কুষ্টিয়া সদর ও সাতক্ষীরার কলারোয়া উপজেলায় দুই ইজিবাইকচালকের লাশ উদ্ধার করেছে পুলিশ। শুক্রবার সকালে কুষ্টিয়া সদর উপজেলার মোল্লাতেঘড়িয়া এলাকায় কুষ্টিয়া-রাজবাড়ী মহাসড়কের পাশে একটি গাছে ঝুলন্ত অবস্থায় এবং কলারোয়ার ইলিশপুর এলাকায় পানির মধ্যে হাত-পা বাঁধা অবস্থায় ওই দুজনের লাশ উদ্ধার করা হয়।

নিহত দুজনই গতকাল বৃহস্পতিবার ইজিবাইক নিয়ে বের হয়ে আর বাড়িতে ফেরেননি। তাঁদের ইজিবাইকগুলো পাওয়া যায়নি। স্বজনদের দাবি, চালককে হত্যার পর ইজিবাইক ছিনতাই করা হয়েছে। এদিকে কুষ্টিয়ায় ইজিবাইকচালকের লাশ উদ্ধারের ঘটনার প্রতিবাদে কুষ্টিয়া-রাজবাড়ী আঞ্চলিক মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেছেন চালকের স্বজন ও এলাকাবাসী।

নিহত ওই ইজিবাইকচালকের নাম রফিকুল ইসলাম (৫০)। তিনি মোল্লাতেঘড়িয়া আদর্শপাড়া এলাকার দবির উদ্দিনের ছেলে। পুলিশ তাঁর লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালের মর্গে পাঠিয়েছে।

রফিকুলের স্বজনেরা জানান, গতকাল রাত ৯টার দিকে ইজিবাইক নিয়ে বাড়ি থেকে বের হন রফিকুল। গভীর রাত হয়ে গেলেও বাড়িতে ফিরে না আসায় তাঁরা বিভিন্ন জায়গায় খোঁজাখুঁজি শুরু করেন। সকালে পরিবারের সদস্যরা জানতে পারেন, মোল্লাতেঘড়িয়া এলাকায় কুষ্টিয়া-রাজবাড়ী মহাসড়কের পাশে একটি গাছে লাশ ঝুলছে। পরে সেখানে গিয়ে রফিকুলকে শনাক্ত করা হয়।

লাশ পাওয়ার খবর ছড়িয়ে পড়লে এলাকার লোকজন বিক্ষোভে ফেটে পড়েন। তাঁরা প্রথমে মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেন। পরে পুলিশ ও সেনাসদস্যরা ঘটনাস্থলে গিয়ে কথা বললে তাঁরা সড়ক ছেড়ে দেন। এর কিছুক্ষণ পর বিক্ষোভকারীরা লাশ নিয়ে মোল্লাতেঘড়িয়া থেকে শহরের থানা মোড় পর্যন্ত অভ্যন্তরীণ সড়ক অবরোধ করেন। বেলা ১১টা থেকে ঘণ্টাব্যাপী মহাসড়ক অবরোধ থাকায় দুই পাশে যানজটের সৃষ্টি হয়। পরে বেলা ১১টা ৫০ মিনিটের দিকে যান চলাচল স্বাভাবিক হয়।

নিহতের ছোট ভাই আতিয়ার রহমান বলেন, ইজিবাইক ছিনতাইয়ের জন্য পরিকল্পিতভাবে তাঁর ভাইকে নেশাজাতীয় কিছু খাইয়ে অচেতন করে শ্বাসরোধে হত্যা করা হয়েছে। হত্যার পর লাশ গাছে ঝুলিয়ে রাখা হয়েছে। ছিনতাইকারী চক্র এ ঘটনায় জড়িত।

কুষ্টিয়া মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোশাররফ হোসেন বলেন, খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে লাশ উদ্ধার করে। এ ঘটনায় থানায় হত্যা মামলা প্রক্রিয়াধীন। জড়িতদের ধরতে অভিযান চলছে। মহাসড়ক অবরোধ করার পর স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে পরিস্থিতি স্বাভাবিক করা হয়।

এদিকে সাতক্ষীরার কলারোয়ায় দুই পা, মুখ বাঁধা ও গলায় দড়ি প্যাঁচানো এক ইজিবাইকচালকের মরদেহ উদ্ধার করেছে পুলিশ। আজ সকালে উপজেলার ইলিশপুর এলাকার একটি ইটভাটার সামনে থেকে লাশটি উদ্ধার করা হয়। নিহতের নাম হাসান আলী (৫৩)। তিনি যশোরের ঝিকরগাছা উপজেলার বেনেয়ালি গ্রামের বাসিন্দা।

হাসানের স্বজনেরা জানান, হাসান কখনো ভ্যান আবার কখনো ইজিবাইক চালিয়ে জীবিকা নির্বাহ করতেন। গতকাল সকালে ইজিবাইক নিয়ে বের হন। সারা দিন আর বাড়িতে ফেরেননি। সন্ধ্যা সাতটার দিকে তাঁর স্ত্রী মুঠোফোনে কল করলে জানান, একটি ভাড়া নিয়ে দূরে যাচ্ছেন, ফিরতে একটু দেরি হবে। কিন্তু বাড়িতে না ফেরায় রাত নয়টার দিকে স্ত্রী তাঁর মুঠোফোনে কল করলেও কেউ ধরেননি। এভাবে রাত একটা পর্যন্ত মুঠোফোনে কল গেলেও কেউ ধরছিলেন না। একপর্যায়ে বিষয়টি ঝিকরগাছা থানা-পুলিশকে জানানো হয়। আজ সকালে একজনের মরদেহ উদ্ধারের খবর ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়লে তাঁরা গিয়ে হাসানকে শনাক্ত করেন।

কলারোয়া থানার ওসি শেখ সাইফুল ইসলাম বলেন, গ্রাম পুলিশের মাধ্যমে খবর পেয়ে সকাল সাড়ে আটটার দিকে ঘটনাস্থলে গিয়ে লাশটি উদ্ধার করা হয়। পা বাঁধা ছিল। গলায় দড়ি প্যাঁচানো ছিল। তাঁর ইজিবাইকটি পাওয়া যায়নি। ধারণা করা হচ্ছে, ইজিবাইকটি ছিনতাইয়ের পর তাঁকে হত্যা করে লাশ ফেলে গেছে। লাশ ময়নাতদন্তের জন্য সাতক্ষীরা সদর হাসপাতালের মর্গে পাঠানোর প্রস্তুতি চলছে। নিহতের পরিবার মামলা করবে বলে জানিয়েছে।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ছ নত ই চ লক র কল র য় উপজ ল

এছাড়াও পড়ুন:

এই অপচয় রোধে প্রয়োজন টেকসই পদক্ষেপ

প্রতিবছরের মতো এবার যে এসএসসি পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশ নিয়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে সাড়ম্বর আনুষ্ঠানিকতার আয়োজন ছিল না, এটা ভালো দৃষ্টান্ত। অতীতে এসএসসি বা এইচএসসি পরীক্ষার ফল প্রকাশ নিয়ে আনুষ্ঠানিকতার নামে সরকারের মাহাত্ম্য প্রচার করা হতো। 

তবে চলতি বছরের এসএসসি পরীক্ষার ফলাফল খুবই হতাশাজনক।  বৃহস্পতিবার প্রকাশিত এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষার ফলাফলে দেখা যায়, ৯টি সাধারণ শিক্ষা বোর্ডের অধীন এসএসসি পরীক্ষা দিয়েছে ১৪ লাখ ৭৯ হাজার ৩১০ জন পরীক্ষার্থী। পাস করেছে ১০ লাখ ৬ হাজার ৫৫৪ জন। অকৃতকার্য হয়েছে ৪ লাখ ৭২ হাজার ৪৪৬ জন। পাসের হার ৬৮ দশমিক শূন্য ৪; যা গতবার ছিল ৮৩ দশমিক ৭৭ শতাংশ। মাদ্রাসা ও কারিগরি শিক্ষা বোর্ড যুক্ত করলে অকৃতকার্য শিক্ষার্থী ৬ লাখের বেশি।  

এই যে জীবনের প্রথম পাবলিক পরীক্ষায় প্রায় এক-তৃতীয়াংশ শিক্ষার্থী অকৃতকার্য হলো, এর জন্য তাদের দায়ী করা যায় না। দায়ী হলেন শিক্ষার অভিভাবক বা রক্ষকেরা। বাংলাদেশে যখন যেই সরকার আসে, তাদের মতো করে একটি শিক্ষানীতি বা কমিশন করে। কিন্তু সেই শিক্ষানীতি বা কমিশন শিক্ষার মানোন্নয়নে আদৌ ভূমিকা রাখছে কি না, সেটা খতিয়ে দেখা হয় না। 

এবার এসএসসি পরীক্ষায় পাসের হার কম হওয়ার জন্য শিক্ষার অভিভাবকেরা যেসব কারণ চিহ্নিত করেছেন, তাকে ‘ঐচ্ছিক’ হিসেবে ধরে নেওয়া যায়। মূল কারণ তাঁরা এড়িয়ে গেছেন। ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক খন্দোকার এহসানুল কবির বলেন, ‘আমাদের কোনো টার্গেট ছিল না যে পাসের হার এত করব, বাড়াব, নাকি কমাব। আমাদের মিশন ছিল পরীক্ষা সুন্দরভাবে সম্পন্ন করা।’ 

সুন্দরভাবে পরীক্ষা সম্পন্ন করা শিক্ষা বোর্ড তথা সংশ্লিষ্ট সবার দায়িত্ব। এতে কৃতিত্ব নেওয়ার কিছু নেই। মূল কথা হলো নীতিনির্ধারকেরা শিক্ষার সমস্যাটি কীভাবে দেখেছেন এবং তার প্রতিকারে কী ব্যবস্থা নিয়েছেন। করোনার কারণে দুই বছর ঠিকমতো বিদ্যালয়ে পাঠদান হয়নি, এটা সত্য; কিন্তু তার আগে কিংবা পরেও পাঠদান সুচারুভাবে সম্পন্ন হয়েছে, এ কথা জোর দিয়ে বলা যায় না। প্রতিটি শ্রেণিতে শিক্ষার্থীর মান যাচাই করার কথা থাকলেও সেটা হয় না। এ কারণেই এসএসসিতে বিপুলসংখ্যক শিক্ষার্থী অকার্যকর হয়।

আমরা উদ্বেগের সঙ্গে লক্ষ করেছি, শ্রেণিকক্ষের চেয়ে কোচিং করতে শিক্ষার্থীদের বেশি উৎসাহিত করা হয়। আগে কোচিং সেন্টার ছিল শহরাঞ্চলে, এখন প্রত্যন্ত অঞ্চলেও প্রসারিত হয়েছে। কোচিং মানে শিক্ষা নয়, পরীক্ষায় কী প্রশ্ন আসবে, কী উত্তর  হবে; সেটা শিক্ষার্থীকে জানিয়ে দেওয়া। বহু বছরের কু–অভ্যাসে আমরা শিক্ষাকে এই স্তরে নিয়ে এসেছি। 

প্রতিটি দেশের একটি শিক্ষা–দর্শন থাকে, যার উদ্দেশ্য শিক্ষার্থীর মানসিক বিকাশ ও ভবিষ্যতে তাকে দক্ষ জনশক্তি হিসেবে গড়ে তোলা। আমাদের শিক্ষার নীতিনির্ধারকেরা এর ওপর কখনো জোর দেননি।  অকৃতকার্য শিক্ষার্থীদের অনেকের পড়াশোনা চিরতরে বন্ধ হয়ে যাবে। বিশেষ করে মেয়েশিক্ষার্থীদের। এটা কেবল পরিবার বা রাষ্ট্রীয় সম্পদের ক্ষতি নয়, মানবসম্পদেরও অপচয়। 

শিক্ষা খাতের প্রতি পূর্বাপর সব সরকারই উদাসীনতা দেখিয়ে আসছে। এমনকি গণ–অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে আসা সরকারও শিক্ষার প্রতি যথেষ্ট মনোযোগ দেয়নি। শিক্ষার মানোন্নয়নে সর্বস্তরে মেধাবী শিক্ষকদের নিয়োগ নিশ্চিত করতে হবে, সময়মতো পাঠ্যবইসহ শিক্ষার সব উপকরণ শিক্ষার্থীদের কাছে পৌঁছাতে হবে। আর মেধাবীরা তখনই এই পেশায় আসবেন, যখন সম্মানজনক বেতন–ভাতা পাবেন। 

এসএসসি পরীক্ষায় বিপুলসংখ্যক শিক্ষার্থীর অকৃতকার্য হওয়া ঠেকাতে সরকারকে শিক্ষায় বরাদ্দ বাড়ানোর পাশাপাশি ঠকমতো পাঠদান ও মান যাচাই হচ্ছে কি না, সে বিষয়ে তদারকি জোরদার করার বিকল্প নেই।

সম্পর্কিত নিবন্ধ