মতপ্রকাশের কারণে করা মামলাগুলো ফেব্রুয়ারির পর থাকবে না: আইন উপদেষ্টা
Published: 11th, February 2025 GMT
সাইবার নিরাপত্তা আইনে দায়ের হওয়া স্পিচ অফেন্স–সম্পর্কিত (মুক্তমত প্রকাশের কারণে) ৩৯৬টি মামলার মধ্যে ৩৩২টি ইতিমধ্যে প্রত্যাহার করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন অন্তর্বর্তী সরকারের আইন উপদেষ্টা অধ্যাপক আসিফ নজরুল। তিনি বলেছেন, ফেব্রুয়ারি মাসের শেষে স্পিচ অফেন্স–সম্পর্কিত কোনো মামলা আর আদালতে থাকবে না।
আজ মঙ্গলবার বিকেলে সচিবালয়ে সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান আইন উপদেষ্টা। একই সঙ্গে ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে দায়ের হওয়া গায়েবি মামলা প্রত্যাহারের অগ্রগতির কথাও তুলে ধরেন তিনি।
আইন উপদেষ্টা বলেন, তাঁরা কথা দিয়েছিলেন সাইবার আইনে দায়ের হওয়া শুধু ‘স্পিচ অফেন্স’ সম্পর্কিত মামলাগুলো দ্রুত প্রত্যাহার করা হবে। এ বিষয়ে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি হয়েছে। বিগত সরকারের আমলে দায়ের করা স্পিচ অফেন্স–সম্পর্কিত ৩৯৬টি মামলা বিচারাধীন ছিল। এর মধ্যে আইন মন্ত্রণালয় পাবলিক প্রসিকিউটরদের (সরকারি কৌঁসুলি) মাধ্যমে ৩৩২টি মামলা প্রত্যাহার করা হয়েছে। ৬১টি মামলা প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত হয়েছে। এটি আগামী তিন-চার কার্যদিবসের মধ্যে শেষ হয়ে যাবে।
আসিফ নজরুল বলেন, ফেব্রুয়ারি মাস যখন শেষ হবে, তখন স্পিচ অফেন্স–সম্পর্কিত কোনো মামলা আর সাইবার নিরাপত্তা আদালতে থাকবে না। তবে তিনটি মামলা প্রত্যাহার করা যাবে না। কারণ, সেগুলো উচ্চ আদালতের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী স্থগিত রয়েছে। যাঁদের বিরুদ্ধে অভিযোগ করা হয়েছিল, তাঁরা উচ্চ আদালতে মামলা করেছেন।
‘গায়েবি মামলা’
গায়েবি মামলা প্রত্যাহারের বিষয়ে আইন উপদেষ্টা বলেন, প্রত্যাহারের জন্য সারা দেশ থেকে ১৬ হাজার ৪২৯টি মামলার তালিকা করা হয়েছে। এর মধ্যে ১ হাজার ২১৪টি মামলা এক সপ্তাহের মধ্যে প্রত্যাহার করা হবে। ৫৩টি মামলার গেজেট আজকালের মধ্যে প্রকাশিত হবে।
পাওয়ার অব অ্যাটর্নি বিধিমালায় সংশোধনী
‘পাওয়ার অব অ্যাটর্নি বিধিমালা’ নিয়ে আইন উপদেষ্টা বলেন, ২০১৫ সালের ‘পাওয়ার অব অ্যাটর্নি বিধিমালা’ নিয়ে প্রবাসীরা অনেক অভিযোগ করতেন। বিধিমালা অনুযায়ী, কেউ যদি পাওয়ার অব অ্যাটর্নি (আম মোক্তার নামা) দিতে চাইতেন, তাহলে তাঁর পাসপোর্ট থাকতে হতো। বাংলাদেশ দূতাবাসে পাসপোর্ট জমা দিতে হতো। তা–ও মেয়াদোত্তীর্ণ পাসপোর্ট না; কিন্তু অনেকেই পাসপোর্ট নবায়ন করেন না। আবার প্রবাসীদের সন্তানদের অনেকেই বাংলাদেশি পাসপোর্ট নেন না। ফলে তাঁদের পক্ষে পাওয়ার অব অ্যাটর্নি করতে অনেক জটিলতা হতো। এ নিয়ে সংশ্লিষ্ট অংশীজন ও মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে কথা বলে এই বিধিমালায় সংশোধনী আনা হয়েছে। এখন প্রবাসী বাংলাদেশিদের পাসপোর্ট না থাকলেও তাঁরা পাওয়ার অব অ্যাটর্নি সম্পাদন করতে পারবেন।
আইন উপদেষ্টা বলেন, সংশোধনী বিধিমালার আলোকে বাংলাদেশি পাসপোর্ট না থাকলেও বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত ব্যক্তির পাসপোর্টে ‘নো ভিসা রিকোয়ার স্টিকার’ থাকলে কিংবা তাঁর জন্মসনদ বা জাতীয় পরিচয়পত্র থাকলে তিনি বিদেশ থেকে পাওয়ার অব অ্যাটর্নি সম্পাদন করতে পারবেন। এটি অনেক প্রবাসীর ভোগান্তি লাঘবে ভূমিকা রাখবে বলে মনে করেন তিনি।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: আইন উপদ ষ ট সরক র
এছাড়াও পড়ুন:
পাল্টাপাল্টি হামলার তীব্রতা বাড়ল
ইরান ও ইসরায়েলের পাল্টাপাল্টি হামলা ঘিরে আরও অশান্ত হয়ে উঠেছে মধ্যপ্রাচ্য। সময় গড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে হামলার তীব্রতা বাড়াচ্ছে দুই দেশ। ইসরায়েলে গত শনিবার রাতভর ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় অন্তত ১০ জন নিহত হয়েছেন। একই রাতে ইরানের গ্যাসক্ষেত্র ও তেল শোধনাগারে বোমা হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল। এ হামলায় ইরানের কতজন নিহত হয়েছে, তা সুনির্দিষ্টভাবে জানা যায়নি।
গতকাল রোববার ছিল দুই দেশের পাল্টাপাল্টি হামলার তৃতীয় দিন। শনিবার রাতের পর রোববার দিনের বেলায়ও পাল্টাপাল্টি হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল ও ইরান। এদিন ইসরায়েলে ক্ষেপণাস্ত্র হামলার কথা জানিয়েছে ইয়েমেনের সশস্ত্র
গোষ্ঠী হুতি। চলমান সংঘাতে এই প্রথম ইরানপন্থী কোনো গোষ্ঠী যোগ দিল। এমন পরিস্থিতিতে দুই দেশকে শান্ত করার জন্য প্রচেষ্টা শুরু করেছে বিভিন্ন দেশ।
গতকাল রাত একটায় এই প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত ইরান ও ইসরায়েলের মধ্যে পাল্টাপাল্টি হামলা চলছিল। এ রাতেও তেহরানের নিয়াভারান, ভালিয়াসর ও হাফতে তির স্কয়ার এলাকায় বিস্ফোরণের শব্দ শোনা যায়। ইরানের পূর্বাঞ্চলে মাশহাদ বিমানবন্দরে একটি ‘রিফুয়েলিং’ উড়োজাহাজে আঘাত হানার কথা জানায় ইসরায়েলি বাহিনী। এই উড়োজাহাজগুলো আকাশে থাকা অবস্থায় অন্য উড়োজাহাজে জ্বালানি সরবরাহ করতে সক্ষম। ইরান থেকেও ইসরায়েলে ক্ষেপণাস্ত্র ছোড়ার খবর পাওয়া গেছে।
ইসরায়েলে ব্যাপক হামলা ইরানেরইরানের পারমাণবিক অস্ত্র তৈরি ঠেকানোর কথা বলে গত বৃহস্পতিবার রাতে দেশটিতে প্রথমে হামলা চালায় ইসরায়েল। ওই রাতে ইসরায়েলের দুই শতাধিক যুদ্ধবিমান ইরানের ‘পরমাণু ও ক্ষেপণাস্ত্র’ স্থাপনায় আঘাত হানে। শুক্র ও শনিবারও ইরানে হামলা চলে। পাল্টা জবাব দিচ্ছে তেহরানও। তবে ইসরায়েলে শনিবার রাতভর ইরান যে হামলা চালিয়েছে, তা ছিল সবচেয়ে ব্যাপক।
ইসরায়েলে শনিবার প্রথম দফায় ইরানের হামলা শুরু হয় রাত ১১টার পরপর। এ সময় ইসরায়েলের জেরুজালেম ও হাইফা শহরে বেজে ওঠে সাইরেন। হামলায় ক্ষতিগ্রস্ত হয় হাইফায় অবস্থিত তেল শোধনাগার। পরে রাত আড়াইটার দিকে দ্বিতীয় দফায় হামলা শুরু করে ইরান। তখন তেল আবিব ও জেরুজালেমে বিকট বিস্ফোরণের শব্দ শোনা যায়।
ইসরায়েলি সংবাদমাধ্যমগুলো জানিয়েছে, শনিবার রাতে দুই দফায় ৭৫টি ক্ষেপণাস্ত্র ছোড়ে ইরান। প্রথম দফায় ছোড়া হয় ৪০টি। এতে ইসরায়েলের উত্তরাঞ্চলের তামরা শহরে চারজন নিহত হন। দ্বিতীয় দফায় ছোড়া হয় ৩৫টি ক্ষেপণাস্ত্র। এর একটি আঘাত হানে তেল আবিবের কাছে বাত ইয়াম এলাকায়। এতে অন্তত ছয়জন নিহত ও প্রায় ২০০ জন আহত হন। এ ছাড়া রেহভোত শহরে আহত হয়েছেন ৪০ জন।
ইসরায়েলি হামলায় জ্বলছে ইরানের শাহরান তেলের ডিপো। গতকাল দেশটির রাজধানী তেহরানের কাছে।