বাজারে চালের দাম বেড়ে যাওয়ায় খোলাবাজারে বিক্রি করা (ওএমএস) চালের চাহিদা বেড়েছে। চাল কিনতে ভোর থেকেই নিম্ন ও মধ্যবিত্ত নারী-পুরুষ, এমনকি শিশুরাও ওএমএসের লাইনে দাঁড়াচ্ছে। চাহিদার তুলনায় বরাদ্দ কম হওয়ায় একটু দেরি হলেই শূন্য হাতে ফিরতে হয় তাদের।
প্রতিদিনই এমন দৃশ্য দেখা যায় ফরিদপুরের বোয়ালমারী পৌর সদর বাজারের দুটি ওএমএস ডিলারের দোকানে। দরিদ্রদের পাশাপাশি লাইনে দাঁড়াচ্ছেন মধ্যবিত্তরাও। চাহিদার তুলনায় জোগান কম হওয়ায় ওএমএস ডিলারের সংখ্যা, চালের বরাদ্দ বাড়ানো ও আটা দেওয়ার দাবি জানিয়েছেন ভোক্তা, ডিলার ও সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা। 
বোয়ালমারী পৌর সদরের বরইতলা সহকারী কমিশনারের (ভূমি) কার্যালয়ের পাশে ডিলার শিমুল দাসের দোকানে এবং ডাকবাংলো রোডে লালন কান্তি খাঁর ঘরের সামনে প্রতিদিনই দেখা যায় নারী-পুরুষের দীর্ঘ সারি। সেখানে শিশুদেরও দেখা মিলছে। চালের চাহিদা দেখে বরাদ্দ বাড়ানোর বিষয়টি বুঝতে পারছে উপজেলা খাদ্য বিভাগ। 
জানা যায়, চালের বাজার নিয়ন্ত্রণে রাখতে সরকারি নির্দেশনা অনুযায়ী বোয়ালমারী খাদ্য বিভাগ গত ১৩ জানুয়ারি থেকে খোলাবাজারে চাল বিক্রি শুরু করে। এ জন্য পৌরসভায় দুইজন ডিলার নিয়োগ করা হয়। সরকারি ছুটির দিন বাদে প্রতিদিন ডিলারপ্রতি এক টন বা এক হাজার কেজি চাল বরাদ্দ দেওয়া হয়; যা চাহিদার তুলনায় খুবই অপ্রতুল। একজন ক্রেতা সর্বোচ্চ ৫ কেজি চাল কিনতে পারেন। চাল কেনার ক্ষেত্রে কোনো এলাকা নির্দিষ্ট নেই। দেখাতে হয় না জাতীয় পরিচয় পত্রও। এ কারণে পৌরসভার বাইরে এবং সব বয়সী লোকজনই চাল নিতে লাইনে দাঁড়াচ্ছেন। বাজারে যেখানে এক কেজি মোটা চাল ৫৫ থেকে ৬০ টাকা, সেখানে ওএমএসের দোকানে তা বিক্রি হচ্ছে অর্ধেক দামে, মাত্র ৩০ টাকায়। এ কারণে ওএমএসের চালের ব্যাপক চাহিদা। ডিলার খাদ্য বিভাগের কাছ থেকে ২৮ টাকা কেজি দরে চাল কেনেন। জেলা পর্যায়ে আটা দেওয়া হলেও উপজেলা পর্যায়ে আটা দেওয়া হয় না। যদিও আটার ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। 
শিমুল দাসের দোকান মেসার্স দাস ট্রেডার্সে চাল কিনতে আসা দক্ষিণ কামারগ্রামের সমীর বিশ্বাসের ছেলে স্কুলছাত্র সূর্য্য বিশ্বাস (১১) জানায়, তার বাবা ইজিবাইক চালান। এ জন্য তাকে ভোরে এসে লাইনে দাঁড়াতে হয়। চাল পেতে দেরি হলে স্কুলে যাওয়া হয় না তার।
রায়পুর গ্রামের মাহাত্তাব মিয়া (৭২) বলেন, খুব ভোরে এসে শিমুল দাসের দোকানে লাইনে দাঁড়িয়েছেন। দেরি করে এলে চাল পাওয়া যায় না। ছেলেরা অটোভ্যান চালায়। কষ্ট হলেও তাঁকেই আসতে হয়। 
ওই এলাকার মহিউদ্দীন বিশ্বাস বলেন, পরে এসে সিরিয়ালে পেছনে পড়ে গেলে চাল পাওয়ার সম্ভাবনা কম থাকে। এ কারণে ভোরে এসেই লাইনে দাঁড়িয়ে যান। 
গুনবহা গ্রামের হাওয়া বেগম বলেন, স্বামী দোকান চালান। তাঁকেই চাল নিতে আসতে হয়। এর আগে দেরি করে আসায় চাল পাননি। সকাল ৭টার দিকে এসে লাইনে দাঁড়িয়েছেন। 
লাইনে দাঁড়ানো সকল নারী-পুরুষই চালের বরাদ্দ বাড়ানো ও আটা দেওয়ার দাবি জানান।     
চালের বরাদ্দ বাড়ানোর দাবি জানিয়ে ডিলার শিমুল দাস বলেন, পাঁচ কেজি করে ২০০ জন নিলেই এক টন চাল শেষ হয়ে যায়। প্রতিদিন অনেক মানুষ চাল না পেয়ে ফিরে যান। এলাকা ভাগ করা না থাকায় এবং আইডি কার্ড দেখানোর বাধ্যবাধকতা না থাকায় বিভিন্ন এলাকার লোক চাল নিতে আসেন। কখনও অভিভাবক-সন্তান একসঙ্গে আসেন। 
ডাকবাংলো রোডের ডিলার লালন কান্তি খাঁও চালের বরাদ্দ বাড়ানোর দাবি জানান। দুইজন ডিলারই আটার চাহিদার কথা উল্লেখ করেছেন। 
উপজেলা খাদ্যগুদামের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা লুৎফর রহমান বলেন, সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত ওএমএসের চাল দেওয়ার কথা থাকলেও ১১টা-১২টার মধ্যে চাল শেষ হয়ে যায়। পরে এসে অনেকেই চাল না পেয়ে ফিরে যান। চালের বরাদ্দ বাড়ানোর বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের জানিয়েছেন। আটা দেওয়ার বিষয়টিও অনেকে তাঁকে বলেছেন বলে জানান তিনি।

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: ওএমএস র

এছাড়াও পড়ুন:

পশ্চিমবঙ্গের চার শ্রমিককে বিদেশি বলে বাংলাদেশে ঠেলে পাঠানোর চেষ্টা ভারতের

আসাম রাজ্যের পর গোটা ভারত থেকেই বাংলাদেশি বলে ভারতীয় নাগরিকদের বাংলাদেশে ঠেলে পাঠানো (পুশইন) হচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে। শুধু তা–ই নয়, প্রমাণের অভাবে আবার তাঁদের অনেককে ফিরিয়েও আনতে হচ্ছে বলে পশ্চিমবঙ্গের সীমান্ত অঞ্চল থেকে এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে পশ্চিমবঙ্গেরই সংবাদমাধ্যম।

দক্ষিণ ও মধ্য বাংলার দুই জেলা বর্ধমান ও মুর্শিদাবাদের চার পরিযায়ী শ্রমিক মহারাষ্ট্রে কাজ করতে গিয়েছিলেন। বাংলাদেশি বলে চিহ্নিত করে মহারাষ্ট্র পুলিশ তাঁদের ভারতের সীমান্ত নিরাপত্তারক্ষী বাহিনীর (বিএসএফ) হাতে তুলে দেয়। এরপর বিএসএফ তাঁদের বাংলাদেশে ঠেলে দেয়। এ চারজনই আবার মুসলমান।

মুম্বাইয়ে কাজ করতে যাওয়া মুর্শিদাবাদ ও বর্ধমানের এই চার পরিযায়ী শ্রমিককে মহারাষ্ট্র পুলিশ বাংলাদেশি তকমা লাগিয়ে বিএসএফের হাতে তুলে দেয়। কোনো রকম যাচাই না করেই তাঁদের বাংলাদেশে ঠেলে দেয় বিএসএফ। স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও রাজ্য পুলিশের উদ্যোগে গতকাল রোববার বিকেলে তাঁদের উদ্ধার করা হয়। বাংলাদেশ সীমান্তরক্ষী বাহিনীর (বিজিবি) কাছ থেকে ওই তিন নাগরিককে ফেরত নিয়ে বিএসএফ তাঁদের কোচবিহার জেলার পুলিশের হাতে তুলে দিয়েছে বলে জানা গেছে।

চারজনের মধ্যে তিনজনই মুর্শিদাবাদ জেলার বিভিন্ন গ্রামের বাসিন্দা। তাঁরা হলেন হরিহরপাড়ার তরতিপুর গ্রামের বাসিন্দা নাজিমুদ্দিন মণ্ডল, ভগবানগোলার মহিষাস্থলি গ্রামপঞ্চায়েতের হোসেনপুর গ্রামের বাসিন্দা মেহবুব শেখ ও বেলডাঙার কাজিশাহার বাসিন্দা মিনারুল শেখ। অন্যজন পূর্ব বর্ধমানের মন্তেশ্বর থানার কুলুট গ্রামের বাসিন্দা মোস্তাফা কামাল। তাঁরা প্রত্যেকেই পরিযায়ী শ্রমিক। মহারাষ্ট্রের মুম্বইয়ে তাঁরা রাজমিস্ত্রির কাজ করতেন। হেফাজতে নেওয়ার পাঁচ দিন পর তাঁদের উদ্ধার করা হলো বলে জানানো হয়েছে।

পশ্চিমবঙ্গের সংবাদপত্র ‘পুবের কলম’ আজ সোমবার এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে, তাঁদের কাছে বৈধ নথিপত্র থাকা সত্ত্বেও তাঁদের বাংলাদেশি বলে চিহ্নিত করে দুই প্রকৃত বাংলাদেশি নাগরিকের সঙ্গে বাংলাদেশে ঠেলে দেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ।

পশ্চিমবঙ্গের সংবাদপত্র ‘পুবের কলম’ আজ সোমবার এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে, তাঁদের কাছে বৈধ নথিপত্র থাকা সত্ত্বেও তাঁদের বাংলাদেশি বলে চিহ্নিত করে দুই প্রকৃত বাংলাদেশি নাগরিকের সঙ্গে বাংলাদেশে ঠেলে দেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ। দুই দিন ধরে তাঁরা কোচবিহার জেলার মেখলিগঞ্জ থেকে কিছুটা দূরে জিরো পয়েন্টে ছিলেন।

স্থানীয় বাসিন্দাদের সহায়তায় মুঠোফোন থেকে ভিডিও বার্তায় ওই চার শ্রমিক তাঁদের দুর্দশার কথা জানান। তারপরেই তাঁদের ফেরানোর তৎপরতা শুরু করেন পশ্চিমবঙ্গ পরিযায়ী শ্রমিক কল্যাণ পরিষদের চেয়ারম্যান তথা রাজ্যসভার সংসদ সদস্য সামিরুল ইসলামসহ অন্য জনপ্রতিনিধিরা। পুলিশও বিষয়টি বিএসএএফকে জানায়।

হরিহরপাড়ার বাসিন্দা শামীম রহমান গণমাধ্যমে বলেন, ‘স্থানীয় তৃণমূলের রাজনৈতিক নেতাদের বিষয়টি জানানো হয়। তারপর তাঁদের ফেরানোর তৎপরতা শুরু হয়। তাঁরা উদ্ধার হয়ে ঘরে ফিরছেন ভেবে ভালো লাগছে।’

সূত্রের খবর, বাংলাদেশি সন্দেহে চারজনকে আটক করে পশ্চিমবঙ্গ পুলিশের হাতে তুলে না দিয়ে ১০ জুন বিএসএফের হাতে তুলে দেয় মহারাষ্ট্র পুলিশ। তাঁদের মুম্বাই থেকে আগরতলা ও পরে কোচবিহারের মেখলিগঞ্জে পাঠানো হয়। ওই শ্রমিকদের টাকা, মুঠোফোনও কেড়ে নেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।

হরিহরপাড়ার তরতিপুর গ্রামের বাসিন্দা নাজিমুদ্দিন দুই বছর ধরে মুম্বাইয়ে রাজমিস্ত্রির কাজ করতেন। গতকাল সকালে তাঁর স্ত্রী পিংকি বিবি হরিহরপাড়ার বিধায়ক নিয়ামত শেখের সঙ্গে দেখা করেন। বিধায়কের মাধ্যমে বৈধ নথি সংসদ সদস্য সামিরুল ইসলাম ও প্রশাসনের কর্তাদের কাছে পাঠানো হয়। তারপরই তাঁদের ঘরে ফেরানোর তৎপরতা শুরু হয়।

হরিহরপাড়ার বিধায়ক নিয়ামত শেখ বলেন, নাজিমুদ্দিন এ দেশেরই নাগরিক। তাঁর বৈধ নথি ও নাগরিকত্বের পরিচয়পত্র রয়েছে।

বিধায়ক নিয়ামত শেখ আরও বলেন, ‘তাঁর মতো আরও তিনজনকে বাংলাদেশি তকমা লাগিয়ে বাংলাদেশে ঠেলে দেয় কেন্দ্রের বিএসএফ। গতকাল বিকেলে তাঁরা বিএসএফের হেফাজতে আসেন। আশা করছি, খুব তাড়াতাড়ি তাঁরা ঘরে ফিরবেন।’

এ বিষয়ে মুর্শিদাবাদ পুলিশের তরফে গতকাল জানানো হয়, আটক ব্যক্তিদের কাগজপত্র রোববার বিএসএফের হাতে তুলে দেয় রাজ্য পুলিশ। এরপরে বিএসএফ যাবতীয় কাগজপত্র রাজ্য পুলিশের সঙ্গে যৌথভাবে যাচাইয়ের পরে তা বাংলাদেশ সীমান্তরক্ষী বাহিনীর (বিজিবি) হাতে তুলে দেয়।

এরপর বিএসএফ সবাইকে ফেরানোর ব্যবস্থা করে এবং কোচবিহার পুলিশের হাতে তুলে দেয়। মুর্শিদাবাদ ও বর্তমানের জেলা পুলিশের একটি দল ওই পরিযায়ী শ্রমিকদের ফিরিয়ে আনতে ইতিমধ্যে কোচবিহারের উদ্দেশে রওনা দিয়েছে। আজ সোমবার তাঁদের নিজে নিজে জেলায় ফেরানো হবে বলে জানা গেছে।

চারজনের মধ্যে তিনজনই মুর্শিদাবাদ জেলার বিভিন্ন গ্রামের বাসিন্দা। তাঁরা হলেন হরিহরপাড়ার তরতিপুর গ্রামের বাসিন্দা নাজিমুদ্দিন মণ্ডল, ভগবানগোলার মহিষাস্থলি গ্রামপঞ্চায়েতের হোসেনপুর গ্রামের বাসিন্দা মেহবুব শেখ ও বেলডাঙার কাজিশাহার বাসিন্দা মিনারুল শেখ। অন্যজন পূর্ব বর্ধমানের মন্তেশ্বর থানার কুলুট গ্রামের বাসিন্দা মোস্তাফা কামাল।

বাঙালি বলে হেনস্তা পশ্চিমবঙ্গে

তবে শুধু দরিদ্র পরিযায়ী শ্রমিকই নন, পশ্চিমবঙ্গে উচ্চ ও মধ্যবিত্ত অনেকেই সম্প্রতি অভিযোগ করেছেন, তাঁদের অন্যভাবে হেনস্থা করা হচ্ছে।

দিল্লির এক অধ্যাপিকা গতকাল প্রথম আলোকে বলেন, গত কয়েক মাসে চারবার দক্ষিণ কলকাতার প্রধান পাসপোর্ট অফিসে গিয়েও তিনি তাঁর ২০০৭ সালের পুরোনো পাসপোর্ট নবায়ন করতে পারেননি।

এই অধ্যাপিকা বলেন, ‘আমাকে পুলিশের তরফে বলা হয়েছে, এখানে প্রচুর বাংলাদেশি ঢুকেছেন বলে সন্দেহ করা হচ্ছে। সে কারণে আমাদের যাঁদের প্রায় ২০ বছর ধরে বৈধ ভারতীয় পাসপোর্ট রয়েছে, তাঁদেরও সহজে পাসপোর্ট নবায়ন করা হচ্ছে না।’

সম্পর্কিত নিবন্ধ