ডেভিড মালানের পরিচয় তখন কাউন্টি ক্রিকেটার। দক্ষিণ আফ্রিকা ছেড়ে ইংল্যান্ডে পাড়ি জমিয়ে খেলেন মিডলেক্সে। ইংলিশ ক্রিকেটার হিসেবে ২০১৩-২০১৪ মৌসুমে ঢাকা প্রিমিয়ার লিগ খেলতে এলেন প্রাইম দোলেশ্বরে। পেস বলে সপাটে খেলেন, স্পিনে দুর্বল। মালানের এভাবে আউট হওয়া দুশ্চিন্তায় ফেলে দিয়েছিল কোচ মিজানুর রহমান বাবুলকে। স্পিনে ভালো করতে এ ব্যাটারকে বিশেষ সেশন করাতে থাকেন। ঢাকা প্রিমিয়ার লিগে দুই মৌসুমে স্পিন বলেও ভালো খেলা শিখে গিয়েছিলেন মালান।
১০ বছর আগের শিক্ষা আজও ভোলেননি ৩৭ বছর বয়সী এ ব্যাটার। চট্টগ্রামের জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে টানা দুই ম্যাচে দারুণ ব্যাটিং করলেন মালান। ঢাকা ক্যাপিটালের বিপক্ষে ৪৯ রানে অপরাজিত। চিটাগং কিংসের বিপক্ষে হার না মানা ৫৬। গতকালের স্লো উইকেটে ধরে খেলে ম্যাচ শেষ করে মাঠ ছেড়েছেন। ম্যাচসেরার পুরস্কারও উঠেছে তাঁর হাতে। মালানের সেরা হওয়ার দিনে চিটাগংয়ের বিপক্ষে ৬ উইকেটে জিতেছে ফরচুন বরিশাল। অথচ লিগের শুরুর পাঁচ ম্যাচে একাদশে জায়গা হয়নি তাঁর।
ঢাকা লিগে খেলে ইংল্যান্ড দলে ঢোকার পথ তৈরি করেছিলেন মালান। পেস-স্পিন বোলিংয়ের দুই ধারাকে শামলাতে শেখা মালানকে ২০১৭ সালে জাতীয় দলের জার্সি তুলে দিয়েছিল ইংল্যান্ড অ্যান্ড ওয়েলস ক্রিকেট বোর্ড (ইসিবি)। ২০১৬ সাল থেকে ফ্র্যাঞ্চাইজি লিগেও নিয়মিত হন। পেশোয়ার জালমি, বরিশাল বুলস, খুলনা টাইটান্স, কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্সে খেলেন। গত পরশু কথায় কথায় মালান ডুবে গেলেন স্মৃতির অতলান্তে। হাতড়ে আনলেন অতীতের অনেক ঘটনা, ‘ওহ, স্পিন বলে খেলতেই পারতাম না। আউট হয়ে আসার পর কোচ বলতেন প্যাডআপ। এর পর নেটে ঘণ্টার পর ঘণ্টা কাটাতাম। আমাকে সোজা খেলতে বলা হতো। সেই সেশনগুলো দারুণ কাজে দিয়েছিল। স্পিন বলে খেলা শিখে গিয়েছিলাম। বলা যায়, ঢাকা লিগ খেলে আমি ব্যাটিংটা ভালো শিখেছিলাম। এখনও চালিয়ে যাচ্ছি।’
মিজানুর রহমান বাবুল ছিলেন ঢাকা লিগে মালানের কোচ। তিনি বলেন, ‘একজনই বিদেশি খেলে লিগে। সেও স্পিনে বারবার আউট হলে বিপদ। মালানের জন্য তাই স্পেশাল সেশনের আয়োজন করেছিলাম। ফতুল্লা স্টেডিয়ামে অনুশীলন হতো। সে খুব দ্রুত শিখে গিয়েছিল।’
বাবুল এই বিপিএলেও মালানের কোচ। এখন আর স্পেশাল সেশনের প্রয়োজন হয় না। তাই তো চিটাগংয়ের দেওয়া ১২১ রানের লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে মোহাম্মদ নবিকে নিয়ে খেলা শেষ করে এসেছেন তিনি।
.উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: ব প এল
এছাড়াও পড়ুন:
বাসাবাড়িতে ১৪ বছরের কম বয়সী শিশু নিয়োগ বন্ধে আইন করার সুপারিশ
বাসাবাড়ির কাজে তথা গৃহকর্মে ১৪ বছরের কম বয়সী শিশুদের নিয়োগ বন্ধে কঠোর আইন করার পাশাপাশি কার্যকরভাবে তা বাস্তবায়নের সুপারিশ করেছে শ্রম সংস্কার কমিশন।
বাংলাদেশ জাতীয় শ্রম আইন ২০০৬ অনুযায়ী, ১৪ বছরের কম বয়সী শিশুদের কাজ করানো হলে তা শিশুশ্রমের অন্তর্ভুক্ত বলে গণ্য করা হয়। এ ছাড়া গৃহকর্মী সুরক্ষা ও কল্যাণনীতি ২০১৫-তে বলা হয়েছে, ১৪ বছরের নিচে কোনো শিশুকে গৃহকর্মে নিয়োগ করা যাবে না।
শ্রম সংস্কার কমিশন এ প্রসঙ্গে বলেছে, গৃহকর্মে ১৪ বছরের কম বয়সী শিশুদের নিয়োগ বন্ধে কঠোর আইন করতে হবে। একই সঙ্গে এই আইনের কার্যকর বাস্তবায়নেও গুরুত্ব দিতে হবে সরকারকে।
সম্প্রতি প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে শ্রম সংস্কার কমিশন যে প্রতিবেদন জমা দিয়েছে, সেখানে এসব সুপারিশ তুলে ধরা হয়।
কমিশনের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গৃহশ্রমিকদের বাংলাদেশ শ্রম আইনে অন্তর্ভুক্ত করে শ্রমিক হিসেবে স্বীকৃতি ও মর্যাদা দিতে হবে। এর আগপর্যন্ত নিশ্চিত করতে হবে ‘গৃহকর্মীর কল্যাণ ও সুরক্ষা নীতিমালা–২০১৫’–এর যথাযথ বাস্তবায়ন।
নিয়োগের ক্ষেত্রে আবাসিক, অনাবাসিক, খণ্ডকালীন বা স্থায়ী—সব ধরনের গৃহশ্রমিকদের জন্য কর্মঘণ্টা, বেতন, ছুটি, থাকা-খাওয়ার ব্যবস্থা এবং অন্যান্য সুবিধা উল্লেখ করে একটি স্বচ্ছ ও নির্দিষ্ট বাধ্যতামূলক কর্মসংস্থান চুক্তি প্রণয়নের সুপারিশ করা হয়েছে কমিশনের প্রতিবেদনে। পাশাপাশি নিয়োগকর্তার বিরুদ্ধে শ্রমিকের কোনো অভিযোগ থাকলে সেটি কার বরাবর, কোন স্থানে এবং কীভাবে দায়ের করবেন, সে বিষয়ে সুনির্দিষ্ট নির্দেশনাসহ ব্যবস্থা গ্রহণের সুপারিশ করা হয়।
গৃহশ্রমিকদের কাজের দক্ষতা বৃদ্ধি ও নতুন দক্ষতা অর্জনের জন্য সরকারি উদ্যোগে প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করার সুপারিশ করেছে শ্রম সংস্কার কমিশন। প্রতিবেদনে বলা হয়, এর মাধ্যমে গৃহকর্মীদের কর্মসংস্থানের সুযোগ বৃদ্ধি ও নিরাপত্তা নিশ্চিত হবে। এ ছাড়া গৃহকর্মীদের সংগঠন বা ট্রেড ইউনিয়ন করার অধিকার প্রদানেরও সুপারিশ করেছে কমিশন।
পারলারের কর্মীদের সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচিতে নেওয়ার পরামর্শ
এদিকে বিউটি পারলার খাতের শ্রমিকদের সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির আওতায় অন্তর্ভুক্ত করার সুপারিশ করেছে শ্রম সংস্কার কমিশন। একই সঙ্গে এ খাতের কর্মীদের স্বাস্থ্যসেবা ও তাঁদের সন্তানদের জন্য শিশু দিবাযত্নকেন্দ্র বা ডে কেয়ার সুবিধা পাওয়ার অধিকার নিশ্চিতের কথা বলেছে কমিশন।
অর্থনৈতিক সুরক্ষা নিশ্চিত করতে এ খাতে ন্যূনতম মজুরি বোর্ড গঠনের সুপারিশও করেছে কমিশন। কমিশনের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, কর্মীদের কাজের মান ও ঝুঁকি বিবেচনা করে সুনির্দিষ্ট মজুরি কাঠামো নির্ধারণ করা এবং তাঁদের দক্ষতা ও অভিজ্ঞতার আলোকে পদোন্নতি কাঠামো তৈরি করতে হবে।
দেশের সব বিউটি পারলার শ্রমিকদের পেশাগত, অর্থনৈতিক ও সামাজিক মর্যাদা সুরক্ষার জন্য শ্রম আইন অনুযায়ী তাঁদের স্বীকৃতি দেওয়া, অধিকার ও কল্যাণ নিশ্চিত করার সুপারিশ করা হয়েছে কমিশনের প্রতিবেদনে।
বিউটি পারলারের কর্মীদের স্বাস্থ্য সুরক্ষা নিশ্চিত করতে তাঁদের জন্য প্রয়োজনীয় ব্যক্তিগত সুরক্ষা সরঞ্জাম প্রদান করাসহ সুনির্দিষ্ট নিরাপত্তা নির্দেশিকা প্রণয়নের কথাও বলা হয়েছে প্রতিবেদনে।
বিউটি পারলারের কর্মীদের বড় একটি অংশ রাতে বাসায় ফেরে। কমিশনের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, কর্মক্ষেত্রে ও রাত্রিকালীন বাড়ি ফেরার সময় তাঁদের হয়রানি প্রতিরোধ ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে ব্যবস্থা নিতে হবে। এসব শ্রমিকের সামাজিক মর্যাদা, সুরক্ষা ও নিরাপত্তার স্বার্থে কমিউনিটিভিত্তিক উদ্যোগ নেওয়া যেতে পারে।