ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসি মোড়ের ‘রাজু স্মারক ভাস্কর্য’ বাস্তবে, ছবিতে বা টেলিভিশনের পর্দায় দেখেননি দেশে এমন মানুষ কম। দাবিদাওয়া, প্রতিবাদ–প্রতিরোধ আন্দোলন শুরুর পীঠস্থানে পরিণত হয়েছে সড়কদ্বীপের এই বৃত্তাকারে ভাস্কর্যটি। হাতে হাতে বন্ধন রচনা করে দৃঢ় পদক্ষেপে আগুয়ান তরুণ-তরুণীর এই ভাস্কর্য যিনি তৈরি করেছেন, সেই ভাস্কর শ্যামল চৌধুরী এখন প্রায় নিশ্চল। ঘরের নিভৃতে কাটছে তাঁর দুঃসহ দিনরাত্রি। নিজ বাসাতেই পরিবারের পক্ষে আয়োজন আয়োজন করা হয়েছে ‘অবয়বের প্রতিধ্বনি’ নামে ব্যতিক্রমী এক শিল্পকর্মের প্রদর্শনী।

শুক্রবার বিকেলে তিন দিনের এই প্রদর্শনীর উদ্বোধন করেন বিশিষ্ট শিল্পী মনিরুল ইসলাম ও প্রাবন্ধিক মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের ট্রাস্টি মফিদুল হক। শ্যামলীর ৪ নম্বর সড়কের অ্যাম্ব্রসিয়া নামের বাড়িতে প্রদর্শনী আজ শেষ হবে। বেলা দুইটা থেকে সন্ধ্যা সাতটা পর্যন্ত আসতে পারবেন দর্শকেরা।

ভাস্কর শ্যামল চৌধুরীর জন্ম ১৯৬২ সালে নেত্রকোনায়। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদ থেকে ১৯৮৬ সালে ভাস্কর্যে প্রথম বিভাগে প্রথম হয়ে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি নেন। পরে যুক্তরাজ্যের গ্লাচেস্টারসয়ার বিশ্ববিদ্যালয়ে আবাসিক শিল্পী হিসেবে উচ্চতর প্রশিক্ষণ নিয়েছেন। লন্ডনেই তাঁর প্রথম একক শিল্পকর্মের প্রদর্শনী হয়েছিল। রাজুস্মারক ভাস্কর্য ছাড়াও পাবনা এবং পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, ময়মনসিংহে বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, ত্রিশালে জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস, গৃহায়ণ অধিদপ্তর, সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরের কার্যালয়ের সামনে, সোনারগাঁর লোক ও কারুশিল্প জাদুঘরসহ বিভিন্ন স্থানে অনেক বড় আকারের ভাস্কর্য তৈরি করেছেন ভাস্কর শ্যামল চৌধুরী।

বাংলাদেশে উন্মুক্ত স্থানে নির্মিত ভাস্কর্যের ক্ষেত্রে তিনি অন্যতম প্রধান ভাস্কর। একটি স্বতন্ত্র ধরা সৃষ্টি করেছেন তিনি।

শ্যামল চৌধুরী ২০২০ সালের ৩০ ডিসেম্বর ময়মনসিংহের ত্রিশালে কমরেড ময়মনসিংহের একটি ভাস্কর্য তৈরি শেষে ঢাকায় ফেরার পথে সড়ক দুর্ঘটনায় মারাত্মক আহত হন। তাঁর স্ত্রী মণি চৌধুরী জানালেন দুর্ঘটনায় তিনি শরীরের এক পাশ ও মস্তিষ্কে গুরুতর আঘাত পেয়েছিলেন। ভারতে ও দেশে দীর্ঘদিনের চিকিৎসার পরে জীবন রক্ষা পেলেও কর্মক্ষমতা হারিয়ে ফেলেছেন। স্পষ্ট করে কথাও বলতে পারেন না। ব্যক্তিগত সংগ্রহে থাকা ভাস্কর্য ও রেখাচিত্র নিয়ে ঘরোয়াভাবে এই প্রদর্শনীর আয়োজন করা হয়েছে। তাঁর মেয়ে রূপকল্পা চৌধুরী রবীন্দ্রভারতী থেকে ভাস্কর্যে স্নাতক সম্পন্ন করেছেন। তিনিই বাবার শিল্পকর্মগুলো থেকে বাছাই করা ৪৫টি শিল্পকর্ম নিয়ে এই প্রদর্শনীর কিউরেটর হিসেবে কাজ করেছেন। এখানে ফাইবার গ্লাসে করা বেশ কিছু ভাস্কর্য ছাড়াও রয়েছে তাঁর ছাত্রজীবন থেকে বিভিন্ন সময় করা রেখাচিত্র—স্কেচ খাতা। বিভিন্ন ভাস্কর্য তৈরির সময়ের আলোকচিত্র এবং একটি ভিডিও চিত্র।

বিদেশে শিল্পীদের বাড়িতে বা স্টুডিওতে নিজের কাজের প্রদর্শনী করার রীতি থাকলেও আমাদের দেশে এর প্রচলন নেই বলে জানালেন রূপকল্পা চৌধুরী। তিনি বললেন, ইদানীং তাঁর বাবা হাতে পেনসিল ধরতে পারছেন। কিছু আঁকার চেষ্টা করছেন। কাজ করতে না পারায় তিনি মনে অত্যন্ত কষ্ট বোধ করেন। মূলত তাঁকে উৎসাহিত করতেই এই প্রদর্শনীর আয়োজন করা হয়েছে।

.

উৎস: Prothomalo

এছাড়াও পড়ুন:

কারখানা খুলে দেওয়ার দাবিতে টঙ্গীতে শ্রমিকদের বিক্ষোভ

বন্ধ কারখানা খুলে দেওয়ার দাবিতে গাজীপুরের টঙ্গীতে বিক্ষোভ করেছেন যমুনা অ্যাপারেলস লিমিটেড কারখানার শ্রমিকেরা। আজ মঙ্গলবার সকাল ৯টার দিকে মিলগেট এলাকায় প্রথমে ঢাকা–ময়মনসিংহ মহাসড়ক অবরোধ করে পরে আঞ্চলিক সড়কে তাঁরা বিক্ষোভ করেন।

গাজীপুর শিল্প পুলিশের পরিদর্শক ইসমাইল হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, শ্রমিকেরা সড়কে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ করলে তাঁদের সড়ক থেকে সরে যেতে বলা হলে তাঁরা উত্তেজিত হয়ে পড়েন। পরে সাউন্ড গ্রেনেড ছুড়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করা হয়।

কারখানার শ্রমিক ও শিল্প পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, টঙ্গীর যমুনা অ্যাপারেলস কারখানায় ২২ এপ্রিল বিশৃঙ্খলাসহ নানা অভিযোগে কারখানার ১১৪ শ্রমিককে চাকরি থেকে অব্যাহতি দেয় কর্তৃপক্ষ। শ্রম আইন অনুযায়ী তাঁদের সব পাওনা পরিশোধও করা হয়। শ্রমিক অসন্তোষ এড়াতে ২৩, ২৪ ও ২৫ এপ্রিল কারখানা বন্ধ ঘোষণা করা হয়। পরে ২৬ এপ্রিল কারখানা খুলে দেওয়া হলে সকালে শ্রমিকেরা কাজে যোগ দেন। এরপর ওই দিন চাকরিচ্যুত শ্রমিকদের পুনর্বহালের দাবিতে কারখানার ভেতরে কর্মবিরতি শুরু করেন তাঁরা। এর পর থেকে শ্রমিক অসন্তোষ এড়াতে কারখানা বন্ধ করে দেয় কর্তৃপক্ষ।

আজ সকালে বন্ধ কারখানা খুলে দেওয়া ও ছাঁটাই করা শ্রমিকদের পুনর্বহালের দাবিতে বিক্ষোভ শুরু করেন শ্রমিকেরা। প্রথমে তাঁরা ঢাকা–ময়মনসিংহ মহাসড়কে অবস্থান নিলে পুলিশ তাঁদের সরিয়ে দেয়। পরে তাঁরা আঞ্চলিক সড়ক অবরোধ করেন। এ সময় শিল্প পুলিশ, থানা–পুলিশ ও যৌথ বাহিনীর সদস্যরা শ্রমিকদের ধাওয়া ও সাউন্ড গ্রেনেড ছুড়ে ছত্রভঙ্গ করে দেন।

কারখানার শ্রমিকদের অভিযোগ, ১০ দিন আগে কারখানার কোয়ালিটি সেকশনের শ্রমিক মো. হুমায়ুন দুই দিনের ছুটি চেয়েছিলেন। ছুটি না পেয়ে হুমায়ুন নিজেই অনুপস্থিত থাকেন। এতে ক্ষুব্ধ হয়ে কারখানার অ্যাডমিন অ্যান্ড কমপ্লায়েন্স কর্মকর্তা হাবিবুর রহমান তাঁর সঙ্গে বাগ্‌বিতণ্ডায় জড়ান এবং হুমায়ুনকে মারধর ও গুম করার হুমকি দেন। একপর্যায়ে হুমায়ুনকে কারখানার নিচতলার গুদামঘরের বাথরুমে আটকে রাখা হয়। চার ঘণ্টা পর হুমায়ুন মুঠোফোনে সহকর্মীদের খবর দিলে তাঁরা তাঁকে উদ্ধার করেন। এ ঘটনার জেরে কারখানা কর্তৃপক্ষ ১১৪ শ্রমিককে ছাঁটাই করে। শ্রমিক ছাঁটাই, গুমের হুমকি ও বহিরাগতদের দিয়ে শ্রমিকদের ওপর হামলার অভিযোগে বিক্ষোভ করেন শ্রমিকেরা। এ সময় কারখানা খুলে দেওয়ার দাবি জানানো হয়।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • হাড়ভাঙা পরিশ্রমে পুরুষের অর্ধেকের কম বেতন নারীর
  • ময়মনসিংহে সাহিত্য আড্ডার স্থানসহ নানা স্থাপনা গুঁড়িয়ে দিল প্রশাসন
  • ময়মনসিংহ সাহিত্য সংসদের মুক্তমঞ্চ গুঁড়িয়ে দিল প্রশাসন, সংস্কৃতিকর্মীদের প্রতিবাদ
  • ময়মনসিংহ সাহিত্য সংসদের মুক্তমঞ্চ ভেঙে দিল প্রশাসন
  • যেভাবে আর্জেন্টিনার মার্তিনেজকে ময়মনসিংহে ফেরালেন শ্রাবণ
  • বকেয়া বেতনের দাবিতে টঙ্গীতে শ্রমিকদের বিক্ষোভ, দুই ঘণ্টা পর মহাসড়কে যান চলাচল স্বাভাবিক
  • টঙ্গীতে বকেয়া বেতনের দাবিতে শ্রমিকদের মহাসড়ক অবরোধ
  • টঙ্গীতে শ্রমিকদের মহাসড়ক অবরোধ, সাউন্ড নিক্ষেপ
  • সুন্দর কাঠ ও ফুলের গামারি
  • কারখানা খুলে দেওয়ার দাবিতে টঙ্গীতে শ্রমিকদের বিক্ষোভ