আলু নিয়ে আবার বিপাকে পড়েছেন জয়পুরহাটের কৃষক। দাম না পেয়ে তাদের স্বপ্ন ভেস্তে যেতে বসেছে। মাঠ বা সড়কের পাশ থেকেই পাইকারি প্রতি কেজি আলু বিক্রি হচ্ছে মানভেদে ১১ থেকে ১৩ টাকায়, যা উৎপাদন খরচের চেয়ে কম। কৃষকরা বলছেন, আলু বিক্রি করে লাভ হচ্ছে না।
কৃষি বিপণন অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, জয়পুরহাটের বাজারে বিগত পাঁচ বছরে আলুর গড় পাইকারি দাম ছিল ২০২০ সালে ২৯.
কৃষক ও পাইকারদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, আগাম জাতের প্রতি কেজি ডায়মন্ড আলু ১১ থেকে ১৩ টাকায়, কার্ডিনাল ও ক্যারেজ ১০ থেকে ১১ টাকায়, লাল পাকরি (দেশি) ১২ থেকে ১৩ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। চাষিরা উৎপাদন করে লোকসান গুনলেও হাত বদলে ব্যবসায়ীরা লাভ করছেন ভালোই। খুচরা বাজারে জাতভেদে আলুর কেজি গতকালও ২৫ থেকে ৩০ টাকায় বিক্রি করতে দেখা গেছে।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্যমতে, জেলায় এবার আলু চাষে লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছিল ৪০ হাজার হেক্টরে। চাষ হয়েছে ৪৩ হাজার ৪৭০ হেক্টর জমিতে। এর মধ্যে কালাই উপজেলায় সবচেয়ে বেশি ১০ হাজার ৯০৫ হেক্টর, ক্ষেতলালে ৯ হাজার ২২০, পাঁচবিবিতে ৮ হাজার ৯৪৫, সদর উপজেলায় ৭ হাজার ৮০০ ও আক্কেলপুরে ৬ হাজার ৬০০ হেক্টর জমিতে আলু চাষ হয়েছে। এবার আলুর চাষ উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৯ লাখ ৫৬ হাজার টন।
রোববার পাইকারি দামে আলু কিনতে কালাই উপজেলার হারুঞ্জা মাঠে এসেছেন নওগাঁর ধামুইরহাট উপজেলার মুনশ কান্তি। তিনি বলেন, ‘আমার ৩৫ বছরের দোকানদারি। পাঁচ বছরের মধ্যে এবার আলুর দাম সর্বনিম্ন। মাত্র তিন মাস আগে ৬০ কেজি ওজনের দুই বস্তা আলু কিনেছি সাড়ে ৬ হাজার থেকে ৭ হাজার টাকায়। একই পরিমাণ আজ নিয়েছি ১ হাজার ৪৫০ টাকা দিয়ে। এত কম দামে কয়েক বছরে কিনতে পারিনি।’
ঢাকা ও চট্টগ্রাম মোকামে আলু পাঠান কালাই উপজেলার পাইকার ছাইদুর রহমান। তিনি বলেন, পাঁচ বছরের মধ্যে এবার কম দামে আলু বিক্রি হচ্ছে। এতে ভোক্তা খুশি হলেও কৃষকরা খুব কষ্টে আছেন। আগামী রমজানের মধ্যেও আলুর দাম বাড়ার কোনো সম্ভাবনা নাই।
আরেক পাইকার মিঠু ফকির বলেন, রোববার জয়পুরহাটের বিভিন্ন মাঠে আলুর বাজার গেছে সর্বোচ্চ ১৩ টাকা কেজিতে। গত রোববার রাতে মোকাম থেকে এরকম দামেই আলু কিনতে বলা হয়েছে। বলে দেওয়া দাম অনেক সময় ঠিক থাকে না। কারণ, দাম কম হলে কৃষকরা আলু ওঠাতে চান না। তখন ২-১ টাকা বেশি দিয়ে আলু কিনতে হয়। অর্থাৎ সরবরাহের ওপর নির্ভর করে বাজারদর।
পুনট বাজারের আড়তদার মোশারফ হোসেন বলেন, ‘বাজারে যে দামে আলু বিক্রি হচ্ছে তাতে কৃষকের চাষের খরচও উঠবে না। বেশি দামে বীজ, সার ও কীটনাশক এবং শ্রমিকের মজুরি মিলে প্রতি কেজি আলুর উৎপাদন খরচ পড়েছে প্রায় ২০ টাকার মতো। এখন এক কেজি আলু পাইকারিতে ১১ থেকে ১৩ টাকা দামে বিক্রি করছেন।’
হারুঞ্জা গ্রামের কৃষক এনামুল হক বলেন, ‘৪০ শতক জমিতে ক্যারেজ আলুর আবাদ ফলন হয়েছে ১২০ মণ। খরচ হয়েছে ৮০ হাজার টাকা। ৪৬০ টাকা মণ দরে আলু বিক্রি করেছি ৫৫ হাজার ২০০ টাকায়। নিজের শ্রম তো আছেই। লোকসান হয়েছে ২৪ হাজার ৮০০ টাকা।’
জয়পুরহাটের ১৩ টাকা কেজির আলু ঢাকাসহ বিভিন্ন শহরে বাড়তি দামে ২৫ থেকে ৩০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে বলে জানান কারওয়ান বাজারের ফাতেমা ট্রেডার্সের প্রতিনিধি মফিদুল ইসলাম। তিনি বলেন, পাইকারি-খুচরায় দামের ব্যবধান থাকবেই। আলু ঢাকায় পৌঁছতে পৌঁছতে শুকিয়ে ওজন কমে যায়। পরিবহন, শ্রমিকসহ নানা খরচও রয়েছে। খুচরায় দাম একটু বেশিই হবে।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: আল ১৩ ট ক ১১ থ ক উপজ ল
এছাড়াও পড়ুন:
মুসলমান বলেই রোহিঙ্গারা ভয়াবহ পরিস্থিতির শিকার
রোহিঙ্গা সম্প্রদায়ের দুরবস্থা বর্তমান সময়ে অন্যতম করুণ মানবিক সংকট বলে উল্লেখ করেছেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস। তিনি বলেছেন, শুধু মুসলমান হওয়ার কারণেই রোহিঙ্গারা এই ভয়াবহ পরিস্থিতির শিকার।
গতকাল সোমবার রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় তুরস্কের একটি সংসদীয় প্রতিনিধিদলের সঙ্গে সাক্ষাতের সময় এ কথা বলেন প্রধান উপদেষ্টা। পাঁচ সদস্যের ওই প্রতিনিধিদলের নেতৃত্ব দিয়েছেন তুরস্ক-বাংলাদেশ সংসদীয় মৈত্রী গ্রুপের সভাপতি ও তুর্কি পার্লামেন্ট সদস্য মেহমেত আকিফ ইয়িলমাজ।
সাক্ষাতে দুই পক্ষ বাণিজ্য, বিনিয়োগ ও মানবিক সহায়তার ক্ষেত্রগুলোতে দ্বিপক্ষীয় সহযোগিতা আরও জোরদার করার উপায় নিয়ে আলোচনা করে। এ সময় মেহমেত আকিফ ইয়িলমাজ বলেন, তুরস্ক ও বাংলাদেশের মধ্যে গভীর সাংস্কৃতিক ও ঐতিহাসিক সম্পর্ক রয়েছে। দুই দেশের মধ্যে বিদ্যমান দৃঢ় বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কের ওপর আলোকপাত করেন তিনি।
ইয়িলমাজ বলেন, তাঁদের প্রতিনিধিদল রোববার কক্সবাজারে রোহিঙ্গা শিবির পরিদর্শন করেছে এবং তুর্কি বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি সংস্থা, বিশেষ করে তুর্কি ফিল্ড হাসপাতালের মানবিক কার্যক্রম সম্পর্কে অবহিত হয়েছে। এ সময় রোহিঙ্গা সম্প্রদায়ের প্রতি তুরস্কের অবিচল সমর্থনের জন্য কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন প্রধান উপদেষ্টা। তুর্কি উদ্যোক্তাদের বাংলাদেশে বিনিয়োগের আহ্বান জানান তিনি।
অধ্যাপক ইউনূস বলেন, ‘রোহিঙ্গা সম্প্রদায়ের দুরবস্থা আমাদের সময়ের অন্যতম করুণ মানবিক সংকট। তারা শুধু মুসলমান বলেই এই ভয়াবহ পরিস্থিতির শিকার এবং তাদের নাগরিকত্ব কেড়ে নেওয়া হয়েছে।’ তিনি আরও বলেন, ‘আট বছর ধরে আশ্রয়শিবিরে থাকায় রোহিঙ্গা শিশুদের শিক্ষা ও ভবিষ্যৎ সুযোগ একেবারেই সীমিত হয়ে পড়েছে। এই অবস্থা হতাশা ও অস্থিতিশীলতার জন্ম দিতে পারে।’