Samakal:
2025-06-16@10:48:54 GMT

হরেক রকম পিঠা

Published: 21st, January 2025 GMT

হরেক রকম পিঠা

শীতের দিনগুলোয় বাহারি ধরনের পিঠা না খেলে অতৃপ্তি থেকে যায়। আজকাল বাজারে বিভিন্ন ধরনের পিঠা পাওয়া যায়। সেগুলো খুব সাধারণ ও বৈচিত্র্যহীন। আবার মানসম্মতও নয়। তাই ঘরেই বানিয়ে নিন পছন্দের পিঠা। রেসিপি দিয়েছেন কোহিনুর বেগম।

ননাশ পিঠা   
উপকরণ: চালের গুঁড়া ৫০০ গ্রাম, আদা-রসুন বাটা এক চা চামচ, হলুদের গুঁড়া এক চা চামচ, কাঁচামরিচ বাটা এক চা চামচ, তেজপাতা-এলাচ-দারচিনি ২টি করে, তেল পরিমাণমতো। 
প্রস্তুত প্রণালি: প্রথমে পাত্রে পরিমাণমতো পানি দিন। পানি ফুটলে এর মধ্যে  হলুদ, আদা-রসুন-কাঁচামরিচ বাটা, তেজপাতা, এলাচ, দারচিনি দিন। ভালো করে ফুটলে চালের গুঁড়া দিয়ে মৃদু আঁচে ১০ মিনিট ঢেকে রাখুন। ঢাকনা খুলে কাঠের কাঠি দিয়ে নাড়ুন। এরপর খামির ভালো করে মাখাতে হবে। এবার বড় রুটি তৈরি করতে হবে। রুটি বেশি পাতলাও হবে না, আবার মোটাও হবে না। একটি গ্লাস দিয়ে ছোট ছোট লুচির আকার তৈরি করে নিন। চুলায় একটি পাত্রে তেল দিয়ে পিঠাগুলো ভেজে নিন। এই পিঠা মাংস ও ভর্তা দিয়ে খেতে সুস্বাদু।

মুগ পাকন পিঠা   
উপকরণ: মুগ ডাল ২৫০ গ্রাম, চালের গুঁড়া ৪০০ গ্রাম, তেজপাতা-এলাচ-দারচিনি ৪টি করে, চিনি ৫০০ গ্রাম, সয়াবিন তেল ৫০০ গ্রাম, ডিজাইন করার জন্য সুই অথবা খেজুরের কাঁটা, পানি পরিমাণমতো। 
প্রস্তুত প্রণালি: প্রথমে চিনির সিরা তৈরি করতে হবে। এ জন্য পাত্রে ৫০০ গ্রাম চিনি ও পানি নিয়ে জ্বাল দিন। এতে দুটো করে তেজপাতা, এলাচ ও দারচিনি দিন। সিরা আঠালো হলে নামিয়ে ঠান্ডা করুন। এবার প্রথমে মুগ ডাল ধুয়ে সেদ্ধ করুন। তাতে দুটো করে দারচিনি, এলাচ ও তেজপাতা দিন। মুগ ডালগুলো ডাল ঘুঁটনি দিয়ে ঘুঁটে নিন। এবার চালের গুঁড়া দিয়ে ১০ মিনিট মৃদু আঁচে ঢেকে রাখুন। চালের গুঁড়া আর ডাল ভালো করে মিশিয়ে খামির তৈরি করুন। বেলুন-পিঁড়িতে অল্প তেল মাখিয়ে তাতে মোটা করে রুটি বেলে নিন। এবার পছন্দের আকারে অর্থাৎ পাতা, ফুল কিংবা অন্যান্য নকশার আকারে কেটে নিন। সুই অথবা খেজুর কাঁটা দিয়ে ডিজাইন করুন। পাত্রে তেল গরম করে পিঠাগুলো লাল লাল করে ভেজে নিন। ভাজা পিঠাগুলো সিরার মধ্যে ডুবিয়ে মিনিট খানেক রেখে তুলে নিন।

নারকেলের চমচম পিঠা   
উপকরণ: কোড়ানো নারকেল ১টি, চালের গুঁড়া ৪০০ গ্রাম, চিনি ৫০০ গ্রাম, তেজপাতা-এলাচ-দারচিনি ৪টি করে, তেল পরিমাণমতো। 
প্রস্তুত প্রণালি: প্রথমে সিরা তৈরি করুন। এ জন্য পাত্রে চিনি ও পানি সমপরিমাণে নিয়ে তাতে দুটি করে তেজপাতা, এলাচ ও দারচিনি দিয়ে জ্বাল দিন। সিরা ঘন ও আঠা আঠা ভাব হলে চুলা থেকে নামিয়ে নিন। এবার একটি পাত্রে ৪ কাপ পানি, নারকেল, দুটি করে তেজপাতা, এলাচ ও দারচিনি দিয়ে ভালো করে ফোটাতে হবে। চালের গুঁড়া দিয়ে মৃদু আঁচে ১০ মিনিট ঢেকে রাখুন। চালের গুঁড়া ও নারকেল ভালো করে মেখে খামির তৈরি করুন। খামির মাখিয়ে ছাঁচের মধ্যে দিয়ে পিঠার আকার তৈরি করতে হবে। এবার কড়াইয়ে তেল গরম করে পিঠাগুলো লাল লাল করে ভেজে নিন। ভাজা হলে চিনির সিরায় দিয়ে ১০ মিনিট পর উঠিয়ে নিন। 

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: ৫০০ গ র ম ১০ ম ন ট এল চ ও প রথম

এছাড়াও পড়ুন:

‘লিচুর বাগানে’ যে কারণে ‘পিরিতের বেড়া’ দিতে হয়

‘তাণ্ডব’ সিনেমার গান ‘লিচুর বাগানে’ প্রকাশের পর রীতিমতো হইচই পড়ে গেছে। কফি শফ থেকে বাস, মেট্রোরেল আশপাশে কান পাতলে গানটা শোনা যাচ্ছে। কেউ না কেউ শুনছেন। সামাজিক মাধ্যমের স্টোরি ও রিলসেও গানটি ভেসে বেড়াচ্ছে। চরকি ও এসভিএফের অফিশিয়াল ইউটিউব চ্যানেলে প্রকাশিত গানটির আজ পর্যন্ত (১২ এপ্রিল ২০২৫) ভিউ হয়েছে যথাক্রমে ১২ মিলিয়ন ও ৩ দশমিক ৬ মিলিয়ন।

উচ্ছ্বসিত অনেক দর্শক গানটি নিয়ে মন্তব্যও করেছেন। তাহসিন নামের এক শ্রোতা লিখেছেন, ‘গানটির প্রতিটি সুর, দৃশ্য ও পরিবেশনায় বাঙালির ঐতিহ্য ও সংস্কৃতির অপূর্ব রূপ ফুটে উঠেছে। যাত্রাপালার ফিল্মের আবহে তৈরি এই গানটি যেন গ্রামীণ বাংলার প্রাণস্পন্দন তুলে ধরেছে। লোকেশন থেকে শুরু করে কস্টিউম, প্রতিটি ডিটেইলে আছে নিখুঁত যত্ন।’

গানটি নিয়ে সামাজিক মাধ্যমে বন্ধুদের মধ্যে খুনসুটিও চলছে। বন্ধুকে মেনশন দিয়ে কেউ যেমন প্রশ্ন করছেন, ‘কী রে, বেড়া ডিঙাতে পারলি?’ আবার কেউ জিজ্ঞেস করছেন বল তো, ‘“লিচুর বাগানে” কেন “পিরিতের বেড়া” দিতে হয়?’

প্রশ্নটির উত্তর খোঁজার চেষ্টা করা যাক। শুরুতেই ‘লিচুর বাগানে’ গানটি দিয়ে আলোচিত, ‘কে এই ছত্তার পাগলা’ শীর্ষক প্রথম আলোর প্রতিবেদন থেকে কিছু তথ্য জেনে নেওয়া যাক। গবেষক সরোজ মোস্তফার মতে ‘কে দিল পিরিতের বেড়া লিচুরও বাগানে’ পঙ্‌ক্তির রচয়িতা ও সুরকার ছত্তার পাগলা। তবে সংগীতগবেষক গৌতম কে শুভর মত ভিন্ন। তাঁর মতে, ‘এটি মূলত প্রচলিত ঘেটু গান। “কে দিল পিরিতির বেড়া লিচুর বাগানে?” অংশটি মূল গানের অংশ। ছত্তার পাগলা নিজের মতো করে এর সঙ্গে কথা সংযোজন করেছেন। নেত্রকোনায় ছত্তার পাগলার লেখা রূপটিই বিখ্যাত হয়েছে।’ ২০১৪ সালের এপ্রিলে মারা গেছেন ছত্তার পাগলা। জীবদ্দশায় রচনা ও সুরারোপ করেছেন কয়েক শ গান। মৃত্যুর বছর তিনেক আগে তাঁর কাছ থেকে গানটি শুনে হাতে লিখে রেখেছিলেন আল মামুন চৌধুরী।

আল মামুন চৌধুরীর লেখা অনুযায়ী গানটির কথা:
কে দিল পিরিতের বেড়া, লিচুরও বাগানে
লিচুরও বাগানে গো সই…লিচুরও বাগানে …(ঐ)
পাখি খাইছ না লিচু, বন্দে খাইবো
বন্দে লিচু খাইয়া, খুশি হইবো
আমার কাছে আইসা কইবো
কত শান্তি দিবো আমার মনেপ্রাণে (ঐ)
ছোট ছোট লিচুগুলি, বন্দে তুলে আম্বো তুলি
বন্দে দেয় গো আমার মুখে,
আমি দিতে চাই বন্ধুর মুখের পানে…(ঐ)
মিষ্টি লিচু খাইয়া বন্দে, বাঁশি বাজায় মন আনন্দে
আমার মনে লাগে সন্দে বন্ধু সম্ভব জাদু জানে (ঐ)
বাঁশি হাতে পলায় মালা, তারে চায় ছত্তার পাগলা,
করব লইয়া উলামেলা, (২) প্রাণবন্ধুর সনে…(ঐ)

সরল অর্থে ‘বেড়া’ হচ্ছে  প্রতিবন্ধকতা তথা বাধা তৈরির উপকরণ। আর ‘পিরিতের বেড়া’ মানে ভালোবাসায় বাধা। কিন্তু ভালোবাসার এই বাধা তথা প্রতিবন্ধকতা ‘লিচুর বাগানে’ কেন? কবিতা তথা গানে অর্থের তারতম্য অর্থের অনুগত না হয়ে বোধ কিংবা ভাবনার পরবশে প্রস্ফুটিত হয়। ব্যক্তিবিশেষে তা ভিন্ন ভিন্ন অর্থ লাভ করে, ভিন্ন ভিন্ন মূল্য পায়।

আরও পড়ুন‘লিচুর বাগানে’ গানটি দিয়ে আলোচিত, কে এই ছত্তার পাগলা ০৬ জুন ২০২৫

‘কে দিল পিরিতের বেড়া, লিচুরও বাগানে’ একটি ‘ঘাটু গান’ বা ‘ঘেটু গান’। এই গান প্রসঙ্গে জানা যায়, এই গানের অন্যতম অনুষঙ্গ ছিল নৃত্য। অল্প বয়সী একটি ছেলেকে মেয়ে সাজিয়ে তার নৃত্যের মধ্য দিয়ে ঘেটু গান পরিবেশিত হতো। সঙ্গে থাকত ঢোল, হারমোনিয়াম, বাঁশি ইত্যাদি বাদ্যযন্ত্র। কয়েকটি ‘ঘেটু গানে’র দৃষ্টান্ত দেখা যাক।
(১)
‘তুই আমারে চিনলে নারে
আমি তো রসের কমলা।
বন্ধুর বাড়ি আমার বাড়ি
মধ্যে নলের বেড়া।’
(২)
ঘুমাইলা ঘুমাইলারে বন্ধু
পান খাইলায়না
এক বালিশে দুইটি মাথা
সুন্দর কইরা কওরে কথা।
গানগুলো থেকে উপলব্ধি করতে কষ্ট হয় না যে ‘ঘেটু গানে’ যেমন ভাষার সারল্য আছে, তেমনিভাবে রূপকল্প হিসেবে ব্যবহৃত হয়েছে যাপিত জীবনের সঙ্গে আষ্টেপৃষ্ঠে থাকা নানা উপকরণ। আর এ ক্ষেত্রে গান রচনার সময় রচয়িতা তাঁর আশপাশ থেকেই গান নির্মাণের উপকরণগুলো যে নিয়ে থাকবেন, সেই ধারণাও পাওয়া যায়। ‘লিচুর বাগানে’ গানের ক্ষেত্রেও বোধ করি এটা ঘটেছে। তাই এই গানে যেমন ‘লিচু বাগানে’র কথা আছে, একইভাবে আছে ‘পাখি’, ‘বাঁশি’ ও ‘লিচু’র কথাও। পাখিকে লিচু না খাওয়ার অনুরোধ করলেও পাখি যেন খেতে না পারে সে কারণেই যে বেড়া দেওয়া হয়েছে; সেই ব্যথাও গানটিতে ফুটে উঠেছে। সব মিলিয়ে ‘লিচুর বাগান’ শেষ পর্যন্ত ‘লিচুর বাগানে’ সীমাবদ্ধ থাকেনি। হয়ে উঠেছে ভালোবাসার প্রতীক।

কথায় আছে, ভালোবাসা জয় করে নিতে হয়। জিতে নেওয়ার মধ্যেই আছে অপার আনন্দ। ভালোবাসায় প্রতিবন্ধকতা থাকাটা মোটেও দোষের নয়। বরং বাধা না থাকাটাই যেন আশ্চর্যের। একইভাবে ভালোবাসা জিতে নেওয়ার পরও পেয়ে গেছি বলে হাল ছেড়ে দিলে চলে না। ‘লিচুর বাগান’কে এ ক্ষেত্রে ভালোবাসার প্রতীক হিসেবে বিবেচনা করলে, ‘লিচুর বাগানে’ ‘পিরিতের বেড়া’ তথা ভালোবাসার বেষ্টনী দেওয়াটাই যুক্তিযুক্ত। কেননা ‘ভালোবাসা’কে ভালোবাসা দিয়েই আগলে রাখতে হয়। প্রবল যত্নে আঁকড়ে রাখতে হয়। যেন কোনো কৌতূহলেই তা দুলে না ওঠে, হারিয়ে না যায়।

আরও পড়ুনসাবিলা তো ‘লিচুর বাগানে’ দিয়ে কী যে আগুন লাগিয়ে দিল...০৫ জুন ২০২৫

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • ‘লিচুর বাগানে’ যে কারণে ‘পিরিতের বেড়া’ দিতে হয়