ক্ষণে ক্ষণে রং পাল্টানো ফাইনালে শেষ হাসি তামিম-মুশফিকই হাসলেন। ক্যারিয়ারের শেষ ট্রফি মনে করে তামিম তো সবাইকে নিয়ে গ্যালারি প্রদক্ষিণও করেন। তাদের মুখে এই হাসি ফুটিয়েছেন রিশাদ হোসেন। অভিজ্ঞ সবাই যখন বিদায় নিয়েছেন, তখন জাদু দেখান এ তরুণ। শেষ দুই ওভারে তাঁর দুটি ছক্কায় কঠিন স্নায়ুর পরীক্ষায় উতরে গিয়ে শিরোপা ধরে রাখল বরিশাল। ঢাকা গ্ল্যাডিয়েটর্স ও কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্সের পর তৃতীয় দল হিসেবে ব্যাক টু ব্যাক বিপিএল জিতল ফরচুন বরিশাল। চিটাগং কিংসের ৩ উইকেটে করা ১৯৪ রান তারা ৭ উইকেট হারিয়ে টপকে যায় ৩ বল হাতে রেখে।
দুইশর কাছাকাছি রান তাড়া করতে নেমে তামিম ইকবাল ও কাইল মায়ার্সের দারুণ ব্যাটিংয়ে ম্যাচ বরিশালের হাতের মুঠোই চলে এসেছিল। শেষ ১৮ বলে ২৫ রান প্রয়োজন ছিল বরিশালের, হাতে উইকেট ৬টি। ধুন্ধুমার টি২০ যুগে এটা মামুলি বিষয়। কিন্তু ১৮তম ওভারে মাত্র ৫ রান দিয়ে মায়ার্স-মাহমুদউল্লাহ দু’জনকেই আউট করে দেন শরিফুল। জোড়া উইকেটে দারুণভাবে ম্যাচে ফিরে আসে চিটাগং।
তবে রিশাদ হোসেন উইকেটে গিয়ে ছয় মেরে আবার ম্যাচ বরিশালের আয়ত্তে নিয়ে আসেন। ১৯তম ওভারের শেষ বলে মোহাম্মদ নবি ক্যাচ দিলে আবার যেন ম্যাচ চিটাগংয়ের দিকে হেলে যায়। শেষ ওভারে বরিশালের প্রয়োজন ৮ রান। তিন ফাস্ট বোলারের কোটা শেষ হয়ে যাওয়ায় শেষ ওভারে মিডিয়াম পেসার হোসাইন তালাতের হাতে বল তুলে দেন চিটাগংয়ের অধিনায়ক মিঠুন। তাঁর প্রথম বলেই মাথার ওপর দিয়ে ছয় মেরে দেন রিশাদ। পরের বলে সিঙ্গেল নিলে দুই দলের স্কোর সমান হয়ে যায়। পরের বলে তানভীর ব্যাটে-বলে করতে না পারলে আবার বরিশালবাসীর টেনশন। পরের বলটি তালাত ঠুকে দিলে তানভীরের মাথার ওপর দিয়ে চলে যায়। দুই ব্যাটার রানের জন্য দৌড় শুরু করার পরই দু’হাত প্রসারিত করে ওয়াইডের সংকেত দেন আম্পায়ার। সংকেত দেখে রান নেওয়া বাদ দিয়ে বিজয় উদযাপনে ভোঁ দৌড় দেন তানভীর-রিশাদ। ডাগআউট থেকে ছুটে এসে তাদের জড়িয়ে ধরে আনন্দে শামিল হন সতীর্থরা।
একে তো ফাইনালের চাপ, তার ওপর দুইশ ছুঁইছুঁই টার্গেট– এমন পরিস্থিতিতে যেমন উদ্যমী ভয়ডরহীন সূচনা দরকার, সেটাই করেন তামিম ইকবাল। বিনোরা ফার্নান্দোর প্রথম ওভারেই তিন চার মেরে ১৪ রান তুলে নেন তামিম। এর পর শরিফুলকেও টানা তিন চার মারেন। ২৪ বলে ৫০ পূরণ করে রান তাড়ায় সামনে থেকে নেতৃত্ব দেন তামিম। ওপেনিং জুটিতে তাওহিদ হৃদয়কে নিয়ে ৮ ওভারে ৭৬ রান তোলেন তিনি। শেষ পর্যন্ত ২৯ বলে ৫৪ রান করে শরিফুলের বলে লংঅফ সীমানায় ক্যাচ দিয়ে আসেন তিনি। তামিম ক্যাচ দেওয়ার তিন বল পর শরিফুলের দারুণ এক ডেলিভারিতে ডেভিড মালানও এলবির ফাঁদে পড়েন। এক ওভারে দুই উইকেট তুলে নিয়ে উজ্জীবিত হয় ওঠে কিংস। এর পর তাওহিদ হৃদয় এবং মুশফিকুর রহিমও বড় ইনিংস খেলতে পারেননি। তবে কাইল মায়ার্স দলকে জয়ের দ্বারপ্রান্তে নিয়ে যান আর ফিনিশিং দেন রিশাদ।
কে ভেবেছিল, খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে ফাইনালে আসা চিটাগং কিংস এমন উড়ন্ত সূচনা করবে! টসে হেরে ব্যাটিং করতে নেমে একেবারে রেকর্ড করে বসেন চিটাগংয়ের দুই ওপেনার পারভেজ হোসেন ইমন ও খাজা নাফি। ফরচুন বরিশালের বোলিং আক্রমণ বেধড়ক পিটিয়ে ওপেনিং জুটিতে তারা দু’জন ১২১ রান তুলে নেন, যা বিপিএল ফাইনালে ওপেনিং জুটিতে সর্বোচ্চ। এর আগে ফ্র্যাঞ্চাইজি এ টুর্নামেন্টের ফাইনাল ওপেনিংয়ে সেঞ্চুরি জুটি হয়নি। গত বছর বরিশালের হয়ে তামিম ইকবাল ও মেহেদী হাসান মিরাজের ৭৬ রানের জুটিটি ছিল এতদিনের সেরা।
৭৬ বলে ১২১ রানের রেকর্ড জুটির পথে দারুণ ব্যাটিং করেন চিটাগংয়ের দুই ওপেনার। শুরুটা করেন পারভেজ। দুই ওভার দেখেশুনে খেলার পর স্পিনার তানভীরের তৃতীয় ওভারে দুই ছয়ে ১৮ রান তুলে নেন পারভেজ। পাওয়ার প্লেতে চিটাগং রান তোলে ৫৭, যেখানে পারভেজের সংগ্রহ ৩২, সেটাও মাত্র ১৫ বলে। ৩০ বলে হাফ সেঞ্চুরি পূরণ করেন পারভেজ। একটু দেরিতে হাত খোলা নাফি রিশাদকে ছক্কা মেরে পঞ্চশ করেন ৩৭ বলে। এরই মধ্যে তারা ১০০ পেরিয়ে যান, নতুন ওপেনিং রেকর্ডও করেন। শেষ পর্যন্ত এবাদত ভাঙেন এ জুটি।
৪৪ বলে ৬৬ রান করে উইকেটের পেছনে ক্যাচ দিয়ে আসেন তিনি। এর পর গ্রাহাম ক্লার্ক এসে রানের গতি আরও বাড়িয়ে দেন। তবে হাফ সেঞ্চুরি পূরণের পর পারভেজ কিছুটা স্লথ হয়ে যান। ৩০ বলে ৫০ করা এ ওপেনার পরের ১৯ বলে ২৮ রান করেন। তাই তো শেষ চার ওভারে হাতে এক গাদা উইকেট থাকার পরও ৩১ রান তুলতে সমর্থ হয় তারা। শেষ দিকে মাংসপেশিতে টান পড়ায় দৌড়াতেও সমস্যা হচ্ছিল ক্লার্কের। ২৩ বলে ৪৪ রান করে রান আউট হয়ে যান। আর ইমন ৪৯ বলে ৭৮ রানে অপরাজিত ছিলেন। শেষ দিকে প্রত্যাশামতো রান তুলতে না পারলেও চিটাগংয়ের ৩ উইকেটে করা ১৯৪ রান বিপিএল ফাইনালের ইতিহাসে তৃতীয় সর্বোচ্চ।
.উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: বর শ ল ব প এল র ন কর উইক ট
এছাড়াও পড়ুন:
নড়াইলে সরকারি গাছ বিক্রির অভিযোগে চেয়ারম্যানসহ ১৩ জনের বিরুদ্ধে মামলা
নড়াইল সদর উপজেলার শাহাবাদ ইউনিয়নে সড়কের পাশে সরকারি গাছ চুরি করে বিক্রির অভিযোগে মামলা হয়েছে। গতকাল বুধবার রাতে শাহবাদ ইউনিয়ন ভূমি সহকারী কর্মকর্তা মশিউর রহমান বাদী হয়ে সদর থানায় মামলাটি করেন।
মামলায় ওই ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান জিয়াউর রহমানসহ ১৩ জন আসামি করা হয়েছে। অন্য আসামিরা হলেন প্রশিকা নড়াইল উন্নয়ন এলাকা ব্যবস্থাপক শাহাব উদ্দিন ও প্রশিকার গঠিত সংগঠন প্রভাতী যুব সংঘের সভাপতি নড়াইল সদর উপজেলার তুজরডাঙ্গা এলাকার মুজিবুর রহমান, সদস্য একই এলাকার জরিনা বেগম, রজব আলী, মো. আজিবর, মো. ইলিয়াছ, ইমান আলী, মো. ওমর, মো. হায়দার, আবু সাঈদ, মো. এনামুল ও মো. শরিফুল।
এ বিষয়ে আজ বৃহস্পতিবার সকালে নড়াইল সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সাজেদুল ইসলাম বলেন, ‘সরকারি গাছ চুরি করে বিক্রির অভিযোগে একটি মামলা হয়েছে। ঘটনার তদন্ত করে দোষী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে আইনানুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
মামলার এজহারে বাদী অভিযোগ করেছেন, গত ২৯ এপ্রিল নড়াইল সদর উপজেলার শাহাবাদ বাজার থেকে হাজির বটতলা পর্যন্ত সরকারি রাস্তার জায়গা থেকে গাছ কাটা ও চুরি করে বিক্রির সংবাদ পেয়ে তিনি ঘটনাস্থলে যান। উপস্থিত হয়ে দেখেন, কাটা গাছবোঝাই একটি ট্রাক এবং নছিমন জব্দ করেছেন নড়াইল সদর উপজেলা ভূমি অফিসের সহকারী কমিশনার দেবাশীষ অধিকারী। তখন ঘটনাস্থলে শ্রমিকদের জিজ্ঞাসাবাদ ও খোঁজ নিয়ে জানতে পারেন, মামলার আসামিরা কোনো ধরনের অনুমতি ছাড়াই খাসজমি থেকে গাছ কেটে বিক্রি করেছেন। এর আগেও একবার তাঁরা ওই জমি থেকে গাছ বিক্রি করেছিলেন। জব্দ করা গাছের লগ, ডালপালা এবং আগে কাটা গাছের অবশিষ্ট ভূমিসংলগ্ন গুঁড়ি পর্যবেক্ষণ করে বোঝা গেছে, ওই স্থান থেকে আনুমানিক পাঁচ লাখ টাকার অধিক গাছ চুরি করে কাটা ও বিক্রি হয়েছে।
প্রশিকা নড়াইল উন্নয়ন এলাকার ব্যবস্থাপক শাহাব উদ্দিন বলেন, ২০০৯ সালে প্রশিকা, ইউনিয়ন পরিষদ ও প্রভাতী যুব সংঘের যৌথ উদ্যোগে একটি চুক্তির মাধ্যমে সড়কের পাশে গাছগুলো রোপণ করেছিল। সে সময় সড়কটি খাস খতিয়ানভুক্ত ছিল না। বর্তমানে তা সরকারের আওতায় পড়ায় গাছ কাটার অনুমতি চেয়ে ইউএনওর কাছে আবেদন করা হয়েছিল, তবে প্রশাসন কোনো সিদ্ধান্ত দেয়নি। কিছুদিন আগে ইউপি সদস্য ইব্রাহিম তাঁকে ফোনে জানান, বিদ্যুৎ বিভাগের কাটা ডালপালা বিক্রি করতে চান চেয়ারম্যান। বিদ্যুৎ বিভাগের কাটা ডালপালাগুলো পড়ে থেকে নষ্ট হবে ভেবে তিনি বিক্রিতে সম্মতি দেন। পরে গাছ কীভাবে বা কারা কেটেছে, তা তিনি জানেন না।
মামলা করার আগে অবৈধভাবে গাছ কাটার অভিযোগের ব্যাপার জানতে চাইলে ইউপি চেয়ারম্যান জিয়াউর রহমান বলেছিলেন, প্রশিকার সঙ্গে চুক্তির একটি পক্ষ ছিল ইউনিয়ন পরিষদ। সেই হিসেবে গাছ কাটার অনুমতি নিতে ইউএনও বরাবর প্রশিকার আবেদন তিনি চেয়ারম্যান হিসেবে সুপারিশ করেছিলেন। তবে গাছ কেটেছে প্রশিকা আর তাদের সংগঠন। এখানে চেয়ারম্যান-মেম্বরের কিছু নেই।
নড়াইল সদর উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) দেবাশীষ অধিকারী বলেন, প্রশিকার চুক্তির সময় সড়কটি ব্যক্তিমালিকানাধীন জমিতে ছিল, পরে ২০১৫ সালে এটি খাস খতিয়ানভুক্ত হয়। খাসজমি থেকে গাছ কাটা বেআইনি। এ কারণে তাঁদের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে।