অন্তর্বর্তী সরকারের সংস্কার কার্যক্রমে বিশ্বব্যাংকের সমর্থন
Published: 11th, February 2025 GMT
বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের সংস্কার কার্যক্রমে বিশ্বব্যাংকের অব্যাহত সমর্থনের প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করেছেন সংস্থাটির ভাইস প্রেসিডেন্ট মার্টিন রেইজার।
মঙ্গলবার (১১ ফেব্রুয়ারি) রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে সাক্ষাৎকালে রেইজার বিশ্বব্যাংকের সমর্থনের প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করেন।
সাক্ষাৎকালে তারা পারস্পরিক বিভিন্ন স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিষয়; দেশের স্বচ্ছতা, সুশাসন ও ডিজিটালাইজেশন সংক্রান্ত বড় ধরনের সংস্কারে বিশ্বব্যাংকের অর্থায়ন, বিশেষ করে কর প্রশাসন নিয়ে উদ্যোগের বিষয়ে আলোচনা করেন।
বিশ্বব্যাংকের ভাইস প্রেসিডেন্ট বলেন, ‘‘বাংলাদেশে স্বচ্ছতা ও সুশাসন উন্নয়নের জন্য আমরা জরুরি কিছু সংস্কার কার্যক্রমে সহায়তা করছি, যার মধ্যে করনীতি ও প্রশাসন, সরকারি ক্রয় ব্যবস্থা এবং পরিসংখ্যান খাতের উন্নয়ন অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।’’
রেইজার বলেন, ‘‘বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক রূপান্তর, ভবিষ্যৎ সরকার ও অন্তর্ভুক্তিমূলক প্রবৃদ্ধির জন্য এ সংস্কারগুলো অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।’’
‘‘এ সংস্কারগুলো জনগণ ও ব্যবসায়ীদের মধ্যে বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠানগুলোর প্রতি আস্থার ভিত্তি গড়ে তুলবে, যা ভবিষ্যৎ অন্তর্ভুক্তিমূলক প্রবৃদ্ধির জন্য সহায়ক হবে।’’ বলেন রেইজার।
তিনি আরো বলেন, ‘‘স্বচ্ছতা ও সুশাসন নিশ্চিত করতে কর প্রশাসন এবং করনীতির পৃথকীকরণ প্রয়োজন।’’
রেইজার আরো বলেন, ‘‘কর অব্যাহতি সংক্রান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়ার একমাত্র ক্ষমতা সংসদের হাতে থাকা উচিত।’’
প্রধান উপদেষ্টা তার সাম্প্রতিক গঠিত ‘ঐকমত্য কমিশন’ সম্পর্কে ব্যাখ্যা করেন, যা রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে ছয়টি বড় কমিশনের সুপারিশকৃত সংস্কারগুলো নিয়ে সংলাপ পরিচালনা করছে।
অধ্যাপক ইউনূস বলেন, ‘‘একবার রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে সংস্কার নিয়ে ঐকমত্য প্রতিষ্ঠিত হলে তারা একটি ‘জুলাই চুক্তি’ স্বাক্ষর করবে, যা প্রথমে অন্তর্বর্তী সরকার এবং পরবর্তীতে নির্বাচিত সরকার বাস্তবায়ন করবে।’’
এ সময় রেইজার সরকারি ক্রয় ব্যবস্থা উন্নয়ন এবং বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর স্বাধীনতার গুরুত্ব তুলে ধরেন, যা সঠিক নীতিনির্ধারণের জন্য মানসম্মত তথ্য নিশ্চিত করতে অপরিহার্য বলে জানান তিনি।
সাক্ষাৎকালে একটি শক্তিশালী ডিজিটালাইজেশন এজেন্ডার গুরুত্ব নিয়েও আলোচনা হয়।
বিশ্বব্যাংকের ভাইস প্রেসিডেন্ট রেইজার বলেন, ‘‘বাংলাদেশের জাতীয় পরিচয়পত্র কার্যক্রমকে আরো উন্নত করতে বিশ্বব্যাংক ঢাকাকে এমন দেশগুলোর সঙ্গে সংযুক্ত করতে সহায়তা করতে পারে, যাদের উন্নত ডিজিটাল আইডেন্টিফিকেশন অবকাঠামো রয়েছে।’’
ঢাকা/হাসান/এনএইচ
.উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর র জন য র ইজ র ত করত সরক র
এছাড়াও পড়ুন:
লন্ডন বৈঠকে বিচার ও সংস্কারের বিষয়টি নির্বাচনের মতো গুরুত্ব না পাওয়া অত্যন্ত হতাশাজনক: এনসিপি
লন্ডনে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের বৈঠকে নির্বাচনের তারিখ সংক্রান্ত আলোচনা যতটুকু গুরুত্ব পেয়েছে, বিচার ও সংস্কার ততটুকু গুরুত্ব পায়নি বলে মনে করে জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)। বিষয়টিকে ‘অত্যন্ত হতাশাজনক’ বলেছে দলটি।
আজ শুক্রবার রাতে এনসিপির এক বিবৃতিতে এই প্রতিক্রিয়া জানানো হয়েছে। এনসিপির যুগ্ম সদস্যসচিব (দপ্তর) সালেহউদ্দিন সিফাত বিবৃতিটি পাঠিয়েছেন।
এনসিপির বিবৃতিতে বলা হয়, রাষ্ট্রকাঠামো সংস্কার প্রশ্নে ঐকমত্য প্রতিষ্ঠার প্রচেষ্টা হিসেবে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সঙ্গে অন্তর্বর্তী সরকারের আলোচনাকে ইতিবাচকভাবে দেখছে এনসিপি। এই প্রচেষ্টার অংশ হিসেবে লন্ডনে অনুষ্ঠিত অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস ও বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের মধ্যকার বৈঠকটি ‘সংসদ নির্বাচন’ বিষয়ে দলটিকে আস্থায় আনতে সফল হয়েছে সরকার। জাতীয় ঐক্য, স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব এবং রাষ্ট্র সংস্কারের প্রশ্নে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে ঐকমত্য প্রতিষ্ঠা জরুরি। কিন্তু বৈঠকে নির্বাচনের তারিখ সংক্রান্ত আলোচনা যতটুকু গুরুত্ব পেয়েছে, অভ্যুত্থান-পরবর্তী বাংলাদেশে নাগরিকদের প্রধান দাবি তথা বিচার ও সংস্কার ততটুকু গুরুত্ব পায়নি। এটা অত্যন্ত হতাশাজনক বলে মনে করে এনসিপি।
নির্বাচন প্রশ্নে সরকার কেবল একটি রাজনৈতিক দলের অবস্থান ও দাবিকেই বেশি প্রাধান্য দিচ্ছে বলে বারবার প্রতীয়মান হচ্ছে—এ কথা উল্লেখ করে এনসিপি আরও বলেছে, জুলাই ঘোষণাপত্র প্রণয়ন, জুলাই সনদ কার্যকর করা এবং বিচারের সুস্পষ্ট রোডম্যাপ ছাড়া জাতীয় সংসদ নির্বাচন আয়োজন গণ-অভ্যুত্থানকে স্রেফ একটি ক্ষমতা হস্তান্তরের মাধ্যমে পরিণত করবে এবং রাষ্ট্র বিনির্মাণের জন–আকাঙ্ক্ষাকে অবদমিত করবে।
জনগণের দাবি তথা জুলাই সনদ রচনা ও কার্যকর করার আগে নির্বাচনের কোনো তারিখ ঘোষিত হলে তা জনগণ মেনে নেবে না বলে উল্লেখ করেছে এনসিপি। তাদের বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘কাজেই রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে সংস্কারের বিষয়গুলোর ব্যাপারে ঐকমত্য প্রতিষ্ঠা ও জুলাই সনদ রচনা এবং কার্যকর করেই আসন্ন জুলাইকে যথাযথ মর্যাদায় স্মরণ করার উদ্যোগ নিতে সরকারকে জোর দাবি জানাচ্ছে এনসিপি।’
জুলাই ঘোষণাপত্র প্রণয়ন, মৌলিক সংস্কার বাস্তবায়নে জুলাই সনদ কার্যকর করা ও বিচারের রোডম্যাপ ঘোষণার পরই নির্বাচন সংক্রান্ত আলোচনা চূড়ান্ত হওয়া উচিত বলেও বিবৃতিতে উল্লেখ করেছে এনসিপি।