বাম ছাত্রনেতা মেঘমল্লার বসুর ফেসবুক পোস্ট ঘিরে বিশেষত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে গত কয়েক দিনে যা ঘটল, তা বেশ বার্তাবহ। এমনকি যদি বলা হয়, মেঘমল্লারের ফেসবুক পোস্ট এবং পরবর্তী ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া গোটা বাম রাজনীতিকেই নতুন পরীক্ষায় ফেলল, তাহলেও হয়তো ভুল হবে না।

গত ১৭ জানুয়ারি রাত ১১টার দিকে নিজের ফেসবুক অ্যাকাউন্টে মেঘমল্লার বসু পোস্টটিতে লেখেন, ‘দ্য অনলি অপশন ইজ রেড টেরর’ (একমাত্র পথ লাল সন্ত্রাস)। মূলত এ কথাটাই প্রতিক্রিয়া তৈরি করে। তাই পোস্টটি দেওয়ার ঘণ্টাখানেক পর তাঁকে গ্রেপ্তারের দাবিতে কয়েকটি হলের ‘শতাধিক’ শিক্ষার্থী বিক্ষোভ মিছিল করেন। তারা রাজু ভাস্কর্যে সমাবেশ করে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে মেঘমল্লারকে গ্রেপ্তারের আলটিমেটাম দেন। 

ঘটনা এখানেই থেমে গেলে হয়তো তা বড় কোনো শিরোনাম পেত না। কারণ, বেশির ভাগ সংবাদমাধ্যম মেঘমল্লারকে বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়নের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি হিসেবে পরিচয় করিয়ে দিলেও তিনি মূলত ছাত্র সংগঠনটির ‘বিদ্রোহী’ অংশের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি। দেশের অন্য কোথাও তাদের তেমন তৎপরতা নেই। তাই ঘটনার প্রভাব অন্য কোথাও পড়ার আশঙ্কা তেমন ছিল না।

আর মেঘমল্লারের ফেসবুক পোস্টের বিরুদ্ধে যেসব শিক্ষার্থী মিছিল করেছেন; ছাত্র ইউনিয়নসহ বাম সংগঠনগুলোর অভিযোগ, তারা ছিল মূলত ছাত্রশিবিরের কর্মী-সমর্থক। সংগঠনটির সঙ্গে ছাত্র ইউনিয়নসহ সব বাম ও উদারমনা ছাত্র সংগঠনের বৈরিতা সর্বজনবিদিত হলেও মেঘমল্লার ও তাঁর সহযোগীরা এদের সঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে এই সেদিনও আন্দোলন করেছেন। সেই হিসেবে মেঘমল্লারের ওই পোস্ট ও তাঁর প্রতিক্রিয়াকে বড়জোর মিলনাত্মক দ্বন্দ্বরত দুই গোষ্ঠীর মনকষাকষির ফল হিসেবেও ব্যাখ্যা করা যায়। কিন্তু বিষয়টি একটু ব্যাখ্যা না করলে ভুল বোঝার অবকাশ থেকে যায়।

পদপদবি-সংক্রান্ত দ্বন্দ্বের কথা বলা হলেও ছাত্র ইউনিয়নের মধ্যে মেঘমল্লারদের বিদ্রোহের আসল কারণ ছিল রাজনৈতিক। অভিভাবক সংগঠন সিপিবির মতোই ছাত্র ইউনিয়নের মূল নেতৃত্ব তৎকালীন সরকারবিরোধী আন্দোলনে সক্রিয় থাকলেও বিএনপি-জামায়াতের সঙ্গে ঐক্যের প্রশ্নে ছিল দ্বিধান্বিত। এটাকেই ‘নিষ্ক্রিয়তা’ আখ্যা দিয়ে সিপিবিরই কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের একটা অংশের আশীর্বাদ নিয়ে মেঘমল্লাররা ২০২১ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পৃথক কমিটি গঠন করেন। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের দুই প্রধান শক্তি ছাত্রদল ও ছাত্রশিবিরের সঙ্গে যুগপৎ কর্মসূচিতেও তাদের ‘ছুঁতমার্গ’ ছিল না।

মনে আছে, গত বছর ‘জাতীয় শোক দিবস’ পালনের প্রশ্নটি যখন ওঠে, তখন ১৫ আগস্ট সামনে রেখে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসিতে ছাত্রদল-ছাত্রশিবিরসহ মোট ৩৪টি সংগঠন নিয়ে বৈঠক করে। সে সভায় সব ছাত্র সংগঠন ঐক্যবদ্ধ ঘোষণা দেয়– দিবসটি পালনের যে কোনো উদ্যোগ প্রতিহত করা হবে। ওই সভায় মূলধারার ছাত্র ইউনিয়ন ও বাসদের একাংশের ছাত্র সংগঠন সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্ট না থাকলেও অন্য সব বাম সংগঠনের সঙ্গে বাসদের আরেক অংশের ছাত্র সংগঠন ছাত্র ফ্রন্ট (মার্কসবাদী) ও মেঘমল্লারের ছাত্র ইউনিয়নও ছিল। প্রগতিশীল মহল এ নিয়ে ভ্রু কুঁচকালে তখন ছাত্র ফ্রন্টের মতো ছাত্র ইউনিয়নের মূলধারাকেও রীতিমতো পত্রিকায় বিবৃতি দিয়ে নিজেদের অবস্থান পরিষ্কার করতে হয়েছিল।

আমরা দেখেছি, ফেসবুকে পোস্ট নিয়ে উল্লিখিত প্রতিক্রিয়া দেখে মেঘমল্লার দ্রুত তা প্রত্যাহার করে নেন। তিনি পোস্টের একটা ব্যাখ্যাও দেন। তিনি বলেন, স্ট্যাটাসটা এক ধরনের ‘ইন্টেলেকচুয়াল প্রভোকেশন’-এর জায়গা থেকে দিয়েছিলাম। তার মানে এই না, আগামীকাল আমি একটা লাল বাহিনী গঠন করে পরশু দিন থেকে মারামারি শুরু করব (সমকাল, ১৮ জানুয়ারি, ২০২৫)। 

এই ব্যাখ্যার পরই হয়তো বিষয়টির নিষ্পত্তি ঘটত, যদি মেঘমল্লারের পোস্টকে প্রতিবাদকারীরা তাদের চিরাচরিত স্বভাব অনুযায়ী গোটা বাম মহলকেই আক্রমণের সুযোগ হিসেবে না নিত। 

সমকালেরই প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, উল্লিখিত শিক্ষার্থীরা সমাবেশ শেষে কেন্দ্রীয় লাইব্রেরি এলাকায় সিরাজ সিকদারের গ্রাফিতিতে জুতা নিক্ষেপ করেন এবং গ্রাফিতিটি মুছে ফেলেন। সত্তর দশকের প্রথম ভাগে শ্রেণিশত্রু খতমের মাধ্যমে অধিপতি শ্রেণির মধ্যে ‘লাল সন্ত্রাস’ আতঙ্ক ছড়িয়ে এ দেশে সমাজতন্ত্র প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে অন্যতম সক্রিয় দল ছিল সর্বহারা পার্টি। সেই দলের প্রতিষ্ঠাতা ও মূল তাত্ত্বিক ছিলেন সিরাজ সিকদার, যাঁকে সিপিবি ও ছাত্র ইউনিয়ন তো বটেই, মূলধারার অন্যান্য বাম দলও হাজার হাজার তরুণ-তরুণীকে বিভ্রান্ত করার জন্য দায়ী করে এসেছে। সেই হিসেবে বিদ্রোহী হলেও ছাত্র ইউনিয়ন থেকে উদ্ভূত মেঘমল্লারের ‘অপরাধ’-এর দায় সিরাজ সিকদারের ওপর চাপানো যায় না। 

এটাও ঠিক, মুক্তিযুদ্ধের সময় ভারতে না গিয়ে দেশের ভেতরে থেকে পাকিস্তানি হানাদারদের বিরুদ্ধে সিরাজ সিকদার তাঁর নেতৃত্বাধীন বাহিনী দিয়ে বীরত্বপূর্ণ প্রতিরোধ গড়ে তোলেন। ১৯৭২ থেকে ’৭৫ সালে তিনি বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের শিকার হওয়ার আগ পর্যন্ত নিপীড়িত মানুষের মনে সাহস জোগানোর কারণে সিরাজ সিকদার এখনও গোটা বাম মহলে শ্রদ্ধার পাত্র। ফলে তাঁর গ্রাফিতিতে সাম্প্রতিক হামলা বাম পক্ষকে নাড়া দিয়েছে। অন্তত মঙ্গলবার রাতে তাঁর মুছে দেওয়া গ্রাফিতি যেভাবে বিভিন্ন বাম সংগঠনের কর্মীরা একসঙ্গে আবারও আঁকল, তাতে এটা স্পষ্ট।

এদিকে মেঘমল্লারের পোস্টের প্রতিবাদকারীরা বিভিন্ন স্থানে ছাত্র ইউনিয়ন ও ছাত্র ফ্রন্টের দেয়াল লিখনও মুছে দেয়। এখানে পাঠ্যবই থেকে আদিবাসী শব্দযুক্ত একটি গ্রাফিতি সরিয়ে দেওয়ার প্রতিবাদ মিছিলে হামলার পরই যে মেঘমল্লার ওই পোস্টটি দেন, তাও বলা দরকার। আদিবাসী ছাত্র-জনতার মিছিলটি সংগঠিত করেছিল মূলত বিভিন্ন বাম ও আদিবাসী ছাত্র সংগঠন। এতে যারা হামলা করেছিল, তাদেরই চাপের কারণে পাঠ্যবই থেকে ওই গ্রাফিতি সরিয়ে দেওয়া হয়। এটাও অস্বীকার করা যাবে না, বর্তমানে শুধু সরকারের ওপর প্রভাব বিস্তারের ক্ষেত্রে নয়, সমাজেও বিএনপির পাশাপাশি জামায়াতের দাপট সবচেয়ে বেশি।

আমার বলার বিষয়, সমস্যাটা নিছক মেঘমল্লারের ফেসবুক পোস্ট নয়, বরং বাম শক্তির সাম্প্রতিক সময়ে ধর্মীয় ও জাতিগত সংখ্যালঘুর পাশাপাশি নিপীড়িত মানুষের পক্ষে সক্রিয়তাই আলোচ্য বিক্ষোভকারীদের মাথাব্যথার কারণ। তবে আশার বিষয় হলো, বামপন্থিরাও শত্রু ঠিকমতো চিনতে পারছে বলে মনে হয়। ইতোমধ্যে বর্ধিত কর-শুল্ক প্রত্যাহারের দাবিতে দলগতভাবে এবং সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠনের ব্যানারে তারাও প্রতিবাদ-বিক্ষোভ অব্যাহত রেখেছে। 

অবিলম্বে নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা, বর্ধিত ভ্যাট প্রত্যাহারসহ কিছু সুনির্দিষ্ট দাবিতে সিপিবি দেশব্যাপী যে গণতন্ত্র অভিযাত্রা করছে, তাও বেশ নজর কেড়েছে। জানমালের নিরাপত্তাহীনতা ও অর্থনৈতিক তীব্র সংকটের সঙ্গে মহলবিশেষের বিভাজনের রাজনীতির শিকার হয়ে যে জনগণ আজ ত্রাহি রব তুলছে, বামপন্থিরা তাদের পাশে থাকবে– এটাই প্রত্যাশা।

সাইফুর রহমান তপন: সহকারী সম্পাদক, সমকাল; সাবেক ছাত্রনেতা

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: ফ সব ক ছ ত র স গঠন স গঠন র

এছাড়াও পড়ুন:

মিরাজে দুর্দান্ত জয় বাংলাদেশের

এমন পারফরম্যান্সই তো চাওয়ার থাকে ভালো দলের কাছে। মেহেদী হাসান মিরাজের অলরাউন্ড নৈপুণ্য, সাদমান ইসলামের সেঞ্চুরি, তাইজুল ইসলামের ৯ উইকেট শিকারে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে ইনিংস ও ১০৬ রানের বিশাল জয় এনে দেয় বাংলাদেশকে। প্রথম টেস্ট হারের পর যে সমালোচনা হয়েছিল, তার জবাবটা বোধ হয় দ্বিতীয় টেস্ট তিন দিনে জিতে দিয়ে দিলেন নাজমুল হোসেন শান্তরা। ‘বাউন্স ব্যাক’ করে সিরিজ ড্র ১-১-এ।

চট্টগ্রামের বীরশ্রেষ্ঠ মতিউর রহমান স্টেডিয়ামে বীরোচিত পারফরম্যান্স ছিল টাইগারদের। এটি সম্ভব হয়েছে পছন্দের উইকেটে খেলা হওয়ায়। স্পিন ভুবনে উইকেট উৎসব করেছেন তাইজুল, মিরাজ গাঁটছড়া বেঁধে। সিরিজ নির্ধারণী টেস্টে দুটি সেঞ্চুরি দারুণ অর্জন অধারাবাহিক ব্যাটিং লাইনআপের। এই টেস্টে ওপেনিং জুটি ভালো করেছে। লম্বা সময় পর টেস্ট খেলার সুযোগ পাওয়া এনামুল হক বিজয় ভালোই সঙ্গ দেন সাদমানকে। লোয়ার মিডলঅর্ডারে মিরাজের লড়াই ছিল দেখার মতো।

টেলএন্ডারদের নিয়ে রীতিমতো বাজিমাত করেছেন তিনি। শেষ ৩ উইকেটে তৃতীয় দিন ১৫৩ রান যোগ করেন। বাংলাদেশকে পৌঁছে দেন ৪৪৪ রানে। ২১৭ রানের লিড থাকায় ইনিংস ব্যবধানে জয়ের স্বপ্ন দেখায়। মিরাজের অলরাউন্ড পারফরম্যান্সে সে স্বপ্ন পূরণ হয়। সাকিব আল হাসান ও সোহাগ গাজীর পর তৃতীয় বাংলাদেশি ক্রিকেটার হিসেবে সেঞ্চুরি ও পাঁচ উইকেট শিকার তাঁর। 

গত বছর দেশের মাটিতে টেস্টে ভালো করতে পারেনি বাংলাদেশ। শ্রীলঙ্কার পর দক্ষিণ আফ্রিকার কাছে হোয়াইটওয়াশ হয়েছে। ২০২৫ সালের শুরুটাও ভালো ছিল না। সিলেটে জিম্বাবুয়ের কাছে হেরেছে। সিরিজ বাঁচাতে চট্টগ্রামে জিততেই হতো। লক্ষ্যে পৌঁছাতে কন্ডিশনেও পরিবর্তন আনা হয়। চট্টগ্রামের উইকেটে খেলা হয় দ্বিতীয় টেস্ট। যেখানে শাসন ছিল স্পিনারদের। পছন্দের উইকেট পাওয়ায় তিন স্পিনার নিয়ে খেলে বাংলাদেশ। তিনজনই দারুণ বোলিং করেন প্রথম থেকে।

দীর্ঘ বিরতির পর টেস্ট খেলার সুযোগ পাওয়া অফস্পিনার নাঈম হাসান চ্যালেঞ্জ নিয়ে বোলিং করে গেছেন। বেশি উইকেট না পেলেও এক প্রান্তে ব্যাটারদের চাপে ফেলেছেন। যার সুফল তাইজুল ও মিরাজ পেয়েছেন অন্য প্রান্তে। প্রথম দিন শেষ সেশনে ব্রেক থ্রু দেন তিনি। বাঁহাতি স্পিনার পরে পিক করে ৬ উইকেট শিকার করেন। জিম্বাবুয়ে ৯ উইকেটে ২২৭ রানে প্রথম দিন শেষ করে। পরের দিন এক বল খেলে ওই রানেই অলআউট হয়। বাংলাদেশ ব্যাটিং শুরু করে বড় লক্ষ্য নিয়ে। সাদমান ইসলাম ও এনামুল হক বিজয় ১১৮ রানের ওপেনিং জুটি করায় প্রতিপক্ষকে ছাড়িয়ে যাওয়া সহজ হয়। সাদমানের সেঞ্চুরি ও মুমিনুল হক, মুশফিকুর রহিম কিছু রান করায় ৭ উইকেটে ২৯১ রানে দ্বিতীয় দিন শেষ করে বাংলাদেশ।

সেদিন সংবাদ সম্মেলনে সাদমান আশা প্রকাশ করেন, মিরাজ ও তাইজুল জুটি করবেন। অষ্টম উইকেটে ৬৪ রানের জুটি দু’জনের। বেশি ভালো করেছেন পেসার তানজিম হাসান সাকিব। মিরাজের সঙ্গে ১৫৬ বলে ৯৬ রানের জুটি। অভিষেক টেস্টে সাকিবের ব্যাটিং দারুণ লেগেছে অধিনায়ক শান্তর কাছে। ৮০ বলে ৪১ রান করেন তিনি। সবচেয়ে বড় কথা, মাথায় বল লাগার পরও বিচলিত হননি তিনি। মিরাজ ছাড়া চট্টগ্রাম টেস্টের প্রাপ্তি হিসেবে ওপেনিং জুটির ভালো খেলা, সাদমানের সেঞ্চুরি, তাইজুলের ৫ উইকেট শিকার ও সাকিবের রান করাকে মনে করেন শান্ত। 

শেষের তিন উইকেটে তৃতীয় দিন প্রায় দুই সেশন ব্যাট করে বাংলাদেশ। তাইজুল, সাকিব ও হাসানকে নিয়ে ১৫৩ রান যোগ করে। মিরাজ ১০৪ রান করে ওয়েলিংটন মাসাকাদজাকে উইকেট দেন। নার্ভাস নাইটির ঘরে প্রবেশ করে কিছুটা ঝুঁকির মুখে ছিলেন মিরাজ। ৯৮ রানে পৌঁছানোর পর সেঞ্চুরি ছুঁতে দুই রান নিতে চেয়েছিলেন। কিন্তু ফিল্ডারের কাছে বল চলে যাওয়ায় এক রানে থামতে হয়। তখন স্ট্রাইকে হাসান থাকায় দুশ্চিন্তায় পড়ে গিয়েছিল সবাই। ড্রেসিংরুমে খেলোয়াড় ও কোচিং স্টাফের সবাই দাঁড়িয়ে গিয়েছিলেন। কখন হাসান আউট হয়ে যায়, সে ভয় কাজ করছিল হয়তো। কিন্তু হাসান ছিলেন দৃঢ়চেতা। মাসাকাদজাকে ডিফেন্স করে স্বস্তি দেন।

মিরাজ স্ট্রাইকে এসে মেদেভেরের প্রথম দুই বলে ঝুঁকি নেননি। তৃতীয় বলে এক রান নিয়ে ক্যারিয়ারের দ্বিতীয় টেস্ট সেঞ্চুরির স্বাদ নেন। জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে সিরিজ ও দ্বিতীয় টেস্টের সেরা খেলোয়াড় মিরাজ। প্রথম ম্যাচের উভয় ইনিংসে ৫ উইকেট করে ছিল তাঁর। চট্টগ্রামে অতীতের সব পারফরম্যান্স ছাড়িয়ে গেছেন। সেঞ্চুরির সঙ্গে ৫ উইকেটপ্রাপ্তি, দুই হাজার রানের মাইলফলক পেয়েছেন। ২০২১ সালে এই চট্টগ্রামেই ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে সেঞ্চুরি করেছিলেন তিনি। ২১৭ রানে পিছিয়ে থাকা জিম্বাবুয়ে দ্বিতীয় ইনিংসে অলআউট হয় ১১১ রানে। ফ্লাডলাইটের আলো জ্বেলে নির্ধারিত সময়ের বেশি খেলান আম্পায়াররা। প্রায় সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত খেলা হয়। জিম্বাবুয়ে ক্রিকেটাররা তাতে আপত্তি করেননি। তাইজুল ৩, নাঈম ১ ও মিরাজ ৫ উইকেট নিলে ম্যাচ শেষ হয়।  

সিলেটে প্রথম টেস্ট হারের পর চট্টগ্রামে প্রভাব বিস্তার করে খেলে ম্যাচ জেতার পরও খুশি নন অধিনায়ক শান্ত, ‘আমি টেস্ট সিরিজ ড্র করে খুশি না। কারণ, প্রথম টেস্টে আমরা একেবারেই ভালো খেলিনি। এই টেস্টে একপেশে খেলে জিতলেও সিরিজে আরও ভালো খেলা উচিত ছিল। সিরিজটি জিততে হতো।’ টাইগার দলপতি জানান, এই পারফরম্যান্স শ্রীলঙ্কা সফরে কাজে দেবে। দেশের মাটিতে স্পোর্টিং উইকেট বানিয়ে বিদেশে খেলার পরিবেশ তৈরি করছিল বিসিবি। ২০২৩ সালে নিউজিল্যান্ড সিরিজ থেকে স্পোর্টিং উইকেটে খেলা হচ্ছে। কিউইদের বিপক্ষে সিলেটে ঐতিহাসিক জয় পেলেও মিরপুর থেকে হারতে শুরু করে। দেশের মাটিতে টানা ছয় হারের পর জয়ের দেখা পেল বাংলাদেশ।

সম্পর্কিত নিবন্ধ