ভারতের সঙ্গে নরম সুরে কথা বলবে না বাংলাদেশ
Published: 30th, January 2025 GMT
ভারতের সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিএসএফের সঙ্গে ফেব্রুয়ারির মাঝামাঝিতে মহাপরিচালক পর্যায়ে যে সীমান্ত সম্মেলন হতে যাচ্ছে, সেখানে নরম সুরে কথা বলবে না বাংলাদেশ। ভারতের সঙ্গে হওয়া সব অসম চুক্তি নিয়ে হবে বিস্তর আলোচনা।
পানি বণ্টন চুক্তি নিয়ে দেওয়া হবে চাপ। সীমান্তে বাংলাদেশি হত্যা, অবৈধ অনুপ্রবেশ, মাদক কারবার, চোরাচালানসহ সব বিষয়ে জোরালো ভাষায় কথা বলবে বাংলাদেশ।
গতকাল বুধবার সচিবালয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে বিজিবি-বিএসএফ মহাপরিচালক পর্যায়ে সীমান্ত সম্মেলনবিষয়ক এক সংবাদ সম্মেলনে সে ইঙ্গিতই দিয়েছেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.
আগামী ১৭ ফেব্রুয়ারি নয়াদিল্লিতে শুরু হওয়া চার দিনের ৫৫তম বিজিবি-বিএসএফ মহাপরিচালক পর্যায়ের সীমান্ত সম্মেলনে বাংলাদেশের পক্ষে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ জরিপ অধিদপ্তর, ভূমি রেকর্ড ও জরিপ অধিদপ্তর এবং যৌথ নদী কমিশনের প্রতিনিধিরা অংশ নেবেন।
আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে প্রতিবেশী দেশ ভারতের সঙ্গে বেশ কিছু অসম চুক্তি করেছে বলে অভিযোগ রয়েছে। শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর বিষয়টি নিয়ে একাধিকবার বিক্ষোভ করতে দেখা গেছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়কদের।
জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ২০১০ সালের চুক্তির মধ্যে বড় সমস্যা আছে, চুক্তিটি কিছুটা অসম। এ বিষয়ে আলোচনা হবে– চুক্তিটি এভাবে করা উচিত ছিল না। এটি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে আগেই জানানো হয়েছে।
নিরস্ত্র বাংলাদেশি হত্যা বন্ধ করতে হবে
স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, সীমান্তে নিরস্ত্র বাংলাদেশি হত্যা বন্ধ করতে হবে। সীমান্ত হত্যা বন্ধে কার্যকর ব্যবস্থা নিতে আমরা ভারতকে জোরালোভাবে বলব। তিনি সীমান্তের কাছে কাজ করার সময় বাংলাদেশি কৃষকদের ধরে নিয়ে যাওয়া হয়েছে উল্লেখ করে এ ধরনের ঘটনা বন্ধের আহ্বান জানান।
স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বাংলাদেশ নিয়ে ভারতীয় গণমাধ্যমের প্রচারিত ভুল তথ্য নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, দুই দেশের মধ্যে অপ্রয়োজনীয় উত্তেজনা রোধে এ ধরনের মিথ্যা তথ্য কীভাবে দমন করা যায়, তা নিয়ে আমরা আলোচনা করব।
অবৈধ বিদেশিদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা
জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী বলেন, ৩১ জানুয়ারির পর কেউ অবৈধভাবে দেশে থাকলে তাঁর বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে। অবৈধ বিদেশির বিষয়ে ৩১ জানুয়ারির পর কী পদক্ষেপ নেওয়া হবে– এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, প্রতিটি দেশে প্রবেশের জন্য নির্দিষ্ট সময়ের ভিসা দেওয়া হয়। নির্ধারিত সময় পার হয়ে গেলে অতিরিক্ত থাকার জন্য সাধারণত জরিমানা গুনতে হয়। সরকার এই জরিমানার হার পাঁচ গুণ বাড়িয়েছে।
আগে প্রতিদিনের জন্য ২০০ টাকা জরিমানা দিতে হতো, এখন তা বেড়ে ১ হাজার টাকা হয়েছে। আগে সর্বোচ্চ ৩০ হাজার টাকা পর্যন্ত জরিমানা নির্ধারিত ছিল, এখন সেই সীমাও তুলে দেওয়া হয়েছে। তিনি বলেন, এখন প্রতিদিন হিসাব করে জরিমানা গুনতে হবে। ৩১ জানুয়ারির মধ্যে কেউ স্বেচ্ছায় চলে যেতে চাইলে যেতে পারবেন। নির্ধারিত সময়ের পরও যদি কেউ অবৈধভাবে অবস্থান করেন, তাহলে তাকে আইনের আওতায় আনা হবে।
স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার সভাপতিত্বে সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন প্রধান উপদেষ্টার স্বরাষ্ট্রবিষয়ক বিশেষ সহকারী খুদা বক্স চৌধুরী, বিজিবির মহাপরিচালক মেজর জেনারেল মোহাম্মদ আশরাফুজ্জামান সিদ্দিকী প্রমুখ।
উৎস: Samakal
এছাড়াও পড়ুন:
নওগাঁয় ১০ জনকে ঠেলে দিল বিএসএফ
নওগাঁর ধামইরহাট সীমান্ত দিয়ে ১০ জনকে বাংলাদেশে ঠেলে দিয়েছে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী (বিএসএফ)।
বৃহস্পতিবার (৩১ জুলাই) ভোরে ধামইরহাট উপজেলার আগ্রাদ্বিগুন সীমান্ত পিলার ২৫৬/৭ এস কাছ দিয়ে বাংলাদেশে ঠেলে দেওয়া হলে বিজিবির সদস্যরা তাদেরকে আটক করেন। তাদের মধ্যে দুজন পুরুষ এবং আটজন নারী।
বৃহস্পতিবার দুপুরে এসব তথ্য জানিয়েছেন পত্নীতলা ১৪ বিজিবি ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল মোহাম্মদ ইকবাল হোসেন।
আরো পড়ুন:
গাংনী সীমান্ত দিয়ে ১৮ জনকে ঠেলে পাঠিয়েছে বিএসএফ
বড়লেখা সীমান্ত দিয়ে ১০ রোহিঙ্গাকে ঠেলে দিয়েছে বিএসএফ
আটকরা হলেন—আছমা বেগম (৪০), খাদিজা বেগম (৩৪), পাখি বেগম (২৪), রুমা বেগম (২৫), কাকলি আক্তার (২৭), রুজিনা আক্তার (৩৩), কোহিনুর বেগম (২৬), নাসরিন বেগম (৩৩), মঞ্জুরুল ইসলাম (৩৬), সুমন হোসেন (২৭)। প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে, তারা প্রত্যেকেই বাংলাদেশের নাগরিক।
বিজিবি জানিয়েছে, আগ্রাদ্বিগুন বিওপির টহল কমান্ডার জেসিও সুবেদার মো. জিহাদ আলীর নেতৃত্বে একটি টহল দল সীমান্তের শূন্য লাইন থেকে আনুমানিক এক কিলোমিটার বাংলাদেশের অভ্যন্তরে মহেষপুরে ওই ১০ জনকে ঘোরাঘুরি করতে দেখে আটক করে।
প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানা গেছে, তারা বিভিন্ন সময়ে অবৈধভাবে ভারতে যান। মুম্বাই শহরে পুরুষ দুজন রাজমিস্ত্রি হিসেবে এবং নারী আটজন গৃহকর্মী হিসেবে কাজ করতেন। সেখানে তাদেরকে আটক করে ভারতীয় পুলিশ। গত ২৯ জুলাই ভারতের হরিবংশীপুর বিএসএফ ক্যাম্পে তাদেরকে হস্তান্তর করা হয়। বৃহস্পতিবার ভোর রাতে বিএসএফ ওই ১০ জনকে বাংলাদেশে ঠেলে দিলে বিজিবি টহল দল তাদের আটক করে। তাদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।
ঢাকা/সাজু/রফিক