স্থানীয় সরকার সংস্কার কমিশনের প্রধান অধ্যাপক তোফায়েল আহমেদ বলেছেন, “প্রার্থীকে শিক্ষাগত যোগ্যতা বেঁধে দেওয়া যাবে না। কারণ, আমাদের দেশের সংবিধান তা সমর্থন করে না। তবে শিক্ষিত ও ভালো প্রার্থীকে ভোটাররা ঠিক করবেন। তারা শিক্ষিত প্রার্থীকে বেছে নেওয়ার সুযোগ গ্রহণ করতে পারেন। দলীয় প্রার্থীকে স্থানীয় নির্বাচন কেউ চাইছে না। সারা দেশে কেউ চায় না। স্থানীয় সরকার সংস্কার কমিশনও এটি নিয়ে কাজ করছে।”

মঙ্গলবার (১৪ জানুয়ারি) দুপুরে মানিকগঞ্জের সিঙ্গাইর উপজেলায় স্থানীয় সরকার সংস্কার বিষয়ক মতবিনিময় সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। উপজেলা পরিষদের সম্মেলনকক্ষে এই মতবিনিময় সভার আয়োজন করে স্থানীয় সরকার সংস্কার কমিশন ও উপজেলা প্রশাসন।

তোফায়েল আহমেদ বলেন, “ভালো প্রার্থীকে নির্বাচনে অংশ নিতে সমস্যায় পড়তে হয়। কারণ, নির্বাচনের খরচ এবং পেশিশক্তির প্রভাব। এগুলো সহজে মুক্ত করার উপায় নেই। কারণ হচ্ছে, সমাজ-সংস্কৃতি এগুলোকে পছন্দ করছে, চাঁদাবাজিকে প্রচ্ছন্নভাবে প্রশ্রয় দিচ্ছে। তবে এই পরিস্থিতি থেকে মুক্ত হতে সবারই ভূমিকা আছে।” 

জুলাই-আগস্টের আন্দোলনের বিষয়ে তিনি বলেন, “বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে প্রায় দুই হাজার ছাত্র-জনতা জীবন দিয়েছেন। আরো কয়েক হাজার মানুষ আহত, পঙ্গুত্ব বরণ করেছেন। যে দেশে প্রধানমন্ত্রী থেকে শুরু করে বায়তুল মোকাররমের খতিব পালিয়ে যান, চেয়ারম্যান-মেম্বার পালিয়ে যান, এটা কোন দেশ! আপনি, আমি সেই দেশের বাসিন্দা। আমরা কোন দেশে দাঁড়িয়ে আছি তা বুঝতে হবে। পৃথিবীর বহু দেশে স্বৈরাচারের পতন হয়েছে, কিন্তু এভাবে সব অংশের পালিয়ে যাওয়ার নজির নেই।”

তোফায়েল আহমেদ বলেন, “ইউনিয়ন পরিষদের এক রকম নির্বাচন হয়। একজন চেয়ারম্যান ও ১২ জন সদস্য হন। কিন্তু উপজেলার সঙ্গে ইউনিয়নের মিল নেই। উপজেলা নির্বাচনে ওয়ার্ড নেই, ওয়ার্ডভিত্তিক নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি হয় না। একজন চেয়ারম্যান এবং দুজন ভাইস চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। তিনজনই কেউ কারো কম নয় বলে নিজেরা ভাবেন। আবার জেলা পরিষদ নির্বাচন আরো ভিন্ন। সেখানে খালুরা, মামুরা মিলে ভোট করেন। পুনর্বাসন কেন্দ্র হিসেবে জেলা পরিষদে বয়স্ক নেতাদের চেয়ারম্যান হিসেবে বসিয়ে রাখা হয়। ১২ জন সদস্য ঘুমিয়ে ঘুমিয়ে অফিস করেন আর অফিসে হেঁটে যাওয়ার মতো চেয়ারম্যানের শক্তি নেই। এগুলো কী কোনো সিস্টেম হলো! এটাকে একটা সিস্টেমে আনার জন্য দেশের সবাইকে চিন্তা করতে হবে।”

স্থানীয় সরকার সংস্কার কমিশনের প্রধান বলেন, “গত ১৫ বছরে দেশে যে নির্বাচন হয়েছে, সেগুলো কোনো নির্বাচন নয়। এই নির্বাচনকে দেখে কেউ যদি কল্পনা করেন, তাহলে কিন্তু তা অন্য জিনিস হয়ে যাবে। আমরা চুন খেয়ে আসছি, এখন দই দেখলে ভয় পাই। সুতরাং, একটি ভালো নির্বাচন করতে চিন্তা করতে হবে। আর এ জন্য সবার দায়িত্ব আছে।”

মতবিনিময় সভায় আরো বক্তব্য দেন- মানিকগঞ্জের জেলা প্রশাসক মানোয়ার হোসেন মোল্লা। এ সময় স্থানীয় সরকার সংস্কার কমিশনের সদস্য অধ্যাপক ফেরদৌস আরফিনা ওসমান, আবদুর রহমান, মাহফুজ কবীর, মাশহুদা খাতুন শেফালী, মোহাম্মদ তারিকুল ইসলাম, ইলিরা দেওয়ান, কাজী মারুফুল ইসলাম, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন ও অর্থ) মোহাম্মদ আবদুল ওয়ারেস, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো.

কামরুল হাসান, উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান আবিদুর রহমান খান, সিঙ্গাইর পৌরসভার সাবেক মেয়র খোরশেদ আলম ভূঁইয়া উপস্থিত ছিলেন। 

সভায় স্থানীয় সরকার নির্বাচন সংক্রান্ত বিভিন্ন বিষয় নিয়ে বিএনপি, জামায়াতে ইসলামীর স্থানীয় নেতা, পৌরসভার সাবেক কাউন্সিলর এবং উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) সাবেক ও বর্তমান চেয়ারম্যান প্রশ্ন করেন এবং মতামত দেন।

ঢাকা/চন্দন/মাসুদ

উৎস: Risingbd

এছাড়াও পড়ুন:

ঘাড়ব্যথার কারণগুলো কী কী, প্রতিরোধ ও চিকিৎসা জেনে রাখুন

অনেক কারণে ঘাড়ে ব্যথা হতে পারে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য—

১. সারভাইক্যাল স্পন্ডেলোসিস

২. সারভাইক্যাল স্পন্ডেলোসিস

৩. সারভাইক্যাল রিবস

৪. সারভাইক্যাল ক্যানেল স্টেনোসিস বা স্পাইনাল ক্যানাল সরু হওয়া

৫. সারভাইক্যাল ডিস্ক প্রলেপস বা হারনিয়েশন যেখানে হারনিয়াটেড ডিস্ক নার্ভের ওপর চাপ প্রয়োগ করে

৬. মাংসপেশি, হাড়, জোড়া, লিগামেন্ট, ডিস্ক (দুই কশেরুকার মাঝখানে থাকে) ও স্নায়ুর রোগ বা ইনজুরি

৭. অস্বাভাবিক পজিশনে নিদ্রা

৮. উচ্চ রক্তচাপ ও হৃদ্‌রোগ

৯. হাড় ও তরুণাস্থির প্রদাহ এবং ক্ষয়

১০. অস্টিওপরোসিস বা হাড়ের ক্ষয় ও ভঙ্গুরতা রোগ

১১. হাড় নরম ও বাঁকা হওয়া

১২. রিউমাটয়েড-আর্থ্রাইটিস ও সেরো নেগেটিভ আর্থ্রাইটিস

১৩. সারভাইক্যাল অস্টিও-আর্থ্রাইটিস

১৪. ফাইব্রোমায়ালজিয়া

১৫. সামনে ঝুঁকে বা পাশে কাত হয়ে ভারী কিছু তুলতে চেষ্টা করা

১৬. হাড়ের ইনফেকশন

১৭. ডিস্কাইটিস (ডিস্কের প্রদাহ)

১৮. পেশাগত কারণে দীর্ঘক্ষণ ঘাড় নিচু বা উঁচু করে রাখলে ইত্যাদি।

উপসর্গ

ঘাড়ব্যথা কাঁধ, বাহু, হাত ও আঙুল পর্যন্ত ছড়াতে পারে।

কাঁধ, বাহু, হাত ও আঙুলে অস্বাভাবিক অনুভূতি বা অবশ ভাব।

বাহু, হাত ও আঙুল দুর্বল হতে পারে।

সব সময় ঘাড় ধরে বা জমে আছে মনে হয়।

ঘাড়ের মুভমেন্ট করলে, ঘাড় নিচু করে ভারী কিছু তোলার পর তীব্র ব্যথা।

হাঁচি, কাশি দিলে বা সামনে ঝুঁকলে ব্যথা বেড়ে যায়।

ব্যথা মাথার পেছন থেকে শুরু হয়ে মাথার সামনে আসতে পারে।

পরীক্ষা-নিরীক্ষা

ঘাড়ব্যথার কারণ নির্ণয় করার জন্য প্রয়োজনীয় ল্যাবরেটরি পরীক্ষা হতে পারে—রক্তের বিভিন্ন পরীক্ষা, ঘাড়ের এক্স-রে, এমআরআই বা সিটি স্ক্যান।

চিকিৎসা

চিকিৎসা এর কারণগুলোর ওপর নির্ভর করে।

কনজারভেটিভ চিকিৎসা: ১. ব্যথা বা প্রদাহনাশক ওষুধ ২.ফিজিওথেরাপি চিকিৎসা। বিভিন্ন ধরনের ফিজিওথেরাপি চিকিৎসা যেমন ম্যানুয়াল বা ম্যানুপুলেশন থেরাপি, থেরাপিউটিক এক্সারসাইজ ব্যবহৃত হয়। বিভিন্ন ধরনের ইলেকট্রোমেডিকেল ইকুইপমেন্ট যেমন ইন্টারফ্যারেনশিয়াল থেরাপি, অতি লোহিত রশ্মি, মাইক্রোওয়েভ ডায়াথারমি, আল্ট্রাসাউন্ড থেরাপি, শর্টওয়েভ ডায়াথার্মি ও ইন্টারমিটেন্ট ট্র্যাকশন ইত্যাদির মাধ্যমে চিকিৎসা করা যায়।

সার্জিক্যাল চিকিৎসা: মেডিকেল চিকিৎসায় ভালো না হলে, ব্যথা ক্রমান্বয়ে বাড়তে থাকলে, স্নায়ু সমস্যা দেখা দিলে, বাহু, হাত ও আঙুলে দুর্বলতা এবং অবশ ভাব দেখা দিলে এবং প্রস্রাব বা পায়খানার নিয়ন্ত্রণ না থাকলে দ্রুত সার্জিক্যাল চিকিৎসা গ্রহণ করতে হবে।

ঘাড়ব্যথা প্রতিরোধে করণীয়

১. সামনের দিকে ঝুঁকে দীর্ঘক্ষণ কাজ করবেন না।

২. মাথার ওপর কোনো ওজন নেবেন না।

৩. প্রয়োজনীয় বিশ্রাম নিতে হবে।

৪. শক্ত বিছানায় ঘুমাবেন।

৫. শোবার সময় একটা মধ্যম সাইজের বালিশ ব্যবহার করবেন, যার অর্ধেকটুকু মাথা ও অর্ধেকটুকু ঘাড়ের নিচে দেবেন।

৬. তীব্র ব্যথা কমে গেলেও ঘাড় নিচু বা উঁচু করা, মোচড়ানো (টুইসটিং) বন্ধ করা।

৭. সেলুনে কখনোই ঘাড় মটকাবেন না।

৯. কাত হয়ে শুয়ে পড়বেন না বা টেলিভিশন দেখবেন না।

১০. কম্পিউটারে কাজ করার সময় মনিটর চোখের লেভেলে রাখবেন।

১১. গরম প্যাড, গরম পানির বোতল দিয়ে গরম সেঁক দেবেন।

১২. ঘাড়ের পেশি নমনীয় ও শক্তিশালী হওয়ার ব্যায়াম করতে হবে।

এম ইয়াছিন আলী, চেয়ারম্যান ও চিফ কনসালট্যান্ট, ঢাকা সিটি ফিজিওথেরাপি হাসপাতাল, ঢাকা

আরও পড়ুনকাঁধের ব্যথা বা কাঁধ জমে যাওয়ার কারণ ও করণীয়১৭ এপ্রিল ২০২৫

সম্পর্কিত নিবন্ধ