প্রথম শ্রেণির পৌরসভা নওগাঁ। তবে এই শহরের অধিকাংশ এলাকায় প্রয়োজনীয় সংখ্যক সড়কবাতি নেই। অনেক জায়গায় সড়কবাতি স্থাপনের জন্য ল্যাম্পপোস্ট থাকলেও, সেগুলোতে স্থাপিত বাতিগুলো দীর্ঘদিন ধরে নষ্ট হয়ে আছে। পৌরসভার হিসাবমতেই অর্ধেকের বেশি সড়কবাতি নষ্ট হয়ে আছে।
সড়কবাতি না থাকায় শহরবাসীকে বাজারের রাস্তাঘাট ও প্রধান সড়কে চলাচল করতে হয় সড়কের পাশের বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানের আলোতে। সবচেয়ে খারাপ অবস্থা পাড়া-মহল্লার রাস্তাগুলোর। সড়কবাতি না থাকায় পাড়া-মহল্লার অনেক এলাকায় সন্ধ্যা নামলেই ঘুটঘুটে অন্ধকার নেমে আসে। বাসিন্দাদের চলাচলে সমস্যায় পড়তে হচ্ছে। ঘটছে চুরি-ছিনতাইও। এরপরও এ বিষয়ে নজর নেই পৌর কর্তৃপক্ষের।
গত শুক্রবার ও শনিবার পৌরসভার বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, অধিকাংশ সড়কেই অনেক দূর পরপর দু–একটা লাইট জ্বলে। তারপর আবার অন্ধকার। সড়কের পাশে ল্যাম্পপোস্ট থাকলেও সেগুলোর বাতি নষ্ট থাকায় আলো জ্বলছে না। বর্তমানে সড়কগুলোতে যে পরিমাণ সড়কবাতি জ্বলছে, তা প্রয়োজনের তুলনায় অপর্যাপ্ত। মূল শহর, বাণিজ্যিক এলাকা ও আবাসিক এলাকাগুলোতে সড়কবাতি কিছুটা দেখা গেলেও বর্ধিত পৌরসভার পাড়া ও মহল্লার অধিকাংশ সড়কে সড়কবাতি নেই।
পৌরসভার ৯ নম্বর ওয়ার্ডের চকরামপুর এলাকার বাসিন্দা আরিফুল ইসলাম ও জিল্লুর রহমান বলেন, তাঁদের এলাকায় ছয়-সাত বছর আগে সড়কের পাশে কিছু দূর পরপর কিছু ল্যাম্পপোস্ট স্থাপন করা হয়। ল্যাম্পপোস্টে বাতি লাগানোর এক-দেড় বছর পর প্রায় সব বাতি নষ্ট হয়ে যায়। সড়কবাতি না থাকায় সন্ধ্যার পর আতঙ্ক নিয়ে চলাচল করতে হয়। অথচ প্রথম শ্রেণির পৌরসভা হিসেবে শহরের অন্য বাসিন্দাদের মতো তাঁদেরকেও কর ঠিকই দিতে হচ্ছে।
পৌরসভার ৭ নম্বর ওয়ার্ডের মধ্যপাড়ার বাসিন্দা শামীনূর রহমান, ধোপাপাড়ার মিলন কুমার ও লিটন কুমার বলেন, এক বছরের বেশি সময় ধরে তাঁদের মহল্লার গলি রাস্তাগুলোয় সড়কবাতি জ্বলে না। সন্ধ্যা নামলেই ঘুটঘুটে অন্ধকার নেমে আসে। সড়কবাতি না থাকার কারণে এলাকায় চুরি-ছিনতাইয়ের ঘটনা বেড়ে গেছে।
নওগাঁ পৌরসভার বাজার এলাকা হিসেবে পরিচিত কাপড়পট্টি, বাটার মোড়, গোস্তহাটির মোড়, আটাপট্টি, চুড়িপট্টি এলাকায় প্রায় দুই হাজার বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান আছে। পথচারীদের চলাচলে গভীর রাত পর্যন্ত এসব এলাকা সরগরম থাকে। গত শনিবার বাজার এলাকা ঘুরে দেখা যায়, বাজার এলাকার অধিকাংশ সড়কেই বাতি জ্বলে না। পথচারীদের চলাচল হচ্ছে সড়কের পাশের বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানের আলোতে।
কথা হয় চুড়িপট্টি মোড়ে ফল বিক্রেতা আনারুল ইসলামের সঙ্গে। তিনি বলেন, দোকানপাট বন্ধ হয়ে গেলে পুরো এলাকা অন্ধকার হয়ে যায়। কিছু কিছু দোকানদার নিরাপত্তার জন্য দোকানের সামনে আলো জ্বালিয়ে রেখে যান।
নওগাঁ পৌরসভার প্রকৌশল বিভাগের বিদ্যুৎ শাখা থেকে জানা যায়, নওগাঁ পৌরসভায় বিভিন্ন সময় মোট ৪ হাজার ৭৪০টি ল্যাম্পপোস্ট স্থাপন করা হয়। এসব ল্যাম্পপোস্টের মধ্যে বর্তমানে মাত্র ১ হাজার ৮৬৯টিতে আলো জ্বলছে। ২ হাজার ৮৭১টি ল্যাম্পপোস্টেই আলো জ্বলছে না।
পৌরসভার নির্বাহী প্রকৌশলী সাজ্জাদ হোসেন বলেন, প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে কিংবা শর্টসার্কিট বা ট্রান্সফরমারে বিস্ফোরণ ঘটলে অনেক সময় বাতি নষ্ট হয়ে যায়। আবার অনেক সময় বাতিগুলো ইট ছুড়ে নষ্ট করে দেওয়া হয়, চুরি করে নিয়ে যায়। পৌরসভায় ৪ হাজার ৭৪০টি লাইটপোস্ট আছে। লাইটপোস্টে বাতি নষ্ট হয়ে গেলে সেগুলো সংস্কার করা একটি ধারাবাহিক প্রক্রিয়া।
পৌরসভার প্রশাসক ও নওগাঁ স্থানীয় সরকার বিভাগের উপপরিচালক টি এম এ মমিনও সড়কবাতিগুলো না থাকায় সমস্যা হওয়ার কথা স্বীকার করেছেন। তিনি বলেন, শুধু সড়কবাতি নয়, পৌরসভায় অনেক ধরনের সমস্যাই রয়েছে। প্রশাসক হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকেই পৌরসভার ফুটপাত দখলমুক্ত করাসহ বিভিন্ন সমস্যা সমাধানের চেষ্টা করা হচ্ছে। পৌরসভার সড়কগুলোতে সড়কবাতি সমস্যা সমাধানের জন্য ইতিমধ্যে কিছু উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
তিন সাংবাদিকের চাকুরিচ্যুতির ঘটনায় ডিআরইউ’র উদ্বেগ
ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির (ডিআরইউ) সদস্য সাংবাদিক রফিকুল বাসার, মুহাম্মদ ফজলে রাব্বি ও মিজানুর রহমানসহ কয়েকজন সংবাদকর্মীর চাকরিচ্যুতির ঘটনায় উদ্বেগ জানিয়েছে ডিআরইউ।
বুধবার (৩০ এপ্রিল) ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির কার্যনির্বাহী কমিটির পক্ষে সভাপতি আবু সালেহ আকন ও সাধারণ সম্পাদক মাইনুল হাসান সোহেল সংবাদকর্মীদের চাকুরিচ্যুতির ঘটনায় এ উদ্বেগ জানান।
উল্লেখ্য, চ্যানেল আই’র সাংবাদিক রফিকুল বাসার, এটিএন বাংলার মুহাম্মদ ফজলে রাব্বি ও দীপ্ত টিভির সাংবাদিক মিজানুর রহমানকে মঙ্গলবার কোনো রকম পূর্ব নোটিশ ছাড়াই চাকরিচ্যুত করে কর্তৃপক্ষ।
ডিআরইউ নেতৃবৃন্দ তিন সাংবাদিককে চাকরিচ্যুতির কারণ ব্যাখ্যা করার দাবি জানিয়েছেন।
এএএম//