প্রকৃতির এক আশীর্বাদ হচ্ছে এসেনশিয়াল অয়েল। এটি শুধু সুগন্ধি নয়, বরং আমাদের দৈনন্দিন জীবনের বিভিন্ন ক্ষেত্রে প্রাকৃতিক এ উপাদানটি বেশ ইতিবাচক পরিবর্তন আনতে পারে। ত্বকের যত্ন, চুলের স্বাস্থ্য, মানসিক প্রশান্তি এবং ঘরোয়া পরিচ্ছন্নতায় এসেনশিয়াল অয়েল অত্যন্ত কার্যকর। প্রাকৃতিক স্বাস্থ্যসেবা এবং রূপচর্চার একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান হিসেবে দিন দিন এই প্রাকৃতিক উপাদানটি বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠছে।
এসেনশিয়াল অয়েল কীভাবে তৈরি হয়?
এসেনশিয়াল অয়েল মূলত ডিস্টিলেশন বা ঠান্ডা প্রেসিং পদ্ধতিতে গাছের নির্যাস থেকে তৈরি করা হয়। এ পদ্ধতিতে গাছের সুগন্ধি এবং কার্যকর উপাদানগুলো সংগ্রহ করা হয়। মনে রাখতে হবে, রাসায়নিক প্রক্রিয়ায় তৈরি এই তেল কখনোই খাঁটি এবং নিরাপদ এসেনশিয়াল অয়েল হিসেবে গণ্য হয় না। এসেনশিয়াল অয়েল ব্যবহার করার আগে তা ক্যারিয়ার অয়েলের সঙ্গে মিশিয়ে নিতে হয়, যাতে এটি নিরাপদ এবং কার্যকর হয়।
ক্যারিয়ার অয়েল: কেন প্রয়োজন?
এসেনশিয়াল অয়েল অত্যন্ত শক্তিশালী এবং সরাসরি ব্যবহার করলে ত্বকে লালচে ভাব, জ্বালা বা ক্ষতি হতে পারে। এ কারণে ক্যারিয়ার অয়েল যেমন নারকেল তেল, অলিভ অয়েল বা অন্যান্য বীজের তেলের সঙ্গে মিশিয়ে এর তীব্রতা কমানো হয়। এটি ত্বকে সহজে শোষিত হয় এবং এসেনশিয়াল অয়েলের কার্যকারিতা বাড়ায়। ক্যারিয়ার অয়েল ছাড়া এসেনশিয়াল অয়েল ব্যবহার কখনোই নিরাপদ নয়।
আসুন, এসেনশিয়াল অয়েলের বহুমুখী ব্যবহার এবং উপকারিতা সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে নিই।
lমানসিক প্রশান্তি ও সতেজতার জন্য অ্যারোমাথেরাপি
সারাদিনের ক্লান্তি শেষে ঘরে ফিরে প্রশান্তির সুবাস পাওয়া মানেই মানসিকভাবে চাঙ্গা হয়ে যাওয়া। এ জন্যই এসেনশিয়াল অয়েল অ্যারোমাথেরাপি! অ্যারোমাথেরাপিতে এসেনশিয়াল অয়েল ব্যবহারের ফলে মানসিক চাপ কমে, মন ভালো হয় এবং ভালো ঘুম হয়।
ল্যাভেন্ডার অয়েল: স্ট্রেস দূর করে এবং ভালো ঘুম নিশ্চিত করে।
পেপারমিন্ট অয়েল: মনোযোগ বাড়ায় এবং মাথাব্যথা উপশম করে।
ইউক্যালিপটাস অয়েল: ঠান্ডা এবং সাইনাস সমস্যার জন্য কার্যকর।
ডিফিউজারে কয়েক ফোঁটা এসেনশিয়াল অয়েল মিশিয়ে ঘরের বাতাসে ছড়িয়ে দিলে পরিবেশ হয়ে ওঠে প্রশান্তিময়।
ত্বকের যত্নে এসেনশিয়াল অয়েল
প্রাকৃতিক উপাদান সবসময়ই ত্বকের জন্য নিরাপদ ও কার্যকর। এসেনশিয়াল অয়েল সরাসরি ত্বকে ব্যবহার না করে ক্যারিয়ার অয়েলের সঙ্গে মিশিয়ে নেওয়া জরুরি।
টি ট্রি অয়েল: ব্রণ ও ত্বকের জীবাণু দূর করে।
রোজহিপ অয়েল: ত্বকের ঔজ্জ্বল্য বাড়ায় এবং বলিরেখা কমায়।
ল্যাভেন্ডার অয়েল: ত্বকের প্রদাহ কমায় এবং শুষ্ক ত্বকে আর্দ্রতা বজায় রাখে।
লেমন অয়েল: ত্বকের ঔজ্জ্বল্য বাড়ায় এবং মেছতার দাগ হালকা করে।
স্যান্ডালউড অয়েল: ত্বকের আর্দ্রতা ধরে রাখে এবং ঔজ্জ্বল্য বাড়ায়।
ত্বকে লাগানোর আগে অবশ্যই এসেনশিয়াল অয়েলের প্যাচ টেস্ট করে নেওয়াটা জরুরি।
চুলের যত্নে এসেনশিয়াল অয়েল
চুলের সমস্যা সমাধানে এসেনশিয়াল অয়েল অসাধারণ কাজ করে।
রোজমেরি অয়েল: চুল পরা রোধ করে এবং নতুন চুল গজায়।
পেপারমিন্ট অয়েল: স্ক্যাল্পে রক্ত সঞ্চালন বাড়ায়।
ল্যাভেন্ডার অয়েল: চুলের আর্দ্রতা ধরে রাখে এবং খুশকি প্রতিরোধ করে।
ঘরোয়া পরিচ্ছন্নতায় এসেনশিয়াল অয়েল
এসেনশিয়াল অয়েল কেবল ব্যক্তিগত যত্নেই নয়, ঘরকেও পরিচ্ছন্ন ও সতেজ রাখতে সাহায্য করে।
লেমন অয়েল: প্রাকৃতিক জীবাণুনাশক এবং দাগ দূর করে।
টি ট্রি অয়েল: ব্যাকটেরিয়া ও ফাঙ্গাস প্রতিরোধ করে।
অরেঞ্জ অয়েল: ঘরের বাতাস সতেজ এবং প্রাণবন্ত করে।
পানি ও ভিনেগারের সঙ্গে মিশিয়ে স্প্রে হিসেবে ব্যবহার করলে এটি কেমিক্যালমুক্ত পরিচ্ছন্নতার সমাধান দেয়।
নিরাপত্তা ও সতর্কতা
ত্বকের জন্য: ক্যারিয়ার অয়েল ছাড়া প্রয়োগ করবেন না।
অন্তঃসত্ত্বা ও শিশু: চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া ব্যবহার করা অনুচিত।
পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া: র্যাশ, শ্বাসকষ্ট বা মাথাব্যথা হতে পারে।
সূত্র : হেলথলাইন
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: ক র যকর ন র পদ র জন য
এছাড়াও পড়ুন:
প্রযুক্তি কি ডিমেনশিয়া বাড়িয়ে দিচ্ছে? ৫৭টি ভিন্ন গবেষণায় উঠে এসেছে বিস্ময়কর তথ্য
প্রযুক্তির কল্যাণে হুটহাট বড় পরিবর্তন আসা নতুন কিছু নয়। করোনা মহামারির আগে বাসা থেকেও যে অফিস করা সম্ভব, সেটা মানতে চাইতেন না অনেকে। কিন্তু সময়ের সঙ্গে সঙ্গে হোম অফিস হয়েছে স্বাভাবিক। একই ঘটনা ঘটেছে ডিজিটাল দুনিয়ায়। একসময় যেকোনো তথ্য খুঁজে বের করার জন্য শরণাপন্ন হতে হতো সার্চ ইঞ্জিনের; এআই সেই উত্তর সবিস্তারে দিয়ে দিচ্ছে মুহূর্তেই। ফলে প্রযুক্তিগত উন্নয়ন শুধু জীবনকে সহজতর করছে না, বাঁচিয়ে দিচ্ছে সময় ও পরিশ্রমও। কিন্তু এই বেঁচে যাওয়া সময় ও পরিশ্রম মস্তিষ্কের ওপর ঠিক কীভাবে প্রভাব ফেলছে?
যুক্তরাষ্ট্রের ইউনিভার্সিটি অব টেক্সাস ও বেলোর ইউনিভার্সিটির এক যৌথ গবেষণায় দেখা গেছে, এত দিন প্রযুক্তি ব্যবহারের ফলে মানব মস্তিষ্কের কর্মক্ষমতা কমার যে গুঞ্জন ভেসে বেড়িয়েছে, তার কোনো সত্যতা নেই। ‘নেচার হিউম্যান বিহেভিয়ার’ জার্নালে প্রকাশিত এই গবেষণায় দেখা গেছে, ‘ডিজিটাল ডিমেনশিয়া’ নামে যে হাইপোথিসিস আছে, তার কোনো প্রমাণ নেই গবেষকদের কাছে। বরং পঞ্চাশোর্ধ্ব মানুষদের স্মার্টফোন, কম্পিউটার কিংবা ইন্টারনেট ব্যবহার তাঁদের স্বাভাবিক স্মৃতিভ্রম অনেকটা স্তিমিত করে।
ডিজিটাল ডিমেনশিয়া কী২০১২ সালে প্রথম ‘ডিজিটাল ডিমেনশিয়া’ তত্ত্ব নিয়ে হাজির হন জার্মান স্নায়ুবিজ্ঞানী ও মনোবিদ ম্যানফ্রেড স্পিৎজার। মূলত যে হারে প্রযুক্তির ব্যবহার বাড়ছে এবং মানুষ যান্ত্রিক পর্দার সামনে প্রতিদিনের বেশির ভাগ সময় কাটাচ্ছে, তাতে প্রযুক্তির ওপর নির্ভরশীলতা বাড়ছে অনেকটাই। এতে নিত্যপ্রয়োজনীয় তথ্যগুলোও মনে রাখতে ব্যর্থ হচ্ছে অনেকে। যেমন ফোন নম্বর। একসময় প্রিয়জনের ফোন নম্বর আমাদের মুখস্থ থাকত। এখন ফোন নম্বর ঠাঁই পায় মুঠোফোনের কনটাক্ট লিস্টে। ফোন নম্বর মনে রাখার চেষ্টাই করে না কেউ। আবার অনেকক্ষণ যান্ত্রিক পর্দার সামনে থাকলেও সেখান থেকে শেখার ইচ্ছা থাকে না অনেকের। চোখের সামনে যা আসছে, স্ক্রল করে চলে যাচ্ছে পরের কোনো কনটেন্টে। এতে মনোযোগ হারিয়ে যায় দ্রুত। আর প্রযুক্তির এমন অতিব্যবহার যে স্মৃতিশক্তি কমিয়ে দিচ্ছে, একেই ধরা হয় ‘ডিজিটাল ডিমেনশিয়া’ হিসেবে।
আরও পড়ুনডিজিটাল স্ক্রিন ব্যবহারের সময় ২০-২০-২০ নিয়ম মানাটা কেন জরুরি২৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৩গবেষণা যা বলছেপ্রায় ৪ লাখ ১১ হাজার পঞ্চাশোর্ধ্ব মানুষের ওপর চালানো ৫৭টি ভিন্ন গবেষণায় দেখা গেছে সম্পূর্ণ ভিন্ন চিত্র। বয়সের সঙ্গে সঙ্গে যে স্মৃতিভ্রম দেখা দেয়, তার অনেকটাই হ্রাস করে প্রযুক্তির ব্যবহার। প্রযুক্তির যথাযথ ব্যবহারের ফলে স্মৃতিশক্তি কমে আসার আশঙ্কা প্রায় ৫৮ শতাংশে নেমে আসে।
স্মৃতিশক্তি কমে যাওয়া বরং আরও কিছু সূচকের (যেমন সামাজিক, অর্থনৈতিক ও পারিবারিক অবস্থা) ওপর নির্ভর করে। মজার ব্যাপার হলো, নিয়মিত শারীরিক ব্যায়াম ও রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখার থেকেও বেশি কার্যকর প্রযুক্তির ব্যবহার।
তবে এর সবকিছুই নির্ভর করছে প্রযুক্তির সঠিক ব্যবহারের ওপর। পঞ্চাশোর্ধ্ব ব্যক্তিরা বেশির ভাগ সময়ই অনলাইনে কাটান ইউটিউব ভিডিও অথবা ফেসবুক স্ক্রল করে। এতে তাঁদের মস্তিষ্কের ব্যবহার হয় না বললেই চলে। মস্তিষ্ক সচল রাখতে পারে এমন কনটেন্টে তাঁদের মনোযোগ সরিয়ে নিতে পারলে আনন্দ যেমন পাবেন, তেমনই ডিজিটাল দুনিয়া সম্পর্কে তাঁদের দৃষ্টিভঙ্গিও পালটে যাবে। এ ছাড়া অনলাইনের হাজারো গুজব ও উসকানি থেকে মুক্ত থাকবেন তাঁরা।
সূত্র: রিডার্স ডাইজেস্ট
আরও পড়ুনমাত্রাতিরিক্ত স্ক্রিনটাইম যেভাবে নিয়ন্ত্রণ করবেন০১ সেপ্টেম্বর ২০২৩