আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় চাঁদপুরে অন্যান্য বছরের চেয়ে এবার মিষ্টি কুমড়ার বাম্পার ফলন হয়েছে। তবে, পাইকারি ক্রেতা না পাওয়ায় পাকা কুমড়োর পচন ঠেকাতে গোখাদ্য হিসেবেই বিক্রি করছেন চাষিরা। প্রচুর ফলন হলেও হতাশায় উৎপাদন খরচ তোলার দুশ্চিন্তায় এখন তারা।

চাষিরা বলছেন, যদি সংশ্লিষ্ট প্রশাসন সরাসরি মাঠ থেকে কুমড়ো কেনার ব্যবস্থা করে, তাহলে হয়তো কিছুটা ‘আলোর মুখ’ দেখা যেতো।

গত ৩ ফেব্রুয়ারি সরেজমিন গেলে সদরের দেবপুর, হাজীগঞ্জের বাকিলাসহ আশপাশের এলাকার চাষিরা তাদের হতাশা তুলে ধরেন।

দেবপুরের চাষি আবুল কাশেম বলেন, ‘‘এবার আমরা মাঠের পর মাঠে মিষ্টি কুমড়ো চাষাবাদ করেছি। যেখানে গত বছরের চেয়ে দ্বিগুণ পরিমাণ জমিতে মিষ্টি কুমড়ার চাষাবাদে বাম্পার ফলন হয়েছে। তবে বীজ কেনা, জমি প্রস্তুত, ইজারাকৃত জমির মূল্য, পরিবহন খরচ মিলিয়ে ভালো দামে বিক্রি না থাকায় পোষাতে পারছি না। পাইকাররা এতো কুমড়ো না কেনায়, মাঠের মধ্যেই পচে যাচ্ছে। তাই বাধ্য হয়েই খরচ পোষাতে এখন নামমাত্র দামে গোখাদ্য হিসেবে বিক্রির চেষ্টা করছি।’’

চাঁদপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্য বলছে, এবার চাঁদপুর সদরে ৯০ হেক্টর, মতলব উত্তরে ১৭৫ হেক্টর, দক্ষিণে ৪০ হেক্টর, শাহরাস্তিতে ৩০ হেক্টর, কচুয়ায় ৪৮ হেক্টর, ফরিদগঞ্জে ৯৫ হেক্টর ও হাইমচরে ৩৯ হেক্টরসহ জেলায় মোট ১ হাজার ১৩৫ হেক্টর জমিতে মিষ্টি কুমড়ার আবাদ হয়েছে। সবখানেই বাম্পার ফলন হয়েছে। এতে জেলায় এবার মোট কুমড়ার উৎপাদন হয়েছে ২৪ হাজার ৯৭১ টন।

স্তূপাকারে রাখা কুমড়ো দেখতে গেলে দেবপুরের স্থানীয় পল্লী চিকিৎসক লিটন সরকার বলেন, ‘‘এবার মাঠ থেকে কুমড়ো উঠিয়ে তা বিক্রির জন্য দেবপুর, কৌয়ারপুল, বাকিলাসহ বেশ কিছু স্থানে স্তূপ করে সাজিয়ে রেখেছেন চাষিরা। হাটবাজারে ৩০-৪০ এবং পাইকাররা ১০-১৫ টাকা দামে কুমড়ো কিনছেন। যদিও অন্যান্য বছর দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে মিষ্টি কুমড়া কিনতে পাইকাররা সরাসরি ক্ষেতে আসতেন। পরে ট্রাক ও পিকআপ ভর্তি করে তারা ভালো দাম দিয়ে যেতেন। এবার স্তূপাকারে রেখে দেওয়া কুমড়ো পচে গেলেও পাইকারদের দেখা নেই। তাই কৃষকের এমন নাজেহাল অবস্থা এড়াতে সরাসরি কুমড়ো কিনতে বা পাইকার নিশ্চিত করাসহ আরো সহায়তা নিয়ে প্রশাসন যেন চাষিদের পাশে দাঁড়ায়, এমনটি দাবি করছি।’’

এদিকে, কুমড়ো চাষিদের পাইকার না পাওয়ার এমন হতাশার মাঝে গরুর খামারিরা সুযোগের ‘সৎ ব্যবহার’ করছেন। তারা কম দামে মিষ্টি কুমড়ো কিনে তা গোখাদ্য হিসেবে কাজে লাগাচ্ছেন। এতে করে পুষ্টিসমৃদ্ধ এই কুমড়ো খেয়ে গরু দ্রুত মোটাতাজা হচ্ছে এবং অন্যান্য খরচ কমে গেছে, দাবি খামারির।

হাজীগঞ্জ পৌরসভার নয় নম্বর ওয়ার্ডের আলীগঞ্জের গরুখামারি মোহন মিয়া বলেন, ‘‘এখন পর্যন্ত ২০০ মণ কুমড়া কিনে গরুকে খাইয়েছি। আরো ১০০-২০০ মণ নেব। দিনে ২০ কেজি করে ৪টি গরুকে ৮০ কেজি করে প্রথমবারের মতো কুমড়ো খাওয়াচ্ছি। এতে করে কিছুদিনের ব্যবধানে গরুর ওজন বেড়ে যাওয়ায় ভালো দামে বিক্রি করছি। আরো ৪টি বিক্রির উপযুক্ত হচ্ছে।’’ 

অন্যদিকে, পুরো জেলার অধিকাংশ কুমড়োই স্তূপ করে বেচা-বিক্রি হয় হাজীগঞ্জের বাকিলা ইউনিয়নে। তাই দূর-দূরান্ত থেকে বড় বড় ট্রাক এসে এখান থেকেই কুমড়ো ভর্তি করে নেয়। যেহেতু এবার পাইকার কম, তাই পরিবহন খাতে যাতে খরচ কম লাগে, সেদিকে নজর রেখে চাষিদের পাশে থাকার আশ্বাস দিলেন বাকিলার ইউপি চেয়ারম্যান মো.

মিজানুর রহমান।

তিনি বলেন, ‘‘যেহেতু সব কুমড়ো বাকিলা বাজার ও এর আশপাশে এনে স্তূপ করে রাখা হচ্ছে; তাই আমি চেষ্টা করব, কুমড়ো পরিবহনে যাতে চাষিদের খরচ কম লাগে।’’

ঢাকা/অমরেশ/এনএইচ/এসবি

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর র ফলন

এছাড়াও পড়ুন:

সেন্ট মার্টিনে একটি ইলিশ বিক্রি হলো ৪ হাজার ৫০ টাকায়

কক্সবাজারের সেন্ট মার্টিন দ্বীপে মোহাম্মদ আলম নামের এক ট্রলারমালিকের জালে ধরা পড়েছে ২ কেজি ৩৩০ গ্রাম ওজনের একটি বড় ইলিশ। মাছটি বিক্রি হয়েছে ৪ হাজার ৫০ টাকায়।

আজ সোমবার বিকেলে বিষয়টি নিশ্চিত করেন সেন্ট মার্টিন ফিশিং ট্রলার মালিক সমিতির সভাপতি মো. আজিম।

মো. আজিম জানান, সেন্ট মার্টিন দক্ষিণপাড়ার বাসিন্দা সোলতান আহমদের ছেলে মোহাম্মদ আলমের মালিকানাধীন একটি ছোট ট্রলারে পাঁচজন মাঝিমল্লা আজ ভোরে সেন্ট মার্টিন দ্বীপের পশ্চিমে ‘আটবাইন’ নামের এলাকায় জাল ফেলেন। দুপুর ১২টার দিকে জাল তুললে ওই বড় ইলিশসহ ছয়টি ইলিশ মাছ পাওয়া যায়, যেগুলোর ওজন ৮০০ থেকে ৯০০ গ্রাম করে।

বেলা দুইটার দিকে ট্রলারটি সেন্ট মার্টিন জেটিঘাটে পৌঁছালে বড় ইলিশ ধরা পড়ার খবর ছড়িয়ে পড়ে। স্থানীয় লোকজন জেটিতে ভিড় করেন মাছটি দেখতে।

ট্রলারের মালিক মোহাম্মদ আলম বলেন, নিষেধাজ্ঞা শেষে মাছ ধরতে গিয়ে এত বড় ইলিশ পেয়ে তিনি খুবই খুশি। প্রথমে প্রতি কেজি ২ হাজার টাকা দর হাঁকানো হলেও পরে স্থানীয় ইউরো বাংলা রেস্টুরেন্টের মালিক জিয়াউল হক প্রতি কেজি ১ হাজার ৭৫০ টাকা দরে মাছটি ৪ হাজার ৫০ টাকায় কিনে নেন।

মোহাম্মদ আলম আরও জানান, অবশিষ্ট ছয়টি ইলিশ মাছ প্রতি কেজি ১ হাজার ১০০ টাকা দরে মোট ৫ হাজার ২০০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। সব মিলিয়ে সাতটি মাছ বিক্রি করে তিনি পেয়েছেন ৯ হাজার ২৫০ টাকা।

মোহাম্মদ আলম বলেন, ‘এক বছর আগেও এক মণ ইলিশ বিক্রি করে এত টাকা পাওয়া যায়নি।’

সেন্ট মার্টিন ইউনিয়ন পরিষদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান ফয়েজুল ইসলাম বলেন, সাগরে ৫৮ দিনের নিষেধাজ্ঞা শেষ হওয়ার পর থেকেই জেলেরা মাছ ধরতে বের হচ্ছেন। তবে সাগর এখনো কিছুটা উত্তাল থাকায় তাঁরা দ্বীপের আশপাশে মাছ ধরছেন। অনেকে খালি হাতে ফিরলেও মোহাম্মদ আলমের এবার ভাগ্য খুলে গেছে।

উপজেলা সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা মোহাম্মদ দেলোয়ার হোসেন বলেন, ‘সেন্ট মার্টিনে সাতটি ইলিশ ধরা পড়ার বিষয়টি আমরা শুনেছি। সরকারনির্ধারিত নিষেধাজ্ঞা মেনে চলায় এখন জেলেদের জালে নানা প্রজাতির মাছ উঠছে। এতে জেলে পরিবারগুলো লাভবান হচ্ছে।’

সম্পর্কিত নিবন্ধ