সাড়ে তিন কোটি টাকার ওষুধ কিনতে গড়িমসি
Published: 25th, January 2025 GMT
ঝালকাঠি সদর হাসপাতালে ২০২৪-২৫ অর্থবছরে সাড়ে তিন কোটি টাকার ওষুধ কেনা নিয়ে গড়িমসি চলছে। ইজিপিতে (ইলেকট্রনিক গভর্নমেন্ট প্রকিউরমেন্ট) দরপত্র ডাকার জন্য গত বছরের জুলাইয়ে সুপারিশ করে ক্রয় কমিটি। হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. শামিম আহমেদ গতকাল শনিবার পর্যন্ত সেটি করেননি। তাঁর পছন্দ ওটিএম (ওপেন টেন্ডার মেথড)। এ প্রক্রিয়ায় গত ২১ বছর একই ঠিকাদার ওষুধ সরবরাহের কাজ পাচ্ছে।
হাসপাতাল সূত্র জানায়, এমএসআরের (মেডিকেল অ্যান্ড সার্জিক্যাল প্রি-রেকুইজিটস) জন্য ওই টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। হাসপাতালের ক্রয় কমিটির সুপারিশ বিবেচনায় না নিয়ে দরপত্র বিলম্বিত করা হচ্ছে। ইজিপিতে দরপত্র ডাকলে একাধিক ঠিকাদার অংশ নিতে পারত; সরকারের বিপুল পরিমাণ রাজস্ব আয় হতো। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের নির্দেশনা অনুযায়ী গত বছরের ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে এ দরপত্র ডাকার কথা ছিল। এখনও প্রক্রিয়া শুরু না করায় যে কোনো সময় টাকা ফেরত যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। ইডিসিএল (এসেনসিয়াল ড্রাগ কোম্পানি লিমিটেড) খাতে এই দরপত্রের টাকা বরাদ্দ আছে। ইজিপিতে দরপত্র ডাকতে হাসপাতালের সিপিটিইউতে (সেন্ট্রাল প্রকিউরমেন্ট টেকনিক্যাল ইউনিট) প্রস্তাব পাঠানো হয়নি। ওটিএমে দরপত্র প্রক্রিয়ার এপিপি (অ্যানুয়াল প্রকিউরমেন্ট প্লান্ট) বরিশালে পাঠানো হয়েছিল। বিধিবহির্ভূত হওয়ায় তা অনুমোদন হয়নি।
এদিকে গত ১২ জানুয়ারি প্রকল্পভুক্ত অ্যাম্বুলেন্সচালক শাহাদাতকে মাদক বেচার অভিযোগে পুলিশ আটক করে। এর পর থেকে তত্ত্বাবধায়ক কর্মস্থলে অনুপস্থিত।
জানা যায়, বর্তমানে ডায়াবেটিসের ইনসুলিন ও শ্বাসকষ্টের জন্য ইনহেলার নেই। এ ছাড়া সেফুরক্সিম ট্যাবলেট ও ইনজেকশন, এজিথ্রোমাইসিন সিরাপ, উচ্চ রক্তচাপেরসহ অনেক রোগের ওষুধের সরবরাহ বন্ধ এক মাস আগে থেকে।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, ইতোমধ্যে হাসপাতালের যন্ত্রপাতি মেরামত খাতে ২০২৩-২৪ অর্থবছরের ১২ লাখ টাকা ফেরত গেছে। অথচ তত্ত্বাবধায়ক বিকল হয়ে পড়ে থাকা অ্যানালাইজার, প্যাথলজিক্যাল যন্ত্রপাতি মেরামত করেননি। বর্তমানে ক্রিয়েটিনিন, ডোপ টেস্ট, করোনাসহ অত্যাবশ্যকীয় অনেক পরীক্ষা-নিরীক্ষা বন্ধ। রোগীরা দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন।
তত্ত্বাবধায়ক ডা.
ঝালকাঠি সদর হাসপাতালের ভারপ্রাপ্ত তত্ত্বাবধায়ক ও দরপত্র কমিটির সদস্য ডা. এ বি এম ইমাম হোসেন বলেন, ‘আমাকে এক দিনের দায়িত্ব দিয়ে তিনি তিন-চার দিন অনুপস্থিত। দরপত্র ডাকার জন্য চূড়ান্ত সুপারিশ পাঠিয়েছি। সমস্যা থাকবে না।’
বরিশাল বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালক শ্যামল কৃষ্ণ মণ্ডল বলেন, ‘সরকারের বরাদ্দ অনুযায়ী অবশ্যই দরপত্র ডাকতে হবে। আমি সমস্যা সমাধানে উদ্যোগ নেব।’
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: দরপত র ড ক
এছাড়াও পড়ুন:
ইউক্রেনকে টমাহক ক্ষেপণাস্ত্র দিতে পেন্টাগনের সায়, চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবেন ট্রাম্প
ইউক্রেনকে দূরপাল্লার টমাহক ক্ষেপণাস্ত্র সরবরাহে হোয়াইট হাউসকে সবুজ সংকেত দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষা সদরদপ্তর পেন্টাগন। প্রতিরক্ষা দপ্তর মনে করছে, এই সরবরাহ যুক্তরাষ্ট্রের টমাহক মজুতের ওপর কোনো নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে না। তবে এ বিষয়ে চূড়ান্ত রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত এখন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের হাতে। বিষয়টি সম্পর্কে জানাশোনা আছে এমন তিনজন মার্কিন ও ইউরোপীয় কর্মকর্তা এ তথ্য জানিয়েছেন।
এর আগে অক্টোবর মাসে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কির সঙ্গে হোয়াইট হাউসে বৈঠকের সময় ট্রাম্প বলেছিলেন, তিনি ইউক্রেনকে এই ক্ষেপণাস্ত্র দিতে চান না। কারণ হিসেবে তখন তিনি বলেছিলেন, ‘আমাদের দেশকে রক্ষা করার জন্য যে জিনিসগুলো প্রয়োজন, সেগুলো আমরা কাউকে দিতে চাই না।’
পেন্টাগনের জয়েন্ট স্টাফ তাদের মূল্যায়ন হোয়াইট হাউসকে অক্টোবর মাসেই জানিয়েছিল, ট্রাম্পের সঙ্গে জেলেনস্কির বৈঠকের ঠিক আগে। জেলেনস্কি রাশিয়ার অভ্যন্তরে আরও কার্যকরভাবে তেল ও জ্বালানি স্থাপনাগুলোতে আঘাত হানতে সক্ষম এই ক্ষেপণাস্ত্রের জন্য জোরালোভাবে অনুরোধ করে আসছিলেন। টমাহক ক্ষেপণাস্ত্রের পাল্লা প্রায় প্রায় ১ হাজার ৬০০ কিলোমিটার।
যুক্তরাষ্ট্রের এই মূল্যায়ন ইউরোপীয় মিত্রদের উৎসাহিত করেছে। দুই ইউরোপীয় কর্মকর্তা বলেন, এখন ক্ষেপণাস্ত্র সরবরাহ না করার পক্ষে যুক্তরাষ্ট্রের অজুহাত দেখানোর মতো তেমন আর কিছু নেই বলে তাঁরা মনে করেন। জেলেনস্কির সঙ্গে বৈঠকের কয়েক দিন আগে ট্রাম্প নিজেও বলেছিলেন, যুক্তরাষ্ট্রের কাছে ‘অনেক টমাহক’ ক্ষেপণাস্ত্র রয়েছে যা তারা ইউক্রেনকে দিতে পারে।
প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প যখন কয়েকদিন পর নাটকীয়ভাবে তাঁর মনোভাব পরিবর্তন করেন, এতে মার্কিন ও ইউরোপীয় কর্মকর্তারা অবাক হন। হোয়াইট হাউসে জেলেনস্কির সঙ্গে বৈঠকের সূচনা বক্তব্যে তিনি বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের এই টমাহক ক্ষেপণাস্ত্রগুলো ‘প্রয়োজন’। এরপর রুদ্ধদ্বার বৈঠকে তিনি জেলেনস্কিকে জানান, যুক্তরাষ্ট্র এই ক্ষেপণাস্ত্র দেবে না—অন্তত এই মুহূর্তে নয়।
যুক্তরাষ্ট্র যদি ইউক্রেনকে টমাহক ক্ষেপণাস্ত্র সরবরাহ করে, তবে একটি বড় প্রশ্ন থেকে যায় ইউক্রেন সেগুলো কীভাবে উৎক্ষেপণ করবে। সাধারণত, টমাহক ক্ষেপণাস্ত্র যুদ্ধজাহাজ বা সাবমেরিন থেকে উৎক্ষেপণ করা হয়। কিন্তু ইউক্রেনের নৌবাহিনী এখন মারাত্মকভাবে দুর্বল।সিএনএনের প্রতিবেদনে তখন বলা হয়েছিল, এই সিদ্ধান্তের ঠিক এক দিন আগে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে ফোনে কথা বলেন ট্রাম্প। পুতিন ট্রাম্পকে জানান, টমাহক ক্ষেপণাস্ত্র মস্কো এবং সেন্ট পিটার্সবার্গের মতো বড় রুশ শহরগুলোতে আঘাত হানতে পারে। এটি যুদ্ধক্ষেত্রে তেমন কোনো গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব ফেলবে না, কিন্তু যুক্তরাষ্ট্র-রাশিয়া সম্পর্কের ক্ষতি করবে।
এ বিষয়ে মন্তব্যের জন্য হোয়াইট হাউস এবং পেন্টাগনের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলেও তারা কোনো সাড়া দেয়নি।
তবে সূত্রগুলো সিএনএন-কে আগেই জানিয়েছিল, ট্রাম্প ক্ষেপণাস্ত্র সরবরাহের বিষয়টি পুরোপুরি বাতিল করেননি। যদি ট্রাম্প নির্দেশ দেন, তবে দ্রুত ইউক্রেনকে সেগুলো সরবরাহ করার জন্য প্রশাসন পরিকল্পনা তৈরি করে রেখেছে।
সম্প্রতি শান্তি আলোচনার বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে নিতে পুতিনের অনীহায় ট্রাম্প এতটাই হতাশ হয়েছেন যে, তিনি গত সপ্তাহে রুশ তেল কোম্পানিগুলোর ওপর নতুন নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছেন। একই সঙ্গে ইউক্রেন নিয়ে আলোচনা করার জন্য পুতিনের সঙ্গে বুদাপেস্টে যে বৈঠক হওয়ার কথা, তা আপাতত বাতিল করেছেন।
যদিও পেন্টাগনের মজুত নিয়ে কোনো উদ্বেগ নেই, তবে মার্কিন প্রতিরক্ষা কর্মকর্তারা এখনো ভাবছেন, ইউক্রেন কীভাবে এই ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহারের প্রশিক্ষণ নেবে এবং সেগুলো মোতায়েন করবে। সূত্রগুলো আরও জানিয়েছে, ইউক্রেন যাতে কার্যকরভাবে এই ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহার করতে পারে, সেজন্য এখনো বেশ কিছু প্রায়োগিক বিষয় সমাধান করা দরকার।
হোয়াইট হাউসে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কিকে স্বাগত জানান যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। ১৭ অক্টোবর ২০২৫