সীমান্তে মিয়ানমারের প্রায় ২৭০ কিলোমিটার এলাকা বেশ কিছুদিন ধরেই সশস্ত্র সংগঠন আরাকান আর্মির নিয়ন্ত্রণে। এর পর থেকেই নাফ নদে মিয়ানমার অংশে নৌ চলাচলে নিষেধাজ্ঞা জারি করে তারা। এর প্রভাব পড়ে টেকনাফকেন্দ্রিক সীমান্ত বাণিজ্যে। 

এই জানুয়ারিতে এখন পর্যন্ত মিয়ানমার থেকে কোনো পণ্যবাহী জাহাজ টেকনাফ বন্দরে নোঙর করেনি। উল্টো বাংলাদেশমুখী পণ্যবাহী চারটি কার্গো আটকে রেখেছে আরাকান আর্মির সদস্যরা। মিয়ানমারের ইয়াংগুন থেকে এসব জাহাজ পণ্য নিয়ে রওনা হওয়ার পর টেকনাফে বাংলাদেশ জলসীমায় ঢোকার আগেই জাহাজের ক্রু ও নাবিককে জিম্মি করা হয়। এর পর মংডুর খায়ুংখালী খালে নিয়ে আলাদা জায়গায় এসব জাহাজ রাখা হয়েছে। এর মধ্যে দুটি জাহাজ বৃহস্পতিবার থেকে, বাকি দুটি শুক্রবার থেকে খায়ুংখালি রয়েছে। কবে নাগাদ জাহাজ চারটি ছাড়া পাবে, তা নিয়ে উদ্বিগ্ন ব্যবসায়ীরা। এসব জাহাজের মালিক মিয়ানমারের হলেও সব পণ্য বাংলাদেশি ব্যবসায়ীদের। 

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বাংলাদেশ-মিয়ানমার সীমান্তে নাফ নদে দেশটির জলসীমানা দিয়ে চলাচলকারী নৌযান থেকে কমিশন পেতে চায় আরাকান আর্মি! এ কারণে তারা পণ্যভর্তি কার্গো আটকে রাখার মতো নজিরবিহীন ঘটনা ঘটিয়েছে।  

এ ব্যাপারে টেকনাফের স্থলবন্দর পরিচালনাকারী প্রতিষ্ঠান ইউনাইটেড ল্যান্ড পোর্ট লিমিটেডের মহাব্যবস্থাপক জসিম উদ্দিন সমকালকে বলেন, পণ্যবাহী ৪টি কার্গো আরাকান আর্মি এখনও ছাড়েনি। এ ঘটনার পর থেকে ব্যবসায়ীরা ভয়ে আছেন। কত টাকার পণ্য রয়েছে, এটা নিশ্চিত করে বলতে পারছি না। একাধিক সিঅ্যান্ডএফ এজেন্টের পণ্য রয়েছে। আরাকান আর্মি কী কারণে 
পণ্যবাহী জাহাজ আটকে রেখেছে, এটা নিশ্চিত নই। কমিশনের জন্য কিংবা অন্য কারণও থাকতে পারে। কার্গো বন্দরে এলে ক্যাপ্টেন ও ক্রুর সঙ্গে কথা বললে আসল সত্য জানা যাবে। 
তিনি বলেন, এর আগে থেকে মিয়ানমারে সংঘাতের কারণে ব্যবসায়ীদের পণ্য আসা কমেছিল। তবে এ সমস্যা সমাধানে সরকারের এগিয়ে আসা উচিত। তা না হলে টেকনাফ থেকে মুখ ফিরিয়ে নেবেন ব্যবসায়ীরা। 

সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট জিন্নাহ অ্যান্ড ব্রাদার্সের কর্ণধার শওকত আলী বলেন, ইয়াংগুন থেকে এসব কার্গো আসছিল। টেকনাফে আসতে সাধারণত তিন দিন লাগে। কার্গোতে অনেক ব্যবসায়ীর পণ্য রয়েছে। আমারও এক কোটি টাকার শুঁটকি ও আচার আছে। ২০০৩ সাল থেকে টেকনাফ বন্দর ঘিরে ব্যবসা করি। কখনও এ পরিস্থিতিতে পড়তে হয়নি। শুনেছি, আরাকান আর্মি ১০ শতাংশ কমিশন চায়। এই ধরনের ঝুঁকি নিয়ে কে ব্যবসা করবে?

আব্দুল্লাহ অ্যান্ড সন্সের মালিক মো.

রানা বলেন, চার কার্গোতে একশর বেশি ব্যবসায়ীর ৫০ কোটি টাকার বেশি পণ্য রয়েছে। ট্রান্সশিপমেন্টের ওপর কমিশন চায় আরাকান আর্মি। জাহাজের মালিকরা আরাকান আর্মির সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করছে। আমরা উদ্বিগ্ন, কবে নাগাদ জাহাজ ছাড়া পাবে! অনেক ব্যবসায়ী আছেন যাদের পণ্য দীর্ঘদিন আটকে থাকলে পথে বসবে। 

রানা আরও বলেন, টেকনাফের জলসীমানা দিয়ে পণ্য আনা-নেওয়ার জন্য বন্দর কর্তৃপক্ষ নির্দিষ্ট চার্জ নেয়। এটা নদী খনন বা ব্যবস্থাপনার কাজে খরচ করার কথা। তবে টেকনাফ বন্দর চালু হওয়ার পর থেকে আজও নাফ নদের বাংলাদেশ অংশ খনন করা হয়নি। এটি খনন করা হলে নাফ নদের মিয়ানমার অংশ হয়ে জাহাজ ও ট্রলার চলাচল করতে হতো না। এতে আরাকান আর্মিও জাহাজ আটকে দেওয়ার সুযোগ পেত না। নদী খনন না হলে কেন ‘রিভার ডিউস চার্জ’ দেব?

নাফ নদ খনন না হলেও চার্জ নেওয়ার ব্যাপারে টেকনাফের স্থলবন্দর পরিচালনাকারী প্রতিষ্ঠান ইউনাইটেড ল্যান্ড পোর্ট লিমিটেডের মহাব্যবস্থাপক জসিম উদ্দিন বলেন, নাফ নদে বাংলাদেশের অংশে খনন হয়নি কখনও। হয়নি সমীক্ষাও। খনন করা গেলে হয়তো নাফে আমাদের চ্যানেল দিয়ে নৌযান চলাচল করতে পারবে।

নিরাপত্তা বিশ্লেষক মেজর (অব.) মোহাম্মদ এমদাদুল ইসলাম বলেন, অনেক দিন ধরেই সীমান্তের এই এলাকা আরাকান আর্মির নিয়ন্ত্রণে। তাহলে কেন পর্যাপ্ত নিরাপত্তা নিশ্চিত না করে ওই রুটে মিয়ানমারের কার্গো চলাচল করেছে? আগে তাদের ‘ক্লিয়ারেন্স’ নেওয়ার দরকার ছিল। এখন কার্গোর মালিকরা আরাকান আর্মির সঙ্গে সমঝোতা করে এগুলো ছাড়াতে পারে। এ ধরনের পরিস্থিতিতে যে কোনো সশস্ত্র গ্রুপ কমিশন চাইবে। আরাকান আর্মি তা-ই করছে।

স্থলবন্দরের একাধিক ব্যবসায়ীর সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, দেড় মাস পর শনিবার ইয়াঙ্গুন থেকে কয়েকজন ব্যবসায়ীর পণ্যবাহী কার্গো বোট টেকনাফ স্থলবন্দরের উদ্দেশে রওনা দেয়। পাঁচ দিনের মাথায় প্রথমে দুটি বোট বৃহস্পতিবার দুপুর ১২টায় নাফ নদের মোহনায় সে দেশের জলসীমানায় নাক্ষ্যংকদিয়া নামক এলাকায় তল্লাশির নামে আটকে দেয় আরাকান আর্মি। পরদিন আরও দুটি একই কায়দায় আটকে দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে আচার, শুঁটকি, সুপারি, কপিসহ ৫০ হাজারের বেশি বস্তা পণ্য রয়েছে। এসব পণ্য স্থলবন্দরের ব্যবসায়ী শওকত আলী, ওমর ফারুক, মো. আয়াছ, এমএ হাসেম, মো. ওমর ওয়াহিদ, আবদুর শুক্কুর সাদ্দামসহ অনেকের।

এ ব্যাপারে টেকনাফ স্থলবন্দর সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক এহতেশামুল হক বাহাদুর বলেন, ‘মিয়ানমারের সংঘাতের পর থেকে ব্যবসায়ীরা খুব বিপদে আছে। অনেকে পণ্যের জন্য ডলার পাঠানোর পরও পণ্য আনতে পারছে না। অনেক ব্যবসায়ী টেকনাফ থেকে ব্যবসা গুটিয়ে নেওয়ার কথা ভাবছে। সরকারের উচিত মিয়ানমারের সঙ্গে কথা বলে দু’দেশের স্বার্থে সীমান্ত বাণিজ্য সচল রাখা।’ 

২৭১ কিলোমিটার সীমান্ত আরাকান আর্মি দখলে নেওয়ার পর থেকে ভয়ে ছিলেন ব্যবসায়ীরা। স্থলবন্দরের এক ব্যবসায়ী বলেন, ‘শুরুতে পণ্যবাহী কার্গো ছেড়ে দেওয়ার কথা বললেও এখন আরাকান আর্মি এই পণ্য থেকে লেনদেনের ভাগ চায়।’ 

কক্সবাজার চেম্বার অব কমার্সের সভাপতি আবু মোর্শেদ চৌধুরী বলেন, ‘আরাকান আর্মি এখন সীমান্তে বাণিজ্যের মধ্যে ভাগ বসাতে চায়। এ কারণে পণ্যবাহী কার্গো আটকে দিয়েছে। কমিশন পেলে ছেড়ে দেবে। দু’দেশের স্বার্থে সেখানকার ব্যবসায়ীদের উচিত এটার স্থায়ী সমাধান করা। তা না হলে সীমান্ত বাণিজ্যে বড় প্রভাব পড়বে।’ 

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ব্যবসায়ী বলেন, ‘মিয়ানমার থেকে বাংলাদেশে পণ্যবাহী ট্রলার আসতে সেন্টমার্টিন দ্বীপের পর থেকে তাদের জলসীমানা পার হতে হয়, যেটি বর্তমানে আরাকান আর্মির দখলে। তাই তারা পণ্যবাহী কার্গো বোটগুলো আটকানোর সুযোগ পেয়েছে। আরাকান আর্মি তাদের জলসীমানা থেকে পারমিট না দিলে পণ্যবাহী কোনো ট্রলার এখানে (স্থলবন্দর) আসার সুযোগ নেই। সেটিকে কাজে লাগিয়ে তারা সীমান্ত বাণিজ্যের ভাগ বসানোর চেষ্টা করছে। 

টেকনাফ-২ বিজিবির অধিনায়ক লে. কর্নেল আশিকুর রহমান বলেন, টেকনাফ স্থলবন্দরে আসার পথে মিয়ানমারের জলসীমানায় পণ্যবাহী কার্গো বোটে তল্লাশি চালানো হয়েছে বলে শুনেছি। 
টেকনাফ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শেখ এহসান উদ্দিন বলেন, কার্গো আটকের খবরটি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছি। বিজিবিকেও জানানো হয়েছে।  
মিয়ানমারে চলমান গৃহযুদ্ধে ৮ ডিসেম্বর রাখাইন রাজ্যের মংডু টাউনশিপ আরাকান আর্মির দখলে নেয়। এর পর থেকে কোনো পণ্যবাহী জাহাজ বন্দরে আসেনি।

বন্দর কর্তৃপক্ষের একাধিক দায়িত্বশীল কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, গত বছরের জুন-নভেম্বর পর্যন্ত মিয়ানমার থেকে নানা ধরনের ৮ হাজার ৮০০ টন পণ্য এসেছে। ২০২৩-২৪ অর্থবছরে এসেছিল ৭৮ হাজার ৫২৭ টন। এর আগে ২০২২-২৩ অর্থবছরে মিয়ানমার থেকে বাংলাদেশে পণ্য এসেছে ১ লাখ ৯৯ হাজার ২২৫ টন। অন্যদিকে, বাংলাদেশ থেকে জুন-নভেম্বর পর্যন্ত টেকনাফ স্থলবন্দর হয়ে মিয়ানমারে পণ্য গেছে মাত্র ৩১০ কেজি। ২০২৩-২৪ অর্থবছরে গেছে ১ হাজার ৪০৮ টন। আর ২০২২-২৩ অর্থবছরে রপ্তানি হয়েছে ৩ হাজার ৫২৩ টন পণ্য।
মিয়ানমার থেকে বাংলাদেশে সাধারণত বিভিন্ন ধরনের কাঠ, হিমায়িত মাছ, শুকনা সুপারি, পেঁয়াজ, আদা, শুঁটকি, নারকেল, আচার প্রভৃতি পণ্য আমদানি হয়। বাংলাদেশ থেকে মিয়ানমারে যায় আলু, প্লাস্টিক পণ্য, সিমেন্ট, তৈরি পোশাক, বিস্কুট, চানাচুর, চিপস ও কোমল পানীয়। 

 

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: আর ক ন আর ম র য় আর ক ন আর ম ন ব যবস য় র ক ব যবস য় র পর থ ক ধরন র

এছাড়াও পড়ুন:

শিক্ষার মানোন্নয়নে জিডিপির ৪ শতাংশ বরাদ্দ প্রয়োজন

আন্তর্জাতিক মানদণ্ডে শিক্ষাখাতে বরাদ্দ জিডিপির ৪ দশমিক ৬ শতাংশ হওয়ার কথা থাকলেও বাংলাদেশের বাস্তবতায় এর পরিমাণ ২ থেকে ২ দশমিক ৫ শতাংশের মধ্যে সীমাবদ্ধ। আগামী ২০২৫-২৬ অর্থবছরের বাজেটে শিক্ষাখাতে বরাদ্দ ন্যূনতম জিডিপির ৪ শতাংশে উন্নীত করতে হবে।

মঙ্গলবার বিকেলে রাজধানীর সিরডাপ মিলনায়তনে ‘জনবান্ধব বাজেট ভাবনা’ শীর্ষক আয়োজিত দিনব্যাপী অনুষ্ঠানের তৃতীয় পর্বে শিক্ষা বিষয়ক বাজেটের আলোচনায় শিক্ষাবিদরা এসব কথা বলেন। সামাজিক সংগঠন নাগরিক বিকাশ ও কল্যাণ (নাবিক) এর আয়োজন করেন।

অনুষ্ঠানে উপাচার্য অধ্যাপক আব্দুর রব বলেন, শিক্ষাখাতে বরাদ্দ বৃদ্ধি করে দক্ষ মানবসম্পদ গড়ে তুলে মাহাথির মোহাম্মদ ১০ বছরে মালয়েশিয়ার চেহারাই বদলে দিয়েছিলেন। দক্ষিণ কোরিয়াও আমাদের দেশ থেকে পিছিয়ে ছিল। কিন্তু শিক্ষা উন্নতি করে দেশটি এখন বিশ্বের উন্নত দেশের তালিকায় ওঠে এসেছে। 

এশিয়ার কয়েকটি দেশের শিক্ষায় জিডিপির বরাদ্দের তালিকা তুলে ধরে তিনি বলেন, বিগত বছরগুলোতে শিক্ষাখাতে বরাদ্দ কমে এসেছে। স্বল্পোন্নত দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশে শিক্ষায় বরাদ্দ তলানির দিকে। বিগত বছরগুলোতে যেই পরিমাণ টাকা বিদেশে পাচার হয়েছে, সেই টাকা শিক্ষায় বিনিয়োগ করা হলে দেশের চেহারা বদলে যেতো। বিশ্বের উন্নত দেশগুলোতে প্রাথমিকের শিক্ষকদের বেতন ভাতা আকর্ষণীয়। শিক্ষায় উন্নতি করতে হলে মেধাবীদের শিক্ষকতায় আকৃষ্ট করতে হবে। নইলে মেধা পাচার হয়ে যাবে। শিক্ষা খাতে সবচেয়ে বেশি বাজেট দিতে হবে। গবেষণায় বরাদ্দ বাড়াতে হবে। একইসঙ্গে বিজ্ঞান শিক্ষাকে বিস্তার করতে হবে। এছাড়া দেশের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হলে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে বিএনসিসিকে আরও কার্যকর করতে হবে।

অধ্যাপক মনিনুর রশিদ বলেন, শিক্ষায় বরাদ্দ থাকলে পরিবর্তন আসবে। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা গবেষণা করতে চান। কিন্তু সে অনুযায়ী বাজেট কম। শিক্ষায় বাজেটে ঘাটতি রয়েছে। অন্যান্য উন্নত দেশের তুলনায় এদেশের শিক্ষার বরাদ্দ খুবই কম। এমনকি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রভাষক মাত্র ৩৬ হাজার টাকা বেতন পান। এই টাকায় তারা কীভাবে চলবেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্ররা হলে মানবেতর জীবনযাপন করেন। এই যদি হয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অবস্থা, তাহলে অন্যান্য জায়গার কেমন সেটা বোঝাই যায়। অন্যদিকে, প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রভাষকদের বেতনই শুরু হয় ৮০ হাজার থেকে এক লাখ টাকা। অধ্যাপকরা ৮ লাখ টাকাও বেতন পান। যার ফলে ব্র্যাক, নর্থ সাউথের মতো বিশ্ববিদ্যালয় র‍্যাংকিংয়ে এগিয়ে যাচ্ছে। তাই শিক্ষায় সঠিক বরাদ্দ বাড়াতে হবে। এ সময় তিনি শিক্ষা কমিশন করার দাবি জানান।

সুলতান মুহাম্মদ জাকারিয়া বলেন, আমরা মনে শিক্ষার কাজ হলো কর্মসংস্থান সৃষ্টি করা। এটা গুরুত্বপূর্ণ একটা কাজ। শিক্ষার অন্যতম উদ্দেশ্য হলো সুনাগরিক তৈরি করা। তারা রাষ্ট্র ও সমাজের প্রতি তাদের দায়িত্ব পালন করবেন। আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থার উন্নয়নে কী করতে হবে- তা নিয়ে আমাদের কোনো পরিকল্পনাই নেই। 

ধারণাপত্র সাব্বির হোসেন বলেন, বিগত বছরগুলোতে শিক্ষাখাতে বরাদ্দ আন্তর্জাতিক মানদণ্ড থেকে কম ছিল। এশিয়ার কয়েকটি দেশে শিক্ষা খাতে বরাদ্দের সঙ্গে বাংলাদেশের বরাদ্দের তুলনামূলক চিত্র তুলে ধরে তিনি বলেন, শিক্ষাখাতে জিডিপির ৪ শতাংশ বরাদ্দ করা উচিত। এছাড়া শিক্ষার গুণগত মান উন্নয়ন, অবকাঠামোগত উন্নয়ন, শিক্ষক উন্নয়নে বাজেট বরাদ্দ করতে হবে। 

আব্দুল্লাহ যোবায়ের বলেন, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা যে বেতন পান, অন্যান্য সরকারি চাকুরীজীবীও একই বেতন পান। কিন্তু শিক্ষকরা সরকারি চাকুরিজীবীদের মতো সুযোগ সুবিধা পান না। শিক্ষার মানোন্নয়নে যেসব সুযোগ সুবিধা দরকার তা শিক্ষকরা পান না। তারা গবেষণায় বরাদ্দ পান না। অন্যদিকে, শিক্ষকদের সম্মান দিন দিন কমছে। বিভিন্ন সময় শিক্ষকরা অপমান হেনস্তার শিকার হন। এছাড়া শিক্ষকদের জন্য মানসম্মত প্রশিক্ষণ প্রয়োজন। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের জন্যেও মানসম্মত প্রশিক্ষণের প্রয়োজন আছে।

মাহফুজুর রহমান মানিক বলেন, গত অর্থবছরে শিক্ষায় বরাদ্দ ছিলো জিডিপির ১ দশমিক ৬৯ শতাংশ। টাকার অংকে ছিল ৯৩ হাজার কোটি টাকা। বাজেটে বরাদ্দ কিছুটা বাড়িয়ে দেখানো হতো শিক্ষায় বরাদ্দ বাড়ছে। অন্যদিকে শিক্ষায় ন্যূনতম বাজেটটাও সঠিকভাবে বাস্তবায়ন করা হয় না। শিক্ষায় বরাদ্দ বাড়াতে হলে সেটা পরিকল্পনা করে বাড়াতে হবে। যাতে বরাদ্দকৃত বাজেট সঠিকভাবে বাস্তবায়ন করা যায়। সরকারের উচিত এই বাজেটটাকে চ্যালেঞ্জ হিসেবে নিয়ে পরিকল্পনা মাফিক শিক্ষা বাজেট করা। তাহলে পরবর্তী সরকারগুলোর কাছে এটা উদাহরণ হতে পারে।

সভাপতির বক্তব্যে কামরুল আহসান বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের অবস্থা বিবেচনায় যেমন দরকার, তেমন বরাদ্দ দেওয়া দরকার। বিশ্ববিদ্যালয়ের অবকাঠামোর সঙ্গে সঙ্গে প্রাণ-প্রকৃতি রক্ষার বিষয়টাও বিবেচনা করতে হবে। আফগানিস্তানের মতো যুদ্ধবিধ্বস্ত জায়গায় শিক্ষায় বরাদ্দ জিডিপির ৪ শতাংশের বেশি। অথচ এদেশে প্রতি বছর প্রতিযোগিতা করে বরাদ্দ কমছে। এছাড়া শিক্ষা খাতে লুটপাট ও দুর্নীতি বন্ধ করতে হবে। যেসব জায়গায় বরাদ্দ করা করা হয়, তা খরচের জায়গায়ও স্বচ্ছ হতে হবে। 

তিনি বলেন, আমাদের অর্থ কম থাকলে কম বরাদ্দ হবে। সমস্যা নেই। কিন্তু অর্থ বরাদ্দের ক্ষেত্রে সচেতন থাকতে হবে। যেখানে যতটা বরাদ্দ প্রয়োজন, সেখানে ততটা বরাদ্দ দিতে হবে। এ সময় তিনি মানবিক গুণাবলির উন্নয়নের ওপর জোর দেন।

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ কামরুল আহসানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন মানারাত ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির উপাচার্য অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ আব্দুর রব, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ মনিনুর রশিদ, জাতীয় নাগরিক পার্টির যুগ্ম আহ্বায়ক সুলতান মুহাম্মদ জাকারিয়া, গ্লোবাল নলেজ ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান মুহাম্মদ ওমর ফারুক, শিক্ষক ও গবেষক আব্দুল্লাহ যোবায়ের, দৈনিক সমকালের জেষ্ঠ্য সহসম্পাদক মাহফুজুর রহমান মানিক প্রমুখ। 'বাজেটে শিক্ষা খাত: ২০২৫-২৬ অর্থবছরের প্রত্যাশা' শীর্ষক ধারণাপত্র উপস্থাপন করেন বাংলাদেশ উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী অধ্যাপক মো. সাব্বির হোসেন।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • আয় বেড়েছে ৩৫২ কোটি টাকা, তবু মুনাফা কমল ৯০ কোটি
  • বিদেশি ঋণ পরিশোধ বেড়েছে ২৪ শতাংশ
  • হিলি স্থলবন্দর দিয়ে ভারত থেকে এল ২১ টন কচুর মুখি
  • ভারত থেকে এল ১২ টন কচুরমুখি 
  • তেঁতুলিয়ায় বিরল প্রজাতির শকুন উদ্ধার
  • ৯ মাসে ১৪ হাজার কোটি টাকার ব্যবসা
  • আখাউড়া দিয়ে ভারত থেকে এলো সাড়ে ১২ টন জিরা
  • শিক্ষার মানোন্নয়নে জিডিপির ৪ শতাংশ বরাদ্দ প্রয়োজন
  • ৯ মাসে ৪,৬০০ কোটি টাকার ব্যবসা ওয়ালটনের
  • যমুনা অয়েলের মুনাফা বেড়েছে ৩৮ শতাংশ