ওসমানীতে ১৭ কেজি স্বর্ণ নিয়ে ধরা খেলেন দুবাই ফেরত ২ যাত্রী
Published: 6th, February 2025 GMT
সিলেট ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে কাস্টমসের গ্রিন চ্যানেল পার হয়ে মালামাল নিয়ে কনকোর্স হলে চলে যান দুবাই থেকে ফেরত দুই যাত্রী। কাস্টমস লাগেজ স্ক্যানিং করে ভেতরে স্বর্ণের হদিস পায়নি। কাস্টমসের কাছ থেকে রক্ষা পেলেও দুই যাত্রী নজর এড়াতো পারেননি নিরাপত্তাকর্মী ও জাতীয় গোয়েন্দা সংস্থার (এনএসআই) সদস্যদের। তাদের চ্যালেঞ্জের মুখে নিয়ে যাওয়া হয় আবার স্ক্যানিংয়ে।
তিন বার পরীক্ষা করার পরও স্বর্ণ থাকার বিষয়টি নিশ্চিত হতে পারেননি বিমানবন্দরের কাস্টম কর্মকর্তারা। পরে দুই যাত্রীর লাগেজ খোলে ফ্যান ও চার্জার লাইটের ভেতরে পাওয়া যায় ১২০টি স্বর্ণের বার ও চারটি গোলাকার স্বর্ণপিণ্ড। উদ্ধারকৃত স্বর্ণের ওজন প্রায় ১৭ কেজি, যার বাজারমূল্য ২১ কোটি টাকা।
ওই সময় আটক করা হয় স্বর্ণের বাহক সিলেটের জৈন্তাপুর উপজেলার বাসিন্দা যাত্রী আফতাব উদ্দিন (৩৬) ও মৌলভীবাজার জেলার বড়লেখা উপজেলার বাসিন্দা সৈয়দ আহমদকে (২৪)। পরে এ নিয়ে ব্রিফিং করেন সিলেটে কাস্টম কমিশনার তাসনিমুর রহমান। এ সময় ওসমানী বিমানবন্দরের পরিচালক হাফিজ আহমদসহ গোয়েন্দা ও কাস্টম বিভাগের কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
বিমানবন্দর সূত্রে জানা গেছে, আজ বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে ৮টায় দুবাইয়ের শারজাহ এয়ারপোর্ট থেকে বাংলাদেশ বিমানের একটি ফ্লাইট (বিজি-২৫২) ওসমানী বিমানবন্দরে অবতরণ করে। যাত্রী সৈয়দ আহমদ ও আফতাব উদ্দিন কাস্টমসের স্ক্যানিং মেশিনে তাদের লাগেজ স্ক্যান করে গ্রিন চ্যানেল পাড় হয়ে কনকোর্স হলে চলে যান। বের হওয়ার সময় নিরাপত্তাকর্মীদের সহায়তায় এনএসআই সদস্যরা তাদের আটকে দেন। পরে তাদেরকে কাস্টমসে নিয়ে যাওয়া হয়। একাধিকবার স্ক্যান করার পরও স্বর্ণ থাকার বিষয়টি ধরা পড়েনি উল্লেখ করে এনএসআইর এক সদস্য সমকালকে জানান, তাদের কাছে তথ্য ছিল ওই দুই যাত্রীর কাছে স্বর্ণের চালান রয়েছে। সেজন্য তারা চ্যালেঞ্জ করে যাত্রীদের লাগেজ খোলেন। তিনি জানান, দুই যাত্রী বাহক মাত্র। চালানের পেছনে অন্যরা রয়েছে।
এদিকে বিকেল সাড়ে ৩টা পর্যন্ত আটক দুই যাত্রীকে মহানগর পুলিশের বিমানবন্দর থানায় হস্তান্তর করা হয়নি। তাদের বিরুদ্ধে মামলা দিয়ে হস্তান্তর করা হবে বলে কাস্টমস সূত্রে জানা গেছে।
ওসমানী বিমানবন্দরের পরিচালক হাফিজ আহমদ জানিয়েছেন, স্ক্যানিংয়ে দুই যাত্রীর কাছে স্বর্ণ থাকার বিষয়টি ধরা পড়েনি। বিশেষ কৌশলে তারা তা বহন করে। গোয়েন্দাদের কাছে তথ্য থাকায় তাদের কাছ থেকে বিপুল পরিমাণ স্বর্ণ উদ্ধার করেন শুল্ক গোয়েন্দারা।
.উৎস: Samakal
এছাড়াও পড়ুন:
নোয়াখালীর কৃষকেরা কেন হাইব্রিড ধানবীজ থেকে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছেন
দুই একর জমিতে জিংকসমৃদ্ধ ব্রি-৭৪ জাতের ধান চাষ করেছেন নোয়াখালীর সুবর্ণচর উপজেলার পূর্ব চরবাটা এলাকার কৃষক মো. মোস্তফা। বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট-ব্রি উদ্ভাবিত এই জাতের প্রতি হেক্টরে ফলন হয়েছে ৯ দশমিক ২৩ মেট্রিক টন, যা বাজারে থাকা যেকোনো হাইব্রিড ধানের চেয়ে বেশি।
নিজের খেতে চোখজুড়ানো সোনালি ধান দেখে অনেক বেশি উচ্ছ্বসিত কৃষক মোস্তফা। কারণ, বাজার থেকে কেনা হাইব্রিড ধান থেকে বীজ করা যায় না। কিন্তু ব্রি উদ্ভাবিত এই ধান থেকে অনায়াসে বীজ তৈরি করতে পারবেন তিনি। এতে থাকবে না বীজ কেনা নিয়ে দুশ্চিন্তা। সেই সঙ্গে ধানগুলো জিংকসমৃদ্ধ হওয়ায় পরিবারের জিংকের ঘাটতিও দূর হবে। মোস্তফা বলেন, আগামী দিনে তিনি আরও বেশি পরিমাণ জমিতে এই ধান চাষ করবেন।
মোস্তফার মতো একই এলাকার আরেক কৃষক ওমর ফারুকও বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট(ব্রি) উদ্ভাবিত উচ্চ ফলনশীল জাতের ধান ব্রি-৯২ চাষ করেছেন দুই একর জমিতে। বীজ ও সারসহ এ পর্যন্ত তাঁর খরচ হয়েছে ৬২ হাজার টাকা। খেতের ধান এরই মধ্যে পাকা শুরু করেছে। ফলনের যে অবস্থা দেখছেন, তাতে মনে হচ্ছে, একরে ফলন হবে কমপক্ষে ১৭০ মণ। যার বাজারমূল্য দেড় লাখ টাকার বেশি।
ওমর ফারুকের খেতে ব্রির এই উচ্চ ফলনশীল ধানের আবাদ দেখে এরই মধ্যে আশপাশের এলাকার অনেক কৃষক যোগাযোগ করেছেন বীজ নেওয়ার জন্য। কারণ, তাঁরা হাইব্রিড চাষ করে ঝুঁকিতে পড়তে চান না। নিজের বীজে নিজেই স্বয়ংসম্পন্ন হতে চান। তাই ওমর ফারুক ঠিক করেছেন, উৎপাদিত ধান থেকে ২৫ মণ রেখে দেবেন বীজের জন্য। এই বীজ বিক্রি করে বাড়তি আয় হবে তাঁর।
শুধু কৃষক হাজি মোস্তফা কিংবা ওমর ফারুকই নন, নোয়াখালীর সুবর্ণচরসহ জেলার বিভিন্ন উপজেলার কৃষকেরা চলতি বোরো মৌসুমে ব্রি উদ্ভাবিত উচ্চ ফলনশীল জাতের ধান চাষ করে সফলতার মুখ দেখেছেন। পাচ্ছেন হাইব্রিড ধানের চেয়েও বেশি ফলন। এর মধ্যে মোহাম্মদপুর গ্রামের কৃষক মাহফুজা বেগম ও আশরাফ হোসেন দম্পতির খেতে চাষ করা ডায়াবেটিক রোগীদের সহনীয় ব্রি-১০৫ জাতের ধানের ফলন পাওয়া গেছে হেক্টরপ্রতি ৮ দশমিক ২ টন, যা বাজারের হাইব্রিড বীজের সমান। এই ধানেরও বীজ সংরক্ষণ করতে পারবেন কৃষকেরা।
চলতি বোরো মৌসুমে জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর বৃহত্তর নোয়াখালী অঞ্চলে নতুন জাতের ব্রি ধানের ৪৯০টি প্রদর্শনী খামার করেছে। পল্লী কর্ম-সহায়ক ফাউন্ডেশন-পিকেএসএফের স্থানীয় সহযোগী প্রতিষ্ঠান সাগরিকা সমাজ উন্নয়ন সংস্থার মাধ্যমে এসব প্রদর্শনীতে ব্রি উদ্ভাবিত ৮ জাতের ধান চাষ করা হয়েছে। এই জাতের ধানগুলো উচ্চ ফলনশীল, রোগ প্রতিরোধী এবং বিভিন্ন পুষ্টিগুণসমৃদ্ধ।
কৃষকেরা জানান, এত দিন তাঁরা বাজার থেকে বিভিন্ন কোম্পানির হাইব্রিড ও দেশীয় উফশী (উচ্চ ফলনশীল) জাতের ধানের বীজ কিনে আবাদ করে আসছেন। এবার এসবের বাইরে ব্রি উদ্ভাবিত উফশী ২৮, ২৯, ৫০ ও ৫৫ ধান আবাদ করেছেন অনেকে। এর মধ্যে হাইব্রিড বীজের প্রতি কেজির দাম ৩৫০ থেকে ৫০০ টাকা। আর ব্রির উফশী ধানের বীজ ৫০-১০০ টাকায় পাওয়া যায়। এর মধ্যে প্রতি একর জমিতে চাষ করতে হাইব্রিড ধানের বীজ লাগে ৬ কেজি এবং উফশী জাতের বীজ লাগে ১০ কেজি। এসব বীজের মধ্যে হাইব্রিড প্রতি একরে উৎপাদন হয় ৯০ মণ, উফশী (উচ্চ ফলনশীল) ব্রি-২৮, ২৯, ৫০ ও ৫৫ উৎপাদন হয় ৭০-৭৫ মণ।
পিকেএসএফের কৃষি ইউনিট পরিচালিত সাগরিকা সমাজ উন্নয়ন সংস্থার কৃষিবিদ শিবব্রত ভৌমিক প্রথম আলোকে বলেন, নোয়াখালী অঞ্চলের ৯৫ শতাংশ কৃষক বোরো মৌসুমে মূলত বাজারের হাইব্রিড ধানের ওপর নির্ভর থাকেন। আর দেশীয় উদ্ভাবিত ব্রি ধান জাত আবাদ করেন মাত্র ৫ শতাংশ কৃষক। সাম্প্রতিক সময়ে দেখা গেছে, হাইব্রিড ধান রোগবালাইয়ে আক্রান্ত হচ্ছে বেশি। এতে অনেক কৃষকই লোকসানের মুখে পড়ছেন। তবে এ ক্ষেত্রে ব্রি উদ্ভাবিত নতুন ব্রি-ধানগুলোর ফলন হাইব্রিডের মতো ফলন দেয় এবং কিন্তু রোগবালাই নেই বললেই চলে। এতে কৃষকের খরচ কমে। লাভ হয়, আর বীজও থাকে নিজের হাতে।
ব্রির উচ্চফলনশীল জাতের নতুন জাতের ধান চাষের কথা বলতে গিয়ে জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মীরা রানী দাশ প্রথম আলোকে বলেন, ব্রি-উদ্ভাবিত বিভিন্ন পুষ্টিগুণসমৃদ্ধ ধানগুলো চাষাবাদে কৃষকদের মধ্যে তাঁরা ব্যাপক আগ্রহ লক্ষ করছেন। এর প্রধান কারণ হলো, এসব ধান চাষ করলে একদিকে পুষ্টির ঘাটতি পূরণ হবে, অন্যদিকে কৃষকেরা নিজেরা নিজেদের বীজ সংরক্ষণ করতে পারবেন। তা ছাড়া ব্রি উদ্ভাবিত এসব ধানে রোগবালাইয়ের আক্রমণ হাইব্রিডের তুলনায় কম এবং ফলন হাইব্রিডের সমান কিংবা ক্ষেত্রবিশেষে হাইব্রিড থেকেও বেশি।
এ বিষয়ে ব্রির ফেনীর সোনাগাজীর আঞ্চলিক কার্যালয়ের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা আমিনুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, ‘ব্রি এ পর্যন্ত ১১৫টি জাত আবিষ্কার করেছে। আগে আমাদের উদ্দেশ্য ছিল খাদ্যের অভাব দূর করা, ফলন বাড়ানো। বর্তমানে আমাদের উদ্দেশ্য খাদ্য ও পুষ্টির নিরাপত্তা। খাবার যাতে পুষ্টিমানসম্পন্ন হয়। অধিকাংশই আমিষ ও ভিটামিনের উৎস মাছ, মাংস, ডিম এবং ফলমূল। কিন্তু এসব সবাই কিনে খেতে পারেন না। যেহেতু ভাত প্রধান খাদ্য, এখন আমাদের যে জাতগুলো, এগুলো উদ্ভাবনে পুষ্টির দিকে বেশি মনোযোগ দেওয়া হয়েছে।’ নতুন জাতগুলো পুষ্টিনিরাপত্তা নিশ্চিত করবে, সেই সঙ্গে হাইব্রিডের প্রতি নির্ভরতা কমাতে সহায়ক ভূমিকা পালন করবে বলে তাঁরা আশা করছেন।