Samakal:
2025-11-03@00:07:24 GMT

প্রতিকারমূলক পদক্ষেপ কাম্য

Published: 9th, February 2025 GMT

প্রতিকারমূলক পদক্ষেপ কাম্য

আলু লইয়া কৃষক এইবারও দুর্দশায় নিপতিত হইল। রবিবার প্রকাশিত সমকালের প্রতিবেদন বলিতেছে, এক কেজি আলুর উৎপাদন ব্যয় ১৪ হইতে ১৬ টাকা হইলেও কৃষককে উহা বিক্রয় করিতে হইতেছে মাত্র ১০-১২ টাকায়। ফলে প্রতি কেজি আলুতে কৃষককে লোকসান গুনিতে হইতেছে ৫ টাকা অবধি। শুধু উহাই নহে, লোকসান হইতে বাঁচিতে বর্তমানে বিভিন্ন এলাকার কৃষকের হিমাগারে আলু সংরক্ষণের ক্ষেত্রেও নূতন সংকট সৃষ্টি হইয়াছে। প্রথমত, দেশে চলতি বৎসর আলু উৎপাদন ১ কোটি ২০ লক্ষ টন হইবে বলিয়া ধারণা করা হইতেছে। কিন্তু বিদ্যমান হিমাগারসমূহের মোট ধারণক্ষমতা মাত্র ৪৫ লক্ষ টন। সেই হিসাবে বিপুল পরিমাণ আলু হিমাগারের বাহিরে থাকিবে। দ্বিতীয়ত, গত বৎসর অপেক্ষা এইবার কেজিতে ১ টাকা বৃদ্ধি করিয়া হিমাগার ভাড়া ৮ টাকা করা হইয়াছে, যাহা বহন করা বিশেষত ক্ষুদ্র ও মাঝারি কৃষকের পক্ষে কঠিন। উপরন্তু, পূর্বে এক বস্তায় ৭০-৮০ কেজি আলু রাখা গেলেও এইবার ৫০ কেজির অধিক রাখা যাইবে না বলিয়া হিমাগার মালিক সমিতি জানাইয়া দিয়াছে। এইদিক হইতেও আলু সংরক্ষণে কৃষকের ব্যয় অস্বাভাবিক বৃদ্ধি পাইবে। মোদ্দা কথা, আলু লইয়া কৃষকদের উভয় সংকটে পড়িতে হইতেছে। হিমাগারে না রাখিতে পাইলে উহা একেবারে জলমূল্যে বিক্রয় করিতে হইবে; আর হিমাগারে রাখিলেও উৎপাদন ও সংরক্ষণ ব্যয় মিলাইয়া প্রতি কেজিতে কৃষকের ব্যয় এতই বৃদ্ধি পাইতে পারে, যাহা উসুল করা ভীষণ ত্রুটিযুক্ত বিদ্যমান বিপণন ব্যবস্থায় অসম্ভব হইতে পারে।

দেশে বাৎসরিক আলুর চাহিদা প্রায় ৯০ লক্ষ টন। সেই হিসাবে এইবার আলুর বাম্পার ফলন হইয়াছে, বলা যায়। দেশের প্রধান সবজির বাম্পার ফলন নিঃসন্দেহে আনন্দের সংবাদ। কিন্তু পরিস্থিতি বলিতেছে, আলুর এই বাম্পার ফলন কৃষকের জন্য তো বটেই, ভোক্তাদের জন্যও এক দুঃস্বপ্ন হইতে চলিয়াছে। এই কথা বলিবার কারণ, বিদ্যমান পরিস্থিতিতে একদিকে কৃষককে সস্তা দরে হাড়ভাঙা পরিশ্রমের ফল বিক্রয় করিয়া দিতে হইবে, অন্যদিকে মধ্যস্বত্বভোগীরা সমুদয় আলু ক্রয় করিয়া মৌসুম অন্তে বাজারে তাহাদের সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করিতে পারে। ফলে বর্তমানে সাময়িক সময়ের জন্য ভোক্তারা স্বল্প দরে আলু ক্রয় করিতে পারিলেও মৌসুম অন্তে অতি উচ্চমূল্যে তাহাদের অপরিহার্য এই সবজিটি ক্রয় করিতে হইবে, যেই পরিস্থিতি সাম্প্রতিক অতীতেও দেখা গিয়াছে।   যাহা অধিকতর আশঙ্কার, অমানুষিক পরিশ্রমের সহিত রীতিমতো ধারকর্জ করিয়া এহেন বাম্পার ফলনের পর কৃষকদের যদি লোকসান গুনিতে হয়, তাহা হইলে একসময়ে হতাশ হইয়া কৃষক আলু চাষই বন্ধ করিয়া দিতে পারে, যাহা জাতীয় খাদ্য নিরাপত্তার জন্যও হুমকি সৃষ্টি করিবে।

বাম্পার ফলনের কারণে আলুচাষির দুর্দশা এই বৎসরই নূতন নহে। আলু, তৎসহিত ধান এবং অন্যান্য ফসলের ক্ষেত্রেও প্রায়শ সমপরিস্থিতি দৃশ্যমান। কিন্তু দুঃখজনক, অতীতের কোনো সরকার বিষয়টি লইয়া গভীর কোনো ভাবনা ভাবে নাই। বিশেষজ্ঞরা বহু বৎসর যাবৎ উদ্বৃত্ত আলু রপ্তানির উদ্যোগ গ্রহণের উপর গুরুত্ব দিলেও খুব একটা পাত্তা পায় নাই। বিশেষত রপ্তানিযোগ্য আলু উৎপাদন ও বিপণনের পথে যেই সকল বাধা ইতোমধ্যে চিহ্নিত, সেইগুলি দূরীকরণে কার্যকর কোনো উদ্যোগ পরিলক্ষিত হয় নাই। তবে ইচ্ছা করিলে সরকার আলু সংরক্ষণ প্রশ্নে কৃষকের পার্শ্বে সহজেই দাঁড়াইতে পারে বলিয়া আমরা মনে করি। এই লক্ষ্যে সরকার বিশেষত প্রতি কেজি আলু সংরক্ষণ ব্যয় লইয়া হিমাগার মালিকদের সমিতির সহিত আলোচনায় বসিতে পারে। প্রয়োজনে গ্যাস-বিদ্যুৎ বিল, বর্ধিত ব্যাংক ঋণের সুদ, বীমা ব্যয় ইত্যাদি বিষয়ে তাহাদের উদ্বেগ হ্রাসে সুনির্দিষ্ট পদক্ষেপ গ্রহণ করিতে হইবে। জাতীয় স্বার্থেই দ্রুত এই সকল পদক্ষেপ সরকার গ্রহণ করিবে বলিয়া আমাদের বিশ্বাস। 

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: ব ম প র ফলন পর স থ ত র জন য সরক র হইত ছ

এছাড়াও পড়ুন:

সাংবাদিকদের কাজের স্বাধীনতা নিশ্চিত করার আহ্বান জাতিসংঘ মহাসচিবের

সাংবাদিকদের কাজের স্বাধীনতা নিশ্চিত করতে বিশ্বের সব দেশের সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস। সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে অপরাধের বিচারহীনতা বন্ধের আন্তর্জাতিক দিবস উপলক্ষে তিনি এ আহ্বান জানান। বিশ্বব্যাপী ২ নভেম্বর দিবসটি পালিত হয়।

জাতিসংঘের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত মহাসচিবের বিবৃতিতে বলা হয়, সত্যের সন্ধানে বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে কর্মরত গণমাধ্যমকর্মীরা ক্রমবর্ধমান বিপদের মুখে পড়ছেন। এর মধ্যে রয়েছে মৌখিক নিপীড়ন, আইনি হুমকি, শারীরিক আক্রমণ, কারাবাস ও নির্যাতন। এমনকি অনেককে জীবনও দিতে হচ্ছে।

আন্তোনিও গুতেরেস বলেন, ‘সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে অপরাধের বিচারহীনতা বন্ধের এই আন্তর্জাতিক দিবসে আমরা ন্যায়বিচারের দাবি জানাচ্ছি। বিশ্বজুড়ে সাংবাদিক হত্যার প্রায় ১০টি ঘটনার মধ্যে ৯টির বিচারই এখনো অমীমাংসিত রয়ে গেছে।’

জাতিসংঘ মহাসচিব বলেন, ‘বর্তমানে যেকোনো সংঘাতের মধ্যে (ফিলিস্তিনের) গাজা সাংবাদিকদের জন্য সবচেয়ে ভয়াবহ জায়গায় পরিণত হয়েছে। আমি আবারও এই ঘটনাগুলোর স্বাধীন ও নিরপেক্ষ তদন্তের আহ্বান জানাচ্ছি।’

আন্তোনিও গুতেরেস বলেন, ‘যেকোনো জায়গায় বিচারহীনতা শুধু ভুক্তভোগী এবং তাঁদের পরিবারের প্রতিই অন্যায় নয়, বরং এটি সংবাদপত্রের স্বাধীনতার ওপর আক্রমণ, আরও সহিংসতাকে প্রশ্রয় দেওয়ার শামিল এবং গণতন্ত্রের প্রতি হুমকি।’ তিনি বলেন, সব সরকারের উচিত প্রতিটি ঘটনার তদন্ত করা, প্রত্যেক অপরাধীর বিচার করা এবং সাংবাদিকেরা যাতে সর্বত্র স্বাধীনভাবে তাঁদের কাজ করতে পারেন, তা নিশ্চিত করা।’

জাতিসংঘ মহাসচিব আরও বলেন, ‘নারী সাংবাদিকদের লক্ষ্য করে অনলাইনে উদ্বেগজনকভাবে বাড়তে থাকা হয়রানিমূলক আচরণ অবশ্যই আমাদের মোকাবিলা করতে হবে। এ ধরনের অপরাধের বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই সাজা হয় না এবং এটি প্রায়শই বাস্তব জীবনে ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়ায়। যাঁরা সাংবাদিকতার সঙ্গে জড়িত, তাঁদের জন্য ডিজিটাল দুনিয়াকে নিরাপদ রাখতে হবে।’

আন্তোনিও গুতেরেস বলেন, ‘যখন সাংবাদিকদের কণ্ঠ রুদ্ধ হয়, তখন আমরা সবাই আমাদের কণ্ঠস্বর হারাই। আসুন, সংবাদপত্রের স্বাধীনতা রক্ষায়, জবাবদিহি নিশ্চিত করার দাবিতে এবং যাঁরা ক্ষমতার বিপরীতে সত্য তুলে ধরেন, তাঁরা যেন ভয় ছাড়াই তা করতে পারেন তা নিশ্চিত করতে আমরা সম্মিলিত অবস্থান নিই।’

সম্পর্কিত নিবন্ধ