Samakal:
2025-05-01@09:50:43 GMT

প্রয়োজন ‘বাইফোকাল ডিপ্লোমেসি’

Published: 20th, January 2025 GMT

প্রয়োজন ‘বাইফোকাল ডিপ্লোমেসি’

মিয়ানমারের রাখাইনভিত্তিক সশস্ত্র গোষ্ঠী আরাকান আর্মির হস্তে বাংলাদেশমুখী চারিটি পণ্যবাহী জাহাজ আটক হইবার ঘটনা যথেষ্ট উদ্বেগজনক। সোমবার সমকালে প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হইয়াছে, ইয়াংগুন হইতে পণ্য লইয়া টেকনাফে বাংলাদেশ জলসীমায় প্রবেশের পূর্বেই আরাকান আর্মির সদস্যরা নাবিকগণকে জিম্মি করিয়া জাহাজগুলি বৃহস্পতি ও শুক্রবার মংডুতে লইয়া যায়। যদিও উভয় পক্ষের ‘সমঝোতায়’ জাহাজগুলি পরবর্তী সময়ে টেকনাফ বন্দরে ভিড়িয়াছে; ঘটনাকে সীমান্ত বাণিজ্যের প্রশ্নে সতর্ক সংকেত বলিয়া আমরা মনে করি। 

আমরা জানি, ইতোমধ্যে রাখাইনের সিংহভাগ এলাকা আরাকান আর্মির নিয়ন্ত্রণে আসায় রাজ্যটি কার্যত মিয়ানমারের কেন্দ্রীয় সরকারের হস্তচ্যুত হইয়াছে। বাংলাদেশের সহিত মিয়ানমারের প্রায় সম্পূর্ণ সীমান্তই সাম্প্রতিক সময়ে আরাকান আর্মির নিয়ন্ত্রণে। রাখাইনে নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠার পরপরই তাহারা নাফ নদের মিয়ানমার অংশে নৌ চলাচলে নিষেধাজ্ঞা জারি করিলে উহার প্রভাব টেকনাফকেন্দ্রিক সীমান্ত বাণিজ্যেও পড়িয়াছে। প্রতিবেদন অনুসারে, গত ৮ ডিসেম্বর সশস্ত্র গোষ্ঠীটির মংডু টাউনশিপ দখলের পর এই প্রথম কোনো জাহাজ মিয়ানমার হইতে পণ্য লইয়া বাংলাদেশে আসিতেছিল। সমস্যাটির স্থায়ী সমাধান না হইলে এই পথে বাংলাদেশের বাণিজ্য অনিশ্চিত ও ব্যয়সাপেক্ষ হইয়া দাঁড়াইবে। স্থায়ী সমাধান নিঃসন্দেহে সহজ নহে। 

আমরা মনে করি, এই নিকটতম প্রতিবেশীর সহিত ব্যবসা-বাণিজ্যকে গুরুত্ব দিলে হয়তো ইহার উদ্ভবই হইত না। স্থানীয় ব্যবসায়ীদের মতে, টেকনাফের জলসীমানা দিয়া পণ্য পরিবহনের জন্য বন্দর কর্তৃপক্ষ নির্দিষ্ট মাশুল আদায় করে, যাহা নদী খনন বা ব্যবস্থাপনাকার্যে ব্যয় করিবার কথা। তবে টেকনাফ বন্দর চালু হইবার পর অদ্যাবধি নাফ নদের বাংলাদেশ অংশ খনন করা হয় নাই। খনন করা হইলে নাফ নদের মিয়ানমার অংশ হইয়া জাহাজ ও ট্রলার চলাচল করিতে হইত না। আরাকান আর্মিও তখন জাহাজ আটকের সুযোগ পাইত না। উপরন্তু রাখাইন রাজ্যের রাজনৈতিক ও সামরিক পরিস্থিতিতে যখন পরিবর্তন ঘটিতেছিল, তখনই আমরা অত্র সম্পাদকীয় স্তম্ভে পরামর্শ দিয়াছিলাম, মিয়ানমারের কেন্দ্রীয় সরকারের পাশাপাশি আরাকান আর্মির সহিত যোগাযোগ রক্ষা করা উচিত। বিশ্বে এমন নজির বিরল নহে, রাষ্ট্রের পাশাপাশি গুরুত্বপূর্ণ রাষ্ট্রবহির্ভূত শক্তির সহিতও অনানুষ্ঠানিক কূটনৈতিক সম্পর্কের চর্চা চলিয়া থাকে। খোদ রাখাইনেই আরাকান আর্মির সহিত মিয়ানমারের অপর প্রতিবেশী রাষ্ট্রগুলির এইরূপ উদ্যোগ বিদ্যমান। 

দুর্ভাগ্যবশত, বিগত সরকারের ন্যায় বর্তমান সরকারও এই বিষয়ে কর্ণপাত করে নাই। যদি অন্যথা হইত, তাহা হইলে আলোচ্য সমস্যার হয়তো সৃষ্টিই হইত না। হইলেও সমাধান সহজ হইত। এই প্রশ্নও তোলা যায়, বিকল্প ব্যবস্থার অনুপস্থিতিতে পর্যাপ্ত নিরাপত্তা নিশ্চিত না করিয়া মিয়ানমার হইতে পণ্য আমদানিরই বা হেতু কী? নিদেনপক্ষে আরাকান আর্মির পক্ষ হইতে যে কোনো প্রকার ‘অনাপত্তি’ তো গ্রহণ করা যাইত। এই দিক হইতে সমস্যার জন্য যদি পণ্য আমদানির অনুমতি দানকারী সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের ঔদাসীন্যকে দায়ী করা হয়, তাহা হইলে নিশ্চয় বাড়াবাড়ি হইবে না।
স্বীকার্য, টাকার অঙ্কে বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের মধ্যে বাণিজ্যের পরিমাণ বিশাল নহে। কিন্তু অপর দিক হইতে আসে বিভিন্ন প্রকার কাষ্ঠ, হিমায়িত মৎস্য, শুষ্ক সুপারি, পেঁয়াজ, আদা, শুঁটকি, নারিকেলসহ প্রয়োজনীয় পণ্য, যাহার আমদানি ব্যয়ও অপেক্ষাকৃত কম। বাংলাদেশও আলু, প্লাস্টিক পণ্য, সিমেন্ট, তৈরি পোশাকসহ বহু পণ্য মিয়ানমারে রপ্তানি করিয়া থাকে। অতএব, ভবিষ্যৎ আন্তঃদেশীয় মসৃণ বাণিজ্যের স্বার্থে অবিলম্বে নাফ নদের খনন যদ্রূপ শুরু করা জরুরি, তদ্রূপ আরাকান আর্মির সহিত দ্রুত সম্পর্ক স্থাপনও সময়ের দাবি। পরিস্থিতি বলিতেছে, রাখাইনের উপর আরাকান আর্মির নিয়ন্ত্রণের শীঘ্রই অবসান হইবে না; বরং বৃদ্ধি পাইতে পারে। আমাদের দক্ষিণ-পূর্ব সীমান্ত সুরক্ষিত রাখিতে হইলেও মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে ‘বাইফোকাল ডিপ্লোমেসি’ তথা নিকট ও দূরবর্তী পক্ষগুলির সহিত আলোচনা ও সহযোগিতা অব্যাহত রাখা গুরুত্বপূর্ণ। 

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: আর ক ন আর ম র সরক র ব যবস

এছাড়াও পড়ুন:

নড়াইলে সরকারি গাছ বিক্রির অভিযোগে চেয়ারম্যানসহ ১৩ জনের বিরুদ্ধে মামলা

নড়াইল সদর উপজেলার শাহাবাদ ইউনিয়নে সড়কের পাশে সরকারি গাছ চুরি করে বিক্রির অভিযোগে মামলা হয়েছে। গতকাল বুধবার রাতে শাহবাদ ইউনিয়ন ভূমি সহকারী কর্মকর্তা মশিউর রহমান বাদী হয়ে সদর থানায় মামলাটি করেন।

মামলায় ওই ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান জিয়াউর রহমানসহ ১৩ জন আসামি করা হয়েছে। অন্য আসামিরা হলেন প্রশিকা নড়াইল উন্নয়ন এলাকা ব্যবস্থাপক শাহাব উদ্দিন ও প্রশিকার গঠিত সংগঠন প্রভাতী যুব সংঘের সভাপতি নড়াইল সদর উপজেলার তুজরডাঙ্গা এলাকার মুজিবুর রহমান, সদস্য একই এলাকার জরিনা বেগম, রজব আলী, মো. আজিবর, মো. ইলিয়াছ, ইমান আলী, মো. ওমর, মো. হায়দার, আবু সাঈদ, মো. এনামুল ও মো. শরিফুল।

এ বিষয়ে আজ বৃহস্পতিবার সকালে নড়াইল সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সাজেদুল ইসলাম বলেন, ‘সরকারি গাছ চুরি করে বিক্রির অভিযোগে একটি মামলা হয়েছে। ঘটনার তদন্ত করে দোষী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে আইনানুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

মামলার এজহারে বাদী অভিযোগ করেছেন, গত ২৯ এপ্রিল নড়াইল সদর উপজেলার শাহাবাদ বাজার থেকে হাজির বটতলা পর্যন্ত সরকারি রাস্তার জায়গা থেকে গাছ কাটা ও চুরি করে বিক্রির সংবাদ পেয়ে তিনি ঘটনাস্থলে যান। উপস্থিত হয়ে দেখেন, কাটা গাছবোঝাই একটি ট্রাক এবং নছিমন জব্দ করেছেন নড়াইল সদর উপজেলা ভূমি অফিসের সহকারী কমিশনার দেবাশীষ অধিকারী। তখন ঘটনাস্থলে শ্রমিকদের জিজ্ঞাসাবাদ ও খোঁজ নিয়ে জানতে পারেন, মামলার আসামিরা কোনো ধরনের অনুমতি ছাড়াই খাসজমি থেকে গাছ কেটে বিক্রি করেছেন। এর আগেও একবার তাঁরা ওই জমি থেকে গাছ বিক্রি করেছিলেন। জব্দ করা গাছের লগ, ডালপালা এবং আগে কাটা গাছের অবশিষ্ট ভূমিসংলগ্ন গুঁড়ি পর্যবেক্ষণ করে বোঝা গেছে, ওই স্থান থেকে আনুমানিক পাঁচ লাখ টাকার অধিক গাছ চুরি করে কাটা ও বিক্রি হয়েছে।  

প্রশিকা নড়াইল উন্নয়ন এলাকার ব্যবস্থাপক শাহাব উদ্দিন বলেন, ২০০৯ সালে প্রশিকা, ইউনিয়ন পরিষদ ও প্রভাতী যুব সংঘের যৌথ উদ্যোগে একটি চুক্তির মাধ্যমে সড়কের পাশে গাছগুলো রোপণ করেছিল। সে সময় সড়কটি খাস খতিয়ানভুক্ত ছিল না। বর্তমানে তা সরকারের আওতায় পড়ায় গাছ কাটার অনুমতি চেয়ে ইউএনওর কাছে আবেদন করা হয়েছিল, তবে প্রশাসন কোনো সিদ্ধান্ত দেয়নি।  কিছুদিন আগে ইউপি সদস্য ইব্রাহিম তাঁকে ফোনে জানান, বিদ্যুৎ বিভাগের কাটা ডালপালা বিক্রি করতে চান চেয়ারম্যান। বিদ্যুৎ বিভাগের কাটা ডালপালাগুলো পড়ে থেকে নষ্ট হবে ভেবে তিনি বিক্রিতে সম্মতি দেন। পরে গাছ কীভাবে বা কারা কেটেছে, তা তিনি জানেন না।

মামলা করার আগে অবৈধভাবে গাছ কাটার অভিযোগের ব্যাপার জানতে চাইলে ইউপি চেয়ারম্যান জিয়াউর রহমান বলেছিলেন, প্রশিকার সঙ্গে চুক্তির একটি পক্ষ ছিল ইউনিয়ন পরিষদ। সেই হিসেবে গাছ কাটার অনুমতি নিতে ইউএনও বরাবর প্রশিকার আবেদন তিনি চেয়ারম্যান হিসেবে সুপারিশ করেছিলেন। তবে গাছ কেটেছে প্রশিকা আর তাদের সংগঠন। এখানে চেয়ারম্যান-মেম্বরের কিছু নেই।

নড়াইল সদর উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) দেবাশীষ অধিকারী বলেন, প্রশিকার চুক্তির সময় সড়কটি ব্যক্তিমালিকানাধীন জমিতে ছিল, পরে ২০১৫ সালে এটি খাস খতিয়ানভুক্ত হয়। খাসজমি থেকে গাছ কাটা বেআইনি। এ কারণে তাঁদের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ