ভারতের সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিএসএফের সঙ্গে ফেব্রুয়ারির মাঝামাঝিতে মহাপরিচালক পর্যায়ে যে সীমান্ত সম্মেলন হতে যাচ্ছে, সেখানে নরম সুরে কথা বলবে না বাংলাদেশ। ভারতের সঙ্গে হওয়া সব অসম চুক্তি নিয়ে হবে বিস্তর আলোচনা।

পানি বণ্টন চুক্তি নিয়ে দেওয়া হবে চাপ। সীমান্তে বাংলাদেশি হত্যা, অবৈধ অনুপ্রবেশ, মাদক কারবার, চোরাচালানসহ সব বিষয়ে জোরালো ভাষায় কথা বলবে বাংলাদেশ। 
গতকাল বুধবার সচিবালয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে বিজিবি-বিএসএফ মহাপরিচালক পর্যায়ে সীমান্ত সম্মেলনবিষয়ক এক সংবাদ সম্মেলনে সে ইঙ্গিতই দিয়েছেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.

) জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী।

আগামী ১৭ ফেব্রুয়ারি নয়াদিল্লিতে শুরু হওয়া চার দিনের ৫৫তম বিজিবি-বিএসএফ মহাপরিচালক পর্যায়ের সীমান্ত সম্মেলনে বাংলাদেশের পক্ষে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ জরিপ অধিদপ্তর, ভূমি রেকর্ড ও জরিপ অধিদপ্তর এবং যৌথ নদী কমিশনের প্রতিনিধিরা অংশ নেবেন।

আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে প্রতিবেশী দেশ ভারতের সঙ্গে বেশ কিছু অসম চুক্তি করেছে বলে অভিযোগ রয়েছে। শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর বিষয়টি নিয়ে একাধিকবার বিক্ষোভ করতে দেখা গেছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়কদের। 

জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ২০১০ সালের চুক্তির মধ্যে বড় সমস্যা আছে, চুক্তিটি কিছুটা অসম। এ বিষয়ে আলোচনা হবে– চুক্তিটি এভাবে করা উচিত ছিল না। এটি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে আগেই জানানো হয়েছে। 

নিরস্ত্র বাংলাদেশি হত্যা বন্ধ করতে হবে 

স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, সীমান্তে নিরস্ত্র বাংলাদেশি হত্যা বন্ধ করতে হবে। সীমান্ত হত্যা বন্ধে কার্যকর ব্যবস্থা নিতে আমরা ভারতকে জোরালোভাবে বলব। তিনি সীমান্তের কাছে কাজ করার সময় বাংলাদেশি কৃষকদের ধরে নিয়ে যাওয়া হয়েছে উল্লেখ করে এ ধরনের ঘটনা বন্ধের আহ্বান জানান। 

স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বাংলাদেশ নিয়ে ভারতীয় গণমাধ্যমের প্রচারিত ভুল তথ্য নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, দুই দেশের মধ্যে অপ্রয়োজনীয় উত্তেজনা রোধে এ ধরনের মিথ্যা তথ্য কীভাবে দমন করা যায়, তা নিয়ে আমরা আলোচনা করব। 

অবৈধ বিদেশিদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা 

জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী বলেন, ৩১ জানুয়ারির পর কেউ অবৈধভাবে দেশে থাকলে তাঁর বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে। অবৈধ বিদেশির বিষয়ে ৩১ জানুয়ারির পর কী পদক্ষেপ নেওয়া হবে– এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, প্রতিটি দেশে প্রবেশের জন্য নির্দিষ্ট সময়ের ভিসা দেওয়া হয়। নির্ধারিত সময় পার হয়ে গেলে অতিরিক্ত থাকার জন্য সাধারণত জরিমানা গুনতে হয়। সরকার এই জরিমানার হার পাঁচ গুণ বাড়িয়েছে। 

আগে প্রতিদিনের জন্য ২০০ টাকা জরিমানা দিতে হতো, এখন তা বেড়ে ১ হাজার টাকা হয়েছে। আগে সর্বোচ্চ ৩০ হাজার টাকা পর্যন্ত জরিমানা নির্ধারিত ছিল, এখন সেই সীমাও তুলে দেওয়া হয়েছে। তিনি বলেন, এখন প্রতিদিন হিসাব করে জরিমানা গুনতে হবে। ৩১ জানুয়ারির মধ্যে কেউ স্বেচ্ছায় চলে যেতে চাইলে যেতে পারবেন। নির্ধারিত সময়ের পরও যদি কেউ অবৈধভাবে অবস্থান করেন, তাহলে তাকে আইনের আওতায় আনা হবে। 

স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার সভাপতিত্বে সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন প্রধান উপদেষ্টার স্বরাষ্ট্রবিষয়ক বিশেষ সহকারী খুদা বক্স চৌধুরী, বিজিবির মহাপরিচালক মেজর জেনারেল মোহাম্মদ আশরাফুজ্জামান সিদ্দিকী প্রমুখ।

উৎস: Samakal

এছাড়াও পড়ুন:

কড়া নজরদারি সুন্দরবন সীমান্তে

দক্ষিণ ২৪ পরগনার সুন্দরবন জলসীমানা প্রায় দেড়শো কিলোমিটার। ভারতীয় প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, এ সীমানা দিয়ে অনুপ্রবেশ ঠেকাতে বাড়তি তৎপরতা নেওয়া হচ্ছে। খবর আনন্দবাজারের।

খবরে বলা হয়েছে, নদী ও বনভূমি এলাকায় সীমান্ত বরাবর বিএসএফ মোতায়েন আছে। ভাসমান বর্ডার আউটপোস্ট, বঙ্গোপসাগর অংশে কোস্ট গার্ডের নজরদারি চলছে। ড্রোন, সেন্সর ও ক্যামেরা, কিছু জায়গায় নাইট ভিশন ক্যামেরা ব্যবহার করা হচ্ছে। পাশাপাশি, পুলিশের তরফেও উপকূল এলাকায় দিনরাত নজরদারি চলছে।

উপকূল থানাগুলোর পক্ষ থেকে নদীপথে নিয়মিত টহল দেওয়া হচ্ছে। রাতেও উপকূলবর্তী এলাকাগুলিতে নজর রাখা হচ্ছে। নদীপথে কোনো জলযান দেখলেই তল্লাশি চালাচ্ছে পুলিশ। মৎস্যজীবীদের পরিচয়পত্রও খতিয়ে দেখা হচ্ছে। নদী বা সমুদ্রে এখন মাছ ধরার উপরে নিষেধাজ্ঞা চলছে। মৎস্যজীবীদের জলযান চলাচল করার কথা নয়। তাই জলযান দেখলেই তল্লাশি চলছে। বাংলাদেশি জাহাজগুলোতেও পুলিশ তল্লাশি চালাচ্ছে।

সুন্দরবন পুলিশ জেলার সুপার কোটেশ্বর রাও নালাভাট বলেন, আগেও উপকূলবর্তী এলাকায় পুলিশের নজরদারি চলত। এখন বাড়তি জোর দেওয়া হচ্ছে। দু’বেলা নদী ও স্থলপথে পুলিশের টহল বৃদ্ধি পেয়েছে। নাকা চেকিং হচ্ছে। চলছে তল্লাশিও।

উত্তর ২৪ পরগনাতেও উপকূল এলাকায় নিরাপত্তা বাড়ানো হয়েছে। নিরাপত্তা বেড়েছে জল ও স্থলসীমান্তে। জল, ভূমি ও আকাশে অত্যাধুনিক ইজ়রাইল রাডারের মাধ্যমে নজরদারি চালাচ্ছে সীমান্তরক্ষী বাহিনী।

ইতোমধ্যে ভারতীয় কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা দফতর জানিয়েছে, বাংলাদেশের আকাশ ব্যবহার করে ভারতকে আক্রমণ করতে পারে সশস্ত্র সংগঠনগুলো। ফলে সুরক্ষা বাড়াতে বিএসএফের তৎপরতা শুরু হয়েছে। বসিরহাট মহকুমার স্বরূপনগর থেকে হিঙ্গলগঞ্জের হেমনগর কোস্টাল থানা পর্যন্ত ৯৪ কিলোমিটার সীমান্ত রয়েছে। তার মধ্যে ৫০ কিলোমিটার জলসীমান্ত। স্থলসীমান্ত ৪৪ কিলোমিটার। সীমান্ত সুরক্ষায় অতিরিক্ত বাহিনী মোতায়েন করা হয়েছে বলে প্রশাসন সূত্রের খবর।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • কড়া নজরদারি সুন্দরবন সীমান্তে
  • ভুলে সীমানায় পা, বিএসএফ সদস্যকে আটক করল পাকিস্তান
  • স্বাস্থ্য ব্যয়ের চাপ দারিদ্র্য নিরসনে অন্যতম বাধা