Samakal:
2025-11-03@19:38:54 GMT

আলু এখন কৃষকের গলার ফাঁস

Published: 27th, January 2025 GMT

আলু এখন কৃষকের গলার ফাঁস

আলু নিয়ে আবার বিপাকে পড়েছেন জয়পুরহাটের কৃষক। দাম না পেয়ে তাদের স্বপ্ন ভেস্তে যেতে বসেছে। মাঠ বা সড়কের পাশ থেকেই পাইকারি প্রতি কেজি আলু বিক্রি হচ্ছে মানভেদে ১১ থেকে ১৩ টাকায়, যা উৎপাদন খরচের চেয়ে কম। কৃষকরা বলছেন, আলু বিক্রি করে লাভ হচ্ছে না। 
কৃষি বিপণন অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, জয়পুরহাটের বাজারে বিগত পাঁচ বছরে আলুর গড় পাইকারি দাম ছিল ২০২০ সালে ২৯.

৫০ টাকা, ২০২১ সালে ২৫.৭০ টাকা, ২০২২ সালে ১৯.২০ টাকা, ২০২৩ সালে ৬০.৮০ টাকা এবং ২০২৪ সালে ৪৮.৫০ টাকা। এ বছর মানভেদে বিক্রি হচ্ছে ১১ থেকে ১৩ টাকায়। 
 কৃষক ও পাইকারদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, আগাম জাতের প্রতি কেজি ডায়মন্ড আলু ১১ থেকে ১৩ টাকায়, কার্ডিনাল ও ক্যারেজ ১০ থেকে ১১ টাকায়, লাল পাকরি (দেশি) ১২ থেকে ১৩ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। চাষিরা উৎপাদন করে লোকসান গুনলেও হাত বদলে ব্যবসায়ীরা লাভ করছেন ভালোই। খুচরা বাজারে জাতভেদে আলুর কেজি গতকালও ২৫ থেকে ৩০ টাকায় বিক্রি করতে দেখা গেছে। 
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্যমতে, জেলায় এবার আলু চাষে লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছিল ৪০ হাজার হেক্টরে। চাষ হয়েছে ৪৩ হাজার ৪৭০ হেক্টর জমিতে। এর মধ্যে কালাই উপজেলায় সবচেয়ে বেশি ১০ হাজার ৯০৫ হেক্টর, ক্ষেতলালে ৯ হাজার ২২০, পাঁচবিবিতে ৮ হাজার ৯৪৫, সদর উপজেলায় ৭ হাজার ৮০০ ও আক্কেলপুরে ৬ হাজার ৬০০ হেক্টর জমিতে আলু চাষ হয়েছে। এবার আলুর চাষ উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৯ লাখ ৫৬ হাজার টন। 
রোববার পাইকারি দামে আলু কিনতে কালাই উপজেলার হারুঞ্জা মাঠে এসেছেন নওগাঁর ধামুইরহাট উপজেলার মুনশ কান্তি। তিনি বলেন, ‘আমার ৩৫ বছরের দোকানদারি। পাঁচ বছরের মধ্যে এবার আলুর দাম সর্বনিম্ন। মাত্র তিন মাস আগে ৬০ কেজি ওজনের দুই বস্তা আলু কিনেছি সাড়ে ৬ হাজার থেকে ৭ হাজার টাকায়। একই পরিমাণ আজ নিয়েছি ১ হাজার ৪৫০ টাকা দিয়ে। এত কম দামে কয়েক বছরে কিনতে পারিনি।’ 
ঢাকা ও চট্টগ্রাম মোকামে আলু পাঠান কালাই উপজেলার পাইকার ছাইদুর রহমান। তিনি বলেন, পাঁচ বছরের মধ্যে এবার কম দামে আলু বিক্রি হচ্ছে। এতে ভোক্তা খুশি হলেও কৃষকরা খুব কষ্টে আছেন। আগামী রমজানের মধ্যেও আলুর দাম বাড়ার কোনো সম্ভাবনা নাই। 
আরেক পাইকার মিঠু ফকির বলেন, রোববার জয়পুরহাটের বিভিন্ন মাঠে আলুর বাজার গেছে সর্বোচ্চ ১৩ টাকা কেজিতে। গত রোববার রাতে মোকাম থেকে এরকম দামেই আলু কিনতে বলা হয়েছে। বলে দেওয়া দাম অনেক সময় ঠিক থাকে না। কারণ, দাম কম হলে কৃষকরা আলু ওঠাতে চান না। তখন ২-১ টাকা বেশি দিয়ে আলু কিনতে হয়। অর্থাৎ সরবরাহের ওপর নির্ভর করে বাজারদর।
পুনট বাজারের আড়তদার মোশারফ হোসেন বলেন, ‘বাজারে যে দামে আলু বিক্রি হচ্ছে তাতে কৃষকের চাষের খরচও উঠবে না। বেশি দামে বীজ, সার ও কীটনাশক এবং শ্রমিকের মজুরি মিলে প্রতি কেজি আলুর উৎপাদন খরচ পড়েছে প্রায় ২০ টাকার মতো। এখন এক কেজি আলু পাইকারিতে ১১ থেকে ১৩ টাকা দামে বিক্রি করছেন।’
হারুঞ্জা গ্রামের কৃষক এনামুল হক বলেন, ‘৪০ শতক জমিতে ক্যারেজ আলুর আবাদ ফলন হয়েছে ১২০ মণ। খরচ হয়েছে ৮০ হাজার টাকা। ৪৬০ টাকা মণ দরে আলু বিক্রি করেছি ৫৫ হাজার ২০০ টাকায়। নিজের শ্রম তো আছেই। লোকসান হয়েছে ২৪ হাজার ৮০০ টাকা।’
জয়পুরহাটের ১৩ টাকা কেজির আলু ঢাকাসহ বিভিন্ন শহরে বাড়তি দামে ২৫ থেকে ৩০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে বলে জানান কারওয়ান বাজারের ফাতেমা ট্রেডার্সের প্রতিনিধি মফিদুল ইসলাম। তিনি বলেন, পাইকারি-খুচরায় দামের ব্যবধান থাকবেই। আলু ঢাকায় পৌঁছতে পৌঁছতে শুকিয়ে ওজন কমে যায়। পরিবহন, শ্রমিকসহ নানা খরচও রয়েছে। খুচরায় দাম একটু বেশিই হবে।

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: আল ১৩ ট ক ১১ থ ক উপজ ল

এছাড়াও পড়ুন:

নিউইয়র্ক ছাড়িয়ে জাতীয় মুখ মামদানি

ডেমোক্র্যাট ভোটার লিয়া অ্যাশ বহু বছর ধরে কোনো রাজনীতিককে নিয়ে আশাবাদী অনুভব করেননি। তবে সম্প্রতি সেই অবস্থার পরিবর্তন হয়েছে। তিনি বলেন, ‘এ বছর আমার জন্য তিনিই একমাত্র আলোর দিশা। তিনি সত্যিই মানুষের কথা শুনতে চান—যাঁদের তিনি মেয়র হতে যাচ্ছেন।’

২৬ বছর বয়সী অ্যাশ যে ব্যক্তির কথা বলছেন, তিনি হলেন জোহরান মামদানি, যিনি নিউইয়র্ক সিটির মেয়র পদে ডেমোক্রেটিক পার্টির প্রার্থী।

মামদানি তাঁর নির্বাচনী প্রচারে জীবনযাত্রার ব্যয় কমানোর বিষয়টি প্রাধান্য দিচ্ছেন। এ কারণেই অ্যাশ নিঃসংকোচে মামদানিকে ভোট দিতে চান। তবে তিনি মামদানিকে ভোট দিতে পারছেন না। কারণ, তিনি থাকেন নিউইয়র্ক থেকে প্রায় ১ হাজার ২০০ মাইল দূরে, মিসিসিপির গালফপোর্ট শহরে।

অ্যাশ বলেন, ‘আমি বিশ্বাস করতে চাই, কোনো একদিন গালফপোর্ট, মিসিসিপিতেও এক জোহরান মামদানি আসবেন।’

জাতীয় পর্যায়ে আলোচিত মুখ

মাত্র কয়েক মাসের মধ্যেই ৩৪ বছর বয়সী ডেমোক্র্যাটিক সোশ্যালিস্ট মামদানি এক প্রান্তিক প্রার্থী থেকে জাতীয় পর্যায়ের আলোচিত মুখে পরিণত হয়েছেন। গত জুন মাসের দলীয় নির্বাচনে তিনি অপ্রত্যাশিতভাবে বিজয়ী হন। ওই নির্বাচনে ১৮ থেকে ২৯ বছর বয়সীদের ভোটার উপস্থিতি ছিল সবচেয়ে বেশি।

আগামীকাল মঙ্গলবার যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্ক শহরে মেয়র নির্বাচনের ভোট গ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে। এর আগের সব জরিপেই দেখা গেছে, নিউইয়র্ক শহরের সাবেক মেয়র অ্যান্ড্রু কুমোর চেয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় মামদানি এগিয়ে রয়েছেন। মামদানি আশা করছেন, আগেরবারের মতো এবারও তরুণ ভোটাররা তাঁর পাশে থাকবেন। তবে শুধু নিউইয়র্কের মধ্যেই নয়, জীবনযাত্রার ক্রমবর্ধমান ব্যয় মোকাবিলার তাঁর অঙ্গীকার পুরো দেশের তরুণ প্রজন্মের মধ্যেও সাড়া ফেলেছে। অনেক জেন–জি ও মিলেনিয়ালস প্রজন্মের মানুষ বলছেন, তাঁদের সবচেয়ে বড় উদ্বেগের জায়গায় হাত রেখেছেন মামদানি। তরুণ প্রজন্ম যখন রাজনীতিকদের প্রতি আশা হারিয়ে ফেলেছেন এবং প্রচলিত নিয়ম ভেঙে নতুন কণ্ঠস্বরের অপেক্ষায় আছেন, তখনই মামদানির উত্থান।
যুক্তরাষ্ট্রের গবেষণাপ্রতিষ্ঠান সার্কেলে তরুণ ভোটারদের নিয়ে গবেষণা করেন রুবি বেল বুথ। তিনি বলেন, ‘যখন কোনো প্রার্থী জনগণের উদ্বেগ নিয়ে কথা বলেন এবং সেই উদ্বেগকে স্বীকৃতি দেন, তখন সেটি বিশাল প্রভাব ফেলে, বিশেষ করে তরুণ ভোটারদের ক্ষেত্রে।’

রুবি বেল বুথ আরও বলেন, ‘তরুণেরা যখন সত্যিই অনুভব করেন যে তাঁদের কথা শোনা হচ্ছে, তাঁদের প্রতি সম্মান দেখানো হচ্ছে, তখন যেকোনো প্রার্থী সফল হতে পারেন। তবে এখন সেটি করছেন মামদানি। আর এর আগে হয়তো সেটা করেছিলেন ট্রাম্প।’

রক্ষণশীলদের মধ্যেও জনপ্রিয়

রক্ষণশীল রাজ্য মিসিসিপিতে বসবাস করলেও লিয়া অ্যাশ সব সময়ই ডেমোক্র্যাট প্রার্থীদের ভোট দিয়ে আসছেন। তবে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে তিনি রাজনৈতিক নেতাদের ওপর হতাশ ও উপেক্ষিত বোধ করছেন। এই অনুভূতি আরও তীব্র হয়েছে তাঁর অর্থনৈতিক বাস্তবতা থেকে। অন্যদিকে অ্যান্ড্রু টেইট ভার্জিনিয়ার এক গ্রামীণ এলাকায় একটি ছোট খামারে তাঁর সঙ্গী ও সন্তানদের নিয়ে থাকেন এবং স্থানীয় একটি কারখানায় কাজ করেন। তিনিও মূল্যস্ফীতি ও পরিবারের আর্থিক ভবিষ্যৎ নিয়ে উদ্বিগ্ন।
অ্যাশ বলেন, ‘দেশের অন্যতম দরিদ্র রাজ্য হয়েও মিসিসিপিতে বাড়ির দাম বেড়েই চলেছে। এটা সত্যিই মন খারাপ করে দেয়।’ তবু অ্যাশ আশা করছেন, যদি মামদানি নির্বাচনে জয়ী হন, তাহলে সেটি দেশের অন্যান্য শহরের ডেমোক্র্যাট নেতাদের জন্য একটি বার্তা হয়ে যাবে।

জোহরান মামদানি তাঁর নির্বাচনী প্রচারণায় একাধিক অঙ্গীকার করেছেন, বিশেষ করে বাসস্থান নিয়ে। তাঁর লক্ষ্য শহরের খরচ কমানো। তবে সমালোচকেরা বলছেন, এসব পরিকল্পনা বাস্তবসম্মত নয়। আর রক্ষণশীলদের, বিশেষ করে ট্রাম্পের সমর্থকদের কাছে মামদানির দৃষ্টিভঙ্গি বিপজ্জনক। তবু এসব সতর্কতা তরুণ মার্কিন ভোটারদের খুব একটা বিচলিত করছে না। তাঁরা রাজনৈতিক দলের লেবেলের পরিবর্তে মামদানির বাস্তব জীবনের সমস্যা ও সমাধানমুখী বার্তাতেই বেশি আকৃষ্ট হচ্ছেন।

গবেষক বেলি বুথ বলেন, ‘মামদানিই এমন একজন প্রার্থী, যিনি প্রচলিত ব্যবস্থাকে নানা দিক থেকে চ্যালেঞ্জ করছেন।’

২৬ বছর বয়সী ডেমোক্র্যাট এমিলি উইলসনের মতে, জীবনযাত্রার ব্যয়ের সংকট দলীয় বিভাজনের ঊর্ধ্বে থাকা উচিত। ফ্লোরিডার সেন্ট পিটার্সবার্গে বসবাসরত এমিলি দূর থেকেই মামদানিকে সমর্থন করছেন। মিশিগানের অ্যান আরবারের কাছে এক ছোট শহরে বসবাসরত ২৫ বছর বয়সী ডেইজি লুপাও একইভাবে ভাবেন। তাঁর মতে, মামদানির প্রচারাভিযানটা নতুন এক দৃষ্টিভঙ্গি এনে দিয়েছে। তাঁর অনেক প্রস্তাব গ্রামীণ আমেরিকাসহ নিজ সম্প্রদায়ের জন্যও কার্যকর হতে পারে। লুপা বলেন, ‘নিউইয়র্কে তিনি যেসব পরিবর্তন আনতে চাচ্ছেন, সেগুলোর অনেকটাই আমরা গ্রামীণ এলাকায় আরও বেশি করে চাই। কারণ, এখানে তো সেগুলোর অস্তিত্বই নেই।’
সতর্ক আশাবাদ

আরও পড়ুননিউইয়র্কের এত ইহুদি কেন জোহরান মামদানির পক্ষে প্রচার চালাচ্ছেন০১ নভেম্বর ২০২৫

তবে যাঁরা নিউইয়র্কের মেয়র নির্বাচনে ভোট দিতে পারবেন, তাঁদের কাছে মূল প্রশ্ন—মামদানি কি সত্যিই জীবনযাত্রার ব্যয়ের এই সংকট কাটাতে পারবেন? ৩২ বছর বয়সী ডিলন রবার্টসনের জন্য অর্থনৈতিক উদ্বেগ যেন জীবনের স্থায়ী সঙ্গী।  স্নাতক শেষে তাঁর শিক্ষাঋণ দাঁড়াবে প্রায় আড়াই লাখ ডলার। মামদানিকে সমর্থন করছেন রবার্টসন।

কারণ, তাঁর প্রস্তাবিত ব্যয় সাশ্রয়ী পরিকল্পনাগুলো জীবনকে কিছুটা সহজ করতে পারে। তবে একই সঙ্গে তিনি সংশয়ও প্রকাশ করেন। ডিলন বলেন, ‘মামদানি যা বলছেন, সবই শুনতে ভালো লাগে। কিন্তু আমি ভাবি, তিনি কি সত্যিই পারবেন? বাস্তবে কি তা সম্ভব? নাকি এটা যেন ফুটো জাহাজে শুধু ব্যান্ডেজ লাগানোর মতো?’
তবু ডিলন স্বীকার করেন. যদি বিকল্প হয়, আগের মতোই টেনে নেওয়া অথবা কিছু নতুন চেষ্টা করা, তাহলে তিনি নতুনটাকেই সুযোগ দিতে প্রস্তুত।

আরও পড়ুননিউইয়র্কের মেয়র নির্বাচনে রেকর্ডসংখ্যক আগাম ভোট, তরুণেরা কেন আগাম ভোট দিচ্ছেন১১ ঘণ্টা আগেআরও পড়ুননিউইয়র্কে মেয়র নির্বাচন: সর্বশেষ চার জরিপেও এগিয়ে জোহরান মামদানি৯ ঘণ্টা আগে

সম্পর্কিত নিবন্ধ