বগুড়া জিলা স্কুলের আরও ১৮টি গাছ কেটে মাত্র ৩৫ হাজারে বিক্রি, কাটা পড়বে আরও
Published: 11th, February 2025 GMT
শত বছরের ঐতিহ্যবাহী বগুড়া জিলা স্কুলের ফটক নির্মাণের জন্য আরও ১৮টি গাছ কাটা হয়েছে। প্রকাশ্য নিলামে এসব গাছের বিক্রিমূল্য দেখানো হয়েছে মাত্র ৩৫ হাজার টাকা। ফটকের সৌন্দর্যবর্ধনে আরও কিছু গাছ কাটা পড়তে পারে বলে জানিয়েছে শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তর। এর আগে নতুন একাডেমিক ভবন নির্মাণের অজুহাতে ৫৫টি গাছ ১ লাখ ১৫ হাজার টাকায় প্রকাশ্য নিলামে বিক্রি করে দেওয়া হয়।
আজ মঙ্গলবার সকালে বগুড়া জিলা স্কুল চত্বরে গিয়ে দেখা যায়, সাতমাথা–সংলগ্ন বিদ্যালয়ের পুরোনো ফটকের জায়গায় নতুন করে অত্যাধুনিক ফটক নির্মাণের তোড়জোড় চলছে। এর আগে ৯ ফেব্রুয়ারি ওই ১৮টি গাছ কাটা শুরু করে কর্তৃপক্ষ।
জিলা স্কুলের প্রাক্তন শিক্ষার্থী ও শিক্ষকদের দেওয়া তথ্যমতে, ওই বিদ্যালয় চত্বরে বিভিন্ন প্রজাতির বহু গাছ আছে। এসব গাছ গত শতাব্দীর ষাট, সত্তর, আশি ও নব্বইয়ের দশকের বিভিন্ন সময়ে রোপণ করা। এ ছাড়া শতবর্ষী কয়েকটি আম ও রেইনট্রিও ছিল।
বগুড়া জিলা স্কুল সূত্রে জানা যায়, বিদ্যালয়ের প্রধান ফটক নির্মাণে ৩০ লাখ টাকা ব্যয় করছে শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তর। ফটক নির্মাণের জন্য ইতিমধ্যে ঠিকাদারকে কার্যাদেশ দেওয়া হয়েছে। নতুন করে ফটক নির্মাণ ও ফটকের দুই পাশে সৌন্দর্যবর্ধনের জন্য শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তর স্থান নির্ধারণ চূড়ান্ত করেছে। শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তরের পছন্দের জায়গায় ফটক নির্মাণে ১৮টি গাছ কেটে ফেলার সিদ্ধান্ত হয়েছে। গত ১৮ ডিসেম্বরে বগুড়া জেলা প্রশাসকের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভায় এসব গাছ প্রকাশ্য নিলামে বিক্রির সিদ্ধান্ত হয়। ২৯ জানুয়ারি নিলাম অনুষ্ঠিত হয়।
মাহমুদা আকতারের ছেলে জিলা স্কুলে অষ্টম শ্রেণিতে পড়ে। বিদ্যালয়ে গাছ নিধনে ক্ষুব্ধ এই অভিভাবক বলেন, ‘এ বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীর সংখ্যা প্রায় দুই হাজার। সন্তানকে বিদ্যালয় থেকে আনা–নেওয়ার জন্য অনেক অভিভাবক সকাল-বিকেল বিদ্যালয়ে অবস্থান করেন। কিন্তু অভিভাবকদের দাঁড়ানোর মতো ব্যবস্থাও নেই। রোদ-বৃষ্টিতে এত দিন ফটকের পাশে গাছের ছায়ায় বসার আসনে বিশ্রাম নিতাম। এখন গাছ কাটার সঙ্গে বসার আসনও থাকছে না।’
বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা) বগুড়া জেলা কমিটির সাধারণ সম্পাদক জিয়াউর রহমান বলেন, কোনো প্রকার মহাপরিকল্পনা ছাড়াই বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ দুই দফায় ৭৩টি গাছ নিধন করেছে। অপরিকল্পিতভাবে যেখানে-সেখানে ভবন নির্মাণের অজুহাতে পরিবেশের বিপর্যয় ডেকে আনছে।
এর আগে গত বছরের এপ্রিল মাসে ৫৫টি গাছ কেটে ফেলায় বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের সমালোচনা করেন প্রাক্তন শিক্ষার্থীরা। ভবন নির্মাণের অজুহাতে গাছ কেটে ফেলায় বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের সমালোচনা করে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তাঁরা প্রতিবাদ জানান। বগুড়া জিলা স্কুল ও সরকারি বালিকা উচ্চবিদ্যালয়ের ফেসবুক গ্রুপে গাছ কাটার সমালোচনা করেন প্রাক্তন ও বর্তমান শিক্ষার্থীরা।
আরও পড়ুনস্কুলের গেট নির্মাণের অজুহাতে কাটা হচ্ছে গাছ১০ ফেব্রুয়ারি ২০২৫বগুড়া জিলা স্কুলের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক ড্যানিয়েল তাহের বলেন, বিদ্যালয়ের প্রধান ফটক নির্মাণের জন্য শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তর ১৮টি গাছ অপসারণের সুপারিশ করে। সে অনুযায়ী বিদ্যালয় পরিচালনা পর্ষদে গাছ কাটার সিদ্ধান্ত হয়। গাছের মূল্য নির্ধারণে বন বিভাগকে চিঠি দেওয়া হয়। বন বিভাগ ১৮টি গাছের মূল্য ৩০ হাজার টাকা নির্ধারণ করে প্রতিবেদন দেয়। প্রকাশ্য নিলামে সর্বোচ্চ ৩৫ হাজার ৫০০ টাকা ডাক ওঠায় তা সর্বসম্মতিক্রমে অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। গাছ কাটার বিষয়ে আইনের কোনো ব্যত্যয় ঘটেনি।
সামাজিক বন বিভাগ বগুড়ার উপবন সংরক্ষক মতলুবর রহমান বলেন, ফটক নির্মাণে গাছ কাটার যৌক্তিকতা ছিল কি না, তা জিলা স্কুল কর্তৃপক্ষ ভালো বলতে পারবে। ১৮টি গাছের মূল্য নির্ধারণে বন বিভাগকে চিঠি দেওয়া হয়েছিল। মেহগনি ছাড়া অন্য প্রজাতির গাছ জ্বালানির কাঠ। প্রজাতি ও গাছের বেড় বিবেচনায় নিয়ে মূল্য নির্ধারণ করা হয়েছে।
শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তর বগুড়ার সহকারী প্রকৌশলী মো.
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ভবন ন র ম ণ বন ব ভ গ ফটক র ন ফটক
এছাড়াও পড়ুন:
জামালপুরে সমাজচ্যুতির ঘটনায় ক্ষমা চাইলেন অভিযুক্ত মাতব্বররা
জামালপুর শহরে সাতটি পরিবারকে সমাজচ্যুত করার ঘটনায় ভুল স্বীকার করে ভুক্তভোগীদের কাছে ক্ষমা চেয়েছেন অভিযুক্ত মাতব্বররা। ঢাকঢোল পিটিয়ে ও মাইকিং করে সমাজচ্যুতির ঘোষণা দেওয়ার দু’দিন পর রোববার রাতে বসে নতুন সালিশ বৈঠক। এতে সেই মাতব্বররা নিজেদের ভুল স্বীকার করে প্রকাশ্যে ক্ষমা চান এবং শান্তিপূর্ণ পরিবেশে একসঙ্গে বসবাসের অঙ্গীকার করেন। পরে মাইকিং করে জানিয়ে দেওয়া হয়, সাতটি পরিবারের বিরুদ্ধে নেওয়া আগের সিদ্ধান্ত বাতিল করা হয়েছে।
পারিবারিক বিরোধের জের ধরে জামালপুর শহরের দাপুনিয়া পশ্চিমপাড়ায় গত শুক্রবার রাতে বসে সালিশ বৈঠক। এতে ঘোষণা করা হয়, ‘মরহুম আজিজুল হক, ইসমাইল হোসেন মৌলভি, মুনসুর মিয়া, মানিক, জানিক, মজিবর ও নান্নুর পরিবারকে সমাজচ্যুত করা হয়েছে। এসব পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে কেউ মেলামেশা, লেনদেন বা সামাজিক সম্পর্ক রাখতে পারবে না। এ নিষেধ অমান্যকারীকেও একঘরে করে দেওয়া হবে।’ পরে মাইকে এলাকাজুড়ে তা প্রচার করা হয়। এতে এলাকায় বেশ চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়।
পরদিন বিকেলে ইসমাইল হোসেন, মুনসুর মিয়াসহ ভুক্তভোগীরা এ ব্যাপারে জামালপুর সদর থানায় অভিযোগ দেন। তারা জানান, পারিবারিক বিরোধের জের ধরে প্রভাবশালীরা সালিশ ডেকে একতরফাভাবে মুনসুর মিয়াকে ৫০ হাজার টাকা জরিমানা করেছিলেন। জরিমানার টাকা না দেওয়ায় সাত পরিবারকে সমাজচ্যুতির ঘোষণা দিয়ে একঘরে করে রাখা হয়েছে।
এই অভিযোগ পেয়ে তৎপর হয় পুলিশ প্রশাসন। রোববার রাত ১০টার দিকে এলাকার গণ্যমান্য ব্যক্তির উপস্থিতিতে সালিশ বৈঠকে এলাকার কয়েকশ মানুষ উপস্থিত ছিলেন।
জামালপুরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) ইয়াহিয়া আল মামুন বলেন, উভয় পক্ষ এলাকায় শান্তিপূর্ণভাবে বসবাসের অঙ্গীকার করেছে। অভিযোগকারীরা তাদের অভিযোগ প্রত্যাহার করে নিয়েছেন।