রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় (রাবি) ক্যাম্পাসে দুর্ঘটনার শিকার হয়ে মারা গেছেন বহিরাগত এক শিক্ষার্থী। 

বৃহস্পতিবার (২৩ জানুয়ারি) রাত সাড়ে ১০টার দিকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হলে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।

নিহত শিমুল শিহাবের বাসা রাজশাহী নগরীর বুধপাড়া এলাকায়। তিনি রাজশাহী কলেজের শিক্ষার্থী ছিলেন বলে প্রাথমিকভাবে জানা গেছে।

চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, মাথায় রক্তক্ষরণের কারণে মারা গেছেন শিমুল। তার শরীরে কোনো আঘাতের চিহ্ন বা রক্তের দাগ পাওয়া যায়নি। 

স্বজনদের অভিযোগ, মারধর করায় শিমুলের মৃত্যু হয়েছে। অন্যদিকে, বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর দাবি করেছেন, মোটরসাইকেলে করে পালানোর সময় দুর্ঘটনার শিকার হয়েছিলেন শিমুল।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের তিন নম্বর বিজ্ঞান ভবনের পিছনে একটি মেয়ের সঙ্গে বসে আড্ডা দিচ্ছিলেন শিমুল। এ সময় সেদিক দিকে প্রক্টরিয়াল বড়ির নিয়মিত টহল চলছিল। তার গাড়ি দেখে মোটরসাইকেলে করে পালাচ্ছিলেন শিমুল ও তার সঙ্গে থাকা মেয়েটি। তারা যেদিক দিয়ে পালাচ্ছিলেন, সেখানে রাস্তার কাজ চলছে। রাস্তায় লোহার রড বিছানো ছিল। এর মধ্যে দিয়ে যাওয়ার সময় দুর্ঘটনা ঘটে। শিমুলকে উদ্ধার করে প্রথমে বিশ্ববিদ্যালয় চিকিৎসাকেন্দ্রে নেওয়া হয়। শারীরিক অবস্থার গুরুতর অবনতি হলে তাকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হচ্ছিল। পথেই মারা যান তিনি।

এক প্রত্যক্ষদর্শী বলেছেন, “আমরা কয়েকজন লাইব্রেরি থেকে রুমে যাওয়া সময় দেখি, আমাদের সামনে দিয়ে এক জন খুব জোরে বাইক নিয়ে যাচ্ছেন। বাইকের পেছনে এক জন মেয়েও ছিলেন। কিছু দূর যাওয়ার পর ছেলেটি রড বিছানো রাস্তায় পড়ে যান। ছেলেটি তখন অজ্ঞান হয়ে গিয়েছিলেন। এ সময় আশপাশে থাকা শিক্ষার্থীরা এসে মাথায় পানি দেন। পরে প্রক্টর সেখানে এসে মেয়েটিকে জিজ্ঞাসাবাদ করেন। মেয়েটি জানান যে, তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী নন। পরে অ্যাম্বুলেন্স এসে ছেলেটিকে নিয়ে যায়।”

এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক মাহবুবুর রহমান বলেন, “রাত ১০টার দিয়ে আমি দুর্ঘটনার বিষয়ে জানতে পারি। আমাদের সহকারী প্রক্টর টহল দিচ্ছিলেন। তখন ছেলে-মেয়ে দুই জন তৃতীয় বিজ্ঞান ভবনের পিছনে ছিলেন। প্রক্টরের গাড়ি দেখে তারা বাইক নিয়ে পালাচ্ছিলেন৷ ওদিকে রাস্তার কাজ চলছিল। সেখানেই দুর্ঘটনা ঘটে। পরে আমাদের লোকজন তাকে বিশ্ববিদ্যালয় মেডিকেলে পাঠান। সেখান থেকে তাকে রামেকে নেওয়া হয়। ছেলেটির বাইক প্রক্টর দপ্তরে আছে। কিছুক্ষণ আগে জানতে পারলাম, ছেলেটি মারা গেছে।”

রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে জরুরি বিভাগের এক চিকিৎসক জানিয়েছেন, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে রাত ১১টার দিকে এক জনকে নিয়ে আসা হয়। আগেই তিনি মারা গিয়েছিলেন। তার শরীরে কোনো আঘাতের চিহ্ন পাওয়া যায়নি। মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণে তিনি মারা গেছেন। শরীরে রক্তের দাগ পাওয়া যায়নি। সামান্য একটু র‍্যাশ টাইপ ছিল মাথার দিকে। লাশ মর্গে পাঠানো হয়েছে। 

রাজশাহীর মতিহার থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মো.

আব্দুল মালেক বলেছেন, “আমরা এ বিষয়ে খোঁজ রাখছি। সঠিক ঘটনা আমরা এখনো জানতে পারিনি। আমরা সবার সাথে কথা বলে ঘটনার বিষয়ে জানার চেষ্টা করছি।” 

মামলা হয়েছে কি না, জানতে চাইলে তিনি বলেন, “এখনো মামলা হয়নি, তবে হতে পারে।”

ঢাকা/ফাহিম/রফিক

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর দ র ঘটন ঘটন র

এছাড়াও পড়ুন:

রাজশাহীতে প্রতি কেজি আলুর হিমাগারভাড়া কমল ৭৫ পয়সা

রাজশাহীতে হিমাগারে আলু সংরক্ষণে নতুন ভাড়া নির্ধারণ করা হয়েছে। আজ সোমবার আলুচাষি, ব্যবসায়ী ও হিমাগারমালিকদের উপস্থিতিতে এ সিদ্ধান্ত হয়। নতুন সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, হিমাগারে প্রতি কেজি আলু রাখার জন্য ভাড়া দিতে হবে ৫ টাকা ৫০ পয়সা। এর সঙ্গে যুক্ত হবে শ্রমিকের খরচ ৫০ পয়সা। সেই হিসাবে প্রতি কেজি আলুর হিমাগারভাড়া কমেছে ৭৫ পয়সা।

এর আগে গত মার্চে সরকার প্রতি কেজি আলু রাখার ভাড়া ৬ টাকা ৭৫ পয়সা নির্ধারণ করে প্রজ্ঞাপন জারি করে। এর পর থেকে এ নিয়ে রাজশাহীর আলুচাষি ও ব্যবসায়ীরা বাড়তি ভাড়ায় আপত্তি জানিয়ে আসছিলেন। এ নিয়ে কয়েক দফা তাঁরা রাজপথে আন্দোলনও করেছেন। অন্যদিকে হিমাগারমালিকদের দাবি ছিল, প্রতি কেজি আলুর ভাড়া ৮ টাকা করা হোক।

রাজশাহী কোল্ড স্টোরেজ অ্যাসোসিয়েশন এবং রাজশাহী জেলা আলুচাষি ও আলু ব্যবসায়ী সমবায় সমিতির নেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, রাজশাহীতে হিমাগার থেকে বাড়তি ভাড়া না দিলে আলু ছাড়া হবে না। এর প্রতিবাদে ঈদের পর নতুন করে আলুচাষি ও ব্যবসায়ীরা আন্দোলন করে আসছেন। তাঁদের দাবি, আলু রাখার খরচ আগের বছরের মতো চার টাকা করতে হবে। এ নিয়ে সড়ক অবরোধ ও বিক্ষোভ সমাবেশ করেন তাঁরা। হিমাগার মালিকপক্ষ এ নিয়ে আলোচনায় বসার তাগিদ দিয়ে আসছিল।

এরই মধ্যে আলুচাষিনেতারা ১৪ জুন সেনাবাহিনীর কাছে এ নিয়ে একটি অভিযোগ দেন। পরে বিষয়টি আমলে নিয়ে সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে আজ দুপুরে সভা ডাকা হয়। সভায় সব পক্ষের সম্মতিতে সিদ্ধান্ত হয় যে এ বছর সরকার নির্ধারিত প্রতি কেজি আলুর হিমাগারভাড়া ৬ টাকা ৭৫ পয়সার বদলে ৫ টাকা ৫০ পয়সা ও শ্রমিক খরচ ৫০ পয়সা রাখা হবে। আর পেইড বুকিংয়ের ক্ষেত্রে শুধু শ্রমিক খরচ ৫০ পয়সা দিতে হবে আলু রাখা চাষি ও ব্যবসায়ীদের। পরে বিকেলে ক্যান্টনমেন্টে হওয়া এই সিদ্ধান্ত প্রশাসনিকভাবে পাস করার জন্য রাজশাহী জেলা প্রশাসকের দপ্তরে সভা হয়।

সভায় আলুচাষি ও ব্যবসায়ী সমবায় সমিতি, হিমাগার মালিক সমিতি, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক, কৃষি বিপণন অধিদপ্তরের কর্মকর্তা, রাজশাহী চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির সভাপতি, পবা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন। সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, আগামীকাল মঙ্গলবার রাজশাহী চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির পক্ষ থেকে নতুন ভাড়ার বিজ্ঞপ্তি সব হিমাগারে প্রচার করা হবে।

এ ব্যাপারে সেনাবাহিনীর এক কর্মকর্তা প্রথম আলোকে বলেন, এবার আলুর দাম কম। আবার এ নিয়ে দুই পক্ষের সংঘাতের আশঙ্কা ছিল। এ নিয়ে একটি অভিযোগ পান তাঁরা। পরে দুই পক্ষকে নিয়ে সভা হয়। সভায় সবার সম্মতিতে সিদ্ধান্ত হয়। সেই সিদ্ধান্ত বিকেলে জেলা প্রশাসকের দপ্তরে আরেকটি সভার মাধ্যমে পাস হয়েছে।

রাজশাহীর আলুচাষি ও ব্যবসায়ী সমবায় সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো. মিঠু আহমেদ বলেন, শুরু থেকেই তাঁরা বাড়তি ভাড়ার প্রতিবাদ জানিয়ে আসছিলেন। কয়েক দিন ধরে তাঁরা হিমাগার থেকে আলু নিতে পারছিলেন না। হিমাগারগুলোয় বাড়তি ভাড়া দিতে হচ্ছিল। এ নিয়ে আন্দোলনের পাশাপাশি সেনাবাহিনীকেও অবহিত করেন তাঁরা। শেষ পর্যন্ত একটি ভালো সিদ্ধান্ত হয়েছে।

রহমান সিডস স্টোরেজের ব্যবস্থাপক আবদুল হালিম বলেন, সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, প্রতি কেজি আলু রাখতে খরচ পড়বে ৫ টাকা ৫০ পয়সা আর শ্রমিক খরচ ৫০ পয়সা। এ ছাড়া যাঁরা আগে থেকেই টাকা দিয়ে অগ্রিম বুকিং দিয়েছেন, তাঁদের ক্ষেত্রে আলুর কেজিপ্রতি শ্রমিক খরচ ৫০ পয়সা দিতে হবে।

রাজশাহী চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির সভাপতি মাসুদুর রহমান বলেন, নতুন সিদ্ধান্ত সব হিমাগারমালিকসহ সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের জানানো হবে।

আরও পড়ুনরাজশাহীতে হিমাগারে ভাড়া বাড়ানোর প্রতিবাদে বিক্ষোভ-সমাবেশ১৫ জুন ২০২৫

সম্পর্কিত নিবন্ধ