ঝালকাঠি সদর হাসপাতালে ২০২৪-২৫ অর্থবছরে সাড়ে তিন কোটি টাকার ওষুধ কেনা নিয়ে গড়িমসি চলছে। ইজিপিতে (ইলেকট্রনিক গভর্নমেন্ট প্রকিউরমেন্ট) দরপত্র ডাকার জন্য গত বছরের জুলাইয়ে সুপারিশ করে ক্রয় কমিটি। হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. শামিম আহমেদ গতকাল শনিবার পর্যন্ত সেটি করেননি। তাঁর পছন্দ ওটিএম (ওপেন টেন্ডার মেথড)। এ প্রক্রিয়ায় গত ২১ বছর একই ঠিকাদার ওষুধ সরবরাহের কাজ পাচ্ছে।
হাসপাতাল সূত্র জানায়, এমএসআরের (মেডিকেল অ্যান্ড সার্জিক্যাল প্রি-রেকুইজিটস) জন্য ওই টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। হাসপাতালের ক্রয় কমিটির সুপারিশ বিবেচনায় না নিয়ে দরপত্র বিলম্বিত করা হচ্ছে। ইজিপিতে দরপত্র ডাকলে একাধিক ঠিকাদার অংশ নিতে পারত; সরকারের বিপুল পরিমাণ রাজস্ব আয় হতো। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের নির্দেশনা অনুযায়ী গত বছরের ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে এ দরপত্র ডাকার কথা ছিল। এখনও প্রক্রিয়া শুরু না করায় যে কোনো সময় টাকা ফেরত যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। ইডিসিএল (এসেনসিয়াল ড্রাগ কোম্পানি লিমিটেড) খাতে এই দরপত্রের টাকা বরাদ্দ আছে। ইজিপিতে দরপত্র ডাকতে হাসপাতালের সিপিটিইউতে (সেন্ট্রাল প্রকিউরমেন্ট টেকনিক্যাল ইউনিট) প্রস্তাব পাঠানো হয়নি। ওটিএমে দরপত্র প্রক্রিয়ার এপিপি (অ্যানুয়াল প্রকিউরমেন্ট প্লান্ট) বরিশালে পাঠানো হয়েছিল। বিধিবহির্ভূত হওয়ায় তা অনুমোদন হয়নি।
এদিকে গত ১২ জানুয়ারি প্রকল্পভুক্ত অ্যাম্বুলেন্সচালক শাহাদাতকে মাদক বেচার অভিযোগে পুলিশ আটক করে। এর পর থেকে তত্ত্বাবধায়ক কর্মস্থলে অনুপস্থিত।
 জানা যায়, বর্তমানে ডায়াবেটিসের ইনসুলিন ও শ্বাসকষ্টের জন্য ইনহেলার নেই। এ ছাড়া সেফুরক্সিম ট্যাবলেট ও ইনজেকশন, এজিথ্রোমাইসিন সিরাপ, উচ্চ রক্তচাপেরসহ অনেক রোগের ওষুধের সরবরাহ বন্ধ এক মাস আগে থেকে।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, ইতোমধ্যে হাসপাতালের যন্ত্রপাতি মেরামত খাতে ২০২৩-২৪ অর্থবছরের ১২ লাখ টাকা ফেরত গেছে। অথচ তত্ত্বাবধায়ক বিকল হয়ে পড়ে থাকা অ্যানালাইজার, প্যাথলজিক্যাল যন্ত্রপাতি মেরামত করেননি। বর্তমানে ক্রিয়েটিনিন, ডোপ টেস্ট, করোনাসহ অত্যাবশ্যকীয় অনেক পরীক্ষা-নিরীক্ষা বন্ধ। রোগীরা দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন।
তত্ত্বাবধায়ক ডা.

শামিম আহমেদের নম্বরে বারবার কল করলেও তিনি ধরেননি। অন্যজনের মোবাইল ফোন থেকে কল করে প্রশ্ন করার সঙ্গে সঙ্গে সংযোগ কেটে দেন। সদর হাসপাতালের আরএমও ডা. টি এম মেহেদী হাসান সানি দ্রুত ওষুধের প্রয়োজনীয়তার কথা স্বীকার করেন।
ঝালকাঠি সদর হাসপাতালের ভারপ্রাপ্ত তত্ত্বাবধায়ক ও দরপত্র কমিটির সদস্য ডা. এ বি এম ইমাম হোসেন বলেন, ‘আমাকে এক দিনের দায়িত্ব দিয়ে তিনি তিন-চার দিন অনুপস্থিত। দরপত্র ডাকার জন্য চূড়ান্ত সুপারিশ পাঠিয়েছি। সমস্যা থাকবে না।’
বরিশাল বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালক শ্যামল কৃষ্ণ মণ্ডল বলেন, ‘সরকারের বরাদ্দ অনুযায়ী অবশ্যই দরপত্র ডাকতে হবে। আমি সমস্যা সমাধানে উদ্যোগ নেব।’

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: দরপত র ড ক

এছাড়াও পড়ুন:

প্রথম চালানে ৩৭ হাজার ৪৬০ কেজি ইলিশ গেল ভারতে

দুর্গাপূজা উপলক্ষে যশোরের বেনাপোল স্থলবন্দর দিয়ে প্রথম চালানে ৩৭ হাজার ৪৬০ কেজি ইলিশ মাছ ভারতে রপ্তানি হয়েছে। আজ বুধবার দেশের ছয়টি প্রতিষ্ঠান ১২ দশমিক ৫০ ডলার কেজিতে এই ইলিশ রপ্তানি করা হয়েছে, যা বাংলাদেশি টাকায় ১ হাজার ৫২৫ টাকা।

অথচ এদিন যশোর শহরের মাছের আড়তে ৫০০ থেকে ৬০০ গ্রাম আকারের প্রতি কেজি ইলিশ মাছ ১ হাজার ৪৫০ থেকে ১ হাজার ৫৫০ টাকায় পাইকারি বেচা–কেনা হয়েছে। খুচরা বাজারে সেই ইলিশ কেজিতে ৫০ থেকে ১০০ টাকা বেশি দরে ভোক্তাকে কিনতে হচ্ছে; অর্থাৎ দেশের খুচরা বাজারের দামের চেয়ে কম দামে ইলিশ ভারতে রপ্তানি হচ্ছে।

দেশের চেয়ে কম দামে ইলিশ মাছ রপ্তানি কীভাবে সম্ভব হচ্ছে, এমন প্রশ্নের জবাবে রপ্তানিকারকদের ক্লিয়ারিং অ্যান্ড ফরওয়ার্ডিং (সিএন্ডএফ) এজেন্ট জুয়েল এন্টারপ্রাইজের স্বত্বাধিকারী শহিদুল ইসলাম বলেন, ‘রপ্তানিকারকেরা ইলিশের জাহাজ থেকে সরাসরি মাছ কেনেন।‌ ছোট–বড় মিলিয়ে যখন কেনেন, তখন একটু কম দামে তাঁরা কিনতে পারেন। এ কারণে তাঁদের পুষিয়ে যায়। এর চেয়ে বেশি কিছু আমার জানা নেই।’

যশোর শহরের বড় বাজারের মাছ বাজার ঘুরে দেখা গেছে, ইলিশ মাছের সরবরাহ কম। যে কারণে ৫০০ থেকে ৬০০ গ্রাম ওজনের ইলিশ মাছ ১ হাজার ৪০০ থেকে ১ হাজার ৫০০ টাকা কেজি দরে বেচাকেনা হচ্ছে। খুচরা ইলিশ বিক্রেতা লিয়াকত আলী বলেন, ‘গত বছরের তুলনায় এ বছর ইলিশ মাছের দাম বাড়তি। বাজারে সরবরাহ কম। যে কারণে এ বছর ইলিশ মাছের দাম কমার সম্ভাবনা আর দেখছি না।’

যশোর বড় বাজার মৎস্যজীবী আড়তদার সমিতির সাধারণ সম্পাদক শেখ পিয়ার মোহাম্মদ জানান, আজ যশোরের বাজারে ৫০০ থেকে ৬০০ গ্রাম আকারের ইলিশ মাছ ১ হাজার ৪৫০ থেকে ১ হাজার ৫৫০ টাকা কেজি দরে পাইকারি কেনাবেচা হয়েছে। আর কেজি আকারের ইলিশ প্রতি কেজি ৩ হাজার টাকার ওপরে বেচাকেনা হয়েছে। ভারতের রপ্তানির কারণে স্থানীয় বাজারে এখন ইলিশ মাছ সরবরাহে ঘাটতি রয়েছে, যে কারণে দাম বেশি। অথচ গত বছর এই সময়ে কেজি আকারের ইলিশ মাছের দাম ছিল সর্বোচ্চ ১ হাজার ৬০০ টাকা কেজি। এবার প্রায় দ্বিগুণ দামে সেই ইলিশ কেনাবেচা হচ্ছে।

বেনাপোল স্থলবন্দরের মৎস্য পরিদর্শন ও মাননিয়ন্ত্রণ কেন্দ্র সূত্রে জানা গেছে, এ বছর সরকার ৩৭টি প্রতিষ্ঠানের অনুকূলে ১ হাজার ২০০ টন ইলিশ ভারতে রপ্তানির অনুমতি দিয়েছে। আজ থেকে ইলিশ মাছ রপ্তানি শুরু হলো। গত বছর ইলিশ রপ্তানির অনুমতি ছিল ২ হাজার ৪২০ টন। বেনাপোল বন্দর দিয়ে রপ্তানি হয়েছিল মাত্র ৫৩২ টন। এবারও অনুমোদনকৃত ইলিশ রপ্তানির কোটা পূরণ হবে কি না, তা নিয়ে সন্দেহ রয়েছে। ৫ অক্টোবরের মধ্যে ইলিশ রপ্তানি শেষ করতে নির্দেশ দিয়েছে মৎস্য অধিদপ্তর।

জানতে চাইলে বেনাপোল স্থলবন্দরের মৎস্য পরিদর্শন ও মাননিয়ন্ত্রণ কেন্দ্রের ফিশারিজ কোয়ারেন্টিন সজীব সাহা বলেন, দুর্গাপূজা উপলক্ষে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় অনুমোদিত ইলিশ রপ্তানির প্রথম চালানে বেনাপোল স্থলবন্দর দিয়ে ১২ দশমিক ৫০ ডলার মূল্যে ৩৭ দশমিক ৪৬০ টন ইলিশ রপ্তানি হয়েছে। ছয়টি প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে এই ইলিশ ভারতে পাঠানো হয়েছে। রপ্তানি করা ইলিশের একটি বাক্স খুলে দেখা গেছে, ৩৮টি ইলিশ মাছের ওজন ২১ কেজি; অর্থাৎ প্রতিটি ইলিশের ওজন ছিল ৫৫০ গ্রাম। এ ছাড়া ৭০০ থেকে ৮৫০ গ্রাম ওজনের ইলিশ মাছও রপ্তানি হয়েছে। ৫৫০ গ্রাম থেকে ৮৫০ গ্রাম আকারের মধ্যে ইলিশ মাছ রপ্তানি হচ্ছে।

পদ্মার রুপালি ইলিশ স্বাদ আর গন্ধে অতুলনীয় হওয়ায় দুই বাংলায় এ মাছ বেশ জনপ্রিয়। বিশেষ করে দুর্গাপূজায় অতিথি আপ্যায়নে খাবারের প্রধান তালিকায় ইলিশ রাখেন কলকাতার বাঙালিরা। আগে ইলিশ সাধারণ রপ্তানি পণ্যের তালিকায় উন্মুক্ত থাকলেও উৎপাদন সংকট দেখিয়ে ২০১২ সালে দেশের বাইরে ইলিশ রপ্তানি বন্ধ করে দেয় তৎকালীন সরকার। তবে ২০১৯ সাল থেকে বিশেষ বিবেচনায় কেবল দুর্গাপূজা উপলক্ষে আবারও ইলিশ রপ্তানির সুযোগ দেয় সরকার।

আরও পড়ুনদুর্গাপূজা উপলক্ষে ভারতের ‘বিশেষ অনুরোধে’ ইলিশ রপ্তানির অনুমতি: মৎস্য উপদেষ্টা২২ সেপ্টেম্বর ২০২৪

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • ৪ কোম্পানির আর্থিক প্রতিবেদনে অনিয়ম: ৭ অডিটর নিষিদ্ধ
  • সেপ্টেম্বরের ১৬ দিনে রেমিট্যান্স এসেছে ২০ হাজার কোটি টাকা
  • প্রথম চালানে ৩৭ হাজার ৪৬০ কেজি ইলিশ গেল ভারতে
  • গুদামে খাওয়ার অনুপযোগী চাল নিয়ে রাজশাহী খাদ্য বিভাগে তোলপাড়, ৮ তদন্ত কমিটি
  • ‘কেনতো পারমু না, হেইতে ইলশার সুরতটা দেইখ্যা যাই’
  • বাংলাদেশ ব্যাংক এক দিনে ২৬ ব্যাংক থেকে ৩৫ কোটি ডলার কিনল কেন
  • নিলামে ৩৫৩ মিলিয়ন ডলার কিনেছে বাংলাদেশ ব্যাংক
  • যুক্তরাজ্য থেকে আসছে মাদক এমডিএমএ, গ্রেপ্তার ৫
  • চাপে পড়ে নয়, অনুরোধে ভারতে ইলিশ পাঠানোর অনুমোদন: ফরিদা আখতার
  • ভোটের সরঞ্জাম আসছে ইসিতে