১১ জুলাইকে ‘প্রথম প্রতিরোধ দিবস’ ঘোষণা করলেন উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ
Published: 11th, July 2025 GMT
স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভুঁইয়া বলেছেন, ‘চব্বিশের ১১ জুলাই সেই দিন, যেদিন আমাদের শান্তিপূর্ণ কোটা সংস্কার আন্দোলনকে সহিংসতার দিকে ঠেলে দিয়েছিল পতিত স্বৈরাচার সরকার। সহিংসতার শুরুটা হয় কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে। তাই ১১ জুলাইকে আমি প্রথম প্রতিরোধ দিবস ঘোষণা করছি।’
আজ শুক্রবার বিকেলে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের মুক্তমঞ্চে ‘জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে ছাত্র-জনতার প্রথম প্রতিরোধ ১১ জুলাই নিয়ে স্মৃতির মিনার’ শীর্ষক স্মরণসভায় প্রধান অতিথির বক্তৃতায় তিনি এই ঘোষণা দেন। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন এ স্মরণসভার আয়োজন করে।
আসিফ মাহমুদ বলেন, ‘গত বছরের ১১ জুলাই যখন আমরা ঢাকায় আন্দোলন করছিলাম, তখন হঠাৎ করে শুনতে পারি কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা রুখে দাঁড়িয়েছেন। তাঁরা কুমিল্লায় প্রতিরোধ গড়ে তুলেছিলেন। কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের এই প্রতিরোধ সারা বাংলাদেশের শিক্ষার্থীদের মধ্যে আন্দোলনে ঝাঁপিয়ে পড়ার মানসিকতা তৈরি করেছিল, তাঁদের মনে সাহস দিয়েছিল। এরপর আবু সাঈদের মতো সাহসীরা বুক চিতিয়ে রক্ত দিয়ে আমাদের আন্দোলনকে স্বৈরাচার হটানোর আন্দোলনের দিকে ধাবিত করেন। তাই আপনাদের প্রতিরোধকে স্মরণীয় করে রাখার জন্য যে উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে, সেটাকে আমি সাধুবাদ জানাই।’
অনুষ্ঠানের শুরুতে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের ১১ জুলাই জুলাইয়ের আন্দোলন নিয়ে একটি প্রামাণ্যচিত্র প্রদর্শন করা হয়। এর আগে জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে আহত ও শহীদদের স্মরণে নির্মিত ‘জুলাই মিনার’-এর ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ। তিনি কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের সাহসিকতার প্রশংসা করে বলেন, ‘জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের সাহসিকতা সারা বাংলাদেশের মানুষের জন্য স্মরণীয় হয়ে থাকবে। প্রয়োজনে আমরা আগামী দিনে এই সাহসিকতাকে স্মরণ রাখার জন্য আরও উদ্যোগ গ্রহণ করব।’
সভায় শিক্ষার্থীদের বিভিন্ন দাবির পরিপ্রেক্ষিতে আসিফ মাহমুদ ঘোষণা দেন, ‘ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের কুমিল্লার কোটবাড়ীর যে স্থানে আন্দোলন কর্মসূচি পালন করেছিলেন শিক্ষার্থীরা, সেখানে একটি প্রতিরোধ মিনার স্থাপন করা হবে। যাতে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক দিয়ে চলাচল করা মানুষ এই দিনটিকে স্মরণ রাখতে পারেন। এটা আমাদের পক্ষ থেকে একটি ছোট উদ্যোগ। এ ছাড়া বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কাছে আপনারা যেসব দাবি করেছেন, আমি তাঁদের অনুরোধ করব, তাঁরা যেন সেই দাবিগুলোর বিষয়টি দেখেন। এ ক্ষেত্রে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে সরকারের পক্ষ থেকে সহযোগিতা করা হবে। একই সঙ্গে শিক্ষার্থীদের বাস সংকটের বিষয়ে একটি দাবি ছিল। আমরা স্থানীয় সরকার বিভাগের পক্ষ থেকে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের জন্য তিনটি বাস উপহার দেওয়ার ঘোষণা করছি।’
স্মরণসভায় জুলাই আন্দোলনে আহত কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের কয়েকজন বক্তব্য দেন। এ সময় ১১ জুলাই দিনটি রাষ্ট্রীয় কর্মসূচিতে না থাকায় ক্ষোভ প্রকাশ করেন তাঁরা। আন্দোলনে আহত শিক্ষার্থীরা ১১ জুলাই দিনটির রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি দাবি করে বলেন, ‘সরকার পতনের মূল বীজ বপন শুরু হয় কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে। কারণ, প্রথম ১১ জুলাই কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বাংলা ব্লকেড কর্মসূচি পালন করতে রওনা দিলে পুলিশ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা করে। রক্ত ঝরে শিক্ষার্থীদের। কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে হামলার শুরু হলেও এই বিশ্ববিদ্যালয়ের নামই প্রধান উপদেষ্টার জুলাই ক্যালেন্ডারে নেই। কেন কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম জুলাই ক্যালেন্ডারে নেই, এর ব্যাখ্যা অবিলম্বে দিতে হবে এবং রাষ্ট্রীয়ভাবে ১১ জুলাইকে ঘোষণা দিতে হবে। না হলে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা আবার মহাসড়ক ব্লকেড কর্মসূচি ঘোষণা করবে।’
বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক মো.
গত বছর কোটা সংস্কার আন্দোলনের সময় ১১ জুলাই আন্দোলনের শুরুর দিকে সারা দেশে প্রথম কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা পুলিশি হামলার শিকার হন। ওই দিন বিশ্ববিদ্যালয়-সংলগ্ন আনসার ক্যাম্পের সামনে কাঁদানে গ্যাসের শেল নিক্ষেপ, লাঠিপেটা, রাবার বুলেটে অর্ধশতাধিক শিক্ষার্থী আহত হন। পুলিশের হামলায় আহত হন বিশ্ববিদ্যালয়ে কর্মরত কয়েকজন গণমাধ্যমকর্মীও। পরে ওই স্থানটির নাম দেওয়া হয় ‘ছাত্র আন্দোলন চত্বর’। পুলিশের হামলা ও বাধাকে উপেক্ষা করে সেদিন শিক্ষার্থীরা কোটবাড়ী বিশ্বরোড-সংলগ্ন ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক প্রায় ৬ ঘণ্টা অবরোধ করে রাখেন।
এদিকে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের অনুষ্ঠান শেষে বিকেলে কুমিল্লা জেলা আইনজীবী সমিতির সদস্যদের নবনির্মিত ভবনের উদ্বোধন করেন উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভুঁইয়া। পরে জেলা আইনজীবী সমিতির আয়োজনে এক সভায় যোগ দেন তিনি।
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ন উপদ ষ ট ১১ জ ল ই র জন য প রথম স মরণ সরক র
এছাড়াও পড়ুন:
সোনারগাঁয়ে চাঁদা না পেয়ে সন্ত্রাসী হামলা, লুট : আহত ৩
সোনারগাঁয়ের কাঁচপুরে দাবিকৃত ৫০ হাজার টাকা চাঁদা না পেয়ে হামলা চালিয়েছে সন্ত্রাসীরা। হামলায় আহত হয়েছেন ভুক্তভোগী মো. আব্দুল হাকিম সরদার (৪৮), তার স্ত্রী জিয়াসমিন আক্তার (৩৩) ও শিশু সন্তান মো. আমির হামজা (১৩)।
এদের মধ্যে মো. আব্দুল হাকিম সরদার গুরুতর আহত হয়েছেন। এ সময় সন্ত্রাসীরা আব্দুল হাকিমের আলমারী ভেঙে নগদ দুই লাখ সাইত্রিশ হাজার টাকা, সাড়ে তিন ভরি ওজনের স্বর্নালংকার মূল্য অনুমানিক ছয় লাখ ত্রিশ হাজার টাকা, একটি কম্পিউটার, দুটি টাস মোবাইল ও একটি বাটন মোবাইল সেট লুট করে নিয়ে যায়। পরে স্থানীয়রা তাদের উদ্ধার করে সোনারগাঁ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে চিকিৎসা করায়।
চিকিৎসা শেষে শুক্রবার মো. আব্দুল হাকিম সরদার সাত জনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাতনামা ৪/৫ জনকে অভিযুক্ত করে সোনারগাঁও থানায় একটি অভিযোগ দায়ের করেন। ঘটনাটি ঘটে উপজেলার কাঁচপুর সোনাপুর কবরস্থান এলাকায় তোফাজ্জল হোসেন এর ভাড়া বাড়ীতে ।
অভিযোগে আব্দুল হাকিম সরদার উল্লেখ করেন, কাঁচপুর সোনাপুর এলাকার মামুন (৪৫), সিজান (৩৫), শরিফ (৪৫), হৃদয় (৩৫), বাবুল (২৭), সালাউদ্দিন (৩২), শাওন (২৮) সহ অজ্ঞাতনামা ৪/৫ জন সন্ত্রাসী তার কছে ৫০ হাজার টাকা দাবি করে না পেয়ে বুধবার দুপুরে তার বাসায় যায়।
এ সময় তারা তার বুকে আগ্নেয়াস্ত্র ঠেকিয়ে আবারও চাঁদা দাবি করে। তিনি চাঁদা দিতে অস্বীকার করায় তারা তাকে মারধর শুরু করে। একপর্যায়ে ধারালো চাপাতি দিয়ে মাখায় কোপ মেরে গুরুতর রক্তাক্ত জখম করে। এ সময় তার শিশু পুত্র আমির হামজা ও স্ত্রী জিয়াসমিন আক্তার এগিয়ে আসলে তাদেরকেও মারধর করে আহত করে সন্ত্রাসীরা।
পরে অভিযুক্তরা ঘরে থাকা আলমারী ভেঙে নগদ দুই লাখ সাইত্রিশ হাজার টাকা, সাড়ে তিন ভরি ওজনের স্বর্নালংকার মূল্য অনুমানিক ছয় লাখ ত্রিশ হাজার টাকা, একটি কম্পিউটার, দুটি টাস মোবাইল ও একটি বাটন মোবাইল সেট লুট করে নিয়ে যায়। যাওয়ার সময় এ ঘটনা নিয়ে বাড়াবাড়ি করলে হত্যার হুমকি প্রদান করে।
এবিষয়ে অভিযোগ তদন্তকারী কর্মকর্তা সোনারগাঁও থানার উপপরিদর্শক (এসআই) শহিদ বলেন, অভিযোগ হাতে পাইনি। আমার শরীর অসুস্থ্য বোধ করায় রুমে চলে এসেছি। আগামীকাল খোঁজ নিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিবো।