আমার ক্যারিয়ারের জন্য গত বছরটি খুব ভালো ছিল: ফারিণ
Published: 16th, January 2025 GMT
মুখে এক চিলতে হাসি। কখনও রাগী কিংবা অভিমানী চরিত্রে। কখনও ধরা দেন প্রান্তিক মানুষের প্রতিচ্ছবি হয়ে। নানা চরিত্রে তিনি বদলে যান ক্যামেরার সামনে। পর্দায় ভেসে ওঠা তাঁর চরিত্রই যেন বাস্তব। এভাবে অভিনয় দিয়ে একের পর এক সাফল্যের সিঁড়ি ভেঙেছেন তিনি। হয়ে উঠেছেন ছোটপর্দা ও ওটিটির উজ্জ্বল তারকা। সিনেমায় দেখিয়েছেন অভিনয়ের মুনশিয়ানা। বলছি, অভিনেত্রী ও মডেল তাসনিয়া ফারিণের কথা।
সৌন্দর্য, মেধা, পরিশ্রমকে এ অভিনেত্রী বেঁধেছেন বিনি সুতোয়। বিদায়ী বছরে বেশ ফুরফুরে মেজাজেই ছিলেন তিনি। উপহার দিয়েছেন ভালো কিছু কাজ। হাজির হয়েছেন নতুন পরিচয়ে। চলতি বছরেও রয়েছে কিছু প্রত্যাশা।
নতুন বছর, নতুন চমক
অতনু ঘোষের ‘আরও এক পৃথিবী’ সিনেমায় পশ্চিমবঙ্গের চলচ্চিত্রে অভিষেক হয়েছে ফারিণের। এতে সুঅভিনয়ের জন্য পুরস্কারও এসেছিল তাঁর ঝুলিতে। ওই সিনেমা দিয়ে সেখানকার ইন্ডাস্ট্রিতে তাঁর পরিচিতি বাড়ে; নতুন কাজের প্রস্তাবও আসে। গত বছর অভিজিৎ সেনের পরিচালনায় ‘প্রতীক্ষা’ সিনেমায় পশ্চিবমঙ্গের তারকা অভিনেতা দেবের সঙ্গে অভিনয়ের কথা ছিল। ভিসা জটিলতায় কলকাতা যাওয়া হয়নি ফারিণের। এ কারণে তাঁকে বাতিল করতে হয়েছে সিনেমার কাজ। একাধিক ভারতীয় সংবাদমাধ্যম খবর প্রকাশ করেছে, সিনেমাটি হবে। প্রতীক্ষা নয়, ‘প্রজাপতি টু’ নামে। আগামী মার্চে লন্ডনে হবে এর দৃশ্য ধারণ। এতে দেবের সঙ্গে ফারিণ অভিনয় করছেন ওই সিনেমায়। সম্প্রতি এমন গুঞ্জন উঠেছে ফারিণকে নিয়ে। এ প্রসঙ্গ উঠতেই ফারিণ বলেন, ‘প্রজাপতি টু নিয়ে এখন চূড়ান্ত কিছু হয়নি। যতক্ষণ পর্যন্ত শুটিং ফ্লোরে কিছু না যায়, তা নিয়ে কথা বলা মুশকিল। নানা জটিলতা থাকে। ফলে কোনো কিছু কনফার্ম হিসেবে ধরে নিতে চাচ্ছি না। যখন শুটিং হবে তখন সবাই জানতে পারবেন।’
ভালোবাসা দিবসের আয়োজনে
ভালোবাসা দিবসে ফারিণের কাজ নিয়ে দর্শকের থাকে অন্যরকম আগ্রহ। কাজল আরেফিন অমির পরিচালনায় ‘হাউ সুইট’ নামে রোমান্টিক-কমেডি ওয়েব সিনেমায় তাঁকে দেখা যাবে। ভালোবাসা দিবস উপলক্ষে এটি মুক্তি পাবে ওটিটি প্ল্যাটফর্ম বঙ্গতে। সিনেমাটি নিয়ে বেশ আশাবাদ ব্যক্ত করে ফারিণ বলেন, ‘ফান কনটেন্টটি দেখে দর্শক খুব মজা পাবেন। কমার্শিয়াল ধাঁচে শুট করা হয়েছে। অসাধারণ গল্প নির্মাণে ছিল যত্নের ছাপ। ইউনিটের প্রত্যেকে খুব মজা করে শুটিং করেছি। সব মিলিয়ে উপভোগ্য কিছু হবে– এ প্রত্যাশা করাই যায়।’
সহকর্মীর প্রশংসায়.
..
সহকর্মীরা ভালো কাজ করলে প্রশংসায় ভাসান ফারিণ। তারকা অভিনেত্রী মেহজাবীন অভিনীত সম্প্রতি মুক্তিপ্রাপ্ত চলচ্চিত্র ‘প্রিয় মালতী’র প্রশংসায় মাতলেন ফারিণ। চলচ্চিত্রটি কিছু অংশ দেখে মুগ্ধতা প্রকাশে দেরি করেননি। তিনি তাঁর নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজেও লিখেছেন। মেহজাবীন ও ফারিণের মধ্যে ব্যক্তিজীবনেও রয়েছে সুসম্পর্ক। কোনো প্রতিদ্বন্দ্বিতা নয়, বরং রয়েছে পারস্পরিক সম্মান ও ভালোবাসার সম্পর্ক। সামাজিকমাধ্যমে মাঝেমধ্যেই দেখা যায় তাদের একসঙ্গে ভ্রমণের ছবি। ফারিণ বলেন, ‘‘মেহজাবীন আপুকে সিনিয়র হিসেবে খুব সম্মান করি। আমাকেও তিনি আদর করেন। সে জায়গা থেকে আমার সঙ্গে তাঁর খুব ভালো সম্পর্ক। তাঁর ‘প্রিয় মালতী’ কাজটি ভালো লেগেছে বলে সামাজিকমাধ্যমে লিখেছি।’’
হাসির জাদু
নিজেকে সবসময় হাসিখুশি রাখেন ফারিণ। এ কারণে প্রশংসাও পেয়ে থাকেন আপনজনদের কাছে। এ হাসিখুশি থাকার মন্ত্র কী? মুখে এক চিলতে হাসি নিয়ে উত্তরটা দিলেন তিনি। তাঁর কথায়, ‘আমি সবসময় ভালো থাকার চেষ্টা করি। যদি মন থেকে ভালো থাকা যায় তাহলে শারীরিকভাবে অসুস্থ থাকলেও সমস্যা হয় না। সহকর্মীদের সঙ্গে দেখা হলেই হাসি দিয়ে কথা বলার চেষ্টা করি। এর মধ্যে আমি তৃপ্তি খুঁজে পাই।’
নতুন বছরের প্রত্যাশা
আলাপে আলাপে নতুন বছরের প্রত্যাশার কথাও জানালেন তিনি। তাঁর ভাষ্যে, ‘‘আমার ক্যারিয়ারের জন্য গত বছরটি খুব ভালো ছিল। শিহাব শাহীনের ছবি ‘কাছের মানুষ দূরে থুইয়া’, ওয়েবের জন্য ‘অসময়’ ও ‘চক্র’তে অভিনয় করেছি। সংগীতশিল্পী হিসেবে অভিষেক হয়েছে। ‘রঙে রঙে রঙিন হবো’ গানটি শ্রোতাপ্রিয়তা পেয়েছে। এ বছর আমার নতুন আরও একটি গান আসবে। ভালো কিছু কাজ করতে চাই। পরিবার নিয়ে যেন সুস্থ থাকতে পারি– এটিই প্রত্যাশা। আরও চ্যালেঞ্জিং চরিত্রে অভিনয় করতে চাই। চলতি বছরে হয়তো আরও ভালো কিছু যোগ হবে ক্যারিয়ারে। দেখা যাক কী হয়।’’
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: র জন য
এছাড়াও পড়ুন:
অর্ধশত বছরের চামড়ার মোকাম রাজারহাট
কখনও হর্ন বাজিয়ে, আবার কখনও শোঁ শোঁ শব্দ তুলে ছুটে চলছে যানবাহন। সেদিকে তাকানোর সময় নেই কারও। কেউ চামড়া পরিষ্কার করছেন, কেউবা লবণ মাখাচ্ছেন। আবার কেউ কেউ লবণজাত করা চামড়া স্তূপ করছেন। যত সময় বাড়ছে, ততই বাড়ছে মানুষের আনাগোনা। সঙ্গে বাড়ছে হাটের কর্মচাঞ্চল্য। দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের সবচেয়ে বড় চামড়ার মোকাম যশোরের রাজারহাটের দৃশ্য এটি।
যশোর শহর থেকে পূর্ব দিকে যশোর-খুলনা মহাসড়ক দিয়ে ছয় কিলোমিটার গেলেই দেখা মিলবে হাটটির। একেবারেই মহাসড়কঘেঁষে গড়ে ওঠা হাট বসে শনি ও মঙ্গলবার। তবে কোরবানির মৌসুমে সাপ্তাহিক এ দুই হাটবার পায় নতুন চেহারা।
১৯৭০-এর দশকে সেই যে হাটটির সূচনা সময় থেকে এখানে চামড়া বিক্রি শুরু হয়েছিল, সেই ধারা এখনও টিকে আছে। মহাসড়কের পাশেই গড়ে ওঠা এই হাটটির যোগাযোগ ব্যবস্থা খুবই ভালো। শুধু খুলনা বিভাগের ১০ জেলাতেই নয়, বরিশাল ও ঢাকা বিভাগের কয়েকটি জেলার চামড়া ব্যবসায়ীদের কাছেও পরিচিত হাট এটি।
গত বৃহস্পতিবার সকালে গিয়ে দেখা যায়, পিকআপ ভ্যান, ছোট ট্রাক ও ভ্যানে চামড়াবোঝাই করে লোকজন হাটে আসছেন। দরদাম করছেন স্থানীয় আড়তের ব্যবসায়ীদের সঙ্গে। কাঙ্ক্ষিত দাম না মেলাতে অন্য মোকামেও যেতে দেখা যায় হাটটিতে চামড়া আনা ক্ষুদ্র ও মৌসুমি ব্যবসায়ীদের। কাঙ্ক্ষিত দাম মিললেই স্থানীয় আড়তদারদের কর্মচারীরা ভ্যান বা ট্রাক থেকে নামিয়ে নিচ্ছেন চামড়া।
স্থানীয়রা জানান, হাটবারে চামড়া ব্যবসায়ীদের আনাগোনা বাড়ে দ্বিগুণ। চামড়া ওঠে আশানুরূপ। সূর্য ওঠার সঙ্গে সঙ্গে হাট জমে ওঠে। বেচাবিক্রি চলে দুপুর ২টা থেকে বিকেল ৩টা পর্যন্ত। দূরদূরান্তের অনেক ক্রেতা-বিক্রেতা উভয় হাটবারের আগের দিন রাতে উপস্থিত হন। হাটের ফাঁকা জায়গায় গাড়িগুলো রেখে রাত্রিযাপন করেন পাশের মুড়লি বা মনিহার এলাকার হোটেলে। কেউ কেউ আবার চামড়া আনা গাড়িতেই রাত পার করেন। এর পর কাকডাকা ভোর থেকেই নিজ নিজ চামড়া গাড়ি থেকে নামিয়ে স্তূপ করেন হাটের ফাঁকা জায়গায়। অনেক সময় হাটের জায়গা ছাপিয়ে ব্যবসায়ীরা যশোর-খুলনা মহাসড়কের ফুটপাতেও বেচাকেনা করেন। হাটটিতে শুরু থেকেই ব্যবসা করে আসছেন হাজি আব্দুল মালেক। বাজারে যে কয়েকজন আড়তদার রয়েছেন, তাদের মধ্যে বয়োজ্যেষ্ঠ তিনি। সবাই হাজি সাহেব বলেই ডাকেন। হাটটির গোড়াপত্তন নিয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, এই অঞ্চলে চামড়ার হাট ছিল মনিরামপুর ও খুলনার পাটকেলঘাটাতে। বৃহত্তর যশোর অঞ্চলের ব্যবসায়ীরা সবাই মনিরামপুরে ব্যবসা করত। স্বাধীনতার পরের বছরই মনিরামপুরে চামড়ার হাটে খাজনা বাড়ানো হয়। তখনই ক্ষুব্ধ হয়ে যশোর সদরের রামনগরের মনোয়ার, ঝিনাইদহের কওসার মিয়া, বাশার মিয়াসহ কয়েকজন প্রথমে যশোর-খুলনা, যশোর-চুকনগর সড়কের রাজারহাট মোড়ে চামড়ার হাট বসান। যেহেতু পাশেই ভৈরব নদ এবং সড়কপথে পরিবহন ব্যবস্থা ভালো, তাই খুলনা, যশোর, কুষ্টিয়া এবং বরিশাল বিভাগের ব্যবসায়ীরা এই হাটে চামড়া নিয়ে আসতে শুরু করেন। মোড়টিতে জায়গা সংকটে ১৯৭৫ সালের দিকে রাজারহাটের বর্তমান স্থানে হাটটি স্থানান্তর করা হয়। তখন হাটটিতে স্থানীয় দেড় হাজার ব্যবসায়ী চামড়া কেনাবেচা করতেন। প্রথম হাটটি ১৫ হাজার টাকায় ইজারা দেন যশোরের স্বনামধন্য অ্যাডভোকেট আকরাম হোসেন।
রাজারহাটের আড়তদার হাসিব চৌধুরী বলেন, তিনি দেড় দশক ধরে চামড়ার ব্যবসা করেন। এখানকার চামড়া প্রক্রিয়াজাত করে বিভিন্ন স্থানের আড়তদার ও ট্যানারির মালিকের কাছে বিক্রি করবেন। আড়তদার ও ট্যানারির মালিকরা বকেয়া টাকা সময়মতো দেন না। নানা অজুহাতে দিনের পর দিন টাকা ফেলে রাখেন। একটি চামড়া প্রক্রিয়াজাত করতে ১০ থেকে ১৫ কেজি লবণ লাগে। তিনি বলেন, ‘আমাদের দাদার আমল থেকে বাজারে চামড়ার ব্যবসা দেখে আসছি। বাইরের ব্যবসায়ী আসা কমলেও স্থানীয় আড়তদার বেড়েছে।’
ব্যবসায়ীরা জানান, ঈদ-পরবর্তী প্রথম হাটবার ছিল গত মঙ্গলবার। ওই দিন হাটে তেমন চামড়ার সরবরাহ হয়নি। সরকার নির্ধারিত দামেও চামড়ার বেচাবিক্রি হয়নি। তবে শনিবারের হাটে কেনাবেচা জমজমাট হবে বলে আশাবাদী ব্যবসায়ীরা।