ওসিকে হুমকি দেওয়া সেই সাজ্জাদকে ধরিয়ে দিতে পুরস্কার ঘোষণা
Published: 30th, January 2025 GMT
ফেসবুক লাইভে এসে ওসিকে পেটানোর হুমকি দেওয়া চট্টগ্রামের সাজ্জাদকে ধরিয়ে দিতে পুরস্কার ঘোষণা করেছে চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশ (সিএমপি)। আজ বৃহস্পতিবার সিএমপি কমিশনার হাসিব আজিজ স্বাক্ষরিত এক বিশেষ বিজ্ঞপ্তিতে এ পুরস্কার ঘোষণা করা হয়।
এর আগে গত মঙ্গলবার রাতে বায়েজিদ বোস্তামী থানার ওসি আরিফুর রহমানকে ‘কুত্তার মতো পেটানোর’ হুমকি দেন হাটহাজারীর শিকারপুর গ্রামের সোনা মিয়া সওদাগর বাড়ির মো.
সিএমপি কমিশনারের বিশেষ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ‘চট্টগ্রামের শীর্ষ সন্ত্রাসী সাজ্জাদ হোসেনকে আইনের আওতায় আনার জন্য যে বা যারা তার অবস্থান সংক্রান্ত সঠিক তথ্য দিয়ে বা গ্রেপ্তারে পুলিশকে সহায়তা করবে তাকে বা তাদেরকে সিএমপির পক্ষ থেকে উপযুক্ত অর্থ পুরস্কৃত করা হবে। গ্রেপ্তারে সহায়তাকারীর পরিচয় অবশ্যই গোপন রাখা হবে।’
মঙ্গলবার রাতে ফেসবুক লাইভে এসে ওসিকে উদ্দেশ্যে করে সাজ্জাদ হোসেন বলেন, ‘তোকে কুত্তার মতো পিটাবো। অক্সিজেন থেকে বায়েজিদ পর্যন্ত কুত্তার মতো পেটাবো। আমার হাত থেকে তোকে কেউ বাঁচতে পারবে না। প্রয়োজনে আমি মরে যাবো। তবুও হার মানবো না।’
১৯ মিনিট ২৯ সেকেন্ডের ফেসবুক লাইভে যেসব ঘটনায় তার বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে সেগুলোকে মিথ্যা দাবি করে পুলিশ কমিশনারকে তদন্তের নির্দেশ দেন। পুলিশি নির্যাতনে তার তিন মাসের গর্ভজাত শিশু মারা যাওয়ার অভিযোগও করেন তিনি। হুমকির ঘটনায় থানায় জিডি করেছেন বায়েজিদ বোস্তামী থানার ওসি আরিফুর রহমান।
কে এই সাজ্জাদ
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, চট্টগ্রামের এক সময়ের দুর্ধর্ষ সন্ত্রাসী সাজ্জাদ আলী খান। আলোচিত এইট মার্ডার মামলার দণ্ডিত এ আসামি ২০০০ সালে একে-৪৭ রাইফেলসহ গ্রেপ্তার হন। ২০০৪ সালে জামিনে বেরিয়ে তিনি বিদেশে পালিয়ে যান। তবে নগরের বায়েজিদ, পাঁচলাইশ, চান্দগাঁও ও হাটহাজারী এলাকায় এখনও কেউ নতুন বাড়ি নির্মাণ, ব্যবসা-বাণিজ্য, জমি বেচাকেনা করলেই ফোন আসে সাজ্জাদের। চাঁদা দিতে গড়িমসি করলে শিষ্যদের দিয়ে হামলা করেন। দুই দশকের বেশি সময় এভাবেই সবকিছু নিয়ন্ত্রণে রেখেছেন সাজ্জাদ।
তার ঘনিষ্ঠ সহযোগীদের মধ্যে নুরুন্নবী ম্যাক্সন ভারতে গিয়ে মারা গেছেন। একাধিকবার গ্রেপ্তারের পর দলছুট ঢাকাইয়া আকবর। সারোয়ার হোসেন ওরফে বাবলা পক্ষ ত্যাগ করে বাহিনী গড়েছেন। ফলে হাটহাজারী থানার শিকারপুর গ্রামের সোনা মিয়া সওদাগর বাড়ির জামালের ছেলে সাজ্জাদ হোসেনকে শিষ্য হিসেবে গড়ে তোলেন সাজ্জাদ আলী।
বর্তমানে নগরের অক্সিজেন-কুয়াইশ এলাকার দখল নিয়ে লড়াই চলছে সাজ্জাদ হোসেন ও বাবলার মধ্যে। এরই জেরে গত ২৯ আগস্ট রাতে কুয়াইশ-অক্সিজেন সড়কে মো. আনিস (৩৮) ও মাসুদ কায়ছারকে (৩২) গুলি করে হত্যা করা হয়। এ ঘটনায় পৃথক মামলাতেই আসামি সাজ্জাদ। গত ১৮ সেপ্টেম্বর ৫ লাখ টাকা চাঁদা না পেয়ে নগরের বায়েজিদ বোস্তামীর কালারপুল এলাকায় নির্মাণাধীন ভবনে গিয়ে প্রকাশ্যে গুলি চালান সাজ্জাদ।
গত ২১ অক্টোবর চান্দগাঁও থানার অদুরপাড়া এলাকায় মাইক্রোবাসে এসে দিবালোকে গুলি করে আফতাব উদ্দিন তাহসীন (২৬) নামে এক ব্যবসায়ীকে হত্যা করে সাজ্জাদ আবারও আলোচনায় আসেন। তিন মাস পার হলেও তাকে গ্রেপ্তার করতে পারেনি পুলিশ। সর্বশেষ গত ৫ ডিসেম্বর তাকে গ্রেপ্তার করতে গিয়ে উল্টো আহত হয়ে ফিরে আসতে হয়েছে পুলিশ সদস্যদের।
উৎস: Samakal
এছাড়াও পড়ুন:
অমর একুশে বইমেলা ফেব্রুয়ারিকে স্পর্শ করুক
অমর একুশে বইমেলা বাংলাদেশের মানুষের প্রাণের মেলা। মূলত প্রকাশকদের উদ্যোগে মুক্তিযুদ্ধ উত্তর বাংলাদেশে এই বইমেলার সূত্রপাত। সম্প্রতি এই বইমেলা নানা কারণে-অকারণে ডিসেম্বরে করার কথা শোনা যাচ্ছে। এ প্রেক্ষিতে সুস্পষ্টভাবে বলতেই হচ্ছে -ডিসেম্বরে কিছুতেই মেলা করা যাবে না। কারণ সেসময় সারাদেশে শিক্ষার্থীদের বার্ষিক পরীক্ষা চলবে।
বইমেলার প্রধান পাঠক আমাদের শিক্ষার্থী। তারা ডিসেম্বরে কিছুতেই মেলায় আসতে পারবে না। প্রধান পাঠকই যদি মেলায় আসতে না পারে তাহলে মেলা প্রাণহীন হয়ে পড়বে। বইমেলায় অংশগ্রহণকারি প্রকাশকরাও ভয়াবহ ক্ষতির মুখে পড়বে। তাছাড়া একুশের চেতনাকে ধারণ করে যে অমর একুশে বইমেলা, সেটা ফেব্রুয়ারিকে স্পর্শ করুক। ভাষা শহীদদরর প্রতি বইমেলার মাধ্যমে আমাদের যে শ্রদ্ধাঞ্জলি, তা অক্ষুন্ন থাকুক।
আরো পড়ুন:
রাজশাহীতে বইপড়ায় কৃতিত্বের পুরস্কার পেল ২৩০৩ শিক্ষার্থী
‘গল্পকারের পছন্দের ৫০ গল্প’ গ্রন্থ প্রকাশিত
সর্বোপরি ৫ জানুয়ারি থেকে ৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, এই সময়ে বইমেলা হতে কোন সমস্যা হওয়ার কথা নয়। অথবা তারিখ দুই একদিন এদিক-সেদিক করে নেয়া যেতে পারে। এ সময়ে রোজা নেই, নির্বাচনও নেই। নির্বাচনী ক্যাম্পেইন চলবে। এই মাঠে বইমেলা চলাকালীন সর্বদলীয় সিদ্ধান্তে কেউ সভা-সমাবেশ না করার সিদ্ধান্ত নিলে অনায়াসে এই সময়টাতে বইমেলা করা যেতে পারে। আমার বিশ্বাস- সব দলই অমর একুশে বইমেলার জন্য এই ছাড়টুকু দেবেন।
প্রায় পঞ্চাশ বছরের অধিক সময়ের প্রচেষ্টায় অমর একুশে বইমেলা মহিরুহ হয়ে আমাদের কাছে আবির্ভূত, হঠকারি কোন সিদ্ধান্তে তা যেনো ধ্বংস হওয়ার উপক্রম না হয়। জেনে শুনে বাঙালির এতো বড় একটি সাংস্কৃতিক উৎসবকে ভয়াবহভাবে ক্ষতিগ্রস্থ না করে বরং তা যে কোন মূল্যে আমাদের রক্ষা করা উচিত।
জানুয়ারিতে বাণিজ্যমেলায়ও হয়ে থাকে। এতে অমর একুশে বইমেলার ওপর কোনো বিরূপ প্রভাব পড়বে বলে আমি তা মনে করি না। বইমেলার প্রধান পাঠক শিক্ষার্থী। তারা বইমেলায় আসার জন্য মুখিয়ে থাকে। বাণিজ্য মেলায় যাওয়ার লোকজন বেশির ভাগই আলাদা। তবে অনেকেই বইমেলা এবং বাণিজ্যমেলা দুটোতেই যান। এটা তারা ম্যানেজ করে নিতে পারবেন বলে আমার বিশ্বাস।
আমি বলেছি শুধুমাত্র মেলার মাঠ প্রাঙ্গনে সভা-সমাবেশ না করার মাধ্যমে যদি সর্বদলীয় একটা সিদ্ধান্ত গৃহীত হয় তাহলে জানুয়ারি- ফেব্রুয়ারি মিলিয়ে বইমেলা করা সম্ভব।আমার মনে হয়, বইমেলা চলাকালীন এই মাঠ কোন দলকে সভা-সমাবেশের জন্য সরকার বরাদ্দ না দিলে, অথবা বইমেলা চলাকালীন দলগুলো নিজের থেকেই এই মাঠের বরাদ্দ না চাইলে সমস্যা আর থাকে না।
লেখক: প্রকাশক পাঞ্জেরী পাবলিকেশন্স লিমিটেড
ঢাকা/লিপি