ঘাটাইলে কোনোভাবেই থামছে না বনের কাঠ দিয়ে ইট পোড়ানোর কার্যক্রম। কাঠ দিয়ে ইট পোড়ানোর ফলে ধ্বংস হচ্ছে বনাঞ্চল। হুমকিতে পড়েছে প্রাকৃতিক পরিবেশ।
ঘাটাইল ইটভাটা মালিক সমিতির তথ্যমতে, উপজেলায় ৩৮ ইটভাটার মধ্যে ২১টির নিবন্ধন রয়েছে। ১৪টি ভাটা চলছে হাইকোর্টে রিট করে। তিনটি ভাটার তথ্য নেই তাদের কাছে। 
উপজেলার পূর্বাঞ্চল পাহাড়ি এলাকা। মূলত টিলাকে কেন্দ্র করে এখানে বন গড়ে উঠেছে। রয়েছে সামাজিক ও সংরক্ষিত বন। মোট বনভূমির পরিমাণ ২৫ হাজার ৭১১ একর।
এলাকাবাসী জানান, দিন-রাতে ট্রাকে ভরে বনের কাঠ যায় ইটের ভাটায়। এলাকাবাসীর শঙ্কা, এভাবে চলতে থাকলে অচিরেই ধ্বংস হয়ে যাবে বন। সরেজমিন মেলে তাদের কথার সত্যতা। গত সোমবার বিকেলে ধলাপাড়া এলাকার এমবিবি ভাটায় গিয়ে দেখা যায়, জ্বালানি হিসেবে স্তূপ করে রাখা হয়েছে কাঠ।
গত সপ্তাহে সন্ধ্যা ৭টার দিকে সংগ্রামপুর মানিকপুর এলাকায় দেখা যায়, বনের কাঠ ভরে দাঁড়িয়ে আছে একটি ট্রাক। কৌশলে চালককে গন্তব্যের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, কাঠ যাবে ইটভাটায়। ভাটার নাম বলতে নারাজ ছিলেন তিনি। অথচ জিগজ্যাগ পদ্ধতিতে স্থাপন করা ভাটাগুলোতে জ্বালানি হিসেবে কয়লা ব্যবহার করার কথা। আইনে কাঠ পোড়ানো নিষিদ্ধ। লোক দেখানো কিছু কয়লা ভাটাগুলোর পাশে রাখা আছে।
ভাটা মালিকদের দাবি, বর্তমানে প্রতি টন কয়লার দাম ১৯ হাজার ৫০০ থেকে ২০ হাজার টাকা। অপরদিকে পাঁচ থেকে ছয় হাজার টাকার মধ্যে পাওয়া যাচ্ছে প্রতি টন কাঠ। কথা হয় ইট পোড়ানোর কাজে নিয়োজিত শ্রমিকদের সঙ্গে। তাদের দেওয়া তথ্যমতে, প্রতি ভাটায় ইট পোড়াতে দিন-রাত সাত থেকে আট টন কাঠের প্রয়োজন হয়। এসব কাঠের অধিকাংশই আসে বন থেকে।
বন বিভাগের ঘাটাইলের ধলাপাড়া রেঞ্জ অফিস থেকে বেশ কয়েকটি ভাটার দূরত্ব এক থেকে দুই কিলোমিটারের ভেতর। পাহাড়ি এলাকা হওয়ায় এসব ভাটায় কাঠ পোড়ানোর পরিমাণ বেশি বলে জানান স্থানীয়রা। ধলাপাড়া রেঞ্জ কর্মকর্তা ওয়াদুদুর রহমানের দাবি, এখন আর বনের কাঠ দিয়ে ইট পোড়ানো হচ্ছে না।
ঘাটাইল ইটভাটা মালিক সমিতির সভাপতি মো.

শাহজাহান বলেন, বন ধ্বংস করে ইট পোড়ানো সমিতি সমর্থন করে না। 
বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতির (বেলা) বিভাগীয় সমন্বয়কারী গৌতম চন্দ্র চন্দের ভাষ্য, ইট প্রস্তুত ও ভাটা স্থাপন নীতিমালায় বলা আছে, ইট পোড়াতে জ্বালানি কাঠের ব্যবহার বেআইনি। দ্রুত ব্যবস্থা না নিলে পরিবেশ ভারসাম্য হারাবে।
টাঙ্গাইল পরিবেশ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মিয়া মাহমুদুল হক জানান, আইন অনুযায়ী ইট পোড়াতে জ্বালানি কাঠের ব্যবহার নিষিদ্ধ। যে ভাটাগুলো এ কাজে জড়িত, তাদের বিরুদ্ধে অচিরেই ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
ঘাটাইলের ইউএনও শারমিন ইসলাম বলেন, গত সপ্তাহে দুটি ইটভাটাকে ভ্রম্যমাণ আদালতে ৫০ হাজার করে ১ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়েছে। বনের কাঠ দিয়ে যেন ইট না পোড়াতে পারে, সে বিষয়ে অভিযান অব্যাহত রয়েছে।

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: ইটভ ট বন র ক ঠ দ য় পর ব শ ইটভ ট

এছাড়াও পড়ুন:

২২ ক্যাডার নিয়ে চলতেন স্বেচ্ছাসেবক দলের জিতু

বগুড়ায় মেয়েকে উত্ত্যক্ত ও বাবাকে খুনে অভিযুক্ত জিতু ইসলাম দলীয় প্রভাবে বেপরোয়া হয়ে ওঠেন। কথায় কথায় যাকে-তাকে অহেতুক মারধর করতেন। চলতেন ২২ জনের ক্যাডার বাহিনী নিয়ে। তারা সবাই নানা অপকর্মে জড়িত এবং একাধিক মামলার আসামি। তাঁর আয় চাঁদাবাজি ও মাদক ব্যবসা থেকে। গতকাল রোববার এলাকায় গিয়ে এসব তথ্য পাওয়া গেছে।
জানা যায়, জিতু ফুলবাড়ী কারিগরপাড়ার মৃত সেকেন্দার আলীর ছেলে। ২০০৩ সালে এলাকায় বালু ব্যবসা নিয়ে প্রতিপক্ষ রবিউল ইসলামকে খুন করেন। সেই মামলায় তাঁর ১৪ বছর সাজা হয়। সাজা খেটে তিন বছর আগে বের হন। এর পর এলাকায় গড়ে তোলেন সন্ত্রাসী বাহিনী। তাঁর বাহিনীতে যে ২২ জন সদস্য, তারা কেউ রাজনৈতিক দলের পদ-পদবিতে নেই। হত্যা মামলা ছাড়াও জিতুর বিরুদ্ধে একটি মাদক ও একটি ডাকাতির মামলা রয়েছে।

ফুলবাড়ীর এক মুদি দোকানি বলেন, জিতু মাঝেমধ্যে তাঁর দোকান থেকে বাকি নিতেন। দু’বছরে বাকির পরিমাণ প্রায় ৪৮ হাজার টাকা হয়। তখন একদিন টাকা চান। এ কারণে জিতু তাঁকে মারধর করে নাকে খত নেন।
বৃন্দাবন এলাকার আরেক ব্যবসায়ী বলেন, মাঝেমধ্যে জিতু তাঁর বাহিনী নিয়ে হাজির হতেন। মোটা অঙ্কের চাঁদা চাইতেন। চাঁদার কমপক্ষে অর্ধেক দিয়ে তবে নিস্তার পাওয়া যেত। এ ছাড়া ঈদে সেলামির নামে মোটা অঙ্কের চাঁদা দিতে হতো তাঁকে।

স্থানীয় ব্যবসায়ী জানান, তাঁর কাছে মোটা অঙ্কের চাঁদা চান জিতু। না দেওয়ায় দোকানে ককটেল হামলা করেন। বিএনপির রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত থাকায় আগস্টের পর জিতু বেপরোয়া হয়ে ওঠেন। এলাকার একাধিক আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীর কাছ থেকে মোটা অঙ্কের চাঁদা নিয়ে আশ্রয় দেওয়ার অভিযোগ আছে তাঁর বিরুদ্ধে। ছোট ভাই মিতুলও তাঁর বাহিনীর সদস্য।

জিতু গত ১৯ ফেব্রুয়ারি জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের ১০১ সদস্যবিশিষ্ট কমিটির সহসাধারণ সম্পাদকের পদ পান। সন্ত্রাসী হয়ে দলের পদ পাওয়ায় এলাকায় তাঁকে নিয়ে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। পদ পেয়ে তিনি আরও বেপরোয়া হয়ে ওঠেন।

এলাকার এক ভুক্তভোগী বলেন, ‘জিতুর কারণে আমরা মুখ খুলতে পারি না। সে চাঁদাবাজি ও মাদক ব্যবসার মাধ্যমে এলাকা অতিষ্ঠ করে তুলেছে। বিশেষ করে রাজনৈতিক দলের পদ-পদবি পেয়ে ভয়ংকর হয়ে ওঠে। তার নির্যাতনের শিকার অর্ধশতের কম হবে না। তার বখাটেপনার কারণে কেউ মেয়ে বিয়ে দিতে রাজি হতো না।’
এক বছর আগে থেকে ফুলবাড়ির পাশেই শহরের শিববাটি এলাকায় বাসা ভাড়া নিয়ে বসবাস করতে থাকেন জিতু। সেই এলাকার বাসিন্দা রিকশাচালক শাকিল হোসেন। শাকিলের মেয়ে স্থানীয় ভান্ডারী সিটি বালিকা বিদ্যালয়ে অষ্টম শ্রেণিতে পড়ে। এক মাস আগে ৫২ বছর বয়সী জিতু বিয়ের প্রস্তাব দেন শাকিলের মেয়েকে। বিষয়টি শাকিল জেনে রাগ করেন। জিতুর ওপর চড়াও হন। কিছুতে রাজি না হলে নানাভাবে নির্যাতন করতে থাকেন জিতু। তাঁর মেয়েকেও উত্ত্যক্ত করতেন। এরই এক পর্যায়ে শনিবার বিকেলে শাকিলকে পিটিয়ে খুন করেন জিতু ও তাঁর বাহিনী।
এ হত্যার ঘটনায় জিতুকে এক নম্বর আসামি করে ১৭ জনের নাম উল্লেখ করে গতকাল রোববার বগুড়া সদর থানায় হত্যা মামলা করেছেন শাকিলের স্ত্রী মালেকা খাতুন। পুলিশ শনিবার রাতেই জিতু ও তাঁর সহযোগী মতি এবং বিপ্লবকে আটক করে।

সন্ত্রাসীকে দলের পদ দেওয়ার বিষয়ে জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি সরকার মুকুল বলেন, ‘আমি জানতাম না, সে দলের নাম ভাঙিয়ে এসব অপকর্ম করছে। আমরা তাকে দল থেকে বহিষ্কার করেছি।’ শনিবার রাতে স্বেচ্ছাসেবক দল কেন্দ্রীয় সভাপতি এস এম জিলানী ও সাধারণ সম্পাদক রাজিব আহসানের সই করা বিবৃতিতে জিতু ইসলামকে বহিষ্কার করা হয়। সেই সঙ্গে তাঁর বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নিতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে অনুরোধ জানানো হয়।

বগুড়া সদর থানার ওসি হাসান বাসির বলেন, ‘এ মামলার অন্য আসামিদেরও গ্রেপ্তার করা হবে।’
মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ও ফুলবাড়ী পুলিশ ফাঁড়ির উপপরিদর্শক জোবায়ের খান জানান, গতকাল জিতুসহ তিন আসামিকে আদালতে হাজির করা হয়। সাত দিনের রিমান্ড চাওয়া হয়। সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মো. মেহেদী হাসান পাঁচ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।
এদিকে হত্যার প্রতিবাদ ও দোষীদের গ্রেপ্তারের দাবিতে মানববন্ধন ও সমাবেশ করেছে সমাজতান্ত্রিক মহিলা ফোরাম জেলা শাখা। গতকাল বিকেলে শহরের সাতমাথায় সংগঠনের সভাপতি অ্যাডভোকেট দিলরুবা নূরী এতে সভাপতিত্ব করেন।

সম্পর্কিত নিবন্ধ