রাজশাহীতে সমতল ও পাহাড়ি জনগোষ্ঠীর সম্প্রীতি সমারোহ
Published: 25th, January 2025 GMT
মঞ্চে নেওয়ার আগে মেয়েরা অতিথিদের পা ধুয়ে বরণ করে নিলেন। এটা বরেন্দ্র অঞ্চলের ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর রেওয়াজ। তার আগে রেওয়াজ অনুযায়ী নৃত্য আর গানে গানে অতিথিদের বরণ করে মঞ্চের কাছে আনা হলো। রাজশাহীর গোদাগাড়ী উপজেলার চৈতন্যপুর গ্রামে সমতল ও পাহাড়ি জনগোষ্ঠীর সম্প্রীতি সমারোহ অনুষ্ঠানের শুরুতে দেখা গেল এ দৃশ্য।
নেচে নেচে অতিথিদের মঞ্চের কাছে আনলেন গোগ্রাম বটতলা গ্রামের কাকলি মুণ্ডা, লাবনী মুন্ডা, দীপিকা মুন্ডা, প্রীতি মুন্ডা আর মৌমিতা মুন্ডা। তাদের সঙ্গে মাদল বাজালেন অখিল টপ্পো। করতাল বাজাচ্ছিলেন নীলকান্ত মুরারি। আর একদল নারী ফুলের পাপড়ি ছিটিয়ে দিচ্ছিলেন অতিথিদের গায়ে।
‘তারুণ্যের উৎসব’ শিরোনামে দেশব্যাপী বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির আয়োজনের ধারাবাহিকতায় ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী অধ্যুষিত এ গ্রামে শনিবার (২৫ জানুয়ারি) এবং রবিবার (২৬ জানুয়ারি) দুই দিনব্যাপী সমতল ও পাহাড়ি জনগোষ্ঠীর সম্প্রীতি সমারোহ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। এ আয়োজনে ছিল রাজোয়াড় জাতিগোষ্ঠীর আলপনাচিত্র প্রদর্শন ও ১৩ জনগোষ্ঠীর নৃত্য-গীত ও নাট্যানুষ্ঠান।
আরো পড়ুন:
উচ্ছেদ আতঙ্কে তানোরের ৪০ ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী পরিবার
চাটমোহরে পুষড়া আদিবাসী উৎসবে মিলনমেলা
শনিবার বিকালে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে আলোচনা শেষে নৃত্য পরিবেশন করেন পার্বত্য জেলা রাঙ্গামাটি ও বান্দরবানের চাকমা, মারমা, পাংখোয়া, ত্রিপুরা এবং রাজশাহী অঞ্চলের সমতলের সাঁওতাল, ওরাঁও, পাহাড়িয়া, রাজোয়াড়, মুণ্ডা, মাহাতো, ভূমিজ, গড়াৎ মাহালী শিল্পীরা।
রাজশাহীর জেলা প্রশাসক আফিয়া আখতারের সভাপতিত্বে আয়োজিত এ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির মহাপরিচালক সৈয়দ জামিল আহমেদ। বিশেষ অতিথি ছিলেন বিভাগীয় কমিশনার খোন্দকার আজিম আহমেদ, রাজশাহীর পুলিশ সুপার ফারজানা ইসলাম, জাতীয় আদিবাসী পরিষদের কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি বিমল চন্দ্র রাজোয়াড় ও অনগ্রসর সমাজ উন্নয়ন সংস্থার নির্বাহী পরিচালক রাজকুমার শাও। অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির উপ-পরিচালক এসএম শামীম আকতার।
অনুষ্ঠানে বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির মহাপরিচালক সৈয়দ জামিল আহমেদ বলেন, ‘‘একটি ভাষা হারিয়ে গেলে উপলব্ধিটাই হারিয়ে যায়। আপনাদের কাছে অনুরোধ, এই রাজোয়াড় ভাষাটা যেন হারিয়ে না যায়।’’ তিনি বলেন, ‘‘আপনারা আপনাদের জমি যাতে ফেরত পাওয়া যায়, সেজন্য কাজ করবেন। আপনারা লেখাপড়া করবেন আপনাদের পাশে আমরা থাকব।’’
অনুষ্ঠানে বিভাগীয় কমিশনার খোন্দকার আজিম আহমেদ বলেন, ‘‘এখন বলা হয় অনেক কিছু হারিয়ে যাচ্ছে। আমি বলব এটা হারিয়ে যাওয়া নয়, এক সম্প্রদায়ের সঙ্গে আরেক সম্প্রদায়ের মিশে যাওয়া। তবে মিশে গেলেও নিজস্ব কৃষ্টি কালচার সংস্কৃতি ধরে রাখতে হবে। আপনারা আপনাদের বাপ দাদার এলাকা ছেড়ে কোথাও মাইগ্রেট করার চিন্তাও করবেন না। আমরা আগেও যেভাবে মিলেমিশে ছিলাম, এখনো সেভাবে থাকব। দু’-একজন দুর্বৃত্ত যেটা আগেও ছিল, হয়তো ভবিষ্যতেও থাকবে। যেভাবে শান্তির সঙ্গে, সমৃদ্ধির সঙ্গে বসবাস করতে চান, সেটা করবেন। কোনো সমস্যা হলে আমাদের জানাবেন। আমরা সবাই শান্তিপূর্ণভাবে থাকতে চাই।’’
অনুষ্ঠানে রাজশাহীর জেলা প্রশাসক আফিয়া আখতার বলেন, ‘‘একা একা ভালো থাকা যায় না। সবাই মিলে ভালো থাকতে হয়। এই যে আমরা ভালো আছি, এই ভালো থাকাটা ধরে রাখতে হবে।’’
অনুষ্ঠানে ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী সম্প্রদায়ের নেতা রাজ কুমার শাও ‘আদিবাসীদের’ সাংবিধানিক স্বীকৃতির দাবি জানান। বিমল চন্দ্র রাজোয়াড় ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী সম্প্রদায়ের প্রধান সমস্যা জমি উল্লেখ করে বলেন, ‘‘তাদের অনেক জমি বেহাত হয়ে যায়। এগুলো যেন না হয় সেই জন্য সবাইকে নজর রাখতে হবে।’’
ঢাকা/কেয়া/বকুল
.উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ল দ শ শ ল পকল জনগ ষ ঠ র এক ড ম র আপন দ র আহম দ করব ন
এছাড়াও পড়ুন:
ভালো ফলনের আশায় গাছকে খাওয়ান তাঁরা
চীনের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের পাহাড়ি প্রদেশ গুইঝৌতে প্রাচীনকাল থেকে ‘গেলাও’ জনগোষ্ঠীর বসবাস। ভিয়েতনামেও এই জনগোষ্ঠীর মানুষ বাস করেন। চীনে তাঁদের সংখ্যা প্রায় ৬ লাখ ৭৭ হাজার।
কৃষিনির্ভর গেলাও জনগোষ্ঠীর সদস্যরা আজও প্রাচীনকালের পুরোনো এক ঐতিহ্য আগলে রেখেছেন। বছরের নির্দিষ্ট দিনে তাঁরা গাছকে খাওয়ান, যা চীনা ভাষায় ‘ওয়েই শু’ রীতি নামে পরিচিত।
এই প্রাচীন রীতি মূলত একধরনের প্রার্থনা। স্থানীয় অধিবাসীদের বিশ্বাস, এতে প্রকৃতি তুষ্ট হয়, ফসল ভালো হয়, পরিবারে শান্তি ও সমৃদ্ধি আসে। প্রতিবছর দুটি উৎসবের সময় এই অনুষ্ঠান পালন করা হয়—চীনা নববর্ষে, যা বসন্ত উৎসব নামে পরিচিত। আর গেলাও নববর্ষে, যা চান্দ্র পঞ্জিকার তৃতীয় মাসের তৃতীয় দিনে পালিত হয়।
অনুষ্ঠানের দিন সকালে আত্মীয়স্বজন ও গ্রামবাসী পাহাড়ের ঢালে জড়ো হন। তাঁরা সঙ্গে করে চাল থেকে তৈরি মদ, শূকরের মাংস, মাছ ও লাল আঠালো চাল নিয়ে আসেন। পাহাড়ে পৌঁছে প্রথমে আতশবাজি পোড়ানো হয়। এতে করে উৎসবমুখর পরিবেশের সৃষ্টি হয়।
এর মধ্যেই একটি পুরোনো ও শক্তিশালী গাছ বাছাই করা হয়। এরপর সবাই ধূপ জ্বালিয়ে নতজানু হয়ে প্রার্থনা করেন। সবশেষে মূল পর্ব ‘গাছকে খাওয়ানো’ শুরু হয়।
একজন কুঠার বা ছুরি দিয়ে গাছে তিনটি জায়গায় ছোট করে কেটে দেন। সেই ক্ষতস্থানে চাল, মাংস ও মদ ঢেলে দেওয়া হয়, যাতে গাছ তাঁদের দেওয়া ভোগ গ্রহণ করতে পারে। পরে ওই জায়গা লাল কাগজে মুড়ে দেওয়া হয়।
এ ছাড়া গাছের গোড়া ঘিরে আগাছা পরিষ্কার করা হয়, মাটি আলগা করে দেওয়া হয়। এতে নতুন জীবনের বার্তা মেলে বলে মনে করেন গেলাও জনগোষ্ঠীর সদস্যরা।
যে গাছকে খাওয়ানো হয়, সেটি যদি ফলদ হয়, তাহলে ভোগ দানকারীরা একটি আশাব্যঞ্জক শ্লোক উচ্চারণ করেন। বলেন, ‘তোমায় চাল খাওয়াই, ফল দিয়ো গুচ্ছ গুচ্ছ; তোমায় মাংস খাওয়াই, ফল দিয়ো দলা দলা।’