হুটহাট জামিন দেবেন না: বিচারকদের আসিফ নজরুল
Published: 11th, February 2025 GMT
‘‘আমাদের যারা জজ (বিচারক) আছেন, তাদের কাছে অনুরোধ, আপনারা যে ‘বিগার পিকচার অফ’, এটা মাথায় রাখবেন। আপনারা হুটহাট করে জামিন দেবেন না।’’
মঙ্গলবার (১১ ফেব্রুয়ারি) রাজধানীর রাজারবাগ পুলিশ অডিটোরিয়ামে আয়োজিত ‘দেশের পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে মানবাধিকার ও পরিবেশের ওপর গুরুত্বসহ আইন প্রয়োগ’ বিষয়ক কর্মশালায় বিচারকদের উদ্দেশে আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক উপদেষ্টা আসিফ নজরুল এ আহ্বান জানান।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী। এ ছাড়াও বিশেষ অতিথি ছিলেন শিল্প মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা আদিলুর রহমান খান।
আসিফ নজরুল বলেন, ‘‘জামিন পাওয়ার পর একজন মানুষ দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির জন্য যদি ভয়াবহ হয়ে ওঠে, যদি পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে, একই অপরাধ আবার করার চেষ্টা করে, তাহলে জামিন দেওয়ার ক্ষেত্রে আপনাদের বিচার্য বিষয় হওয়ার কথা। আবার যিনি জামিনের যোগ্য, গত আমলের মতো তাকেও জামিন থেকে বঞ্চিত করবেন না। ওভার অল যে সিচুয়েশন, সেটা মাথার মধ্যে রাখবেন।’’
খুব চ্যালেঞ্জিং সময় অতিবাহিত করছি জানিয়ে আসিফ নজরুল বলেন, ‘‘পুলিশ ভাইয়েরা অত্যন্ত কষ্ট করে একটা হত্যা মামলার আসামিকে যখন ধরে আনেন, জুলাই গণহত্যা মামলার আসামি, সেখানে আপনাদের অবশ্যই জামিন দেওয়ার ক্ষেত্রে সতর্ক হতে হবে। আপনাদের লক্ষ্য রাখতে হবে, এই আসামিগুলো বেরিয়ে একটা বিচার প্রক্রিয়াকে কতটা বাধাগ্রস্ত করতে পারে। এখানে আপনাদের রিল্যাক্স হওয়ার কোনো সুযোগ নেই। এটা অবশ্যই আপনারা মাথায় রাখবেন। যারা এখানে প্রসিকিউটর আছেন, আপনারা লক্ষ্য রাখবেন, আপনারা হচ্ছেন সরকার।’’
তিনি বলেন, ‘‘আমরা এখন একটা চ্যালেঞ্জিং সময়ে বাস করছি, যে সময় বাংলাদেশের ইতিহাস অবিনাশ হয়েছে। পৃথিবীর বহু দেশ এমন কখনোই দেখিনি। আপনারা কয়েক সপ্তাহের মধ্যেই সহস্র হত্যাকাণ্ড দেখেছেন। হাজার হাজার তরুণ-ছাত্রের অঙ্গহানির ঘটনা দেখেছেন। নিশ্চয়ই অনেকে অনেক ফুটেজ দেখেছেন। দেখলে মনে হয় যেন গাজা স্ট্রাইকের মতো ইসরায়েলি বাহিনী হত্যা করছে। একটা ভিডিও গেম খেলা হচ্ছে।’’
‘‘আমরা এমন সময় কখনো পাইনি, যখন বাংলাদেশে ১৫টা বছর ফ্যাসিস্টের শাসন ছিল। আমরা এ রকম সময় কখনো পাইনি, যেখানে বাংলাদেশে প্রতিষ্ঠানগুলোর অ্যারোসন (ক্ষতিগ্রস্ত) হয়েছে’’ বলেও জানান তিনি।
ডিসিদের উদ্দেশে উপদেষ্টা বলেন, ‘‘এখানে ডিসি যারা রয়েছেন, আপনারা জেলা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর প্রধান। প্রসিকিউটের সঙ্গেও আপনাদের যোগাযোগ থাকে। এই চারটা প্রতিষ্ঠান যদি সমন্বয় করে একসঙ্গে কাজ করে, তাহলে বর্তমান চ্যালেঞ্জটা আরো সাকসেসফুল মোকাবিলা করতে পারবো। আমাদের এখানে গণহত্যা হয়েছে, সেটা মাথায় রেখে কাজ করতে হবে। ১৫ বছর গুম হয়েছে, বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড হয়েছে, অরাজকতা হয়েছে, এগুলো বানানো কথা না। আপনারা প্রত্যেকে জানেন। নিজেদের বিবেককে জিজ্ঞাসা করেন।’’
যখন দেশের মানুষ দেখবে রাষ্ট্র এক্সিস্ট করে, পুলিশ-আদালত ঠিকমতো ফাংশন করে, তখন এই যে মবোক্রেসি বা মবতন্ত্রের বিরুদ্ধে যে আমরা এত বেশি সোচ্চার হই, এটাকে ভয়াবহ জিনিস মনে করি। যখন পুলিশ, কোর্ট ও আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি সবকিছু ঠিকমত কাজ করবে, তখন মবের প্রকোপ আরো কমে যাবে। দেশে একটা সহনীয় পরিস্থিতি সৃষ্টি হবে। মানুষ দেখতে চায় সেই রাষ্ট্র। সে ক্ষেত্রে সবাই আরো বেশি দায়িত্বশীলতার পরিচয় দেবেন। সবাই রাষ্ট্রের কর্মচারী, একটা পরিবারের সদস্য, সেই বিষয়টা মাথায় রেখে একজন আরেকজনকে সহায়তা করতে বলেন আইন উপদেষ্টা।
.উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর পর স থ ত আপন দ র আপন র
এছাড়াও পড়ুন:
তুলশীগঙ্গার তীরে সন্ন্যাসতলীর শতবর্ষী ঘুড়ির মেলা
জয়পুরহাটের ক্ষেতলাল উপজেলার মামুদপুর ইউনিয়নের মহব্বতপুর গ্রাম ঘেঁষে তুলশীগঙ্গা নদীর অদূরে সন্ন্যাসতলীর বটতলা। জায়গাটিতে প্রায় একশ বছর আগে থেকে বাংলা জ্যৈষ্ঠ মাসের শেষ শুক্রবার আয়োজন হয় ঘুড়ির মেলা। এবারও এর ব্যতিক্রম হয়নি। অন্তত ৫০ গ্রামের হাজারো মানুষের উপস্থিতিতে শুক্রবার সন্ন্যাসতলী ঘুড়ি উৎসব অনুষ্ঠিত হয়েছে।
মেলার দিনক্ষণ মনে রেখে সময়মতো দোকানিদের পাশাপাশি দর্শনার্থীরা ভিড় জমান নিভৃত পল্লীতে। আগে মেলার দিন বৃষ্টি হওয়া যেন নিয়ম হয়ে দাঁড়িয়েছিল। কিন্তু এবার ব্যতিক্রম ঘটনা ঘটেছে। প্রচণ্ড গরম ও তাপপ্রবাহের মধ্যেই চলে এ আয়োজন। বৈরী পরিবেশের কারণে উৎসবের স্বাভাবিক কর্মকাণ্ডে কিছুটা ব্যাঘাত ঘটেছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।
স্থানীয় প্রবীণ বাসিন্দারা বলছেন, সন্ন্যাসতলীর এ ঘুড়ি উৎসব শুরুর দিন বিকেলে বটতলায় স্থানীয় হিন্দু সম্প্রদায় সন্ন্যাস পূজা পালন করেন। তাদের এ পূজা-অর্চনা ঘিরেই মূলত এ মেলার উৎপত্তি। তবে শুরুর কথা কেউ বলতে পারেননি। প্রবীণরা শুধু জানেন, একশ বছরের বেশি সময় ধরে তারা এ মেলার আয়োজন দেখে আসছেন।
মেলার নিজস্ব জায়গা না থাকলেও এর ব্যাপ্তি প্রায় দুই কিলোমিটার এলাকাজুড়ে। প্রচণ্ড গরমের মধ্যেই এক দিনের এ মেলা ঘিরেই জেলার জামালগঞ্জ চারমাথা থেকে ঐতিহাসিক আছরাঙ্গাদীঘি পর্যন্ত রকমারি পণ্যের দোকান বসে। এখান থেকে সংসারের প্রয়োজনীয় বিভিন্ন আসবাব থেকে শুরু করে ছোট মাছ ধরার বাঁশের তৈরি পণ্য খলসানি, টোপা, ডালা, চালুন কিনে নেন অনেকে।
সুতার তৈরি তৌরা জাল, গৃহস্থালি কাজে ব্যবহৃত দ্রব্যাদি, বিভিন্ন ধরনের খেলনা, মিষ্টান্ন, প্রসাধনী, মাটির তৈজসপত্রসহ বিভিন্ন সামগ্রী বিক্রি হয়। শিশুদের বিনোদনের জন্য ছিল নাগরদোলার ব্যবস্থাও। আর মেলার বড় আকর্ষণ ঘুড়ি ওড়ানো ও বিক্রি। পার্শ্ববর্তী বিভিন্ন জেলা থেকে ব্যবসায়ীরা এসেছিলেন ঘুড়ি বিক্রি করতে।
প্রচণ্ড গরমের পাশাপাশি তেমন হাওয়া-বাতাস না থাকায় এবার ঘুড়ি ওড়ানোর প্রতিযোগিতা সেভাবে জমে ওঠেনি। তবে ঘুড়ি বেচাকেনা ও শিশু-কিশোরদের উচ্ছ্বাস ছিল চোখে পড়ার মতো। এ উপলক্ষে আসা হাজার হাজার দর্শনার্থীর নিরাপত্তার জন্য মেলায় সার্বক্ষণিক আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের টহল ছিল।
আদমদীঘির শিববাটি গ্রামের ঘুড়ি ব্যবসায়ী সালাম হোসেনের ভাষ্য, সন্ন্যাসতলীর মেলা বড় হওয়ায় তিনি এসেছেন ঘুড়ি বিক্রির জন্য। মেলায় প্রত্যাশা অনুযায়ী ঘুড়ি বিক্রি করতে পেরে তিনি খুশি। জয়পুরহাটের পার্বতীপুর এলাকার ঘুড়ি ব্যবসায়ী মফিজ উদ্দিন ও মজনু সরদার বলেন, পূর্বপুরুষের আমল থেকে এ মেলার কথা শুনে আসছেন তারা।
মেলা উদযাপন ও পূজা কমিটির সদস্য মহব্বতপুর গ্রামের মন্টু মণ্ডল বলেন, মেলাটি হিন্দু সম্প্রদায়ের হলেও এটি আসলে সব ধর্মালম্বীর মিলনমেলায় পরিণত হয়েছে।
মামুদপুর ইউনিয়ন পরিষদের প্যানেল চেয়ারম্যান মিলন হোসেনের ভাষ্য, এক দিনের আয়োজনে যে এত লোকের সমাগম হতে পারে, তা চোখে না দেখলে বিশ্বাস করা কঠিন। মেলায় যেন অনৈতিক কর্মকাণ্ড না হয়, সে ব্যাপারে ইউনিয়ন পরিষদের পক্ষ থেকে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।
ক্ষেতলাল থানার ওসি মোহাম্মদ ফরিদ হোসেন বলেন, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে এবং মেলায় আসা দর্শনার্থীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পুলিশ প্রশাসন সতর্ক আছে। মেলায় অনৈতিক আচরণ লক্ষ্য করা গেলে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।