সোজা স্টেডিয়ামের ভেতরে চলে যায় আজারবাইজান দল। এক খেলোয়াড়ের হাতে সাউন্ড বক্সে উচ্চ শব্দে র‍্যাপ সংগীত বাজছে। কয়েকজন সেই গানের সঙ্গে কণ্ঠ মেলাচ্ছেন।

মিনিট দশেক পর দৃশ্যটা একটু বদলায়। স্টেডিয়ামের অ্যাথলেটিকস ট্র্যাকে দাঁড়িয়ে মালেয়েশিয়া দলের অনুশীলন শেষের অপেক্ষায় আজারবাইজান নারী ফুটবল দল। মিনিটে মিনিটে তাদের গতিবিধি পরিবর্তন হচ্ছে। মনে হলো, দাঁড়িয়ে থেকে কিছুটা বিরক্ত। ইনফিনিক্স ত্রিদেশীয় ফুটবল সিরিজে আগামীকাল দ্বিতীয় ম্যাচে মুখোমুখি হবে মালয়েশিয়া–আজারবাইজান। এর আগে আজ যেন অনুশীলনেই মুখোমুখি দুই দল।

অনুশীলনে আজারবাইজানের মেয়েরা

সম্পর্কিত নিবন্ধ