বাড়িছাড়া মায়ের আশায় তাদের ৭ বছর পার
Published: 7th, February 2025 GMT
‘বাবার কোনো জায়গাজমি ছিল না। তিনি মারা যান ২০০৫ সালে। তখন আমার বয়স ২০। মেজ ভাই অখিলের ১৬ ও ছোট ভাই কালুর সবে ১৩। অসহায় অবস্থায় পরিবারের হাল ধরেন মা। আমাদের নিয়ে অন্যের জমিতে কাজ করেছেন। নিজেও কাজ করেছেন অন্যের বাড়ি বাড়ি ঘুরে। মুড়ি ভেজে বিক্রি করেছেন। বহু কষ্টে বড় করেছেন আমাদের। যখন সবাই বড় হলাম, বৃদ্ধ মাকে একটু শান্তিতে রাখব, তখনই নিরুদ্দেশ হন তিনি।’
একদমে কথাগুলো বললেন নিখিল বৈরাগী। তিনি বরিশালের আগৈলঝাড়া উপজেলার প্রয়াত নিত্যানন্দ বৈরাগীর ছেলে। নিখিলদের মা মমতা বৈরাগী ২০১৮ সালের ১৯ জানুয়ারি সকালে বাড়ি থেকে সবার অলক্ষ্যে বেরিয়ে যান। সেই থেকে তাঁর অপেক্ষায় দিন কাটছে পরিবারের সদস্যদের।
উপজেলার বাকাল গ্রামের বাসিন্দা এ পরিবারটি। মমতা বৈরাগী তিন ছেলে, পুত্রবধূ নাতি-নাতনি নিয়ে কষ্টেসৃষ্টে থাকলেও পরিবারে সুখ ছিল। নিখিল এখন ঢাকায় একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কর্মরত। তাঁর অন্য দুই ভাই অখিল বৈরাগী ও কালু বৈরাগী পেশায় কাঠমিস্ত্রি।
পরিবারের সদস্যরা জানান, মমতার বাড়ি পাশের ডুমুরিয়া গ্রামে। ১৯৯৫ সালে তাঁর বাবা নিরঞ্জন বালার মরদেহ পাওয়া যায় বাকাল-কোদালধোয়া সড়কের পাশে। এর ১০ বছর পর স্বামী নিত্যানন্দ বৈরাগী হঠাৎ হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যান। এই দুই শোক বুকে চেপে কিশোর-তরুণ তিন ছেলেকে নিয়ে জীবনের লড়াই শুরু করেন মমতা। তবে মাঝেমধ্যেই মানসিক ভারসাম্যহীনতার লক্ষণ দেখা দেয়। প্রায়ই তিনি কাউকে কিছু না বলে বাড়ি থেকে বেরিয়ে বাবার বাড়ি বাকাল ইউনিয়নের ডুমুরিয়া গ্রামে চলে যেতেন। কখনও চলে যেতেন বোনের বাড়ি রত্নপুর ইউনিয়নের মোল্লাপাড়া গ্রামে। দু-একদিন থেকে বাড়ি ফিরে আসতেন।
তাঁর মেজ ছেলে অখিল বৈরাগীর স্ত্রী ঝুনু রানী বলেন, ‘দিনটি ছিল শুক্রবার। শাশুড়িকে সকালের খাবার দিয়ে আমি সংসারের কাজে যাই। তিনি খাবার খেয়ে পান মুখে দিয়ে বাড়ি থেকে বের হয়ে পাশের সড়ক ধরে দক্ষিণ দিকে যান। আমরা সারাদিন তাঁর অপেক্ষায় থাকলেও তিনি আজ অবধি ফিরে আসেননি। বউ হয়ে এ বাড়িতে আসার পর তাঁকে খুব কাছ থেকে দেখেছি। খুব ভালো মনের মানুষ ছিলেন।’
মমতা হারিয়ে যাওয়ার সময় অখিলের ছেলে তন্ময় বৈরাগী ছিলেন ১০ বছর বয়সী। এখন তিনি আগৈলঝাড়ার সরকারি শহীদ আব্দুর রব সেরনিয়াবাত ডিগ্রি কলেজে উচ্চ মাধ্যমিক প্রথম বর্ষের ছাত্র। তন্ময় বলেন, ‘ঠাকুরমাকে হারিয়ে নাতি হিসেবে তাঁর আদর-ভালোবাসা থেকে বঞ্চিত হয়েছি। তাঁর কথা প্রায় ভুলতে বসেছি।’
নিখোঁজ হওয়ার পর মমতার ছেলেরা আগৈলঝাড়া, পাশের উপজেলা গৌরনদী, উজিরপুর, কালকিনি, ডাসার, কোটালীপাড়াসহ বিভিন্ন এলাকায় মাইকিং করেন। মায়ের ছবিসহ পোস্টারিং করেন। এমনকি ঢাকা, শরীয়তপুর, গোপালগঞ্জ, মাদারীপুরসহ আত্মীয়স্বজনের মাধ্যমে ভারতেও খোঁজ করেছেন।
মমতার দেবর গৌরাঙ্গ বৈরাগী বলেন, ‘কয়েকদিন আগে আমাদের বাড়িতে এক লোক গরু কিনতে এসেছিলেন। তিনি বৌদিকে (মমতা) কালকিনি উপজেলার ভুরঘাটা স্ট্যান্ডে দেখেছেন বলে জানান। আমরা দ্রুত সেখানে যাই। এক পাগলের পলিথিনের কিছু পোটলা পাই, বৌদিকে পাইনি।’
মমতার জা রেখা ঘটক বলেন, ‘আমরা এখনও তাঁর অপেক্ষায় আছি; আজীবন থাকব। তিনি যদি বেঁচে নাও থাকেন, তবুও ১২ বছরের আগে কোনো ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠান করা যাবে না। তাঁর অপেক্ষায় এক যুগ থাকব। এর মধ্যে ফিরে না এলে ধরে নেব তিনি বেঁচে নেই। তখন সনাতন ধর্মীয় ঋতি-নীতি অনুযায়ী শ্রাদ্ধানুষ্ঠান করব।’
বাকাল ইউপির ৩ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য বিনয় বৈরাগী বলেন, ‘মমতা বৈরাগী নিখোঁজ হওয়ার পর আমিও তাঁর ছেলেদের সঙ্গে বিভিন্ন স্থানে খুঁজতে গিয়েছি। কিন্তু এখনও খোঁজ মেলেনি।’
আগৈলঝাড়া থানার পরিদর্শক (তদন্ত) সুশংকর মল্লিক বলেন, মমতা বৈরাগী নিখোঁজের ঘটনায় সাত বছর আগে জিডি হয়েছিল। তখন আগৈলঝাড়া থানা ডথেকে দেশের সব থানায় অবগত করা হয়। কিন্তু কোনো তথ্য আসেনি।
.উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: বর শ ল কর ছ ন পর ব র মমত র উপজ ল
এছাড়াও পড়ুন:
দাবানলে পুড়ছে ইসরায়েল, ‘জরুরি অবস্থা’ ঘোষণা
ইসরায়েলের জেরুজালেম শহরের কাছে ছড়িয়ে পড়েছে ভয়াবহ দাবানল। শুষ্ক আবহাওয়ায় তীব্র বাতাসে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে হিমশিম খাচ্ছেন অগ্নিনির্বাপণ কর্মীরা। এমন পরিস্থিতিকে ‘জাতীয় জরুরি অবস্থা’ ঘোষণা করেছেন ইসরায়েলের প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইসরায়েল কাটজ। খবর সিএনএন, টাইমস অব ইসরায়েল, বিবিসি, আল জাজিরার
দাবানল নিয়ন্ত্রণে আন্তর্জাতিক সহায়তা চেয়েছে ইসরায়েল। দাবানলে এ পর্যন্ত অন্তত ১৩ জন আহত হয়েছেন। তবে কারও মৃত্যুর খবর পাওয়া যায়নি।
দাবানলকবলিত কয়েকটি এলাকার মানুষজনকে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া গুরুত্বপূর্ণ বেশ কয়েকটি সড়ক বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।
ইসরায়েলের প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইসরায়েল কার্তজ বলেছেন, এই ভয়াবহ পরিস্থিতি মোকাবিলায় তারা আন্তর্জাতিক সহায়তা চেয়েছেন। তিনি বলেন, ‘আমরা জাতীয় জরুরি অবস্থার মধ্যে আছি।’
জেরুজালেমের অগ্নিনির্বাপণ বিভাগের কমান্ডার শমুলিক ফ্রিডম্যান বলেন, ইসরায়েলের ইতিহাসে এটি সম্ভবত সবচেয়ে বড় দাবানল। সতর্ক করে তিনি বলেন, কিছু সময়ের মধ্যে ঘণ্টায় ৬০ মাইলের বেশি গতিতে বাতাস বইতে পারে, যা পরিস্থিতিকে আরও ভয়াবহ করে তুলতে পারে।
এই দাবানলের কারণে বুধবার ইসরায়েলের মেমোরিয়া ডেতে তেল আবিব ও জেরুজালেমের মধ্যে সংযোগকারী প্রধান সড়ক ‘রুট-১’ বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া ভিডিওতে দেখা গেছে, ঘন ধোঁয়ার মধ্যে মানুষ সড়কের পাশ দিয়ে হেঁটে যাচ্ছে।
কয়েক ঘণ্টা পরে জরুরি সেবাকর্মীরা মহাসড়কে পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়ে থাকা সারি সারি গাড়ি তল্লাশি করে দেখছিলেন, ওই সব গাড়ির মধ্যে কেউ আটকে আছেন কি না।
অগ্নিনির্বাপণ বিভাগের কমান্ডার শমুলিক ফ্রিডম্যান বলেন, আমরা এখনো জানি না, কী কারণে আগুন লেগেছে। আমরা এখন পর্যন্ত কোনো সূত্রও খুঁজে পাইনি। এখনো পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনা যায়নি।
ইসরায়েলি পুলিশ বলেছে, তারা সন্দেহভাজন এক ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করেছে। ওই ব্যক্তি একটি খোলা মাঠে আগুন লাগানোর চেষ্টা করছিলেন বলে পুলিশের দাবি।
এক বিবৃতিতে ইসরায়েলি পুলিশ দাবি করেছে, জেরুজালেমের পুলিশ কর্মকর্তারা পূর্ব জেরুজালেমের একজন বাসিন্দাকে হাতেনাতে ধরে ফেলেছে। ওই ব্যক্তি তখন শহরের দক্ষিণ প্রান্তের একটি খোলা মাঠে আগুন লাগানোর চেষ্টা করছিলেন। তার কাছ থেকে একটি লাইটার, তুলা ও অন্যান্য দাহ্য পদার্থ উদ্ধার করা হয়েছে।
ইসরায়েলি পুলিশের দাবি, ৫০ বছর বয়সী সন্দেহভাজন ওই ব্যক্তি পূর্ব জেরুজালেমের উম তুবা এলাকার বাসিন্দা। উম তুবা এলাকায় আরব ফিলিস্তিনিরা বসবাস করে থাকে।
ইসরায়েলের পররাষ্ট্রমন্ত্রী গিদন সার দাবানল মোকাবিলায় ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রয়েছে, এমন ইউরোপীয় দেশগুলোর সঙ্গে কথা বলছেন। তিনি তাদের কাছ থেকে উড়োজাহাজের সহায়তা চেয়েছেন। ইতালি ও মেসিডোনিয়া থেকে তিনটি উড়োজাহাজ শিগগিরই ইসরায়েলে পৌঁছাবে বলে জাতীয় নিরাপত্তা কাউন্সিল জানিয়েছে। কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, দাবানল ছড়িয়ে পড়া এলাকা থেকে মানুষকে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে।
প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইসরায়েল কার্তজ বলেন, ‘আমরা জাতীয় জরুরি অবস্থার মধ্যে আছি। জীবন বাঁচাতে এবং দাবানল নিয়ন্ত্রণে আনতে সব বাহিনীকে সক্রিয় করতে হবে।’
ইসরায়েলের ফায়ার অ্যান্ড রেসকিউ সার্ভিস জানিয়েছে, প্রায় ১২০টি দল এবং ১২টি অগ্নিনির্বাপণ বিমান ও হেলিকপ্টার দাবানল মোকাবিলায় কাজ করছে।
শামির মেডিকেল সেন্টার ও কপলান মেডিকেল সেন্টারের তথ্যমতে, দাবানলের কারণে অন্তত ডজন খানেক মানুষকে এই দুটি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
ইতিমধ্যে জেরুজালেমের উপকণ্ঠে অবস্থিত হাদাসা মেডিকেল সেন্টারের পক্ষ থেকে সাধারণ মানুষের প্রতি অনুরোধ করা হয়েছে, ‘জরুরি প্রয়োজন ছাড়া’ কেউ যেন হাসপাতালে না আসেন। হাসপাতালে ভর্তি থাকলেও যাদের অবস্থা গুরুতর নয়, তাদের হাসপাতাল থেকে সরিয়ে নেওয়া হচ্ছে। একই সঙ্গে দাবানলে আহত ব্যক্তিদের হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়ার প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে।
গত সপ্তাহে যে এলাকায় দাবানল দেখা দিয়েছিল, এবারও দাবানল প্রায় একই জায়গায় ছড়িয়েছে।