স্যুপ খেয়ে কি সত্যিই ওজন কমানো যায়
Published: 13th, January 2025 GMT
আপনি কিসের তৈরি স্যুপ খাচ্ছেন, মূলত তার ওপরই নির্ভর করছে স্যুপ খেলে আপনার ওজন বাড়বে, নাকি কমবে। ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখতে চাইলে আপনাকে ক্যালরি হিসাব করে স্যুপ তৈরি করতে হবে। আর এমন স্যুপ বেছে নিতে হবে, যা খেলে বেশ লম্বা একটা সময় আপনার ক্ষুধা লাগবে না। অবশ্য পেট ভরার মতো খাবার না হলেও কিন্তু ক্লিয়ার স্যুপ খাওয়া যেতে পারে কোনো কোনো বেলায়। ওজন কমাতে কোন স্যুপ খাওয়া যাবে আর কোন স্যুপ খাওয়া যাবে না, এ প্রসঙ্গে বিস্তারিত জানালেন ঢাকার গভর্নমেন্ট কলেজ অব অ্যাপ্লায়েড হিউম্যান সায়েন্সের খাদ্য ও পুষ্টিবিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক শম্পা শারমিন খান।
যে স্যুপে ক্যালরি কমসাধারণভাবে স্যুপকে হালকা খাবার হিসেবে বিবেচনা করা হয়। তবে স্যুপেও ক্যালরির মাত্রা হতে পারে বেশি। যে স্যুপ ঘন করতে কর্নফ্লাওয়ার বা অ্যারারুট–জাতীয় উপকরণ যোগ করা হয়, তাতে ক্যালরির পরিমাণ বেশি। মাখনের মতো উপকরণ দেওয়া হলেও ক্যালরির পরিমাণ বেড়ে যায়। ক্রিমজাতীয় স্যুপ উচ্চ ক্যালরিসম্পন্ন খাবার। তবে ক্রিমটা যদি কেবল সবজি দিয়ে তৈরি করা হয়, তাহলে অবশ্য ভিন্ন কথা।
যদি আপনার লক্ষ্য হয় ওজন নিয়ন্ত্রণ, তাহলে আপনি যে স্যুপ খাচ্ছেন, তাতে ক্যালরির মাত্রা যেন বেশি না হয়। স্যুপে টপিং হিসেবে উচ্চ ক্যালরিসম্পন্ন উপকরণ, যেমন ক্রিম যোগ করা উচিত নয়। সব ধরনের প্রক্রিয়াজাত মাংসই এড়িয়ে চলুন। স্যুপে সস বা কেচাপও যোগ করবেন না। স্বাস্থ্যকর টপিং হিসেবে ডিম, মটরদানা, নানান ধরনের বাদাম, সুস্বাদু মসলা বা পাতা যোগ করা যেতে পারে। টপিং হিসেবে খানিকটা পনিরও মন্দ নয়।
আরও পড়ুনমনো ডায়েট কী, তারকারা কীভাবে এই ডায়েট মেনে ওজন কমান০৬ জানুয়ারি ২০২৫যে স্যুপে পেট ভরা থাকবেএমন স্যুপ বেছে নিন, যা খেলে সহজে ক্ষুধা পাবে না। স্যুপে যদি গোটা বা আধভাঙা সবজি, শাক কিংবা বীজ, অর্থাৎ আঁশসমৃদ্ধ উপকরণ থাকে বেশ ভালো পরিমাণে, তাহলে তা খাওয়ার পর পেট ভরা থাকবে লম্বা সময়। একইভাবে উপকরণ হিসেবে বেশ ভালো পরিমাণে বার্লি বা ওটসের মতো কোনো গোটা শস্য (অর্থাৎ যা পরিশোধিত নয়) থাকলে সেই স্যুপ খাওয়ার পরও সহজেই ক্ষুধা পাবে না। স্যুপে খানিকটা আমিষ যুক্ত হলেও তা খাওয়ার পর পেট ভরা থাকে অনেকক্ষণ। সে হিসেবে মসুর ডালের স্যুপ দারুণ।
তবে ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখতে আপনি কিন্তু নুডলস স্যুপও খেতে পারেন। কারণ, কেবল নুডলস খেলে আপনি যতটা শর্করা গ্রহণ করবেন, নুডলস দেওয়া স্যুপ খেলে সহজেই তার চেয়ে কম পরিমাণে শর্করা গ্রহণ করতে পারবেন। কারণ, স্যুপের জলীয় অংশ দিয়ে সহজেই পেট ভরে যাবে আপনার। নুডলসের পরিমাণ কম রেখে পানির পরিমাণ বাড়ালে আপনি খাবারের স্বাদটাও পাবেন, আবার ক্যালরি গ্রহণও হবে নিয়ন্ত্রিত।
আরও পড়ুনতেঁতুলপানি খেলে কি ওজন কমে০৩ জানুয়ারি ২০২৫যে স্যুপে পেট ভরবে নাক্লিয়ার স্যুপ খেলে অল্প সময় পরই আপনার আরও কিছু খেতে ইচ্ছা করবে। কিন্তু ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখতে চাইলে আপনি কোনো বেলার নাশতায় ক্লিয়ার স্যুপও খেতে পারেন। সে ক্ষেত্রে ক্লিয়ার স্যুপ খাওয়ার পর আপনি এমন কিছু খাবেন, যা খুব একটা সুস্বাদু না হলেও স্বাস্থ্যকর। যেমন স্যুপ খাওয়ার পর আপনি সালাদ খেতে পারেন কিংবা খেতে পারেন পানসে বা টক স্বাদের ফল। তাহলে কিন্তু আর সহজে ক্ষুধা পাবে না।
তবে বারবার স্যুপ নয়খাদ্যাভ্যাস নিয়ন্ত্রণ করতে আপনি দু–এক বেলা স্যুপ খেতেই পারেন। যে স্যুপ খেলে পেট ভরা থাকে, তা আপনি উচ্চ ক্যালরিযুক্ত নাশতার বিকল্প হিসেবে খেতে পারেন। খেতে পারেন রাতের খাবার হিসেবেও। এমন অভ্যাসে ওজন কমবে। তবে প্রতি বেলাতেই স্যুপ খাওয়াও আবার ভালো নয়। প্রায় সারা দিন কেবল তরল খাবার না খেয়ে অন্তত সকাল আর দুপুরে স্বাভাবিক অন্যান্য খাবার খাওয়া প্রয়োজন।
আরও পড়ুনজিমে না গিয়েও যেভাবে ওজন কমাতে পারেন১১ জানুয়ারি ২০২৫.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
‘লিচুর বাগানে’ যে কারণে ‘পিরিতের বেড়া’ দিতে হয়
‘তাণ্ডব’ সিনেমার গান ‘লিচুর বাগানে’ প্রকাশের পর রীতিমতো হইচই পড়ে গেছে। কফি শফ থেকে বাস, মেট্রোরেল আশপাশে কান পাতলে গানটা শোনা যাচ্ছে। কেউ না কেউ শুনছেন। সামাজিক মাধ্যমের স্টোরি ও রিলসেও গানটি ভেসে বেড়াচ্ছে। চরকি ও এসভিএফের অফিশিয়াল ইউটিউব চ্যানেলে প্রকাশিত গানটির আজ পর্যন্ত (১২ এপ্রিল ২০২৫) ভিউ হয়েছে যথাক্রমে ১২ মিলিয়ন ও ৩ দশমিক ৬ মিলিয়ন।
উচ্ছ্বসিত অনেক দর্শক গানটি নিয়ে মন্তব্যও করেছেন। তাহসিন নামের এক শ্রোতা লিখেছেন, ‘গানটির প্রতিটি সুর, দৃশ্য ও পরিবেশনায় বাঙালির ঐতিহ্য ও সংস্কৃতির অপূর্ব রূপ ফুটে উঠেছে। যাত্রাপালার ফিল্মের আবহে তৈরি এই গানটি যেন গ্রামীণ বাংলার প্রাণস্পন্দন তুলে ধরেছে। লোকেশন থেকে শুরু করে কস্টিউম, প্রতিটি ডিটেইলে আছে নিখুঁত যত্ন।’
গানটি নিয়ে সামাজিক মাধ্যমে বন্ধুদের মধ্যে খুনসুটিও চলছে। বন্ধুকে মেনশন দিয়ে কেউ যেমন প্রশ্ন করছেন, ‘কী রে, বেড়া ডিঙাতে পারলি?’ আবার কেউ জিজ্ঞেস করছেন বল তো, ‘“লিচুর বাগানে” কেন “পিরিতের বেড়া” দিতে হয়?’
প্রশ্নটির উত্তর খোঁজার চেষ্টা করা যাক। শুরুতেই ‘লিচুর বাগানে’ গানটি দিয়ে আলোচিত, ‘কে এই ছত্তার পাগলা’ শীর্ষক প্রথম আলোর প্রতিবেদন থেকে কিছু তথ্য জেনে নেওয়া যাক। গবেষক সরোজ মোস্তফার মতে ‘কে দিল পিরিতের বেড়া লিচুরও বাগানে’ পঙ্ক্তির রচয়িতা ও সুরকার ছত্তার পাগলা। তবে সংগীতগবেষক গৌতম কে শুভর মত ভিন্ন। তাঁর মতে, ‘এটি মূলত প্রচলিত ঘেটু গান। “কে দিল পিরিতির বেড়া লিচুর বাগানে?” অংশটি মূল গানের অংশ। ছত্তার পাগলা নিজের মতো করে এর সঙ্গে কথা সংযোজন করেছেন। নেত্রকোনায় ছত্তার পাগলার লেখা রূপটিই বিখ্যাত হয়েছে।’ ২০১৪ সালের এপ্রিলে মারা গেছেন ছত্তার পাগলা। জীবদ্দশায় রচনা ও সুরারোপ করেছেন কয়েক শ গান। মৃত্যুর বছর তিনেক আগে তাঁর কাছ থেকে গানটি শুনে হাতে লিখে রেখেছিলেন আল মামুন চৌধুরী।
আল মামুন চৌধুরীর লেখা অনুযায়ী গানটির কথা:
কে দিল পিরিতের বেড়া, লিচুরও বাগানে
লিচুরও বাগানে গো সই…লিচুরও বাগানে …(ঐ)
পাখি খাইছ না লিচু, বন্দে খাইবো
বন্দে লিচু খাইয়া, খুশি হইবো
আমার কাছে আইসা কইবো
কত শান্তি দিবো আমার মনেপ্রাণে (ঐ)
ছোট ছোট লিচুগুলি, বন্দে তুলে আম্বো তুলি
বন্দে দেয় গো আমার মুখে,
আমি দিতে চাই বন্ধুর মুখের পানে…(ঐ)
মিষ্টি লিচু খাইয়া বন্দে, বাঁশি বাজায় মন আনন্দে
আমার মনে লাগে সন্দে বন্ধু সম্ভব জাদু জানে (ঐ)
বাঁশি হাতে পলায় মালা, তারে চায় ছত্তার পাগলা,
করব লইয়া উলামেলা, (২) প্রাণবন্ধুর সনে…(ঐ)
সরল অর্থে ‘বেড়া’ হচ্ছে প্রতিবন্ধকতা তথা বাধা তৈরির উপকরণ। আর ‘পিরিতের বেড়া’ মানে ভালোবাসায় বাধা। কিন্তু ভালোবাসার এই বাধা তথা প্রতিবন্ধকতা ‘লিচুর বাগানে’ কেন? কবিতা তথা গানে অর্থের তারতম্য অর্থের অনুগত না হয়ে বোধ কিংবা ভাবনার পরবশে প্রস্ফুটিত হয়। ব্যক্তিবিশেষে তা ভিন্ন ভিন্ন অর্থ লাভ করে, ভিন্ন ভিন্ন মূল্য পায়।
আরও পড়ুন‘লিচুর বাগানে’ গানটি দিয়ে আলোচিত, কে এই ছত্তার পাগলা ০৬ জুন ২০২৫‘কে দিল পিরিতের বেড়া, লিচুরও বাগানে’ একটি ‘ঘাটু গান’ বা ‘ঘেটু গান’। এই গান প্রসঙ্গে জানা যায়, এই গানের অন্যতম অনুষঙ্গ ছিল নৃত্য। অল্প বয়সী একটি ছেলেকে মেয়ে সাজিয়ে তার নৃত্যের মধ্য দিয়ে ঘেটু গান পরিবেশিত হতো। সঙ্গে থাকত ঢোল, হারমোনিয়াম, বাঁশি ইত্যাদি বাদ্যযন্ত্র। কয়েকটি ‘ঘেটু গানে’র দৃষ্টান্ত দেখা যাক।
(১)
‘তুই আমারে চিনলে নারে
আমি তো রসের কমলা।
বন্ধুর বাড়ি আমার বাড়ি
মধ্যে নলের বেড়া।’
(২)
ঘুমাইলা ঘুমাইলারে বন্ধু
পান খাইলায়না
এক বালিশে দুইটি মাথা
সুন্দর কইরা কওরে কথা।
গানগুলো থেকে উপলব্ধি করতে কষ্ট হয় না যে ‘ঘেটু গানে’ যেমন ভাষার সারল্য আছে, তেমনিভাবে রূপকল্প হিসেবে ব্যবহৃত হয়েছে যাপিত জীবনের সঙ্গে আষ্টেপৃষ্ঠে থাকা নানা উপকরণ। আর এ ক্ষেত্রে গান রচনার সময় রচয়িতা তাঁর আশপাশ থেকেই গান নির্মাণের উপকরণগুলো যে নিয়ে থাকবেন, সেই ধারণাও পাওয়া যায়। ‘লিচুর বাগানে’ গানের ক্ষেত্রেও বোধ করি এটা ঘটেছে। তাই এই গানে যেমন ‘লিচু বাগানে’র কথা আছে, একইভাবে আছে ‘পাখি’, ‘বাঁশি’ ও ‘লিচু’র কথাও। পাখিকে লিচু না খাওয়ার অনুরোধ করলেও পাখি যেন খেতে না পারে সে কারণেই যে বেড়া দেওয়া হয়েছে; সেই ব্যথাও গানটিতে ফুটে উঠেছে। সব মিলিয়ে ‘লিচুর বাগান’ শেষ পর্যন্ত ‘লিচুর বাগানে’ সীমাবদ্ধ থাকেনি। হয়ে উঠেছে ভালোবাসার প্রতীক।
কথায় আছে, ভালোবাসা জয় করে নিতে হয়। জিতে নেওয়ার মধ্যেই আছে অপার আনন্দ। ভালোবাসায় প্রতিবন্ধকতা থাকাটা মোটেও দোষের নয়। বরং বাধা না থাকাটাই যেন আশ্চর্যের। একইভাবে ভালোবাসা জিতে নেওয়ার পরও পেয়ে গেছি বলে হাল ছেড়ে দিলে চলে না। ‘লিচুর বাগান’কে এ ক্ষেত্রে ভালোবাসার প্রতীক হিসেবে বিবেচনা করলে, ‘লিচুর বাগানে’ ‘পিরিতের বেড়া’ তথা ভালোবাসার বেষ্টনী দেওয়াটাই যুক্তিযুক্ত। কেননা ‘ভালোবাসা’কে ভালোবাসা দিয়েই আগলে রাখতে হয়। প্রবল যত্নে আঁকড়ে রাখতে হয়। যেন কোনো কৌতূহলেই তা দুলে না ওঠে, হারিয়ে না যায়।
আরও পড়ুনসাবিলা তো ‘লিচুর বাগানে’ দিয়ে কী যে আগুন লাগিয়ে দিল...০৫ জুন ২০২৫