চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জের চৌকা-কিরণগঞ্জ সীমান্তে গতকাল শনিবার দুপুরে বাংলাদেশ ও ভারতের নাগরিকদের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া ও সংঘর্ষ হয়েছে। ভারতীয় নাগরিকদের হামলায় তিন বাংলাদেশি আহত হয়েছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। এ নিয়ে সীমান্ত এলাকার ৩ কিলোমিটার পর্যন্ত উত্তেজনা দেখা দেয়।

এ ঘটনায় গতকাল বিকেলে বাংলাদেশের সীমান্তরক্ষী বাহিনী বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ-বিজিবি ও ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী-বিএসএফের মধ্যে পতাকা বৈঠক হয়েছে। বিজিবির কড়া প্রতিবাদের মুখে পরিস্থিতির জন্য দুঃখ প্রকাশ করেছে বিএসএফ। এর পর সীমান্ত থেকে বিএসএফের অতিরিক্ত সদস্যদের সরানোর পাশাপাশি ভারতীয় নাগরিকদের শূন্যরেখা থেকে ১৫০ গজ ভেতরে নেওয়া হয়। এতে সীমান্ত পরিস্থিতি শান্ত হয়ে আসে।

ভারতীয়দের ছোড়া পাথর ও হাঁসুয়ার আঘাতে আহত হন বিনোদপুর ইউনিয়নের কালীগঞ্জ নামোটোলা এলাকার মেসবাহুল হক, বিশ্বনাথপুর গ্রামের মো.

রনি ও মো. ফারুক। গতকাল দুপুর ১২টার দিকে ঘটনার সূত্রপাত হলেও বিকেল ৩টা পর্যন্ত সংঘর্ষ ও থেমে থেমে ইটপাটকেল নিক্ষেপ চলছিল। ছোড়া হচ্ছিল সাউন্ড গ্রেনেড ও পাথর। অন্যদিকে, বাংলাদেশের গ্রামবাসী লাঠিসোটা ও হাঁসুয়া নিয়ে সীমান্তে অবস্থান করছিলেন। তাদেরও ইটপাটকেল ছুড়তে দেখা গেছে।

স্থানীয় সূত্র ও প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, দুপুর ১২টার দিকে সীমান্তে দুই বাংলাদেশি ভারত ভূখণ্ডে ঘাস কাটতে যান। এ সময় তারা মাঠের গমও কাটেন। বিষয়টি বিএসএফ সদস্যদের নজরে এলে কাঁটাতারের বেড়ার করিডোর দিয়ে বাধা দেওয়ার চেষ্টা করে। এ সময় ভারতীয় নাগরিকরা দল বেঁধে ঢুকে ওই দু’জনকে ধাওয়া করে। স্থানীয় বাংলাদেশিরা পাল্টা প্রতিহত করতে শূন্য রেখায় জড়ো হন। এক পর্যায়ে সংঘর্ষ বাধে। ভারতীয়দের হাঁসুয়ার আঘাতে বাংলাদেশের নাগরিক রনি আহত হন। দুপুর ২টার দিকে ভারতীয়রা হাঁসুয়া নিয়ে কাঁটাতারের বেড়াহীন জায়গা দিয়ে বাংলাদেশের ভূখণ্ডে ঢুকে অন্তত ২০টি মাঝারি আমগাছ এবং অর্ধশত বরইগাছ কেটে ফেলে। বিশ্বনাথপুর গ্রামে মসজিদের মাইকে সীমান্ত রক্ষার আহ্বান জানানো হলে গ্রামবাসী দল বেঁধে লাঠিসোটা ও হাঁসুয়া নিয়ে সীমান্তে জড়ো হন। এ সময় ভারতীয়দের ছোড়া পাথরের আঘাতে ফারুক নামে একজন আহত হন।

কালীগঞ্জ ঘোনটোলা গ্রামের রবু জানান, ফারুক মোটরসাইকেলে সীমান্ত এলাকার পরিস্থিতি দেখার জন্য অবস্থান করলে ভারতীয়দের ছোড়া পাথর তাঁর মাথায় লাগে। একই এলাকার মিঠুন জানান, জমির ফসল রক্ষার জন্য বাঁশ নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকার সময় ১০ ভারতীয় বাংলাদেশ সীমানায় ঢুকে রনির ওপর আক্রমণ করে।

মকবুল হোসেন জানান, তাঁর আম ও বরইগাছ কেটেছে। এর বিচার দাবি করেন তিনি। পেয়ারা বেগম বলেন, ছেলেকে খুঁজতে এসে দেখলাম আমার সরিষার ক্ষেত নষ্ট করেছে ভারতীয়রা। একজন বাংলাদেশির ভারতে গিয়ে গম কাটার অপরাধে বিচার করা যেত। পতাকা বৈঠকে এ নিয়ে সমস্যার সমাধান করা যেত। কিন্তু এভাবে ভারতীয়রা ঢুকে সব নষ্ট করবে, তা মানা যায় না।

স্থানীয় বিনোদপুর ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) সদস্য মো. বাদশা বলেন, সীমান্তে গম কাটা নিয়ে উত্তেজনা শুরু হয়। উভয় পক্ষের মধ্যে পাল্টাপাল্টি ধাওয়া হয়। এতে তিন বাংলাদেশি আহত হয়েছেন।

বিজিবি-বিএসএফের বৈঠক শেষে ৫৯ বিজিবির অধিনায়ক লে. কর্নেল গোলাম কিবরিয়া বলেন,  আমাদের কৃষক সীমান্ত এলাকায় ঘাস কাটতে যান। এ সময় তারা গম কেটে ফেলেন। এর পর সীমান্তের ভারতের বাসিন্দা আমাদের কিছু আমগাছের ডাল কেটে ফেলেছিল। এটি নিয়ে বাংলাদেশ ও ভারতের নাগরিকদের মধ্যে উত্তেজনা দেখা দেয়। তিনি বলেন, পতাকা বৈঠকে আমাদের পক্ষ থেকে দুটি অনুরোধ ছিল। একটি অতিরিক্ত বিএসএফ সদস্যদের সরিয়ে ফেলা। আরেকটি শূন্য রেখায় জড়ো হওয়া তাদের নাগরিকদের সরানো। অতিরিক্ত বিএসএফ সদস্য ও ভারতীয় নাগরিকদের সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া বিএসএফের তরফ থেকে বাংলাদেশি নাগরিকদের শূন্য রেখা থেকে সরানোর অনুরোধ করা হয়। ৬টার মধ্যে আমরা তাদের সরিয়ে নিয়েছি।

বিএসএফ সাউন্ড গ্রেনেড ছুড়েছে– এ ব্যাপারে জানতে চাইলে গোলাম কিবরিয়া বলেন, ভারতীয় নাগরিকদের সরিয়ে নেওয়ার জন্য বিএসএফ সাউন্ড গ্রেনেড ছুড়েছে। আর বাংলাদেশ-ভারতের নাগরিকদের মধ্যে ঢিল ছোড়াছুড়ি হয়েছে। পতাকা বৈঠকের পর পরিস্থিতি এখন শান্ত।

আহতের ব্যাপারে জানতে চাইলে লেফটেন্যান্ট কর্নেল গোলাম কিবরিয়া বলেন, আমাদের কাছে আহতের তেমন পরিসংখ্যান নেই। বিএসএফের পক্ষ থেকে হতাহতের বিষয়েও কিছু জানানো হয়নি। তারা (বিএসএফ) উচ্ছৃঙ্খল লোকজনকে (মব) নিয়ন্ত্রণ করার জন্য সাউন্ড গ্রেনেড নিক্ষেপ করেছে, যেটা আন্তর্জাতিক আইনের লঙ্ঘন। এ ব্যাপারে বিজিবি মহাপরিচালককে তারা বিস্তারিত বর্ণনা করেছেন। আশা করছি, বিজিবি ও বিএসএফ সদরদপ্তরের উচ্চ পর্যায়ে এ ব্যাপারে কথা হবে।

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: ব এসএফ র ব এসএফ স পর স থ ত এল ক র র পর স র জন য স ঘর ষ এ সময় সদস য

এছাড়াও পড়ুন:

কড়া নজরদারি সুন্দরবন সীমান্তে

দক্ষিণ ২৪ পরগনার সুন্দরবন জলসীমানা প্রায় দেড়শো কিলোমিটার। ভারতীয় প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, এ সীমানা দিয়ে অনুপ্রবেশ ঠেকাতে বাড়তি তৎপরতা নেওয়া হচ্ছে। খবর আনন্দবাজারের।

খবরে বলা হয়েছে, নদী ও বনভূমি এলাকায় সীমান্ত বরাবর বিএসএফ মোতায়েন আছে। ভাসমান বর্ডার আউটপোস্ট, বঙ্গোপসাগর অংশে কোস্ট গার্ডের নজরদারি চলছে। ড্রোন, সেন্সর ও ক্যামেরা, কিছু জায়গায় নাইট ভিশন ক্যামেরা ব্যবহার করা হচ্ছে। পাশাপাশি, পুলিশের তরফেও উপকূল এলাকায় দিনরাত নজরদারি চলছে।

উপকূল থানাগুলোর পক্ষ থেকে নদীপথে নিয়মিত টহল দেওয়া হচ্ছে। রাতেও উপকূলবর্তী এলাকাগুলিতে নজর রাখা হচ্ছে। নদীপথে কোনো জলযান দেখলেই তল্লাশি চালাচ্ছে পুলিশ। মৎস্যজীবীদের পরিচয়পত্রও খতিয়ে দেখা হচ্ছে। নদী বা সমুদ্রে এখন মাছ ধরার উপরে নিষেধাজ্ঞা চলছে। মৎস্যজীবীদের জলযান চলাচল করার কথা নয়। তাই জলযান দেখলেই তল্লাশি চলছে। বাংলাদেশি জাহাজগুলোতেও পুলিশ তল্লাশি চালাচ্ছে।

সুন্দরবন পুলিশ জেলার সুপার কোটেশ্বর রাও নালাভাট বলেন, আগেও উপকূলবর্তী এলাকায় পুলিশের নজরদারি চলত। এখন বাড়তি জোর দেওয়া হচ্ছে। দু’বেলা নদী ও স্থলপথে পুলিশের টহল বৃদ্ধি পেয়েছে। নাকা চেকিং হচ্ছে। চলছে তল্লাশিও।

উত্তর ২৪ পরগনাতেও উপকূল এলাকায় নিরাপত্তা বাড়ানো হয়েছে। নিরাপত্তা বেড়েছে জল ও স্থলসীমান্তে। জল, ভূমি ও আকাশে অত্যাধুনিক ইজ়রাইল রাডারের মাধ্যমে নজরদারি চালাচ্ছে সীমান্তরক্ষী বাহিনী।

ইতোমধ্যে ভারতীয় কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা দফতর জানিয়েছে, বাংলাদেশের আকাশ ব্যবহার করে ভারতকে আক্রমণ করতে পারে সশস্ত্র সংগঠনগুলো। ফলে সুরক্ষা বাড়াতে বিএসএফের তৎপরতা শুরু হয়েছে। বসিরহাট মহকুমার স্বরূপনগর থেকে হিঙ্গলগঞ্জের হেমনগর কোস্টাল থানা পর্যন্ত ৯৪ কিলোমিটার সীমান্ত রয়েছে। তার মধ্যে ৫০ কিলোমিটার জলসীমান্ত। স্থলসীমান্ত ৪৪ কিলোমিটার। সীমান্ত সুরক্ষায় অতিরিক্ত বাহিনী মোতায়েন করা হয়েছে বলে প্রশাসন সূত্রের খবর।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • কড়া নজরদারি সুন্দরবন সীমান্তে
  • ভুলে সীমানায় পা, বিএসএফ সদস্যকে আটক করল পাকিস্তান
  • স্বাস্থ্য ব্যয়ের চাপ দারিদ্র্য নিরসনে অন্যতম বাধা