পাচারকৃত টাকা দিয়ে আওয়ামী লীগ ‘গুজব সেল’ খুলেছেন বলে মন্তব্য করেছেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক ও জাতীয় নাগরিক কমিটির মুখ্য সংগঠক সারজিস আলম।

সারজিস আলম বলেন, ‘‘ফ্যাসিস্ট হাসিনা ও তার দোসররা গুজব খুটির উপর দাঁড়িয়ে মানুষের মাঝে বিভ্রান্ত ও বিভাজন তৈরির চেষ্টা করছে। তারা পাচারকৃত টাকা দিয়ে বিভিন্ন গুজব সেল থেকে প্রোপাগান্ডা ছড়াচ্ছে। দেশের মানুষ বিবেকবান হওয়ায় এই গুজব শুধু বিনোদনের খোরাক জোগায়।’’

শনিবার (২৫ জানুয়ারি) দুপুরে পঞ্চগড় মকবুলার রহমান সরকারি কলেজ মাঠে মাসব্যাপী তারুণ্য উৎসবের স্কিল ডেভেলপমেন্ট ইয়ুথ সামিট প্রোগ্রাম শেষে সাংবাদিকদের তিনি এ কথা বলেন।

আরো পড়ুন:

সারজিস বলেন, ‘‘এ দেশের মানুষ তাদের পাত্তা দেয় না। আমরা আমাদের জায়গা থেকে মানুষের স্বপ্ন ও স্প্রিড সামনে রেখে কাজ করে যাচ্ছি। আমরা মনে করি, এই গুজবগুলো পাত্তা দিলে, আমাদের শুধু সময় নষ্ট ছাড়া কিছুই হবে না।’’

স্কিল ডেভেলপমেন্ট ইয়ুথ সামিট প্রোগ্রাম অনুষ্ঠানে জেলা প্রশাসক সাবেত আলী, পুলিশ সুপার মিজানুর রহমান মুন্সী, সপ্ন পূরণ অর্গানাইজেশনের মখলেছার রহমান মুন্না বক্তব্য রাখেন। এতে বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা উপস্থিত ছিলেন। 

নতুন বাংলাদেশ গড়ার স্বপ্ন নিয়ে শিক্ষার্থীদের বিভিন্ন দিকনির্দেশনা দিয়ে বেলুন উড়িয়ে স্কিল ডেভেলপমেন্ট ইয়ুথ সামিট প্রোগ্রামের উদ্বোধন করেন সারজিস।

প্রোগ্রামে সারজিস আলম বলেন, ‘‘নতুন বাংলাদেশ গড়ার গণঅভ্যুত্থানের সামনের সারিতে ছিল মেয়েরা। আগামীর বাংলাদেশ গড়ার সামনের সারিতেও থাকবে মেয়েরা এবং মেয়ে-ছেলে যাই বলি না কেন, দিন শেষে গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে, নিজের জায়গা থেকে নিজের যা কাজ, তা করা। তাই আগামীর বাংলাদেশ গড়তে সকলের পাশাপাশি তরুণদের নিয়ে কাজ করতে হবে।’’ 

এর আগে সকালে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব নাসিমুল গনি ও জাতীয় নাগরিক কমিটির মুখ্য সংগঠক সারজিস আলম পঞ্চগড় রেলস্টেশনের সৌন্দর্য বর্ধনের কাজের উদ্বোধন করেন।

সেখানে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম এই সমন্বয়ক বলেন, ‘‘নিরপেক্ষ নির্বাচনের জন্য আলাদা সরকারের প্রয়োজন নেই। ড.

ইউনুসের হাত ধরেই বাংলাদেশে স্বচ্ছ নির্বাচন আমরা দেখতে পারব।’’

তিনি আরো বলেন, ‘‘অন্তর্বর্তী সরকার এখন পর্যন্ত তাদের জায়গা থেকে যে দায়িত্বশীল আচরণ করে আসছে। প্রত্যেকটি জাতীয় সিদ্ধান্তের ক্ষেত্রে সকল রাজনৈতিক দলের মতামত নেওয়া হচ্ছে। ড. মুহাম্মদ ইউনূস দেশের স্বার্থকে সামনে রেখে সবসময় জাতীয় ঐক্যের চিন্তা করেন। আমরা মনে করি, তার হাত ধরেই নতুন করে গণতন্ত্রের দ্বার উন্মোচন হবে। যেটি হতে পারে একটি স্বচ্ছ নির্বাচনের ভিত্তিতে, স্বচ্ছ নির্বাচন আমরা তার হাত ধরেই দেখতে পাবো।’’

এক এগারোর প্রশ্নে সারজিস বলেন, ‘‘এক এগারো কোনো স্বয়ংক্রিয় ঘটনা নয়। বিভিন্ন ঘটনার প্রেক্ষিতে একটা গোষ্ঠী সুযোগ নিয়ে একসময় এটা ঘটাতে বাধ্য করে। আমরা মনে করি, খুব স্বাভাবিকভাবেই রাজনীতির মাঠে পক্ষে-বিপক্ষে কথা থাকবে যেকোনো বিষয়ে। এটাই সৌন্দর্য। অন্তর্বর্তী সরকার এবং বর্তমান রাজনীতিতে যে ব্যক্তিরা রয়েছেন, তাদের মতের মধ্যে দ্বিমত থাকবে, বৈচিত্র্য থাকবে, আবারো যৌক্তিক বিষয়ে তারা ঐক্যবদ্ধ হবেন- এটাই হচ্ছে সবচেয়ে বড় কথা। কিন্তু আমরা যেন নতুন করে ফ্যাসিস্টদের সুযোগ না দেই। তারা তো চাইবে এই ঐক্যের ফাটল ধরাতে। আমরা বিভাজনে লিপ্ত হবো, তারা এই সুযোগ নিয়ে স্বার্থ হাসিল করবে।’’

এখানে জেলা প্রশাসক এবং পুলিশ সুপার ছাড়াও পঞ্চগড় জেলা জজ আদালতের পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) এডভোকেট আদম সুফি, পৌর বিএনপির আহ্বায়ক সাবেক মেয়র তৌহিদুল ইসলাম, জামায়াতে ইসলামির নেতা নাজিম উদ্দিন, পঞ্চগড়ের সমন্বয়ক ফজলে রাব্বী উপস্থিত ছিলেন।
 

ঢাকা/নাঈম/বকুল

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর সরক র

এছাড়াও পড়ুন:

রাশিয়ার কাছে ট্রাম্পের পরমাণু সাবমেরিন মোতায়েনের ঝুঁকি আসলে কতটা

সাধারণ সময়ে এই ঘটনা খুবই অস্বাভাবিক, যুগ পরিবর্তনকারী ও ভয়জাগানিয়া বলে মনে হতো। কারণ, স্নায়ুযুদ্ধকালেও কোনো মার্কিন প্রেসিডেন্ট প্রকাশ্যে রাশিয়ার উপকূলের দিকে পরমাণু সাবমেরিন পাঠানোর এমন নির্দেশ দেননি।

এই ধরনের পরমাণু উত্তেজনার খেলায় আগে কখনো যুক্তরাষ্ট্রের কোনো নেতা জড়াননি।

সত্যি বলতে, ১৯৬২ সালে কিউবান ক্ষেপণাস্ত্র–সংকটে সোভিয়েত ইউনিয়ন যুক্তরাষ্ট্রের উপকূল থেকে মাত্র ৯০ মাইল দূরে পারমাণবিক ক্ষেপণাস্ত্র বসিয়ে বিশ্বকে পরমাণু যুদ্ধের দ্বারপ্রান্তে নিয়ে গিয়েছিল। সেই সময় ১৩ দিন ধরে পুরো পৃথিবী ভয় আর অনিশ্চয়তায় কাঁপছিল।

তবে ডোনাল্ড ট্রাম্পের কল্পনাবিলাসী শাসনব্যবস্থার কারণে এবার তেমন ভয় বা আতঙ্ক দেখা যাচ্ছে না। এটি মোটেই কিউবান ক্ষেপণাস্ত্র–সংকটের দ্বিতীয় সংস্করণ নয়, তা খুব স্পষ্ট।

তবে ডোনাল্ড ট্রাম্পের কল্পনাবিলাসী শাসনব্যবস্থার কারণে এবার তেমন ভয় বা আতঙ্ক দেখা যাচ্ছে না। এটি মোটেই কিউবান ক্ষেপণাস্ত্র–সংকটের দ্বিতীয় সংস্করণ নয়, তা খুব স্পষ্ট।

তবে তার অর্থ এই নয় যে ট্রাম্প যা করলেন, সেটি কোনো ঝুঁকিমুক্ত সিদ্ধান্ত।

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প রাশিয়ার দিকে যুক্তরাষ্ট্রের পারমাণবিক অবস্থান এমনভাবে বদলেছেন, যেটা তাঁর পূর্বসূরিদের কেউই সাহস করেননি। এমনকি অনেকটা হালকাভাবেই তিনি পারমাণবিক উত্তেজনার সিঁড়ির প্রথম ধাপে পা রেখেছেন।

এখন যদি রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন পাল্টা জবাব দিতে চান, তাহলে বড় ধরনের সংকট তৈরি হতে পারে।

ট্রাম্প হয়তো মনে করছেন, পুতিন তেমন কিছু করবেন না। আসলে ট্রাম্প সম্ভবত এবার রাশিয়ার কৌশলই ব্যবহার করছেন।

পুতিন দীর্ঘদিন ধরেই পারমাণবিক অবস্থান বদলানোকে চাপ সৃষ্টির কৌশল হিসেবে ব্যবহার করে আসছেন। পশ্চিমাদের সঙ্গে উত্তেজনার সময় তিনি প্রায়ই কালিনিনগ্রাদে পারমাণবিক ওয়ারহেড ছুড়তে সক্ষম ইস্কান্দার ক্ষেপণাস্ত্র মোতায়েন করেন। এই কালিনিনগ্রাদ এলাকাটি ন্যাটোর সদস্যদেশ পোল্যান্ডের সীমান্তে অবস্থিত।

২০২৩ সালে পুতিন বেলারুশে পারমাণবিক অস্ত্র মোতায়েন করেন। স্নায়ুযুদ্ধের পর এই প্রথম রাশিয়া নিজেদের দেশের বাইরে পারমাণবিক অস্ত্র মোতায়েন করল। তিনি ইউক্রেনে বারবার কৌশলগত পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবহারের ইঙ্গিতও দিয়েছেন।

আর গতকাল শুক্রবার পুতিন ঘোষণা দিলেন, রাশিয়া ওরেশনিক নামে একধরনের হাইপারসনিক মাঝারি পাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র তৈরি শুরু করেছে। এসব ক্ষেপণাস্ত্র ২০২৫ সালের মধ্যেই বেলারুশে মোতায়েন করা হবে। তিনি দাবি করেন, এই ক্ষেপণাস্ত্র মোতায়েনের জন্য নির্দিষ্ট স্থানও ইতিমধ্যে বাছাই করে রাখা হয়েছে।

গত কয়েক দিনে রাশিয়ার সাবেক প্রেসিডেন্ট দিমিত্রি মেদভেদেভ সতর্ক করে বলেছেন, ট্রাম্পের নানা হুমকি যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়ার মধ্যে যুদ্ধ বাধিয়ে দিতে পারে। মেদভেদেভ রুশ প্রেসিডেন্ট পুতিনের হয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আক্রমণাত্মক ভূমিকা পালন করছেন। তিনি এর আগেও পরমাণু যুদ্ধের হুমকি দিয়েছেন।

পুতিন দীর্ঘদিন ধরেই পারমাণবিক অবস্থান বদলানোকে চাপ সৃষ্টির কৌশল হিসেবে ব্যবহার করে আসছেন। পশ্চিমাদের সঙ্গে উত্তেজনার সময় তিনি প্রায়ই কালিনিনগ্রাদে পারমাণবিক ওয়ারহেড ছুড়তে সক্ষম ইস্কান্দার ক্ষেপণাস্ত্র মোতায়েন করেন।

কিছুদিন আগেও পুতিনের ভক্ত হিসেবে পরিচিত ডোনাল্ড ট্রাম্প এবার স্পষ্ট করে দিয়েছেন, তিনি রাশিয়ার হুমকিকে পাত্তা দিচ্ছেন এবং তার মোকাবিলায় পাল্টা চাল দিচ্ছেন।

অন্যভাবে বললে, রাশিয়া যেটাকে ‘কেবল হুমকি’ হিসেবে দিচ্ছে, ট্রাম্প সেটাকে ‘আসল হুমকি’ হিসেবে নিচ্ছেন। এটা অনেকটাই উল্টো পরিস্থিতি। কারণ, ট্রাম্পের সমর্থকেরা সাধারণত বলে থাকেন, তাঁর কথাকে সরাসরি না নিয়ে রূপকভাবে বুঝতে হবে।

মেদভেদেভকে উদ্দেশ করে ট্রাম্প তাঁর নিজের মালিকানাধীন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ট্রুথ সোশ্যালে এক পোস্টে লেখেন, ‘শব্দের গুরুত্ব অনেক। আর সেগুলো অনেক সময় এমন পরিণতি ডেকে আনতে পারে, যা কেউ চায় না।’

তাই ডোনাল্ড ট্রাম্পের এই হুমকিকে অনেকটাই নাটকীয় ‘পারফরম্যান্স’ বলা যায়। হ্যাঁ, এটি উচ্চ ঝুঁকির, দায়িত্বহীন। তবে শেষমেশ এটি একধরনের ‘লোক দেখানো কার্যকলাপ’।

ট্রাম্পের এই পদক্ষেপের পেছনে অন্য উদ্দেশ্যও থাকতে পারে। আগামী কয়েক দিনে ট্রাম্পকে ব্যাখ্যা করতে হবে, ইউক্রেনে রাশিয়ার চলমান আগ্রাসনের বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্র কী পদক্ষেপ নিতে যাচ্ছে। দিন দিন এটির গুরুত্ব আরও বাড়ছে। কারণ, গতকাল শুক্রবার কিয়েভে রাশিয়ার এক হামলায় ৩১ জন নিহত হয়েছেন।

এ ছাড়া রাশিয়ার তেল-গ্যাস কেনা দেশগুলো বিশেষ করে চীন, ভারত, তুরস্ক, সংযুক্ত আরব আমিরাতের ওপর দ্বিতীয় স্তরের নিষেধাজ্ঞা জারি করার পরিকল্পনাও ট্রাম্পের জন্য কূটনৈতিক চাপে পরিণত হয়েছে।

এ সবকিছুর মাঝখানে ট্রাম্প যদি পরবর্তী সময়ে তাঁর হুমকি থেকে সরে দাঁড়াতে চান, তাহলে তিনি দেখাতে পারবেন যে সাবমেরিন মোতায়েনের মাধ্যমে তিনি রাশিয়াকে গুরুত্বের সঙ্গে নিয়েছেন। তিনি এমন একটি কৌশল নিয়েছেন, যার ঝুঁকি হয়তো বেশি, কিন্তু অর্থনৈতিক খরচ তুলনামূলকভাবে কম। বিশেষ করে যেসব মিত্রদেশকে তিনি অন্য ক্ষেত্রে পাশে পেতে চান, তাদের ওপর শুল্ক আরোপের চেয়ে এই মূল্য তুলনামূলক কম।

সম্পর্কিত নিবন্ধ