ডিসি পার্কে ফুল উৎসবে ভাঙচুর, ছিল না পর্যাপ্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থা
Published: 6th, February 2025 GMT
চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ড উপজেলার ফৌজদারহাটের ডিসি পার্কে সংঘর্ষের পর ফুল উৎসবের নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।
এর আগে শ্রমিকদের ডাকা সড়ক অবরোধ প্রত্যাহার করা হয়। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতাদের আশ্বাসে গতকাল বুধবার সকাল ৬টার দিকে শ্রমিকরা সড়ক ছাড়েন। এরপর পুনরায় পণ্যবাহী যান চলাচল শুরু হয়। গতকাল রাত ১০টা থেকে সড়কটি অবরোধ করে রেখেছিলেন ট্রাক-লরির চালক ও শ্রমিকরা।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, ফুল উৎসবকে ঘিরে প্রতিদিন অনলাইনে ১৫ থেকে ২০ হাজার টিকিট বেচা হয়। এ ছাড়া শুক্র ও শনিবার ৫০ থেকে ৬০ হাজার টিকিট বেচা হয়ে থাকে। গত এক মাসে ৩ কোটি টাকা ছাড়িয়েছে টিকিট বেচা। দর্শনার্থীরা নিজস্ব বা ভাড়া করা প্রাইভেটকারে উৎসবে আসেন। পার্কের গেটে গাড়ি রাখতে হয়। পার্কিং ইজারাদারের দায়িত্বরত লোকেরা ভাড়া আদায় করেন। প্রাইভেটকারে ৫০ টাকা আর মোটরসাইকেল ও অটোরিকশার জন্য দিতে হয় ৩০ টাকা করে।
দর্শনার্থীদের অভিযোগ, ডিসি পার্কে প্রবেশ ও পার্কিংয়ের জন্য টাকা নেওয়া হলেও ছিল না পর্যাপ্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থা। ১৯৮ একর জমিতে গড়ে ওঠা ডিসি পার্কের ফুল উৎসবের দায়িত্বে থাকে ১০ জন পুলিশ। এটা পর্যাপ্ত নয়। নিরাপত্তা ব্যবস্থা শক্তিশালী না হওয়ায় এ হামলা ও ভাঙচুরের ঘটনা ঘটেছে।
এ বিষয়ে ফৌজদারহাট পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ পরিদর্শক মোহাম্মদ সোহেল রানা বলেন, ডিসি পার্কে জেলা পুলিশ লাইনস থেকে এসে ১০ জন সদস্য দায়িত্ব পালন করেন। এ ছাড়া ফাঁড়ি থেকে এক এএসআইসহ তিন পুলিশ দায়িত্বে থাকেন। মঙ্গলবারের সংঘর্ষ নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায়।
পার্কের বাইরে দেওয়া অস্থায়ী ফটক, টিকিট কাউন্টার, ব্যানার-ফেস্টুন, ছবি তোলার জন্য নির্মিত ‘সেলফি স্ট্যান্ড’ এবং পার্কের ভেতরে কয়েকটি দোকান ভাঙচুর করা হয়েছে। ভেঙে ফেলা হয়েছে পার্কের দেড় শতাধিক ফুলের টব।
মাসুদের নিয়ন্ত্রণে পার্কিং
পার্কিং নিয়ন্ত্রণ করেন স্থানীয় মাসুদ। আওয়ামী লীগের সাবেক সংসদ সদস্য মো.
ঘটনার সূত্রপাত যেভাবে
গত মঙ্গলবার চট্টগ্রাম বন্দর থেকে পণ্যবোঝাই লরি নিয়ে চালক সমীরণ কান্তি দাস সীতাকুণ্ডের বিএম ডিপোতে যাচ্ছিলেন। ডিসি পার্কের সামনে এলে পার্কিংয়ের ইজারা আদায়কারী ব্যক্তি ও আনসারদের সঙ্গে গাড়ি দাঁড়ানো নিয়ে তর্ক হয়। এ সময় ইজারাদারের লোক ও আনসার সদস্যরা সমীরণকে আটকে রাখেন। লরিটি বিএম ডিপোর মালিকানাধীন হওয়ায় অন্য লরির চালক রহমান, ইরফান, মিনহাজ, জাহিদ ও মনির ঘটনাস্থলে যান। তাদেরও পার্কের ভেতরে আটকে রাখা হয়। মোবাইল ও মানিব্যাগ কেড়ে মারধর করা হয়।
বিএম ডিপোর লরিচালক জাহিদুল ইসলাম জানান, চালকদের বিনা অপরাধে পার্কের ভেতরে নিয়ে আটকে রেখে মারধর করা হয়। এ খবর ছড়িয়ে পড়লে চট্টগ্রাম বন্দর লরি-প্রাইম মুভার চালকরা প্রতিকার চাইতে পার্কের গেটে যান। প্রতিবাদে চালক-সহকারীরা সড়কে অবরোধ করেন।
তিনি জানান, বিএম ডিপোর ২০ জনসহ ৫০ জন চালক-সহকারী আহত হয়েছেন। এর মধ্যে ৩২ জন চট্টগ্রামের বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, নিরাপত্তা প্রহরীদের কাছ থেকে ঘটনা জানার পর পার্কের ভেতরে থাকা নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট আবদুল্লাহ আল মামুন মূল ফটকে আসেন। লরির চালকের সঙ্গে কথা বলে সমাধানের চেষ্টা করেন। চালককে বুঝিয়ে গাড়ি নিয়ে যেতে বলেন। ততক্ষণে লাঠিসোটা হাতে নিয়ে ৩০ থেকে ৩৫ জন চালক এসে পার্ক এলাকায় ভাঙচুর করেন। এ সময় পার্কের ভেতরে থাকা দর্শনার্থীদের মধ্যে আতঙ্ক দেখা দেয়। তারা ছোটাছুটি করতে থাকেন। পার্কের ভেতরে থাকা দোকানদাররা পালিয়ে যান। এ সময় ফৌজদারহাট-বন্দর সংযোগ সড়ক বন্ধ হয়ে যায়। এ ঘটনার প্রায় দুই ঘণ্টা পর সেনাবাহিনী ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।
শ্রমিকরা চার দফা দাবি জানিয়েছেন। এর মধ্যে ছিল হামলাকারীদের গ্রেপ্তার করা, আহত ব্যক্তিদের চিকিৎসা ও যথাযথ ক্ষতিপূরণ নিশ্চিত করা, ডিসি পার্কে প্রবেশের বিকল্প পথের ব্যবস্থা করা এবং এ সড়কে শ্রমিকদের সার্বিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করা।
সংশ্লিষ্টদের বক্তব্য
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নির্বাহী সদস্য রাসেল আহমেদ বলেন, শ্রমিকদের সঙ্গে কথা বলে প্রশাসনের কাছে দাবি উত্থাপন করা হয়েছে।
সীতাকুণ্ড মডেল থানার ওসি মজিবুর রহমান বলেন, ‘ডিসি পার্কে হামলার ঘটনায় কোনো মামলা হয়নি। ডিসি পার্কের পরিস্থিতি স্বাভাবিক রয়েছে।’
সীতাকুণ্ডের সহকারী কমিশনার (ভূমি) আবদুল্লাহ আল মামুন জানান, ভাঙচুর করা দোকান সংস্কার করে টিকিট বেচা শুরু হয়েছে। দুপুরে টিকিট কেটে দর্শনার্থীদের পার্কে ঢুকতে দেখা গেছে।
উল্লেখ্য, ডিসি পার্কে গত ৪ জানুয়ারি থেকে চলছে ফুল উৎসব। আজ বিকেলে এই ফুল উৎসব উপলক্ষে চট্টগ্রাম নগরের এম এ আজিজ স্টেডিয়ামে ‘গালা নাইট কনসার্ট’ আয়োজন করেছে জেলা প্রশাসন। সেখানে সংগীতশিল্পী জেমসের গান করার কথা রয়েছে।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: ফ ল উৎসব ব এম ড প ব যবস থ সদস য
এছাড়াও পড়ুন:
ভালো ফলনের আশায় গাছকে খাওয়ান তাঁরা
চীনের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের পাহাড়ি প্রদেশ গুইঝৌতে প্রাচীনকাল থেকে ‘গেলাও’ জনগোষ্ঠীর বসবাস। ভিয়েতনামেও এই জনগোষ্ঠীর মানুষ বাস করেন। চীনে তাঁদের সংখ্যা প্রায় ৬ লাখ ৭৭ হাজার।
কৃষিনির্ভর গেলাও জনগোষ্ঠীর সদস্যরা আজও প্রাচীনকালের পুরোনো এক ঐতিহ্য আগলে রেখেছেন। বছরের নির্দিষ্ট দিনে তাঁরা গাছকে খাওয়ান, যা চীনা ভাষায় ‘ওয়েই শু’ রীতি নামে পরিচিত।
এই প্রাচীন রীতি মূলত একধরনের প্রার্থনা। স্থানীয় অধিবাসীদের বিশ্বাস, এতে প্রকৃতি তুষ্ট হয়, ফসল ভালো হয়, পরিবারে শান্তি ও সমৃদ্ধি আসে। প্রতিবছর দুটি উৎসবের সময় এই অনুষ্ঠান পালন করা হয়—চীনা নববর্ষে, যা বসন্ত উৎসব নামে পরিচিত। আর গেলাও নববর্ষে, যা চান্দ্র পঞ্জিকার তৃতীয় মাসের তৃতীয় দিনে পালিত হয়।
অনুষ্ঠানের দিন সকালে আত্মীয়স্বজন ও গ্রামবাসী পাহাড়ের ঢালে জড়ো হন। তাঁরা সঙ্গে করে চাল থেকে তৈরি মদ, শূকরের মাংস, মাছ ও লাল আঠালো চাল নিয়ে আসেন। পাহাড়ে পৌঁছে প্রথমে আতশবাজি পোড়ানো হয়। এতে করে উৎসবমুখর পরিবেশের সৃষ্টি হয়।
এর মধ্যেই একটি পুরোনো ও শক্তিশালী গাছ বাছাই করা হয়। এরপর সবাই ধূপ জ্বালিয়ে নতজানু হয়ে প্রার্থনা করেন। সবশেষে মূল পর্ব ‘গাছকে খাওয়ানো’ শুরু হয়।
একজন কুঠার বা ছুরি দিয়ে গাছে তিনটি জায়গায় ছোট করে কেটে দেন। সেই ক্ষতস্থানে চাল, মাংস ও মদ ঢেলে দেওয়া হয়, যাতে গাছ তাঁদের দেওয়া ভোগ গ্রহণ করতে পারে। পরে ওই জায়গা লাল কাগজে মুড়ে দেওয়া হয়।
এ ছাড়া গাছের গোড়া ঘিরে আগাছা পরিষ্কার করা হয়, মাটি আলগা করে দেওয়া হয়। এতে নতুন জীবনের বার্তা মেলে বলে মনে করেন গেলাও জনগোষ্ঠীর সদস্যরা।
যে গাছকে খাওয়ানো হয়, সেটি যদি ফলদ হয়, তাহলে ভোগ দানকারীরা একটি আশাব্যঞ্জক শ্লোক উচ্চারণ করেন। বলেন, ‘তোমায় চাল খাওয়াই, ফল দিয়ো গুচ্ছ গুচ্ছ; তোমায় মাংস খাওয়াই, ফল দিয়ো দলা দলা।’