ইতোমধ্যে লেখা হয়ে গেছে তাঁর বেশ কয়েকটি বই। ফিকশন, প্রবন্ধ মিলিয়ে গোটা আট। তবু সরকারি দপ্তরের নিয়মমতো দায়িত্ব শেষ হলে তিনি বেশ গোছগাছ করে বসেছেন লিখবেন বলে। অনেক প্রস্তুতি। উপন্যাস-প্রবন্ধ অনেক কাজ। অফুরন্ত অবসর এবার। এবার কেবল লেখা আর লেখা। ঘর ভর্তি রেফারেন্স বই, লেখার টেবিল, আলাদা ঘর, ল্যাপটপ। ফয়জুল ইসলাম এতকাল সরকারি চাকরির বাধ্যবাধকতায় অনেক কিছুই লিখতে পারেননি। এবার শুধুই লেখা…
লেখকই ছিলেন তিনি আদতে। জাত লেখক। বাকি আর যা কিছু, সব কেবল জীবনের বাহানা, জীবিকার প্রয়োজন। কথাসাহিত্যিক ফয়জুল ইসলাম। লিখছেন তিনি অনেকদিন। নিভৃতে, প্রকাশ্যে। খুব পাদপ্রদীপের আলোয় ছিলেন না। খুব চিনত না পাঠক। প্রাজ্ঞ পাঠকের কাছে খোয়াজ খিজিরের সিন্দুক দিয়ে তাঁর পরিচিতি। খোয়াজ খিজিরের কূয়া খোঁজা মিথকে আরবান পাঠকের সামনে ধরে চমকে দিলেন। কথাসাহিত্যিক ফয়জুল ইসলামকে আবিষ্কার করে পাঠক নড়েচড়ে বসল।
বইটি পুরস্কৃত হলো পাঠকের আরও তৃষ্ণা আর অনুসন্ধান উস্কে দিয়ে। পাঠক খুঁজে বের করতে থাকল তাঁকে। তিনি অবশ্য পাঠ্য হতে থাকেন। পাঠকের কাছে অনিবার্য হয়ে উঠতে থাকেন।
শহীদুল জহির ছিলেন তাঁর আরাধ্য। কিন্তু ফয়জুল ইসলামের সাহিত্য, ফয়জুল ইসলামের গদ্য, বিষয় এবং শৈলী একদম তাঁর নিজস্ব। শহীদুল জহিরকে অগ্রভাগে রেখে ফয়জুল ইসলাম সাহিত্যপথে হেঁটেছেন। এই পথটি একান্তই তাঁর নিজের তৈরি। কোনো গোষ্ঠীবদ্ধতা নয়, কোনো তৈরি প্যাটার্ন নয়, কোনো উচ্চাকাঙ্ক্ষা নয়; নিভৃত সাধকের মতো সাধনা তাঁর।
অভিনব তাঁর বিষয়। খোয়াজ খিজিরের মিথ থেকে দেশভাগের যন্ত্রণা। পড়তে গিয়ে কোথাও আখতারুজ্জামান ইলিয়াস, কোথাও মাহমুদুল হক এসে উঁকি দিয়ে যান। উঁকি দেন বটে, ফয়জুল ইসলামকে ঢেকে দিতে পারেন না। তাঁর আপন ভঙ্গি নিজস্ব, বিষয় বৈচিত্র্য সম্পূর্ণ তাঁর মতো। কেউ তাঁকে প্রভাবিত করতে পারেনি। অনুপ্রেরণা হয়েছেন হয়তোবা। সযত্নে এড়িয়েছেন অনুকরণের পথ।
অথচ শহীদুল জহিরের মতো ঢাকায় জন্ম, বেড়ে ওঠা তাঁর। শহীদুল জহিরকে বিজ্ঞ পাঠকের বিস্ময়কর আবিষ্কারের ঝলকানি সামনে। তাঁর জন্য বরং স্বাভাবিক ছিল সেই নির্মিত পথেই হাঁটা। কী আশ্চর্য লেখক প্রতিভায় শব্দ-বাক্য আর বিষয়ের পাথর খুঁড়ে তৈরি করেছেন নিজের পছন্দের ভুবন। তাঁর ভাষা তাঁরই ভাষা। তাঁর গদ্য তাঁরই গদ্য। তাঁর অভিনব বিষয়ও একান্ত তাঁরই সম্পদ। অনেকের উত্তরাধিকার নিয়ে তিনি হয়ে উঠেছেন নিজস্ব, একদম নিজেই একজন ফয়জুল ইসলাম।
সরল গদ্যে লিখেছেন, কোনো উপমা, অলংকার দিয়ে বাক্য গঠনে নিজস্বতা তৈরির কসরত নেই। শৈলী নিয়ে কারিকুরি নেই। নীলক্ষেত কেন যাই, নক্ষত্রের তৃষ্ণা, বয়েজ স্কুল ব্যান্ড, জমিন। সরকারি চাকরির গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব ঘাড়ে নিয়ে উল্লেখযোগ্য কাজগুলো তিনি করে গেছেন। খ্যাতি কিংবা প্রচারের পেছনে দৌড়াননি, বরং খ্যাতি আর প্রচার তাঁকে খুঁজে ফিরেছে।
বিষয়ে খ্যাতিমান লেখক প্রবণতাকে বিনয়ে প্রত্যাখ্যান করেছেন তিনি। মোটেই তাঁকে অভিযুক্ত করা যাবে না, তিনি সাবঅল্টার্ন নিয়ে লেখেননি। সচেতনভাবেই লেখেননি এই অভিযোগও তাঁর প্রতি অমূলক হয়ে উঠে যখন দেশভাগ থেকে মুক্তিযুদ্ধ, মুক্তিযুদ্ধ থেকে পঁচাত্তর–পরবর্তী বাংলাদেশ প্রচলিত ন্যারেটিভ ভেঙে নতুন ডাইমেনশনে তাঁর গল্পবিষয় হয়ে ওঠে। আখ্যানে সমাজ আর বাস্তবতার বিশ্বস্ত ছবি আঁকেন তিনি, যে ছবিতে পশ্চিমবঙ্গের বারাসাতের গ্রাম পর্যন্ত খুব চেনা হয়ে ওঠে। আমরা নিজেরাও গল্পের চরিত্র হয়ে উঠি। এটা লেখক ফয়জুল ইসলামের ফয়জুলীয় ভঙ্গি। পড়ে যখন চোখ তুলে লেখকের দিকে তাকাই তখন মনে হয়, এই গল্পে তো তিনিও আছেন; বয়েজ স্কুলের একদল ছেলেমেয়ে, নক্ষত্রের ঘোড়া দৌড়ানোর বাসনায় তিনি আছেন। প্রবলভাবে আছেন। আবার পাঠককে চোখ তুলে সে লেখা বলছে– কী কেমন লিখলাম! সময়ের স্রোতে সমান্তরাল হেঁটেছেন অথচ তাঁর লেখার ভূগোল তাঁরই একান্ত।
শক্তিমান এই লেখক যা লিখেছেন তা ছিল প্রস্তুতি পর্ব, যার সবটুকুই বাংলা সাহিত্যের সম্পদ হয়ে উঠেছে। যখন পুরোদস্তুর প্রস্তুতি নিয়ে এলেন শুধু লিখবেন বলে তখন নির্দয় প্রকৃতির এ কী নির্দয় আচরণ! বড়ই বঞ্চিত হলো বাংলা সাহিত্য। বর্তমান কাল তো বটেই, ভাবি কালও। v
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: ফয়জ ল ইসল ম র
এছাড়াও পড়ুন:
গজারিয়ায় পরিবারকে জিম্মি করে অর্ধলক্ষাধিক টাকার মালামাল লুট
মুন্সীগঞ্জের গজারিয়ার একটি বাড়িতে প্রবেশ করে অস্ত্রের মুখে পরিবারের সদস্যদের জিম্মি করে স্বর্ণালংকারসহ অর্ধলক্ষাধিক টাকার মালামাল লুট করে নিয়ে গেছে ডাকাতরা।
রবিবার (২ নভেম্বর) মধ্যরাত ৩টার দিকে উপজেলার বালুয়াকান্দি ইউনিয়নের বালুয়াকান্দি দক্ষিণপাড়া এলাকার অবসরপ্রাপ্ত সেনা সদস্য ফজলুল হকের বাড়িতে ঘটনাটি ঘটে।
আরো পড়ুন:
ভাড়া নেওয়ার কথা বলে বাসায় ঢুকে গৃহবধূকে বেঁধে ডাকাতি
বগুড়ায় বৃদ্ধাকে খুন করে ডাকাতি: গ্রেপ্তার ৪, টাকা উদ্ধার
ভুক্তভোগী সাথী বেগম বলেন, “রাত ১টার দিকে একটি শব্দ পেয়ে আমার ঘুম ভাঙে। সে সময় বিষয়টি সেভাবে আমলে নেইনি। রাত ৩টার দিকে উঠে তাহাজ্জুতের নামাজ পড়তে বসলে জানালার গ্রিল কেটে বাসার ভেতরে প্রবেশ করে দুই যুবক। তারা প্রথমে আমাকে, পরে আমার ছেলে সাবিদকে অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে। পরে তারা আমাদের বিল্ডিংয়ের চারটি ফ্ল্যাটের প্রত্যেকটিতে একের পর এক লুট করতে থাকে। প্রায় ৪৫ মিনিট ধরে চলে এই ডাকাতি।”
তিনি বলেন, “ডাকতরা নগদ ৩ লাখ টাকা, ৩২ ভরি স্বর্ণালংকার ও ৯টি মোবাইল ফোন নিয়ে যায়। যাওয়ার সময় তারা আমাদের সবাইকে একটি রুমে আটকে রেখে বাহির থেকে তালা লাগিয়ে যায়।”
প্রত্যক্ষদর্শী সাবিদ বলেন, “জানালার গ্রিল কেটে রুমের ভেতরে প্রবেশ করে দুইজন। পরে ডাকাত দলের আরো ২২-২৩ জন সদস্য বাসার ভেতরে প্রবেশ করে। বাইরে আরো কয়েকজন পাহারায় ছিল। ডাকাত দলের অধিকাংশ সদস্যের মুখে মাস্ক ও গামছা ছিল। তারা অস্ত্রের মুখে আমাকে জিম্মি করে আমাকে দিয়েই অন্যান্য ফ্ল্যাটের দরজা খোলান। আমার চোখের সামনে একের পর এক রুমে ডাকাতি হয়।”
অবসরপ্রাপ্ত সেনা সদস্য ফজলুল হক বলেন, “আমার তিন ছেলে দেশের বাহিরে থাকে। তাদের পাঠানো প্রায় ৩২ ভরি স্বর্ণালংকার, কয়েকদিন আগে ব্যাংক থেকে তোলা নগদ ৩ লাখ টাকা ও ৯টি মোবাইল সেট লুট করে নিয়ে গেছে ডাকাতরা। তারা আমাদের পরিবার সম্পর্কে অনেক কিছু জানত। কোন রুমে কী আছে, আমরা কবে ব্যাংক থেকে টাকা তুলেছি এমনকি বাসায় ওয়াইফাই বন্ধ সবই জানত। আমার ধারণা, স্থানীয় লোক এর সঙ্গে জড়িত। আমি থানায় লিখিত অভিযোগ দেব।”
ভুক্তভোগীর প্রতিবেশী লাক মিয়া বলেন, “আমরা ভোর ৫টার দিকে বিষয়টি প্রথমে বুঝতে পারি। পরবর্তীতে বাইরে থেকে লক করা রুম খুলে আমরা আটকে থাকা পরিবারের সদস্যদের উদ্ধার করি। তারপর বিষয়টি জানাজানি হয়।”
রবিবার (৩ নভেম্বর) গজারিয়া থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মো. আনোয়ার আলম আজাদ বলেন, “সকাল ৬টার দিকে দিকে আমি ৯৯৯ থেকে একটি কল পেয়ে এ বিষয়ে জানতে পারি। ঘটনাস্থলে পুলিশ পাঠানো হয়েছে। আমরা ঘটনাটি খতিয়ে দেখছি।”
ঢাকা/রতন/মাসুদ