সিরাজগঞ্জের বেলকুচির সাবেক শ্রমিকলীগ নেতা আব্দুল মোতালেবের বাড়িতে ‘বোমা বিস্ফোরণের’ আলোচিত ঘটনায় চরমপন্থী সদস্য ফজলু হক নিহতের ঘটনার মুল ‘মাস্টারমাইন্ডরা’ এখনও ধরাছোঁয়ার বাইরে রয়েছেন। বোমা বিস্ফোরণে সর্বহারা-চরমপন্থী হত্যার ‘মাস্টারমাইন্ড’ আওয়ামী লীগ সরকারের সাবেক এমপি আব্দুল মমিন মন্ডল ও তার নির্বাচনী সমন্বয়ক আমিনুল ইসলাম ওরফে ইঞ্জিনিয়ার আমিনুল শুরু থেকেই রহস্যজনক পুলিশের সন্দেহের বাইরে। তারা বাইরে থাকলেও ১৩ মাস পর মামলার তদন্তে হঠাৎ ‘গতি’ ফিরেছে।

অভিযোগ রয়েছে, ‘বোমা বিস্ফোরণের’ ঘটনাটি শুরু থেকেই আড়াল করার চেষ্টা করেন বেলকুচির সাবেক ওসি আনিছুর রহমান ও সহকারী পুলিশ সুপার জন রানা (সরকার পতনের কদিন আগে চাকরি ছেড়ে সস্ত্রীক কানাডায় পাড়ি জমিয়েছেন)। উল্লেখ্য, ‘বোমা বিস্ফোরণের’ ঘটনা নিয়ে সমকালে একাধিক প্রতিবেদনও প্রকাশিত হয়েছে।

এর আগে দায়েরকৃত মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ছিলেন বেলকুচির ইন্সপেক্টর (তদন্ত) আহসানুজ্জামান। তার তদন্তের ধীরগতি ও গড়িমসিতে মামলাটি স্থানান্তরিত হয় ডিবি পুলিশে। ডিবির সাবেক ওসি জুলহাজ উদ্দিন তদন্তের ভার নিয়ে মোতালেবের সহোদর আবু তালেবকে গ্রেপ্তার করেন। কিন্তু মোতালেব হোসেনকে গ্রেপ্তার বা ‘মাস্টারমাইন্ড’দের খুঁজে পেতে ব্যর্থ হন ওসি জুলহাজ উদ্দিন। ফলে তদন্ত মাঝপথে ঝুলে যায়। এরপর ইন্সপেক্টর জুলহাজ উদ্দিন বদলীর পর নতুন তদন্ত করেন ডিবির উপ-পরিদর্শক (এসআই) নাজমুল ইসলাম। মূল ‘মাস্টারমাইন্ডদের না খুঁজে তিনিও কৌশলে কালক্ষেপণ-গড়িমসি করেন বলে অভিযোগ উঠে।

এদিকে, স্থানীয়দের সহায়তায় এরই মধ্যে বেলকুচি পুলিশের হাতে গ্রেপ্তার হন সাবেক শ্রমিকলীগ নেতা আব্দুল মোতালেব। এরপর মূল মাস্টারমাইন্ডদের ইন্ধনে মোতালেব ও তালেবসহ সহোদর দু’ভাইকে অভিযুক্ত দেখিয়ে আদালতে মামলার চার্জশিট দাখিলের মহা পরিকল্পনা করেন এস আই নাজমুল। এমন অভিযোগও রয়েছে। বিষয়টি জেনে গণমাধ্যমকমীরা তৎপর হলে এসআই নাজমুলের কাছ থেকে নথিপত্র জব্দ করে করেন ডিবির নতুন ওসি একরামুল হক। এরই মধ্যে তিনি তদন্ত শুরু করেন। সোমবার বেলকুচিতে তদন্তে গেলেও সরকার পতনের ছাত্র-জনতার আন্দোলনে তিন মাদ্রাসা শিক্ষার্থী ও বিএনপি কর্মী নিহতের ঘটনায় নতুন মামলায় আসামি হওয়ার কারণে পালিয়ে থাকা মূল ‘মাস্টারমাইন্ড’ ইঞ্জিনিয়ার আমিনুল ও সাবেক এমপি মমিন মন্ডলকে খুঁজে পাননি তিনি।

সিরাজগঞ্জের বেলকুচিতে সাবেক শ্রমিকলীগ নেতা মোতালেবের বাড়িতে ‘বোমা বিস্ফোরণে’র ঘটনাটি ২০২৩ সালের ১৯ ডিসেম্বর। গত ১৩ মাস আগে ওই বিস্ফোরণে চরমপন্থী ও সর্বহারা সদস্য কুষ্টিয়া জেলা সদরের মিলপাড়ার বাসিন্দা ভাড়াটে সন্ত্রাসী ফজলু হক নিহত হন। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে নৈরাজ্য সৃষ্টির পরিকল্পনায় সাবেক পতিত সরকারের লোকজন কুষ্টিয়া থেকে বোমা তৈরির কারিগর ভাড়া করে বেলকুচিতে আনে। সাবেক এমপি আব্দুল মমিন মন্ডলের প্রতিপক্ষ সাবেক মন্ত্রী আব্দুল লতিফ বিশ্বাসকে ঘায়েল করতে নির্বাচনপূর্ব সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড পরিচালনার অংশ হিসেবে বোমা নৈরাজ্যের পরিকল্পনা করা হয়। কিন্তু বোমা তৈরির সময় হঠাৎ বিস্ফোরণে গুরুতর আহত হন ডাকাতি ও অস্ত্রসহ একাধিক মামলার আসামি ফজলু।

সাবেক শ্রমিকলীগ নেতা মোতালেবের বাড়িতে বিস্ফোরণের পরপরই সাবেক এমপি মমিন মন্ডলের ব্যবহৃত কালো রংয়ের মাইক্রোবাসে আহত ফজলুকে প্রথমে ঢাকা-রাজশাহী মহাসড়কের পাশে কড্ডার মোড়ে একটি ক্লিনিকে ভর্তি করা হয়। আহত ফজলুকে চিকিৎসার জন্য ইঞ্জিনিয়ার আমিনুল, শ্রমিকলীগ নেতা মোতালেব, তার সহোদর আবু তালেব, তাদের ভাগিনা আমিরুল, ভাতিজা রানাসহ ৭-৮ জন ধরাধরি করে নিয়ে যায় বলে প্রত্যক্ষদর্শী সাবেক মেয়র সাজ্জাদুল হক রেজাসহ তার লোকজন জানান। এরপর অবস্থা বেগতিক হলে পরবর্তীতে ঢামেক হাসপাতালে ভর্তি করা হয় তাকে। সেখানে তিন দিন চিকিৎসাধীন থাকার পর অবশেষে মারা যান তিনি। এ ঘটনায় নিহতের সহোদর বিপুল হক বাদী হয়ে ঘটনার পাঁচদিন পর বেলকুচিতে হত্যা মামলা দায়ের করেন। মামলার আসামি সাবেক শ্রমিকলীগ নেতা মোতালেব টানা এক বছর ধরাছোঁয়ার বাইরে থাকলেও তার সহোদর ভাই আবু তালেব ডিবি পুলিশের হাতে ধরা পড়ে। এক বছর পর স্থানীয় লোকজনের সহায়তায় সাবেক শ্রমিকলীগ নেতা মোতালেবকে পুলিশ গ্রেপ্তার করতে সক্ষম হলেও ঘটনার মুল মাস্টারমাইন্ড সাবেক এমপি আব্দুল মমিন মন্ডল ও তার নির্বাচন সমন্বয়কারী শুরু থেকেই আড়ালে। এখনও তারা পুলিশের ধরাছোঁয়ার বাইরে।

মামলার নতুন তদন্তকারী কর্মকর্তা ডিবির ইন্সপেক্টর একরামুল হক বলেন, ‘যেহেতু খুব শিগগিরই চার্জশিট দাখিল করা হবে। তাই আসামিদের ভূমিকার বিষয়ে নিজেই সরেজমিনে এসে তদন্ত শুরু করেছি। সাবেক এমপি মমিন মন্ডল ও ইঞ্জিনিয়ার আমিনুল জড়িত আছে কিনা, বিষয়টি নিশ্চিত নই।

সাবেক তদন্তকারী কর্মকর্তা এসআই নাজমুল ইসলাম বলেন, ‘বাদীর এজাহারেও সাবেক এমপি মমিন মন্ডল ও ইঞ্জিনিয়ার আমিনুলের নাম নেই।’

সিরাজগঞ্জ সিআইডি পুলিশের সাবেক ইন্সপেক্টর ছায়া তদন্তকারী কর্মকর্তা মোহাইমিনুল ইসলাম বলেন, ‘বোমা বিস্ফোরণকে প্রেশার কুকার বিস্ফোরণ বলে ঘটনার মামলার আলামত আগে নষ্ট করে ফেলে আসামি মোতালেব ও তার স্বজনরা। বেলকুচি থানা পুলিশের গড়িমসির কারণে ঘটনার আলামত বাড়ির পাশে খালে ফেলা হয়। এমনকি, বোমার আগুনে ঘরে ঝলসে যাওয়া দেয়াল রং করার পাশাপাশি ভঙ্গুর টাইলসও পরিবর্তন করা হয়।’

এদিকে, মামলার কারণে পলাতক সিরাজগঞ্জ-৫ বেলকুচি ও চৌহালী) আসনের সাবেক এমপি মমিন মন্ডল ও ইঞ্জিনিয়ার আমিনুলের বক্তব্য পাওয়া যায়নি। দু’জনের ব্যক্তিগত মুঠোফোনের হোয়াটসঅ্যাপের নম্বরে মঙ্গলবার সকালে সমকালের এ প্রতিবেদকের কল ও পাঠানো ক্ষুদে-বার্তায় সাড়া দেননি তারা। কল ও ক্ষুদে-বার্তায় সাড়া দেননি বেলকুচির সাবেক সার্কেল এএসপি জন রানা ও সাবেক ওসি আনিসও।

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: স র জগঞ জ য বল গ তদন ত স ব ক এমপ স র জগঞ জ ল ইসল ম তদন ত ঘটন র সরক র

এছাড়াও পড়ুন:

গোপালগঞ্জে সুদের টাকা নিয়ে বিরোধের জেরে সংঘর্ষ, পুলিশসহ আহত ২৫

গোপালগঞ্জের কোটালীপাড়ায় সুদের টাকা লেনদেনের বিরোধকে কেন্দ্র করে দুই গ্রামের মধ্যে ২ ঘণ্টাব্যাপী সংঘর্ষে ৪ পুলিশসহ অন্তত ২৫ জন আহত হয়েছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে পুলিশ ও সেনা বাহিনী ঘটনাস্থলে ছুটে যায়। সংঘর্ষ চলাকালে পুলিশ ২৫ রাউন্ড ফাঁকা গুলি বর্ষণ করে। এছাড়া ঘটনাস্থল থেকে উভয়পক্ষের ৪৫ জনকে আটক করার কথা জানিয়েছে পুলিশ।

আহতরা হলেন- পারভেজ শেখ (২০), মানিক শেখ (৪১), সাদ্দাম শেখ (৩৫), শাকিল খান (২৫), ফয়সাল শেখ (২০), আবু সাঈদ শেখ (৪০), সজীব শেখ (১৯), রনি শেখ (৪০), সোহেল সুলতান (২৫), আফ্রিদি শেখ (১৯), মোস্তফা শেখ (৪০), নুরুন্নবী (১৮), আমানুল্লাহসহ (২৫) আরও অনেকে।

গুরুতর আহতদের গোপালগঞ্জ ও কোটালীপাড়া হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। এছাড়া কোটালীপাড়া থানার আহত এসআই সেলিম মাহমুদ কোটালীপাড়া স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স থেকে প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়েছেন। ওই এসআইসহ কোটালীপাড়া থানার আরও ৩ কনস্টেবল আহত হয়েছেন বলে কোটালীপাড়া থানার এসআই মামুনুর রশীদ জানিয়েছেন।

মাঝবাড়ি গ্রামের কালাম দাড়িয়া ও বংকুরা গ্রামের হাসেম মুন্সি জানিয়েছেন, কোটালীপাড়া উপজেলার বংকুরা গ্রামের রিয়াজুলের কাছ থেকে মাঝবাড়ি গ্রামের ফারুক দাড়িয়া সুদে টাকা নেন । সেই টাকা সময়মত ফারুক সুদে আসলে পরিশোধ করতে গড়িমসি শুরু করেন। এতে পাওনাদার রিয়াজুল ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠেন। সুদের টাকা লেনদেন নিয়ে দু’জনের মধ্যে আজ শুক্রবার সকালে বাকবিতণ্ডা হয়। এদিন সকাল সাড়ে ৯টার দিকে মসজিদের মাইক থেকে গ্রামবাসীকে সংঘর্ষে অংশ নেওয়ার আহ্বান জানানো হয়। এ আহ্বানের পর দুই গ্রামের লোকজন ঢাল-সড়কিসহ দেশীয় অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে সংঘর্ষে লিপ্ত হয়। দফায়-দফায় উভয়পক্ষের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া ও সংঘর্ষ চলে। পুলিশ প্রথমে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে ব্যর্থ হয়। দুই ঘণ্টা পর বেলা সাড়ে ১১টার দিকে সেনাবাহিনী ঘটনাস্থলে পৌঁছে পরিস্থিতি শান্ত করে।

উভয়পক্ষের মধ্যে উত্তেজনা বিরাজ করায় ঘটনাস্থলে পুলিশ মোতায়েন রয়েছে।

কোটালীপাড়া পাড়া থানার ওসি মো. আবুল কালাম আজাদ বলেন, ২৫ রাউন্ড গুলি বর্ষণ ও উভয়পক্ষের ৪৫ জনকে আটক করে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করা হয়েছে। তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে এ সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে জানিয়ে ওসি আরও বলেন, এলাকার পরিস্থিতি পুলিশের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। ঘটনাস্থলে পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। কোন পক্ষ থেকে এখন পর্যন্ত থানায় অভিযোগ দেওয়া হয়নি। অভিযোগ পাওয়ামাত্র আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

অভিযুক্ত রিয়াজুল ও ফারুক দাড়িয়ার ফোন নম্বর বন্ধ পাওয়া গেছে। এ কারণে তাদের বক্তব্য পাওয়া যায়নি।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • গোপালগঞ্জে দাঁড়িয়ে থাকা ট্রাকে ৩ বাসের ধাক্কা, পুলিশ কর্মকর্তাসহ নিহত ২
  • গোপালগঞ্জে ৬ যানবাহনের সংঘর্ষ, পুলিশ সদস্যসহ নিহত ২
  • রেললাইনে দাঁড়িয়ে কথা বলছিলেন মুঠোফোনে, ট্রেনে কাটা পড়ে চা–শ্রমিকের মৃত্যু
  • গোপালগঞ্জে সুদের টাকা নিয়ে বিরোধের জেরে সংঘর্ষ, পুলিশসহ আহত ২৫