চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ড উপজেলার ফৌজদারহাটের ডিসি পার্কে সংঘর্ষের পর ফুল উৎসবের নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।

এর আগে শ্রমিকদের ডাকা সড়ক অবরোধ প্রত্যাহার করা হয়। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতাদের আশ্বাসে গতকাল বুধবার সকাল ৬টার দিকে শ্রমিকরা সড়ক ছাড়েন। এরপর পুনরায় পণ্যবাহী যান চলাচল শুরু হয়। গতকাল রাত ১০টা থেকে সড়কটি অবরোধ করে রেখেছিলেন ট্রাক-লরির চালক ও শ্রমিকরা।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, ফুল উৎসবকে ঘিরে প্রতিদিন অনলাইনে ১৫ থেকে ২০ হাজার টিকিট বেচা হয়। এ ছাড়া শুক্র ও শনিবার ৫০ থেকে ৬০ হাজার টিকিট বেচা হয়ে থাকে। গত এক মাসে ৩ কোটি টাকা ছাড়িয়েছে টিকিট বেচা। দর্শনার্থীরা নিজস্ব বা ভাড়া করা প্রাইভেটকারে উৎসবে আসেন। পার্কের গেটে গাড়ি রাখতে হয়। পার্কিং ইজারাদারের দায়িত্বরত লোকেরা ভাড়া আদায় করেন। প্রাইভেটকারে ৫০ টাকা আর মোটরসাইকেল ও অটোরিকশার জন্য দিতে হয় ৩০ টাকা করে।

দর্শনার্থীদের অভিযোগ, ডিসি পার্কে প্রবেশ ও পার্কিংয়ের জন্য টাকা নেওয়া হলেও ছিল না পর্যাপ্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থা। ১৯৮ একর জমিতে গড়ে ওঠা ডিসি পার্কের ফুল উৎসবের দায়িত্বে থাকে ১০ জন পুলিশ। এটা পর্যাপ্ত নয়। নিরাপত্তা ব্যবস্থা শক্তিশালী না হওয়ায় এ হামলা ও ভাঙচুরের ঘটনা ঘটেছে।

এ বিষয়ে ফৌজদারহাট পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ পরিদর্শক মোহাম্মদ সোহেল রানা বলেন, ডিসি পার্কে জেলা পুলিশ লাইনস থেকে এসে ১০ জন সদস্য দায়িত্ব পালন করেন। এ ছাড়া ফাঁড়ি থেকে এক এএসআইসহ তিন পুলিশ দায়িত্বে থাকেন। মঙ্গলবারের সংঘর্ষ নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায়।

পার্কের বাইরে দেওয়া অস্থায়ী ফটক, টিকিট কাউন্টার, ব্যানার-ফেস্টুন, ছবি তোলার জন্য নির্মিত ‘সেলফি স্ট্যান্ড’ এবং পার্কের ভেতরে কয়েকটি দোকান ভাঙচুর করা হয়েছে। ভেঙে ফেলা হয়েছে পার্কের দেড় শতাধিক ফুলের টব।

মাসুদের নিয়ন্ত্রণে পার্কিং

পার্কিং নিয়ন্ত্রণ করেন স্থানীয় মাসুদ। আওয়ামী লীগের সাবেক সংসদ সদস্য মো.

দিদারুল আলমের হাত ধরে কার পার্কিং দখলে নেন তিনি। গত ৫ আগস্ট সরকার পরিবর্তন হলেও স্থানীয় বিএনপির নেতাদের আয়ত্তে নিয়ে নিয়ন্ত্রণ অব্যাহত রাখেন। তাঁর নিয়োজিত লোকেরা আদায় করেন পার্কিংয়ের টাকা। দায়িত্বরত পুলিশ ও আনসার সদস্যরা বিষয়টি নিশ্চিত করলেও মাসুদের ব্যবহৃত মোবাইল বন্ধ থাকায় তাঁর বক্তব্য নেওয়া যায়নি।

ঘটনার সূত্রপাত যেভাবে

গত মঙ্গলবার চট্টগ্রাম বন্দর থেকে পণ্যবোঝাই লরি নিয়ে চালক সমীরণ কান্তি দাস সীতাকুণ্ডের বিএম ডিপোতে যাচ্ছিলেন। ডিসি পার্কের সামনে এলে পার্কিংয়ের ইজারা আদায়কারী ব্যক্তি ও আনসারদের সঙ্গে গাড়ি দাঁড়ানো নিয়ে তর্ক হয়। এ সময় ইজারাদারের লোক ও আনসার সদস্যরা সমীরণকে আটকে রাখেন। লরিটি বিএম ডিপোর মালিকানাধীন হওয়ায় অন্য লরির চালক রহমান, ইরফান, মিনহাজ, জাহিদ ও মনির ঘটনাস্থলে যান। তাদেরও পার্কের ভেতরে আটকে রাখা হয়। মোবাইল ও মানিব্যাগ কেড়ে মারধর করা হয়।

বিএম ডিপোর লরিচালক জাহিদুল ইসলাম জানান, চালকদের বিনা অপরাধে পার্কের ভেতরে নিয়ে আটকে রেখে মারধর করা হয়। এ খবর ছড়িয়ে পড়লে চট্টগ্রাম বন্দর লরি-প্রাইম মুভার চালকরা প্রতিকার চাইতে পার্কের গেটে যান। প্রতিবাদে চালক-সহকারীরা সড়কে অবরোধ করেন।

তিনি জানান, বিএম ডিপোর ২০ জনসহ ৫০ জন চালক-সহকারী আহত হয়েছেন। এর মধ্যে ৩২ জন চট্টগ্রামের বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, নিরাপত্তা প্রহরীদের কাছ থেকে ঘটনা জানার পর পার্কের ভেতরে থাকা নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট আবদুল্লাহ আল মামুন মূল ফটকে আসেন। লরির চালকের সঙ্গে কথা বলে সমাধানের চেষ্টা করেন। চালককে বুঝিয়ে গাড়ি নিয়ে যেতে বলেন। ততক্ষণে লাঠিসোটা হাতে নিয়ে ৩০ থেকে ৩৫ জন চালক এসে পার্ক এলাকায় ভাঙচুর করেন। এ সময় পার্কের ভেতরে থাকা দর্শনার্থীদের মধ্যে আতঙ্ক দেখা দেয়। তারা ছোটাছুটি করতে থাকেন। পার্কের ভেতরে থাকা দোকানদাররা পালিয়ে যান। এ সময় ফৌজদারহাট-বন্দর সংযোগ সড়ক বন্ধ হয়ে যায়। এ ঘটনার প্রায় দুই ঘণ্টা পর সেনাবাহিনী ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।

শ্রমিকরা চার দফা দাবি জানিয়েছেন। এর মধ্যে ছিল হামলাকারীদের গ্রেপ্তার করা, আহত ব্যক্তিদের চিকিৎসা ও যথাযথ ক্ষতিপূরণ নিশ্চিত করা, ডিসি পার্কে প্রবেশের বিকল্প পথের ব্যবস্থা করা এবং এ সড়কে শ্রমিকদের সার্বিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করা।

সংশ্লিষ্টদের বক্তব্য

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নির্বাহী সদস্য রাসেল আহমেদ বলেন, শ্রমিকদের সঙ্গে কথা বলে প্রশাসনের কাছে দাবি উত্থাপন করা হয়েছে।
সীতাকুণ্ড মডেল থানার ওসি মজিবুর রহমান বলেন, ‘ডিসি পার্কে হামলার ঘটনায় কোনো মামলা হয়নি। ডিসি পার্কের পরিস্থিতি স্বাভাবিক রয়েছে।’
সীতাকুণ্ডের সহকারী কমিশনার (ভূমি) আবদুল্লাহ আল মামুন জানান, ভাঙচুর করা দোকান সংস্কার করে টিকিট বেচা শুরু হয়েছে। দুপুরে টিকিট কেটে দর্শনার্থীদের পার্কে ঢুকতে দেখা গেছে।

উল্লেখ্য, ডিসি পার্কে গত ৪ জানুয়ারি থেকে চলছে ফুল উৎসব। আজ বিকেলে এই ফুল উৎসব উপলক্ষে চট্টগ্রাম নগরের এম এ আজিজ স্টেডিয়ামে ‘গালা নাইট কনসার্ট’ আয়োজন করেছে জেলা প্রশাসন। সেখানে সংগীতশিল্পী জেমসের গান করার কথা রয়েছে।

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: ফ ল উৎসব ব এম ড প ব যবস থ সদস য

এছাড়াও পড়ুন:

তুলশীগঙ্গার তীরে সন্ন্যাসতলীর শতবর্ষী ঘুড়ির মেলা

জয়পুরহাটের ক্ষেতলাল উপজেলার মামুদপুর ইউনিয়নের মহব্বতপুর গ্রাম ঘেঁষে তুলশীগঙ্গা নদীর অদূরে সন্ন্যাসতলীর বটতলা। জায়গাটিতে প্রায় একশ বছর আগে থেকে বাংলা জ্যৈষ্ঠ মাসের শেষ শুক্রবার আয়োজন হয় ঘুড়ির মেলা। এবারও এর ব্যতিক্রম হয়নি। অন্তত ৫০ গ্রামের হাজারো মানুষের উপস্থিতিতে শুক্রবার সন্ন্যাসতলী ঘুড়ি উৎসব অনুষ্ঠিত হয়েছে। 

মেলার দিনক্ষণ মনে রেখে সময়মতো দোকানিদের পাশাপাশি দর্শনার্থীরা ভিড় জমান নিভৃত পল্লীতে। আগে মেলার দিন বৃষ্টি হওয়া যেন নিয়ম হয়ে দাঁড়িয়েছিল। কিন্তু এবার ব্যতিক্রম ঘটনা ঘটেছে। প্রচণ্ড গরম ও তাপপ্রবাহের মধ্যেই চলে এ আয়োজন। বৈরী পরিবেশের কারণে উৎসবের স্বাভাবিক কর্মকাণ্ডে কিছুটা ব্যাঘাত ঘটেছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।

স্থানীয় প্রবীণ বাসিন্দারা বলছেন, সন্ন্যাসতলীর এ ঘুড়ি উৎসব শুরুর দিন বিকেলে বটতলায় স্থানীয় হিন্দু সম্প্রদায় সন্ন্যাস পূজা পালন করেন। তাদের এ পূজা-অর্চনা ঘিরেই মূলত এ মেলার উৎপত্তি। তবে শুরুর কথা কেউ বলতে পারেননি। প্রবীণরা শুধু জানেন, একশ বছরের বেশি সময় ধরে তারা এ মেলার আয়োজন দেখে আসছেন।

মেলার নিজস্ব জায়গা না থাকলেও এর ব্যাপ্তি প্রায় দুই কিলোমিটার এলাকাজুড়ে। প্রচণ্ড গরমের মধ্যেই এক দিনের এ মেলা ঘিরেই জেলার জামালগঞ্জ চারমাথা থেকে ঐতিহাসিক আছরাঙ্গাদীঘি পর্যন্ত রকমারি পণ্যের দোকান বসে। এখান থেকে সংসারের প্রয়োজনীয় বিভিন্ন আসবাব থেকে শুরু করে ছোট মাছ ধরার বাঁশের তৈরি পণ্য খলসানি, টোপা, ডালা, চালুন কিনে নেন অনেকে।

সুতার তৈরি তৌরা জাল, গৃহস্থালি কাজে ব্যবহৃত দ্রব্যাদি, বিভিন্ন ধরনের খেলনা, মিষ্টান্ন, প্রসাধনী, মাটির তৈজসপত্রসহ বিভিন্ন সামগ্রী বিক্রি হয়। শিশুদের বিনোদনের জন্য ছিল নাগরদোলার ব্যবস্থাও। আর মেলার বড় আকর্ষণ ঘুড়ি ওড়ানো ও বিক্রি। পার্শ্ববর্তী বিভিন্ন জেলা থেকে ব্যবসায়ীরা এসেছিলেন ঘুড়ি বিক্রি করতে।

প্রচণ্ড গরমের পাশাপাশি তেমন হাওয়া-বাতাস না থাকায় এবার ঘুড়ি ওড়ানোর প্রতিযোগিতা সেভাবে জমে ওঠেনি। তবে ঘুড়ি বেচাকেনা ও শিশু-কিশোরদের উচ্ছ্বাস ছিল চোখে পড়ার মতো। এ উপলক্ষে আসা হাজার হাজার দর্শনার্থীর নিরাপত্তার জন্য মেলায় সার্বক্ষণিক আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের টহল ছিল।

আদমদীঘির শিববাটি গ্রামের ঘুড়ি ব্যবসায়ী সালাম হোসেনের ভাষ্য, সন্ন্যাসতলীর মেলা বড় হওয়ায় তিনি এসেছেন ঘুড়ি বিক্রির জন্য। মেলায় প্রত্যাশা অনুযায়ী ঘুড়ি বিক্রি করতে পেরে তিনি খুশি। জয়পুরহাটের পার্বতীপুর এলাকার ঘুড়ি ব্যবসায়ী মফিজ উদ্দিন ও মজনু সরদার বলেন, পূর্বপুরুষের আমল থেকে এ মেলার কথা শুনে আসছেন তারা।

মেলা উদযাপন ও পূজা কমিটির সদস্য মহব্বতপুর গ্রামের মন্টু মণ্ডল বলেন, মেলাটি হিন্দু সম্প্রদায়ের হলেও এটি আসলে সব ধর্মালম্বীর মিলনমেলায় পরিণত হয়েছে। 

মামুদপুর ইউনিয়ন পরিষদের প্যানেল চেয়ারম্যান মিলন হোসেনের ভাষ্য, এক দিনের আয়োজনে যে এত লোকের সমাগম হতে পারে, তা চোখে না দেখলে বিশ্বাস করা কঠিন। মেলায় যেন অনৈতিক কর্মকাণ্ড না হয়, সে ব্যাপারে ইউনিয়ন পরিষদের পক্ষ থেকে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।

ক্ষেতলাল থানার ওসি মোহাম্মদ ফরিদ হোসেন বলেন, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে এবং মেলায় আসা দর্শনার্থীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পুলিশ প্রশাসন সতর্ক আছে। মেলায় অনৈতিক আচরণ লক্ষ্য করা গেলে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে। 

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • বকুলতলায় বৃষ্টির সুর
  • কলকাতায় নতুন সিনেমার শুটিং শুরু করলেন জয়া
  • বর্ষা উৎসবে বন ও পরিবেশ ধ্বংসের প্রতিবাদ, পান্থকুঞ্জ পার্ক রক্ষাসহ কয়েকটি দাবি
  • নাচ-গান-আবৃত্তিতে চারুকলায় বর্ষাবরণ
  • মেঘ-রোদের লুকোচুরির সকালে নাচে-গানে বর্ষাবরণ 
  • মেঘ-রোদের লুকোচুরি সকালে নাচে-গানে বর্ষাবরণ 
  • আষাঢ়ের প্রথম দিন আজ
  • কলিজা ঠান্ডা করে দেওয়া ছবি ‘উৎসব’
  • তুলশীগঙ্গার তীরে সন্ন্যাসতলীর শতবর্ষী ঘুড়ির মেলা
  • ভালোবাসার ফ্রেমে মেহজাবীন-রাজীব, পেছনে আইফেল টাওয়ার