সাইবার নিরাপত্তা আইনে দায়ের হওয়া স্পিচ অফেন্স–সম্পর্কিত (মুক্তমত প্রকাশের কারণে) ৩৯৬টি মামলার মধ্যে ৩৩২টি ইতিমধ্যে প্রত্যাহার করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন অন্তর্বর্তী সরকারের আইন উপদেষ্টা অধ্যাপক আসিফ নজরুল। তিনি বলেছেন, ফেব্রুয়ারি মাসের শেষে স্পিচ অফেন্স–সম্পর্কিত কোনো মামলা আর আদালতে থাকবে না।

আজ মঙ্গলবার বিকেলে সচিবালয়ে সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান আইন উপদেষ্টা। একই সঙ্গে ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে দায়ের হওয়া গায়েবি মামলা প্রত্যাহারের অগ্রগতির কথাও তুলে ধরেন তিনি।

আইন উপদেষ্টা বলেন, তাঁরা কথা দিয়েছিলেন সাইবার আইনে দায়ের হওয়া শুধু ‘স্পিচ অফেন্স’ সম্পর্কিত মামলাগুলো দ্রুত প্রত্যাহার করা হবে। এ বিষয়ে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি হয়েছে। বিগত সরকারের আমলে দায়ের করা স্পিচ অফেন্স–সম্পর্কিত ৩৯৬টি মামলা বিচারাধীন ছিল। এর মধ্যে আইন মন্ত্রণালয় পাবলিক প্রসিকিউটরদের (সরকারি কৌঁসুলি) মাধ্যমে ৩৩২টি মামলা প্রত্যাহার করা হয়েছে। ৬১টি মামলা প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত হয়েছে। এটি আগামী তিন-চার কার্যদিবসের মধ্যে শেষ হয়ে যাবে।

আসিফ নজরুল বলেন, ফেব্রুয়ারি মাস যখন শেষ হবে, তখন স্পিচ অফেন্স–সম্পর্কিত কোনো মামলা আর সাইবার নিরাপত্তা আদালতে থাকবে না। তবে তিনটি মামলা প্রত্যাহার করা যাবে না। কারণ, সেগুলো উচ্চ আদালতের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী স্থগিত রয়েছে। যাঁদের বিরুদ্ধে অভিযোগ করা হয়েছিল, তাঁরা উচ্চ আদালতে মামলা করেছেন।

‘গায়েবি মামলা’

গায়েবি মামলা প্রত্যাহারের বিষয়ে আইন উপদেষ্টা বলেন, প্রত্যাহারের জন্য সারা দেশ থেকে ১৬ হাজার ৪২৯টি মামলার তালিকা করা হয়েছে। এর মধ্যে ১ হাজার ২১৪টি মামলা এক সপ্তাহের মধ্যে প্রত্যাহার করা হবে। ৫৩টি মামলার গেজেট আজকালের মধ্যে প্রকাশিত হবে।

পাওয়ার অব অ্যাটর্নি বিধিমালায় সংশোধনী

‘পাওয়ার অব অ্যাটর্নি বিধিমালা’ নিয়ে আইন উপদেষ্টা বলেন, ২০১৫ সালের ‘পাওয়ার অব অ্যাটর্নি বিধিমালা’ নিয়ে প্রবাসীরা অনেক অভিযোগ করতেন। বিধিমালা অনুযায়ী, কেউ যদি পাওয়ার অব অ্যাটর্নি (আম মোক্তার নামা) দিতে চাইতেন, তাহলে তাঁর পাসপোর্ট থাকতে হতো। বাংলাদেশ দূতাবাসে পাসপোর্ট জমা দিতে হতো। তা–ও মেয়াদোত্তীর্ণ পাসপোর্ট না; কিন্তু অনেকেই পাসপোর্ট নবায়ন করেন না। আবার প্রবাসীদের সন্তানদের অনেকেই বাংলাদেশি পাসপোর্ট নেন না। ফলে তাঁদের পক্ষে পাওয়ার অব অ্যাটর্নি করতে অনেক জটিলতা হতো। এ নিয়ে সংশ্লিষ্ট অংশীজন ও মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে কথা বলে এই বিধিমালায় সংশোধনী আনা হয়েছে। এখন প্রবাসী বাংলাদেশিদের পাসপোর্ট না থাকলেও তাঁরা পাওয়ার অব অ্যাটর্নি সম্পাদন করতে পারবেন।

আইন উপদেষ্টা বলেন, সংশোধনী বিধিমালার আলোকে বাংলাদেশি পাসপোর্ট না থাকলেও বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত ব্যক্তির পাসপোর্টে ‘নো ভিসা রিকোয়ার স্টিকার’ থাকলে কিংবা তাঁর জন্মসনদ বা জাতীয় পরিচয়পত্র থাকলে তিনি বিদেশ থেকে পাওয়ার অব অ্যাটর্নি সম্পাদন করতে পারবেন। এটি অনেক প্রবাসীর ভোগান্তি লাঘবে ভূমিকা রাখবে বলে মনে করেন তিনি।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: আইন উপদ ষ ট সরক র

এছাড়াও পড়ুন:

মাগুরায় শিশু ধর্ষণ-হত্যা মামলায় সাক্ষ্য ৩ চিকিৎসকের

মাগুরায় আট বছরের শিশু ধর্ষণ ও হত্যা মামলায় চতুর্থ দিনের মতো সাক্ষ্য গ্রহণ সম্পন্ন হয়েছে। গতকাল বুধবার জেলার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারক এম জাহিদ হাসানের আদালতে সাক্ষীদের সাক্ষ্য গ্রহণ করা হয়।

এ দিন শিশুকে চিকিৎসা প্রদানকারী তিন চিকিৎসক সাক্ষ্য দেন। তারা হলেন– মাগুরা ২৫০ শয্যা হাসপাতালের ডা. সোহাস হালদার, নাকিবা সুলতানা এবং ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের  ডা. ইসরাত জাহান। তারা সবাই শিশুটিকে ধর্ষণ করা হয়েছিল মর্মে সাক্ষ্য প্রদান করেন।  

এর আগে সকালে কড়া নিরাপত্তার মধ্যে মামলার ৪ আসামিকে আদালতে হাজির করা হয়। বাদীপক্ষের আইনজীবী ও নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের পিপি মনিরুল ইসলাম মুকুল জানান, বিগত চার কার্যদিবস একটানা সাক্ষ্য গ্রহণ চলেছে। এ নিয়ে মোট ১৯ জনের সাক্ষ্য গ্রহণ করা হয়েছে। মামলায় মোট ৩৭ জনের সাক্ষ্য নেওয়া হবে। আগামী রোববার মামলার তদন্ত কর্মকর্তা বাদে অন্য সব সাক্ষী সাক্ষ্য দেবেন। বুধবার আসামিপক্ষের আইনজীবী স্বাধীনভাবে সাক্ষীদের সাক্ষ্য গ্রহণ করেছেন। তিনি আদালতে আসামিরা নির্দোষ বলে যুক্তি উপস্থাপন করেন। আসামিরাও নিজেদের নির্দোষ দাবি করেছেন। 

বেড়াতে এসে ৬ মার্চ রাতে মাগুরা সদরের নিজনান্দুয়ালী গ্রামে বোনের শ্বশুর হিটু শেখের দ্বারা ধর্ষণের শিকার হয় ৮ বছরের শিশুটি। এই ধর্ষণের ঘটনা দেশজুড়ে ক্ষোভের সৃষ্টি করে। মাগুরা ২৫০ শয্যা হাসপাতাল, ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ঘুরে ঢাকা সিএমএইচে তাকে ভর্তি করা হয়েছিল। ১৩ মার্চ শিশুটি সেখানে মারা যায়। এ ঘটনায় শিশুটির মা আয়েশা আক্তার বড় মেয়ের শ্বশুর হিটু শেখসহ চারজনকে আসামি করে মাগুরা সদর থানায় মামলা করেন। রিমান্ডে হিটু শেখ ধর্ষণের কথা স্বীকার করেছে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ