পুলিশের কাছ থেকে সহজে সেবা পান না ৯০ শতাংশ শিক্ষার্থী। প্রায় ৩৮ শতাংশ শিক্ষার্থী সেবা নিতে গিয়ে হেনস্তার মুখে পড়েন। প্রায় ৪০ শতাংশ শিক্ষার্থী সরকার বা রাজনৈতিক নেতার সুপারিশ এবং ঘুষের মাধ্যমে সেবা নেন। বিশ্ববিদ্যালয় স্তরের শিক্ষার্থীর ওপর পরিচালিত এক গবেষণায় এসব তথ্য উঠে এসেছে।

রোববার বিকেলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মুজাফফর আহমেদ চৌধুরী মিলনায়তনে ‘জনবান্ধব এবং দায়বদ্ধ পেশাদার পুলিশি ব্যবস্থা বিনির্মাণ : শিক্ষার্থীদের প্রত্যাশা এবং সুপারিশ’ শীর্ষক আয়োজিত এক সেমিনারে গবেষণার ফলাফল তুলে ধরেন উন্নয়ন অধ্যয়ন বিভাগের অধ্যাপক ড.

কাজী মারুফুল ইসলাম। ‘সেন্টার অন বাজেট অ্যান্ড পলিসি’ ও ‘জননীতি এবং শাসনব্যবস্থা বিষয়ক গবেষণা দল’ এই সেমিনারের আয়োজক। গবেষণায় ২ হাজার শিক্ষার্থীর কাছ থেকে উপাত্ত সংগ্রহ করা হয়। এ ছাড়া ২০টি ফোকাস দল আলোচনার মাধ্যমে ২৫০ জনের কাছ থেকে উপাত্ত সংগ্রহ করে। সরকারি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় ও মাদ্রাসার শিক্ষার্থীরা এতে অংশ নেন।

গবেষণায় পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, ৬৮ দশমিক ৫ শতাংশ শিক্ষার্থী পুলিশকে আরও বেশি জবাবদিহির আওতায় আনতে স্বাধীন পুলিশ কমিশন গঠনের পক্ষে মত দিয়েছেন। পুলিশের সংখ্যা বাড়ানোর  পক্ষে মত দেন ৮ শতাংশ শিক্ষার্থী।

গবেষণায় উঠে এসেছে, পুলিশ প্রশাসন অধিকাংশ সময় ক্ষমতাসীন দলের আদেশ ও ইচ্ছা অনুযায়ী কাজ করে। তারা সরকারের রাজনৈতিক হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহৃত হওয়ায় জবাবদিহি হারিয়েছে। ফলে একটি জনশুনানি এবং একটি স্বাধীন তত্ত্বাবধায়ক সেল গঠনের মাধ্যমে পুলিশকে জবাবদিহি ও দায়বদ্ধ করা সম্ভব। এ ছাড়া একটি স্বাধীন কমিশনের মাধ্যমে পুলিশের নিয়োগ প্রক্রিয়া পরিচালনা করলে তাদের জবাবদিহির মধ্যে আনা যেতে পারে।

৮০ শতাংশ উত্তরদাতা রাজনীতিমুক্ত স্বাধীন পুলিশ কমিশন গঠনের সুপারিশ করেন। পুলিশের বেতন বাড়ানোর সুপারিশ করেন ৪০ শতাংশ উত্তরদাতা। প্রায় ৩৮ শতাংশ উত্তরদাতা পুলিশের প্রশিক্ষণ ও অন্যান্য সুবিধা বাড়ানোর কথা বলেন।

উন্নয়ন অধ্যয়ন বিভাগের অধ্যাপক তৈয়েবুর রহমানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন যুক্তরাজ্যের নটিংহাম বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. ইয়ান-হেনরিক মায়ার-শ্যালিং, ইউএনডিপির পলিটিক্যাল গভর্ন্যান্সের উপদেষ্টা শীলা তাসনিম হক প্রমুখ।

উৎস: Samakal

এছাড়াও পড়ুন:

মুসলমান বলেই রোহিঙ্গারা ভয়াবহ পরিস্থিতির শিকার

রোহিঙ্গা সম্প্রদায়ের দুরবস্থা বর্তমান সময়ে অন্যতম করুণ মানবিক সংকট বলে উল্লেখ করেছেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস। তিনি বলেছেন, শুধু মুসলমান হওয়ার কারণেই রোহিঙ্গারা এই ভয়াবহ পরিস্থিতির শিকার।

গতকাল সোমবার রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় তুরস্কের একটি সংসদীয় প্রতিনিধিদলের সঙ্গে সাক্ষাতের সময় এ কথা বলেন প্রধান উপদেষ্টা। পাঁচ সদস্যের ওই প্রতিনিধিদলের নেতৃত্ব দিয়েছেন তুরস্ক-বাংলাদেশ সংসদীয় মৈত্রী গ্রুপের সভাপতি ও তুর্কি পার্লামেন্ট সদস্য মেহমেত আকিফ ইয়িলমাজ।

সাক্ষাতে দুই পক্ষ বাণিজ্য, বিনিয়োগ ও মানবিক সহায়তার ক্ষেত্রগুলোতে দ্বিপক্ষীয় সহযোগিতা আরও জোরদার করার উপায় নিয়ে আলোচনা করে। এ সময় মেহমেত আকিফ ইয়িলমাজ বলেন, তুরস্ক ও বাংলাদেশের মধ্যে গভীর সাংস্কৃতিক ও ঐতিহাসিক সম্পর্ক রয়েছে। দুই দেশের মধ্যে বিদ্যমান দৃঢ় বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কের ওপর আলোকপাত করেন তিনি।

ইয়িলমাজ বলেন, তাঁদের প্রতিনিধিদল রোববার কক্সবাজারে রোহিঙ্গা শিবির পরিদর্শন করেছে এবং তুর্কি বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি সংস্থা, বিশেষ করে তুর্কি ফিল্ড হাসপাতালের মানবিক কার্যক্রম সম্পর্কে অবহিত হয়েছে। এ সময় রোহিঙ্গা সম্প্রদায়ের প্রতি তুরস্কের অবিচল সমর্থনের জন্য কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন প্রধান উপদেষ্টা। তুর্কি উদ্যোক্তাদের বাংলাদেশে বিনিয়োগের আহ্বান জানান তিনি।

অধ্যাপক ইউনূস বলেন, ‘রোহিঙ্গা সম্প্রদায়ের দুরবস্থা আমাদের সময়ের অন্যতম করুণ মানবিক সংকট। তারা শুধু মুসলমান বলেই এই ভয়াবহ পরিস্থিতির শিকার এবং তাদের নাগরিকত্ব কেড়ে নেওয়া হয়েছে।’ তিনি আরও বলেন, ‘আট বছর ধরে আশ্রয়শিবিরে থাকায় রোহিঙ্গা শিশুদের শিক্ষা ও ভবিষ্যৎ সুযোগ একেবারেই সীমিত হয়ে পড়েছে। এই অবস্থা হতাশা ও অস্থিতিশীলতার জন্ম দিতে পারে।’

সম্পর্কিত নিবন্ধ