ভারতের তামিলনাড়ু রাজ্যের চেন্নাই শহর থেকে প্রায় ৪০ কিলোমিটার দূরে মহাবল্লীপোরাম নামে এলাকায় অবস্থিত কুমিরের বহু পুরোনো একটি খামার। এটি ‘ক্রোকোডাইল ব্যাংক’ নামে বেশি পরিচিত। খামারটির পুরো নাম মাদ্রাজ ক্রোকোডাইল ব্যাংক ট্রাস্ট অ্যান্ড সেন্টার ফর হারপেটোলজি (এমসিবিটি)। এটি একটি সরীসৃপ চিড়িয়াখানা এবং হারপেটোলজি গবেষণা কেন্দ্র। এর লক্ষ্য, কুমির সংরক্ষণ ও রক্ষা করা। ভারতে তিন প্রজাতির কুমির রয়েছে– মার্শ কুমির, যাকে মাগারও বলা হয়; লবণপানির কুমির ও ঘড়িয়াল।

সত্তরের দশকের গোড়ার দিকে এগুলো মহাবিপন্ন ছিল। চোরা শিকারিরা চামড়ার জন্য কুমিরের পেছনে লেগেছিল। বাঁধ এবং অন্যান্য মানবসৃষ্ট কারণে কুমিরের সংখ্যা কমতে থাকে। দ্রুত কিছু করা না হলে কুমিরগুলো অদৃশ্য হয়ে যাবে। সে সময় কুমিরের জন্য একটি আদর্শ জায়গা হিসেবে ১৯৭৬ সালে এই ক্রোকোডাইল ব্যাংক প্রতিষ্ঠিত হয়। বিশ্বে কুমিরের প্রজাতি ২৩টি। এর বেশির ভাগই এই ব্যাংকে আছে। প্রতিষ্ঠানটি তিনটি বিষয়ে গুরুত্ব দিয়ে থাকে। এক.

প্রাকৃতিক ভারসাম্য রক্ষার জন্য কুমিরকে আবার বনের মধ্যে ছেড়ে দেওয়া। দুই. সরীসৃপের ভূমিকা সম্পর্কে মানুষকে শিক্ষাদান। তিন. সরীসৃপের আকর্ষণীয় প্রাকৃতিক ইতিহাস অধ্যয়ন করা। ইতোমধ্যে প্রতিষ্ঠানটি বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয় আবিষ্কার করেছে, যা কুমির সংরক্ষণে সাহায্য করবে।

চেন্নাইয়ের কুমিরের খামারটি পর্যটকদের কাছে আকর্ষণীয় স্থান। চেন্নাই শহর থেকে পন্ডিচেরি রোড ধরে প্রায় ৪০ কিলোমিটার দূরত্বে খামারটি অবস্থিত। টোটোসহ বিভিন্ন পরিবহনে যাওয়া যায়। প্রাইভেটকারে গেলে ভাড়া লাগে ১ হাজার ২০০ রুপি। খামারে প্রবেশের জন্য টিকিট কাটতে হয়। জনপ্রতি টিকিট মূল্য ১০০ রুপি। শিশুদের প্রবেশ ফি ৫০ রুপি।

খামারের ভেতর অনেক পুকুর উন্মুক্ত করে রাখা হয়েছে। সবক’টিতেই নিরাপত্তামূলক ঘের দেওয়া। একটি পুকুরে রয়েছে মাগার বা মার্শ কুমির। এরা সাধারণত মিঠাপানির জলাশয়ে বসবাস করে। প্রায় ৪০ বছর বয়সী একটি কুমিরও রয়েছে এই খামারে। ১৯৮৩ সাল থেকে এটি এখানে আছে। লবণপানির এ কুমির একসঙ্গে ৬০টি ডিম দিতে পারে।

এই খামারে রয়েছে আমেরিকান এলিগেটর কুমির। এলিগেটর কুমির কম আক্রমণাত্মক হয়। এরা একটু নিরীহ গোছের। পৃথিবীতে এগুলোর সংখ্যা অনেক বেশি। এ কারণেই এই কুমিরের মাংস উৎপাদন বা এই কুমির শিকারে বাধা নেই। এটি স্বীকৃত। প্রজনন সক্ষমতা বেশি হওয়ায় এর উৎপাদন এবং মাংস বিক্রির অনুমোদন রয়েছে।

আরেকটি পুকুরে দেখা গেল ঘড়িয়াল জাতের কুমির। ঘড়িয়ালদের জন্য এখানে বরাদ্দ করা রয়েছে শেওলায় পূর্ণ পুকুর। এখানে ছোট ছোট কচ্ছপও রয়েছে। কচ্ছপগুলোকে ঘড়িয়ালদের পিঠে বসে থাকতেও দেখা যায়। এই খামারে কিছু কুমির আছে আকারে বিশাল বড়। আবার একটিমাত্র খামারে এত প্রজাতির কুমিরের সমারোহ খুব একটা দেখা যায় না।

এখানে কুমির ছাড়াও বিপন্ন প্রজাতির সাপ, কচ্ছপের মতো সরীসৃপের প্রজনন নিয়ে গবেষণা করা হয়। খামারে প্রবেশ করার পর প্রথমেই হাতের বামে দেখা যাবে ‘স্নেক ভেনম এক্সট্রাকশন’, যেখানে আলাদা টিকিটের বিনিময়ে সাপের বিষ সংগ্রহের পদ্ধতি দেখানো হয়। এখানে প্রবেশের জন্য জনপ্রতি অতিরিক্ত ৩০ রুপি দিতে হয়। ক্যামেরা বা মোবাইল দিয়ে ছবি তুললে আরও ৩০ রুপি খরচ করতে হয়। বিষ সংগ্রহের আগে সাপ সম্পর্কে বিস্তর ধারণা দেওয়া হয় দর্শনার্থীদের। প্রতিদিন ভারতের বিভিন্ন রাজ্য তো বটেই বিভিন্ন দেশের পর্যটকরাও আসেন এ খামারে।

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: র জন য

এছাড়াও পড়ুন:

চাঁদপুরে জীবন্ত নবজাতক দাফনের চেষ্টা, হাসপাতাল বন্ধ

চাঁদপুর পৌর কবরস্থানে নবজাতক দাফনের সময় নড়ে ওঠা এবং পরবর্তীতে হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়ার পর মৃত্যুর ঘটনায় গ্রেপ্তার হয় শহরের তালতলা দি ইউনাইটেড হাসপাতালের ওয়ার্ড বয় ফারুক হোসেন গাজী (৪৫)। এই ঘটনায় আগামী দুই দিনের মধ্যে রোগীদের অন্যত্র স্থানান্তর করে হাসপাতালের কার্যক্রম বন্ধ করে দিয়েছেন ভ্রাম্যমাণ আদালত। 

বুধবার (১৭ সেপ্টেম্বর) সন্ধ্যায় দি ইউনাইটেড হাসপাতালে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করেন সদর উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট বাপ্পি দত্ত রনি।

স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, দীর্ঘদিন হাসপাতালটিতে নানা অবৈধ কার্যক্রম চলে আসছে। ওই নবজাতকের জন্মও হয় এই হাসপতালে। জীবন্ত নবজাতক দাফনের চেষ্টা করার ভিডিও ভাইরাল হলে বিষয়টি নজরে আসে প্রশাসনের এবং পুলিশ সুপারের নির্দেশে গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি) মঙ্গলবার (১৬ সেপ্টেম্বর) নবজাতককে কবরস্থানে নিয়ে আসা ওয়ার্ড বয় ফারুক গাজীকে গ্রেপ্তার করে।

এই ঘটনায় অজ্ঞাতনামা আসামি করে চাঁদপুর সদর মডেল থানায় মামলা করেন পৌর কবর স্থানের কেয়ারটেকার মো. শাহজাহান মিয়াজী।

এদিকে দি ইউনাইটেড হাসপাতালে এ ঘটনায় ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনাকালে সদর উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট বাপ্পি দত্ত রনি বলেন, “হাসপাতালে এসে ব্যবস্থাপনায় জড়িত কাউকে পাওয়া যায়নি। তাদের সাথে ফোনে যোগাযোগ করেও কোন সাড়া মিলেনি। চিকিৎসক নেই, হাসপাতালের প্যাথলজি ও ওটির সঠিক পরিবেশ নেই। একই সাথে পোস্ট অপারেটিভ রোগীর জন্য কোন সুব্যবস্থা নেই এবং হাসপাতালের কাগজপত্রও নবায়ন নেই।”

তিনি আরো বলেন, “প্রাথমিকভাবে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে পাঁচ হাজার টাকা জরিমানা এবং ওটি, প্যাথলজি ও সংশ্লিষ্ট কক্ষ সীলগালা করা হয়েছে। একই সাথে রোগীদেরকে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে অন্য স্থানে সেবার ব্যবস্থা করার জন্য নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। আমাদের অভিযানে পরিচালিত কার্যক্রম সিভিল সার্জন বরাবর প্রদান করা হবে। সিভিল সার্জন হাসপাতালের নিবন্ধন বাতিলসহ পরবর্তী ব্যবস্থা নিতে পারবেন।”

এ ভ্রাম্যমাণ আদালতে উপস্থিত ছিলেন চাঁদপুর সদর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. রফিকুল হাসান ফয়সাল, জেলা মাদক দ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক মু. মিজানুর রহমান। অভিযানে চাঁদপুর সদর মডেল থানা পুলিশ সহযোগিতা করেন।

অপরদিকে ভ্রাম্যমাণ আদালত শেষে হাসপাতালের ড্রাগ সনদসহ যাবতীয় কার্যক্রম পরীক্ষা করে দেখেন জেলা মাদক দ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক মু. মিজানুর রহমান।

ঢাকা/অমরেশ/এস

সম্পর্কিত নিবন্ধ