রমজানের কিছু পণ্যের আমদানি বেড়েছে
Published: 21st, January 2025 GMT
রমজানে চাহিদা বেশি থাকে এমন কিছু পণ্যের আমদানি বেড়েছে। গত জুলাই থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত ছয় মাসে ছোলা, পেঁয়াজ ও রসুনের আমদানি গত বছরের একই সময়ের তুলনায় অনেকটা বেড়েছে। কিছুটা কমেছে খেজুর আমদানি। চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসের এক প্রতিবেদন থেকে এ তথ্য জানা গেছে। চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে আমদানি হওয়া পণ্যের তথ্য-উপাত্তের ভিত্তিতে প্রতিবেদনটি করা হয়েছে।
কনজ্যুমার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব) বলছে, আমদানি বাড়লে বাজার স্বাভাবিক থাকার কথা। কিন্তু কিছু পণ্যের দাম এখনও বেশি। আসন্ন রমজানে নিত্যপণ্যের দর যাতে না বাড়ে, সে জন্য এখন থেকেই সরকারকে নজরদারি জোরদার করতে হবে।
রোজায় ইফতারির অন্যতম উপকরণ হচ্ছে ছোলা। চট্টগ্রাম কাস্টমসের তথ্যমতে, ২০২৪ সালের জুলাই থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত ছয় মাসে দেশে ছোলা আমদানি হয়েছে ২৮ হাজার ৩৩৪ টন। তার আগের বছরের একই সময়ে ছোলা আমদানির পরিমাণ ছিল ১২ হাজার ৬৭৬ টন। অর্থাৎ গত বছরের একই সময়ের তুলনায় ছোলা আমদানি বেড়েছে ১৫ হাজার ৬৫৮ টন। গত ছয় মাসে চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে পেঁয়াজ আমদানি হয়েছে ১৬ হাজার ২৫৪ টন। ২০২৩ সালের একই সময় পেঁয়াজ আমদানি হয় ৩ হাজার ৫৮ টন। এ হিসাবে গত ছয় মাসে পেঁয়াজ আমদানি বেড়েছে ১৩ হাজার ১৯৬ টন। তবে পেঁয়াজের একটি বড় অংশ হিলি, ভোমরাসহ বিভিন্ন স্থলবন্দর দিয়েও আমদানি হয়। একই সময়ে ছোলা ও পেঁয়াজের পাশাপাশি চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে রসুনের আমদানিও বেড়েছে। চট্টগ্রাম কাস্টমসের প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, ২০২৪ সালের জুলাই-ডিসেম্বর সময়ে রসুন আমদানি হয়েছে ৯৭ হাজার ৬৩ টন। ২০২৩ সালের একই সময়ে এ আমদানির পরিমাণ ছিল ৬১ হাজার ৪৬৯ টন।
ইফতারির অন্যতম উপকরণ খেজুরের আমদানি কমেছে। গত বছরের শেষ ছয় মাসে খেজুর আমদানি হয়েছে ৪ হাজার ৯৭৮ টন। আগের বছরের একই সময়ে খেজুর আমদানি হয়েছিল ৭ হাজার ৯৬৫ টন। সেই হিসাবে খেজুর আমদানি কম হয়েছে ২ হাজার ৯৮৭ টন। তবে এক বছরের ব্যবধানে খেজুরের আমদানি বেড়েছে। প্রতিবেদনে দেখা গেছে, ২০২৩ সালে মোট খেজুর আমদানি হয়েছে ৬৭ হাজার ৩২৪ টন। বিপরীতে ২০২৪ সালে খেজুর এসেছে ৭৫ হাজার ২২০ টন।
ট্যারিফ কমিশনের তথ্যমতে, শুধু রমজানে ছোলার চাহিদা রয়েছে ১ লাখ টনের। এ ছাড়া পেঁয়াজ ও খেজুরের চাহিদা রয়েছে যথাক্রমে ৫ লাখ ও ৬০ হাজার টন। এসব পণ্য আমদানির জন্য ব্যাপক হারে এলসি বা ঋণপত্র খোলা হয়েছে। প্রায় ১ লাখ ৯০ হাজার টন ছোলা আমদানির জন্য এলসি খুলেছেন আমদানিকারকরা। এ ছাড়া ৪ লাখ ৬৪ হাজার টন পেঁয়াজ ও ৮৬ হাজার ১০৯ টন খেজুর আমদানির জন্য এলসি খোলা হয়েছে।
আমদানি বাড়লেও বাজারে ছোলা ও খেজুরের দর কমেনি। গতকাল ঢাকার খুচরা বাজারে প্রতি কেজি ছোলা বিক্রি হয়েছে মানভেদে ১২০ থেকে ১২৫ টাকা। খেজুরের দরও অনেক বেশি। মানভেদে খেজুরের কেজি বিক্রি হচ্ছে ২৫০ থেকে ১ হাজার ৫০০ টাকা দরে। অবশ্য পেঁয়াজের বাজারে কিছুটা স্থিতিশীল রয়েছে। কেজিপ্রতি বিক্রি হচ্ছে ৫০ থেকে ৬০ টাকা।
এ বিষয়ে কনজ্যুমার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) সহসভাপতি এস এম নাজের হোসাইন বলেন, রোজার আগেই বাজার নিয়ন্ত্রণে ব্যবস্থা নিতে হবে। আমদানি বাড়িয়ে সারাদেশে বাজারে তদারক ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: বছর র একই সময় খ জ র আমদ ন আমদ ন র রমজ ন
এছাড়াও পড়ুন:
১০০ কোটি টাকার পাচারের অভিযোগ, জাহাঙ্গীরের নামে মামলা
ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দপ্তরের সাবেক পিয়ন জাহাঙ্গীর আলম ওরফে পানি জাহাঙ্গীরের বিরুদ্ধে ১০০ কোটি টাকা পাচারের অভিযোগে মামলা করেছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)।
শুক্রবার (৩১ অক্টোবর) নোয়াখালীর চাটখিল থানায় মানিলন্ডারিং প্রতিরোধ আইনে এই মামলা করেছে সিআইডির ফাইন্যান্সিয়াল ক্রাইম ইউনিট।
আরো পড়ুন:
নাফিসা কামালসহ ৮ ব্যক্তি-প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে অর্থপাচারের মামলা
সাজিদ হত্যার তদন্তে সিআইডিকে জিজ্ঞাসাবাদের অনুমোদন
সিআইডির বিশেষ পুলিশ সুপার (মিডিয়া) জসীম উদ্দিন খান জানান, প্রাথমিক অনুসন্ধানে উল্লেখযোগ্য প্রমাণ পাওয়ায় নোয়াখালীর চাটখিল থানায় জাহাঙ্গীরের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে।
তিনি আরো জানান, নোয়াখালীর চাটখিল উপজেলার এক নিম্ন-মধ্যবিত্ত পরিবারের সন্তান জাহাঙ্গীর আলম জাতীয় সংসদ সচিবালয়ে দৈনিক মজুরিভিত্তিক কর্মচারী হিসেবে কাজ করতেন। পরে ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ সরকার গঠনের পর তিনি অধিকতর গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকায় প্রধানমন্ত্রীর দপ্তরে স্বল্প সময়ের জন্য ‘ব্যক্তিগত সহকারী’ হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। এই দায়িত্বই তাকে আর্থিকভাবে লাভবান করেছে মর্মে প্রাথমিক অনুসন্ধানে উঠে এসেছে।
জসীম উদ্দিন খান জানান, ২০১০ সালে জাহাঙ্গীর ‘স্কাই রি অ্যারেঞ্জ লিমিটেড’ নামে একটি কোম্পানি গঠন করে বিকাশের ডিস্ট্রিবিউশন ব্যবসা নেন। কিন্তু এর আড়ালে তিনি অসংখ্য সন্দেহজনক ব্যাংকিং কার্যক্রম করেন। কোম্পানির নামে একাধিক ব্যাংক অ্যাকাউন্টে অস্বাভাবিক অঙ্কের টাকা জমা হয়, যার বৈধ উৎস পাওয়া যায়নি ও ব্যবসার সঙ্গে অসামঞ্জস্যপূর্ণ।
সিআইডির এই কর্মকর্তা জানান, প্রতিষ্ঠানটির অ্যাকাউন্টগুলোতে ২০১০ থেকে ২০২৪ সালের মধ্যে বিভিন্ন ব্যাংকে মোট ৫৬৫ কোটিরও বেশি টাকা লেনদেন হয়েছে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য অংশ নগদে জমা হয়েছে দেশের নানা স্থান থেকে। এসব অর্থের উৎস অজানা এবং হুন্ডি ও মানিলন্ডারিং কার্যক্রমের সঙ্গে জড়িত বলে প্রাথমিক প্রমাণ মেলে।
বিশেষ পুলিশ সুপার জসীম উদ্দীন জানান, জাহাঙ্গীর আলম তার স্ত্রী কামরুন নাহার ও ভাই মনির হোসেনের সহায়তায় দীর্ঘদিন ধরে অবৈধ অর্থ লেনদেন করতেন। জাহাঙ্গীর আলম ও তার স্ত্রী ২০২৪ সালের জুন মাসে যুক্তরাষ্ট্রে পাড়ি জমান এবং বর্তমানে ভার্জিনিয়ায় অবস্থান করছেন। বিদেশে তাদের বিনিয়োগ বা সম্পদ ক্রয়ের কোনো সরকারি অনুমোদন না পাওয়া গেলেও তারা যুক্তরাষ্ট্রে পাড়ি জমিয়েছেন বলে প্রাথমিক অনুসন্ধানে প্রমাণ মেলে।
অনুসন্ধানে প্রাথমিকভাবে প্রমাণিত হয়েছে, জাহাঙ্গীর আলম, তার স্ত্রী কামরুন নাহার, ভাই মনির হোসেন এবং প্রতিষ্ঠান স্কাই রি অ্যারেঞ্জ লিমিটেড যৌথভাবে ২০১০ থেকে ২০২৪ সালের মধ্যে প্রায় ১০০ কোটি টাকা বিদেশে পাচার করেছেন। অপরাধের পূর্ণাঙ্গ তথ্য উদঘাটন, অপরাপর সদস্যদের শনাক্ত ও গ্রেপ্তার করার স্বার্থে সিআইডির তদন্ত ও অভিযান অব্যাহত রয়েছে।
ঢাকা/মাকসুদ/সাইফ