দত্তনগর কৃষি ফার্ম ঘিরে কিছু প্রস্তাব
Published: 28th, January 2025 GMT
অনেকেরই হয়তো জানা নেই, এশিয়ার সর্ববৃহৎ কৃষি খামারের একটি বাংলাদেশেই অবস্থিত এবং তা এ দেশের কৃষি উন্নয়নে অপরিসীম ভূমিকা রেখে চলেছে। প্রায় তিন হাজার একর জমি নিয়ে গঠিত এ খামারের বেশির ভাগ পড়েছে ঝিনাইদহ জেলার মহেশপুর উপজেলায়। কিছুটা পড়েছে পার্শ্ববর্তী উপজেলায়, চুয়াডাঙ্গা জেলার জীবননগরে। ১৯৪০ সালে তৎকালীন ব্রিটিশ সেনাবাহিনীর ঠিকাদার হেমেন্দ্রনাথ দত্ত এ খামার গড়ে তোলেন। নিজের নামের সঙ্গে মিলিয়ে এর নাম দেন দত্তনগর কৃষি ফার্ম। দত্তনগর কৃষি ফার্মের আওতায় মোট পাঁচটি বড় খামার রয়েছে– গোকুলনগর, পাথিলা, করিঞ্চা, মথুরা ও কুশোডাঙ্গা।
খামারটি গড়ে তোলার মূল লক্ষ্য ব্রিটিশ সেনাদের তাজা সবজি সরবরাহ করা হলেও, প্রতিষ্ঠার পর থেকেই তা এ অঞ্চলের কৃষি উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখে চলেছে। এখানে চাষযোগ্য জমির পরিমাণ প্রায় আড়াই হাজার একর। নিচু জমি আছে ৬০০ একর এবং বিল এলাকা রয়েছে ২০০ একরের ওপরে।
১৯৪৭ সালে ভারত ভাগের পর হেমেন্দ্রনাথ দত্ত তাঁর প্রিয় দত্তনগর ছেড়ে স্থায়ীভাবে কলকাতা চলে যান। তখন তাঁর ম্যানেজার ও কর্মচারীদের ওপর ফার্ম দেখাশোনার দায়িত্ব পড়ে। ১৯৪৮ সালে তৎকালীন পাকিস্তান সরকার ফার্মটি অধিগ্রহণ করে পরিচালনার দায়িত্ব দেয় কৃষি বিভাগের ওপর। ১৯৬২ সালে এটি কৃষি উন্নয়ন করপোরেশন; আজকের বিএডিসির তত্ত্বাবধানে চলে যায়। বিএডিসি তখন থেকে ফার্মের যাবতীয় সম্পত্তি শস্য-বীজ উৎপাদনসহ যথাযথ কাজে লাগিয়ে আসছে। প্রতিবছর এ ফার্মে প্রচুর পরিমাণ দেশি-বিদেশি শস্য-বীজ উৎপাদিত এবং দেশের বিভিন্ন এলাকায় পাঠানো হয়। বিদেশেও রপ্তানি হয়। এতে প্রতিবছর রাষ্ট্রের বিপুল অর্থ সাশ্রয় হয়।
সারাদেশে বছরে যে ফসল উৎপাদন হয়, তার গুরুত্বপূর্ণ একটি অংশ ঝিনাইদহ জেলার মহেশপুর উপজেলায় উৎপাদিত হয় বলে জনশ্রুতি আছে। এর একটি উল্লেখযোগ্য অংশ দত্তনগর কৃষি খামারে উৎপাদিত। এ ছাড়া গবাদি পশু উন্নয়নের মাধ্যমে দুধ ও মাংসের চাহিদা পূরণ, বিভিন্ন রকম দেশি-বিদেশি মাছ ও পোনা উৎপাদনে দত্তনগর কৃষি খামার অসামান্য অবদান রেখে চলেছে। আগেই বলা হয়েছে, দেশের বৃহত্তম কৃষি খামারের সঙ্গে একটি গবাদি পশুর খামার এবং একটি বিশাল বিল রয়েছে। বিগত সরকারের সময় এখানে একটি কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের পরিকল্পনা করা হলেও অদৃশ্য কারণে তা আলোর মুখ দেখেনি। তবে বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার সিদ্ধান্তটি কার্যকরে উদ্যোগ নিতে পারে।
একই সঙ্গে আমি দত্তপাড়া ফার্ম ঘিরে কয়েকটি প্রস্তাব রাখতে চাই।
১.
২. কৃষি উন্নয়নে অগ্রগতি ও বাস্তবায়নে আরও সাফল্য পেতে হলে দত্তনগর কৃষি খামারকে নতুন করে সজ্জিত করতে হবে।
৩. ফার্মটির আশপাশের পতিত এলাকা নিয়ে অথবা কিছুটা দূরে হলেও জমি অধিগ্রহণপূর্বক এর কলেবর বৃদ্ধি এবং গোটা মহেশপুর উপজেলাকে কৃষিক্ষেত্রে আধুনিকতার উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত স্থাপনের মডেলে পরিণত করতে হবে।
৪. প্রয়োজনে মহেশপুর উপজেলার দক্ষিণ সীমান্তে অবস্থিত বিশাল ঢলঢলিয়া বিল সরকার কর্তৃক অধিগ্রহণপূর্বক কৃষিশস্য উৎপাদন, মৎস্য চাষ ও পশুপালন খামারে সম্প্রসারণ করা যেতে পারে। ঢলঢলিয়া বিলের উত্তরদিকে দুর্গাপুর, পাথরা; পূর্বে যাদবপুর, গয়েশপুর, বেতবেড়িয়া; দক্ষিণে সোনাইডাঙ্গা, জলুলী, কুলতলা, ভোলাডাঙ্গা এবং পশ্চিমে সাতপোতা, পাঁচপোতা ও ভৈরবা অবস্থিত। সুতরাং কৃষিশস্য উৎপাদন, মৎস্য ও পশুপালন খামার হিসেবে ঢলঢলিয়া বিলকে কাজে লাগানো যেতে পারে। এ প্রকল্প বাস্তবায়ন করলে কৃষিক্ষেত্রে বৈপ্লবিক পরিবর্তন সূচিত হবে।
৫. মহেশপুর উপজেলার পশ্চিম সীমান্তে ভারত ঘেঁষে দেশের সবচেয়ে বড় বাঁওড় অবস্থিত নেপায়। নেপা বাঁওড় নামে পরিচিত এটি মৎস্য চাষের জন্য খুবই উপযোগী। এখানে বিভিন্ন জাতের অনেক বড় মাছ উৎপাদন হয় এবং ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় সরবরাহ করা হয়। তাই দত্তনগর ফার্মের অধীনে নেপা বাঁওড় ঘিরে মাছের পোনা উৎপাদন ও মৎস্য পালন প্রকল্প তৈরি করা গেলে দেশের সামগ্রিক কৃষি উন্নয়ন ও অগ্রগতিতে এটি দৃষ্টান্তমূলক ভূমিকা পালন করতে সক্ষম হবে।
এসব প্রস্তাব উপযুক্ত সাড়া পেলে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে বাংলাদেশের সুনাম ও সুখ্যাতি বৃদ্ধি পাবে। পাশাপাশি কোটচাঁদপুরে অবস্থিত বলুহর প্রকল্পের মতো দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে সরকারি খাতে নতুন মাত্রা যুক্ত হবে।
ড. বি এম শহীদুল ইসলাম: শিক্ষাবিদ ও গবেষক
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: অবস থ ত সরক র উৎপ দ মৎস য
এছাড়াও পড়ুন:
ভাসানী বিশ্ববিদ্যালয়ে বিসিএস পরীক্ষার্থীদের জন্য বাস সার্ভিস চালু
৪৭তম বিসিএস প্রিলিমিনারি পরীক্ষার্থীদের জন্য ফ্রি বাস সার্ভিস চালুর উদ্যোগ নিয়েছে মাওলানা ভাসানী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (মাভাবিপ্রবি) শাখা ছাত্রদল। বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস থেকে ঢাকা ও ময়মনসিংহের পরীক্ষা কেন্দ্রে শিক্ষার্থীদের নির্বিঘ্নে পৌঁছানোর লক্ষ্যে এ বিশেষ যাতায়াত সুবিধার ব্যবস্থা করা হয়েছে।
বুধবার (১৭ সেপ্টেম্বর) রাতে শাখা ছাত্রদলের কর্মী নাফিস ইকবাল পিয়াল বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি ফেসবুক গ্রুপে এ তথ্য জানিয়ে পোস্ট দেন। একইসঙ্গে শাখা সভাপতি সাগর নাইম ও সাধারণ সম্পাদক সাজিদ ইসলাম দীপুও তাদের ব্যক্তিগত ফেসবুক আইডিতে পোস্ট দিয়ে পরীক্ষার্থীদের এ সুবিধা গ্রহণের আহ্বান জানান।
আরো পড়ুন:
ভাসানী বিশ্ববিদ্যালয়ে নির্বাচনী রোডম্যাপের দাবিতে মানববন্ধন
বিশ্ববিদ্যালয় জ্ঞান অর্জন ও বিতরণের জায়গা: ইউজিসি চেয়ারম্যান
ছাত্রদল জানিয়েছে, ক্যাম্পাস থেকে দুটি বাস ছাড়বে। একটি ঢাকা রুটে এবং অপরটি ময়মনসিংহ রুটে যাবে। প্রতিটি বাসে ৫০ জন করে মোট ১০০ জন শিক্ষার্থী এই ফ্রি সার্ভিসের আওতায় যাতায়াত করতে পারবেন। এজন্য শিক্ষার্থীদের অবশ্যই আগাম রেজিস্ট্রেশন করতে হবে। বৃহস্পতিবার (১৮ সেপ্টেম্বর) সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত গুগল ফর্মের মাধ্যমে রেজিস্ট্রেশন করা যাবে। রেজিস্ট্রেশন ছাড়া কেউ এই সার্ভিসের সুবিধা নিতে পারবেন না।
শিক্ষার্থীদের জন্য এ উদ্যোগ ইতোমধ্যেই বিশ্ববিদ্যালয়জুড়ে প্রশংসা কুড়িয়েছে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে অনেক শিক্ষার্থী পোস্ট দিয়ে ছাত্রদলের এ পদক্ষেপকে ‘শিক্ষার্থীবান্ধব ও সময়োপযোগী উদ্যোগ’ হিসেবে অভিহিত করেছেন।
শাখা সভাপতি সাগর নাইম তার পোস্টে বলেন, “প্রতি বছর বিসিএসে আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা সাফল্যের আলো ছড়িয়ে দেন। আমরা চাই এ সুনাম আরো দূরে ছড়িয়ে পড়ুক, আরো উজ্জ্বল হোক। এ ধারাবাহিক সাফল্যের পথে আপনাদের পাশে থাকতে, ভালোবাসা ও সম্মান জানাতে মাভাবিপ্রবি ছাত্রদল ৪৭তম বিসিএস পরীক্ষার্থীদের জন্য ফ্রি বিশেষ বাস সার্ভিসের ব্যবস্থা করেছে।”
এ বিষয়ে শাখা সাধারণ সম্পাদক সাজিদ ইসলাম দীপু বলেন, “জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল সবসময়ই শিক্ষার্থীদের কল্যাণে কাজ করে থাকে। গত বিসিএসে আমাদের বড় ভাই বিসিএস প্রশাসনে প্রথম হয়েছেন। এটি শুধু আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য নয়, সারা দেশের জন্যই গর্বের বিষয়। সেই সাফল্যের ধারা অব্যাহত রাখতে এবং শিক্ষার্থীদের কল্যাণে আমরা এবার পরীক্ষার্থীদের জন্য ফ্রি বাস সার্ভিস চালু করেছি।”
তিনি বলেন, “বিশেষ করে অনেক নারী শিক্ষার্থী আছেন, যারা ক্যাম্পাস থেকে পরীক্ষাকেন্দ্র অনেক দূরে হওয়ায় অংশ নিতে পারেন না। আবার অনেকে যানবাহন না পেয়ে দেরিতে কেন্দ্রে পৌঁছান। আমরা চাইনি কেউ যেন যাতায়াত সমস্যার কারণে বিসিএস পরীক্ষায় পিছিয়ে পড়েন। তাই বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপির প্রচার সম্পাদক সুলতান সালাউদ্দিন টুকু ভাইয়ের সহায়তায় আমরা এ বাস সার্ভিসের ব্যবস্থা করেছি।”
ঢাকা/আবিদ/মেহেদী