অধিকার প্রতিষ্ঠার লড়াইয়ে আলোকবর্তিকা হয়ে থাকবেন সহিদুল্লাহ চৌধুরী
Published: 11th, January 2025 GMT
শ্রমিকদের অধিকার প্রতিষ্ঠার লড়াইয়ে পরীক্ষিত নেতা ছিলেন সহিদুল্লাহ চৌধুরী। তিনি জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত শ্রমিকের অধিকার আদায়ের আন্দোলন করেছেন। সবার মাঝে আলোকবর্তিকা হয়ে থাকবেন তিনি।
গতকাল শনিবার দুপুরে জাতীয় প্রেসক্লাব মিলনায়তনে সহিদুল্লাহ চৌধুরীর স্মরণসভায় তাঁর সহযোদ্ধা ও শুভাকাঙ্ক্ষীরা এ কথাগুলো বলেন। শ্রমিক কর্মচারী ঐক্য পরিষদ (স্কপ) ও জাতীয় শ্রমিক সংগঠনগুলোর পক্ষ থেকে এই সভার আয়োজন করা হয়।
৩ জানুয়ারি শ্রমিকনেতা ও বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) উপদেষ্টা সহিদুল্লাহ চৌধুরী (৮৩) ইন্তেকাল করেন। সিপিবির সাবেক সভাপতি সহিদুল্লাহ চৌধুরী ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্রের (টিইউসি) সভাপতি ও বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব লেবার স্টাডিজের (বিলস) উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য ছিলেন।
স্মরণসভায় সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের ফেলো মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, সহিদুল্লাহ চৌধুরী বলেছিলেন, পুঁথিগত বিদ্যায় শিক্ষিত হলেই অর্থনীতিবিদ হওয়া যায় না। পাশাপাশি সামাজিক দায়বদ্ধতা থেকেও কাজ করতে হবে।
বাংলাদেশ লেবার ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক শাকিল আক্তার চৌধুরী বলেন, জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত শ্রমিকের অধিকার আদায়ের আন্দোলন করেছেন সহিদুল্লাহ চৌধুরী। অর্থনীতি নিয়ে তাঁর বিশ্লেষণ অর্থনীতিবিদদেরও হার মানাত।
যখনই শ্রমিকেরা সংকটে পড়েছেন, তখনই সহিদুল্লাহ চৌধুরী সামনে এসেছেন জানিয়ে সমাজতান্ত্রিক শ্রমিক ফ্রন্টের সভাপতি রাজেকুজ্জামান রতন বলেন, সামাজিক সংকট করোনার সময়েও ঘরে বসে থাকেননি তিনি। সভায় শ্রম সংস্কার কমিশন প্রধান সৈয়দ সুলতান উদ্দীন আহমেদ বলেন, সহিদুল্লাহ চৌধুরী কোন সংগঠন করতেন, তা মুখ্য ছিল না। যেকোনো অনুষ্ঠানে তাঁর উপস্থিতি অনুপ্রেরণা জোগাত। মৌলিক আদর্শে দৃঢ় থেকে কীভাবে সবার সঙ্গে মেশা যায়, সেই গুণাবলি ছিল তাঁর।
জাতীয় শ্রমিক জোটের সভাপতি মেজবাহউদ্দিন আহমেদ বলেন, সহিদুল্লাহ চৌধুরী কথা বলতেন যুক্তি দিয়ে। সংক্ষেপে, যা বোধগম্য ছিল। একাডেমিক শিক্ষায় উচ্চশিক্ষিত না হলেও তিনি অর্থনীতিবিদদের মতো কথা বলতেন। শ্রমিকের অধিকার আদায়ে বড় ভূমিকা রেখেছেন। তাঁর স্মরণশক্তি প্রকট ছিল। তিনি সব মনে রাখতে পারতেন।
বাংলাদেশ লেবার ফেডারেশনের সভাপতি শাহ মো.
স্মরণসভায় সভাপতির বক্তব্যে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী শ্রমিক দলের সভাপতি আনোয়ার হোসেন বলেন, শ্রমিকদের স্বার্থে কখনোই আপস করেননি সহিদুল্লাহ চৌধুরী। শ্রমিকদের দাবির প্রতি তাঁর একাগ্রতা অনেক বেশি ছিল। সহিদুল্লাহর অসমাপ্ত কাজ সবাইকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার আহ্বান জানান তিনি।
বাংলাদেশ ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্রের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আবুল কালাম আজাদ বলেন, ‘আমরা আমাদের অভিভাবক হারিয়েছি। আর মেহনতি মানুষ হারিয়েছে পরীক্ষিত একজন নেতাকে। সহিদুল্লাহ চৌধুরী শ্রমিক-কর্মচারী ও মানুষের হৃদয়ে স্থান করে নিয়েছিলেন।’
সহিদুল্লাহ চৌধুরীর ছেলে প্রকোশলী তারিকুল ইসলাম চৌধুরী জানান, তাঁর বাবা সারা জীবন শ্রমজীবী মানুষের কল্যাণে ব্যয় করেছেন। মৃত্যুর তিন মাস আগেও যখন অন্যের সহযোগিতা নিয়ে হাঁটতে পারতেন, তখনো শ্রমজীবী মানুষের সঙ্গে বসে আড্ডা দিতেন। আপনাদের সঙ্গে বেশি সময় পার করেছেন। আপনারা তাঁকে ভালো করে চেনেন, জানেন। বাবার জন্য সবার কাছে দোয়া চান তারিকুল।
সহিদুল্লাহ চৌধুরীর স্মরণে আয়োজিত সভার শুরুতে এক মিনিট দাঁড়িয়ে নীরবতা পালন করা হয়। ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্রের অর্থ সম্পাদক কাজী রুহুল আমীনের সঞ্চালনায় স্মরণসভায় বক্তৃতা করেন ন্যাশনাল ওয়ার্কার্স ইউনিটি সেন্টারের সভাপতি সুলতানা বেগম, সম্মিলিত গ্রামীণ শ্রমিক ফেডারেশনের সভাপতি নাজমা আক্তার, জাতীয়তাবাদী শ্রমিক দলের সহসভাপতি আবুল কালাম আজাদ, বাংলাদেশ ফ্রি ট্রেড ইউনিয়ন কংগ্রেসের (বিএফটিইউসি) সভাপতি নূর মোহাম্মদ আকন্দ, জাতীয়তাবাদী শ্রমিক দলের সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আবুল খায়ের খাজা, জাতীয় শ্রমিক জোট বাংলাদেশের সাধারণ সম্পাদক নাইমুল আহসান জুয়েল, জাতীয় শ্রমিক ঐক্যের সভাপতি এ এম ফয়েজ হোসেন, শ্রমিকনেতা আবুল হোসেন, বাংলাদেশ জাতীয় শ্রমিক ফেডারেশনের সভাপতি শামীম আরা, বাংলাদেশ শ্রমিক জোটের সভাপতি আবদুল কাদের হাওলাদার, জাতীয়তাবাদী শ্রমিক দলের উপদেষ্টা শামসুর রহমান শিমুল বিশ্বাস, জাতীয় শ্রমিক জোট বাংলাদেশের সভাপতি সাইফুজ্জামান বাদশা।
সভায় আরও উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) সভাপতি শাহ আলম, বাংলাদেশ সরকারি কর্মচারী সমবায় পরিষদের সাধারণ সম্পাদক নোমানুজ্জামান আল আজাদ প্রমুখ।
উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
দাবানলে পুড়ছে ইসরায়েল, ‘জরুরি অবস্থা’ ঘোষণা
ইসরায়েলের জেরুজালেম শহরের কাছে ছড়িয়ে পড়েছে ভয়াবহ দাবানল। শুষ্ক আবহাওয়ায় তীব্র বাতাসে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে হিমশিম খাচ্ছেন অগ্নিনির্বাপণ কর্মীরা। এমন পরিস্থিতিকে ‘জাতীয় জরুরি অবস্থা’ ঘোষণা করেছেন ইসরায়েলের প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইসরায়েল কাটজ। খবর সিএনএন, টাইমস অব ইসরায়েল, বিবিসি, আল জাজিরার
দাবানল নিয়ন্ত্রণে আন্তর্জাতিক সহায়তা চেয়েছে ইসরায়েল। দাবানলে এ পর্যন্ত অন্তত ১৩ জন আহত হয়েছেন। তবে কারও মৃত্যুর খবর পাওয়া যায়নি।
দাবানলকবলিত কয়েকটি এলাকার মানুষজনকে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া গুরুত্বপূর্ণ বেশ কয়েকটি সড়ক বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।
ইসরায়েলের প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইসরায়েল কার্তজ বলেছেন, এই ভয়াবহ পরিস্থিতি মোকাবিলায় তারা আন্তর্জাতিক সহায়তা চেয়েছেন। তিনি বলেন, ‘আমরা জাতীয় জরুরি অবস্থার মধ্যে আছি।’
জেরুজালেমের অগ্নিনির্বাপণ বিভাগের কমান্ডার শমুলিক ফ্রিডম্যান বলেন, ইসরায়েলের ইতিহাসে এটি সম্ভবত সবচেয়ে বড় দাবানল। সতর্ক করে তিনি বলেন, কিছু সময়ের মধ্যে ঘণ্টায় ৬০ মাইলের বেশি গতিতে বাতাস বইতে পারে, যা পরিস্থিতিকে আরও ভয়াবহ করে তুলতে পারে।
এই দাবানলের কারণে বুধবার ইসরায়েলের মেমোরিয়া ডেতে তেল আবিব ও জেরুজালেমের মধ্যে সংযোগকারী প্রধান সড়ক ‘রুট-১’ বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া ভিডিওতে দেখা গেছে, ঘন ধোঁয়ার মধ্যে মানুষ সড়কের পাশ দিয়ে হেঁটে যাচ্ছে।
কয়েক ঘণ্টা পরে জরুরি সেবাকর্মীরা মহাসড়কে পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়ে থাকা সারি সারি গাড়ি তল্লাশি করে দেখছিলেন, ওই সব গাড়ির মধ্যে কেউ আটকে আছেন কি না।
অগ্নিনির্বাপণ বিভাগের কমান্ডার শমুলিক ফ্রিডম্যান বলেন, আমরা এখনো জানি না, কী কারণে আগুন লেগেছে। আমরা এখন পর্যন্ত কোনো সূত্রও খুঁজে পাইনি। এখনো পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনা যায়নি।
ইসরায়েলি পুলিশ বলেছে, তারা সন্দেহভাজন এক ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করেছে। ওই ব্যক্তি একটি খোলা মাঠে আগুন লাগানোর চেষ্টা করছিলেন বলে পুলিশের দাবি।
এক বিবৃতিতে ইসরায়েলি পুলিশ দাবি করেছে, জেরুজালেমের পুলিশ কর্মকর্তারা পূর্ব জেরুজালেমের একজন বাসিন্দাকে হাতেনাতে ধরে ফেলেছে। ওই ব্যক্তি তখন শহরের দক্ষিণ প্রান্তের একটি খোলা মাঠে আগুন লাগানোর চেষ্টা করছিলেন। তার কাছ থেকে একটি লাইটার, তুলা ও অন্যান্য দাহ্য পদার্থ উদ্ধার করা হয়েছে।
ইসরায়েলি পুলিশের দাবি, ৫০ বছর বয়সী সন্দেহভাজন ওই ব্যক্তি পূর্ব জেরুজালেমের উম তুবা এলাকার বাসিন্দা। উম তুবা এলাকায় আরব ফিলিস্তিনিরা বসবাস করে থাকে।
ইসরায়েলের পররাষ্ট্রমন্ত্রী গিদন সার দাবানল মোকাবিলায় ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রয়েছে, এমন ইউরোপীয় দেশগুলোর সঙ্গে কথা বলছেন। তিনি তাদের কাছ থেকে উড়োজাহাজের সহায়তা চেয়েছেন। ইতালি ও মেসিডোনিয়া থেকে তিনটি উড়োজাহাজ শিগগিরই ইসরায়েলে পৌঁছাবে বলে জাতীয় নিরাপত্তা কাউন্সিল জানিয়েছে। কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, দাবানল ছড়িয়ে পড়া এলাকা থেকে মানুষকে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে।
প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইসরায়েল কার্তজ বলেন, ‘আমরা জাতীয় জরুরি অবস্থার মধ্যে আছি। জীবন বাঁচাতে এবং দাবানল নিয়ন্ত্রণে আনতে সব বাহিনীকে সক্রিয় করতে হবে।’
ইসরায়েলের ফায়ার অ্যান্ড রেসকিউ সার্ভিস জানিয়েছে, প্রায় ১২০টি দল এবং ১২টি অগ্নিনির্বাপণ বিমান ও হেলিকপ্টার দাবানল মোকাবিলায় কাজ করছে।
শামির মেডিকেল সেন্টার ও কপলান মেডিকেল সেন্টারের তথ্যমতে, দাবানলের কারণে অন্তত ডজন খানেক মানুষকে এই দুটি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
ইতিমধ্যে জেরুজালেমের উপকণ্ঠে অবস্থিত হাদাসা মেডিকেল সেন্টারের পক্ষ থেকে সাধারণ মানুষের প্রতি অনুরোধ করা হয়েছে, ‘জরুরি প্রয়োজন ছাড়া’ কেউ যেন হাসপাতালে না আসেন। হাসপাতালে ভর্তি থাকলেও যাদের অবস্থা গুরুতর নয়, তাদের হাসপাতাল থেকে সরিয়ে নেওয়া হচ্ছে। একই সঙ্গে দাবানলে আহত ব্যক্তিদের হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়ার প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে।
গত সপ্তাহে যে এলাকায় দাবানল দেখা দিয়েছিল, এবারও দাবানল প্রায় একই জায়গায় ছড়িয়েছে।