নোয়াখালীর বেগমগঞ্জে পাওনা টাকা চাওয়ায় সৃষ্ট বিরোধকে কেন্দ্র করে এক যুবককে রাতের আঁধারে  ছুরিকাঘাতে হত্যা করা হয়েছে বলে অভিযোগ করেছে তার পরিবার। শনিবার (১৮ জানুয়ারি) রাত পৌনে ১২টার উপজেলার চৌমুহনী পৌরসভার ৮ নম্বর ওয়ার্ডের চৌমুহনী পৌর ভূমি অফিসের সামনে এ ঘটনা ঘটে।

নিহত ওই যুবকের নাম মো. আব্দুর রহমান হৃদয় (২৪)। তিনি উপজেলার চৌমুহনী পৌরসভার ৭ নম্বর ওয়ার্ডের হাজীপুর এলাকার সওদাগর বাড়ির মো.

সেলিমের ছেলে। তিনি পেশায় একজন ফার্নিচার মিস্ত্রি ছিলেন।

নোয়াখালী জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক্রাইম অ্যান্ড অপারেশন) মোহাম্মদ ইব্রাহীম ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

নিহতের ছোট ভাই মো. রিফাত বলেন, আমার বড় ভাই হৃদয়ের বন্ধু আশিকের থেকে কিছু দিন আগে ৫ হাজার টাকা হাওলাত নেন চৌমুহনী পৌরসভার গোলাবাড়ি এলাকার মুরি বাড়ির শাহ আলমের ছেলে বাবু (৩৫)। এরপর টাকা ফেরত চাইলে বাবু তালবাহানা করতে থাকেন। একপর্যায়ে বাধ্য হয়ে বিষয়টি আশিক বাবুর বড় ভাই রনিকে জানান। এতে বাবু ক্ষিপ্ত হয়ে শনিবার রাতে আশিকের বন্ধু হোসেন ও সাগরকে তুলে নিয়ে আটকে রেখে মারধর করে। রাত সোয়া ১১টার দিকে বিষয়টি জানতে পারে আমার ভাই হৃদয়। খবর পেয়ে তিনি আমাদের বাড়ির তার সমবয়সী কাকা রাসেলকে নিয়ে হোসেন ও সাগরকে উদ্ধার করতে বাড়ি থেকে বের হন। যাত্রাপথে তারা চৌমুহনী পৌর ভূমি অফিসের সামনে পৌঁছালে বাবুর সঙ্গে তাদের দেখা হয়ে যায়। তখন কিছু বুঝে উঠার আগেই বাবু হৃদয়কে ছুরিকাঘাত করে। একই সময়ে রাসেলকেও ছুরিকাঘাত করে। পরে স্থানীয় লোকজন তাদের উদ্ধার করে প্রথমে চৌমুহনী লাইফ কেয়ার হসপিটালে নিয়ে যায়। সেখান থেকে ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট নোয়াখালী জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে গেলে  চিকিৎসক হৃদয়কে মৃত ঘোষণা করেন।

জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোহাম্মদ ইব্রাহিম বলেন, টাকা লেনদেন নিয়ে এক যুবককে ছুরিকাঘাতে হত্যা করা হয়েছে। তিনি আজ রোববার সকালে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে বলেন, মরদেহ ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট নোয়াখালী জেনারেল হাসপাতালের মর্গে রাখা আছে। রাসেল নামে আরেক যুবক অজ্ঞান অবস্থায় হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। নিহতের পরিবারের লিখিত অভিযোগের ভিত্তিতে পরবর্তী আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

উৎস: Samakal

এছাড়াও পড়ুন:

খাদি কাপড়ের জিআই স্বীকৃতিতে আনন্দে ভাসছেন কুমিল্লাবাসী

কুমিল্লার ঐতিহ্যের স্মারক খাদি কাপড় ভৌগোলিক নির্দেশক (জিআই) পণ্যের স্বীকৃতি পাওয়ায় আনন্দিত জেলার মানুষ। দীর্ঘদিন ধরে তাঁরা দাবি জানিয়ে আসছিলেন, অবশেষে পেয়েছেন সেই সুখবর। গতকাল বুধবার রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে স্বীকৃতির এই সনদ দেওয়া হয়।

কুমিল্লা নগরের কান্দিরপাড় এলাকার রামঘাটলা থেকে শুরু করে রাজগঞ্জ পর্যন্ত অন্তত ৩০০ খাদি পোশাকের দোকান। কান্দিরপাড়ের খাদি বসুন্ধরা দোকানের স্বত্বাধিকারী জয়নাল আবেদীন ভূঁইয়া প্রথম আলোকে বলেন, শৈল্পিক ছোঁয়ায় কুমিল্লার খাদি এখন দেশ-বিদেশে বেশ সমাদৃত। ঐতিহ্যের খাদিতে এখন লেগেছে আধুনিকতা ও নান্দনিকতার ছোঁয়া। শত বছরের বেশি পুরোনো খাদির আরও অনেক আগেই জিআই পণ্যের স্বীকৃতি পাওয়া উচিত ছিল। অবশেষে স্বীকৃতি মিলেছে, এতেই আনন্দিত সবাই।

একই এলাকার খাদি জ্যোৎস্না স্টোরের মালিক তপন পাল বলেন, ‘কুমিল্লার প্রতিটি মানুষ খাদির এমন স্বীকৃতিতে আনন্দিত। শত বছর পার হলেও এখনো দেশ-বিদেশে খাদি কাপড়ের ব্যাপক চাহিদা।’

কুমিল্লার ইতিহাস গবেষক আহসানুল কবীর প্রথম আলোকে বলেন, ১৯২১ সালে মহাত্মা গান্ধীর ডাকে সমগ্র ভারতবর্ষে অসহযোগ আন্দোলনের সময় কুমিল্লায় খাদিশিল্প প্রতিষ্ঠা লাভ করে। ওই সময় বিদেশি পণ্য বর্জন করার জন্য আওয়াজ ওঠে। সর্বত্র এক আওয়াজ ‘মোটা কাপড়-মোটা ভাত’। সে সময় ভারতবর্ষের মানুষ দেশপ্রেমে উজ্জীবিত হয়ে খাদি পোশাক ব্যবহার শুরু করেছিলেন। খাদের (গর্তে) চরকায় বসে এ কাপড় তৈরি করা হয় বলে এর নামকরণ হয় ‘খাদি’। শুরুতে মহাত্মা গান্ধী নিজেও কুমিল্লায় এসে খাদের চরকায় বসে খাদি কাপড় তৈরিতে উৎসাহ দেন।

এই গবেষক আরও বলেন, ১৯৪৭ সালে দেশভাগের পর ভারত পৃষ্ঠপোষকতা প্রত্যাহার করে নিলে কুমিল্লার খাদিশিল্প সংকটে পড়ে। এই শিল্পকে টিকিয়ে রাখতে হাল ধরেন বাংলাদেশ পল্লী উন্নয়ন একাডেমির (বার্ড) প্রতিষ্ঠাতা আখতার হামিদ খান।

কুমিল্লার জেলা প্রশাসক মো. আমিরুল কায়ছার বলেন, জেলা প্রশাসনের দীর্ঘ প্রচেষ্টায় গত বছর কুমিল্লার রসমালাই জিআই তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হয়েছে। কুমিল্লার খাদি ও বিজয়পুরের মৃৎশিল্পের জিআই স্বীকৃতির জন্য তখন থেকেই কাজ শুরু হয়। কুমিল্লার ‘ব্র্যান্ড’ হিসেবে পরিচিত তিনটি পণ্যের মধ্যে দুটি জিআই পণ্যের স্বীকৃতি পেয়েছে। যে একটি বাকি আছে, সেটিও দ্রুত সময়ের মধ্যে স্বীকৃতি পাবে বলে তিনি আশাবাদী।

সম্পর্কিত নিবন্ধ