খোন্দকার মুহাম্মদ ইকবাল; গ্রামের বাড়ি চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডের বাড়বকুন্ডে। বিসিআইসির আওতাধীন শাহজালাল ফার্টিলাইজার কারখানায় হিসাব বিভাগের প্রধান ছিলেন। তবে চাকরি জীবনে দুর্নীতি, অনিয়ম করে কোটি কোটি টাকা কামিয়েছেন। পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ সিআইডির তদন্তে এখন পর্যন্ত ইকবালের ৩৮ কোটি ৮৩ লাখ ২৭ হাজার ৮৫১ টাকার সম্পদের খোঁজ মিলেছে। দুর্নীতির টাকায় ৯১টি গাড়ি কিনেছেন তিনি। তার মধ্যে ২১টি মিনিবাস রূপপুর পারমানবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রে মাসিক চুক্তিতে ভাড়া দেন। ‘আশিক ট্রেডার্সের’ মাধ্যমে ভাড়ায় বিষয়টি দেখভাল হতো। দীর্ঘ তদন্ত শেষে সিআইডির আবেদনের প্রেক্ষিতে ২৭ জানুয়ারি ইকবালের সম্পদ জব্দ করে রিসিভার নিয়োগের আদেশ দেয় আদালত। সিআইডির দায়িত্বশীল সূত্র থেকে এ তথ্য পাওয়া গেছে।

তদন্ত সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, ইকবাল ও তার স্ত্রী হালিমা আক্তারের নামে একাধিক ফ্ল্যাট, জমি পাওয়া গেছে। তাদের মোট ফ্ল্যাট ৪টি। রমনার মেহজাবীন স্কয়ারে ফ্ল্যাটের আয়তন তিন হাজার ৮৩৫ বর্গফুটের। দক্ষিণখান আইকন ভিলেজে রয়েছে এক হাজার ৫৯৯ বর্গফুটের ফ্ল্যাট। যার দলিল মূল্য দুই কোটি ৯৩ লাখ ৯৩ হাজার চারশত টাকা। রমনায় দুই হাজার ১০৬ বর্গফুট ও এক হাজার ৩৬৮ বর্গফুটের দুই ফ্ল্যাটও আছে। তদন্তে ইকবাল ও তার স্ত্রীর ২৯৯ দশমিক ১ শতাংশ জমির খোঁজ মিলেছে। যার দলিল মূল্য সাত কোটি ১১ লাখ ৫১ হাজার টাকা। তার মধ্যে গাজীপুরের শ্রীপুরে ৬১ শতাংশ। এছাড়া মুন্সীগঞ্জ ও ময়মনসিংহে আছে একাধিক দাগে জমি–জমা। 

সিআইডির সূত্র বলছে–২০০৫ সালে বিসিআইসির প্রকল্প শাহজালাল সার কারখানায় সহকারী হিসাবরক্ষক পদে চাকরি নিয়েছিলেন। সেখানে এক যুগের বেশি সময় তিনি কাজ করেন। ইকবাল তাঁর স্ত্রীর নামে দুটি নামসর্বস্ব কোম্পানি খোলেন। কোম্পানি দুটির নামে বেশ কিছু ভুয়া বিল ও রসিদ জমা দিয়ে ইকবাল শাহজালাল সার কারখানা প্রকল্প থেকে ৩৮ কোটি টাকা তুলে নিয়েছেন বলে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) মামলায় বলা হয়েছে। বিভিন্ন কোম্পানির নামে জালিয়াতির মাধ্যমে বিপুল অর্থ বের করে নিয়েছেন ২০১৩ থেকে ২০১৮ সালের মধ্যে। ২০২৩ সালের এপ্রিলে ইকবাল ও তার স্ত্রী হালিমা আক্তারের বিরুদ্ধে মানিলন্ডারিং আইনে মামলা করে পুলিশ। এ দম্পতির বিরুদ্ধে দুদকের মামলা আছে ১৬টি। ২০২২ সালে র‍্যাব তাদের গ্রেপ্তার করে।   

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: স আইড র তদন ত ইকব ল

এছাড়াও পড়ুন:

সাকিবের পথে হাঁটছেন মিরাজ

সাকিব আল হাসানের সঙ্গে নিজের তুলনাকে মেহেদী হাসান মিরাজ হয়তো উপভোগই করেন। কারণ, তাঁর স্বপ্ন সাকিবের মতো বিশ্বনন্দিত অলরাউন্ডার হয়ে ওঠা। সেই পথে বোধ হয় গুটি গুটি পায়ে এগিয়ে যাচ্ছেন। বিশেষ করে টেস্টে দেশে-বিদেশে সম্প্রতি ভালো করছেন। পাকিস্তানে দারুণ প্রশংসিত ছিলেন অলরাউন্ড পারফরম্যান্স করে। জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে দুই টেস্টের হোম সিরিজে উভয় টেস্টে নিজেকে ছাপিয়ে গেলেন। সিলেটের হারের ম্যাচেও ১০ উইকেট ছিল তাঁর। চট্টগ্রামে সেঞ্চুরি ও পাঁচ উইকেট নিয়ে সাকিব ও সোহাগ গাজীর কাতারে নাম লেখালেন। মূলত মিরাজের অলরাউন্ড নৈপুণ্যে ইনিংস ব্যবধানে টেস্ট জেতা সম্ভব হয়। 

গতকাল শতকের ঘরে যেতে কম কসরত করতে হয়নি তাঁর। নব্বইয়ের ঘরে গিয়ে তো অনিশ্চয়তায় পড়ে গিয়েছিলেন হাসানের আউটের শঙ্কায়। ভাগ্য সুপ্রসন্ন হওয়ায় দ্বিতীয় শতকের দেখা পান তিনি। ২০২১ সালে এই চট্টগ্রামেই ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে প্রথম টেস্ট সেঞ্চুরি ছিল মিরাজের। গতকালের পারফরম্যান্স নিয়ে টাইগার এ অলরাউন্ডার বলেন, ‘ব্যাটিংয়ের সময় চেষ্টা করেছিলাম ২ রান নিয়ে ১০০ রানে যেতে। সেভাবে দৌড় দিয়েছিলাম। কিন্তু ফিল্ডারের হাতে বল চলে গিয়েছিল (হাসি)। তার পর তো আল্লাহর ওপর ছেড়ে দিয়েছিলাম। হাসান অনেক ভালো সাপোর্ট দিয়েছে। তানজিমও ভালো সাপোর্ট দিয়েছে। তাইজুল ভাইও। এই তিনজনকেই অনেক অনেক ধন্যবাদ। কারণ, ওদের জন্যই আমি ১০০ রান করতে পেরেছি।’ 

জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে করা সেঞ্চুরি ও পাঁচ উইকেট প্রাপ্তিকে নিজের সেরা পারফরম্যান্স দাবি মিরাজের, ‘ওয়েস্ট ইন্ডিজের সাথে ১০০ করেছিলাম, ৩ উইকেট নিয়েছিলাম। অল্পের জন্য ৫ উইকেট হয়নি। হলে ভালো লাগত। ওই ম্যাচ হেরেছিলাম এই মাঠে। সে জিনিসটা মাথায় ছিল। ভালো লাগছে ম্যাচটি জিতেছি।’ মিরাজ ১৬২ বলে ১১টি চার ও একটি ছয় মেরে ১০৪ রান করেন। ২১ ওভারে ৩২ রান দিয়ে নেন পাঁচ উইকেট।

টেস্টে এ রকম অলরাউন্ড পারফরম্যান্স বাংলাদেশে আর দু’জনের আছে। সাকিব আল হাসান দু’বার ম্যাচে সেঞ্চুরি ও পাঁচ উইকেট পেয়েছেন ২০১১ সালে পাকিস্তানের বিপক্ষে মিরপুরে আর ২০১৪ সালে খুলনায়। সোহাগ গাজী নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে সেঞ্চুরি ও পাঁচ উইকেট শিকার করেন চট্টগ্রামে। সেই মাইলফলক ছোঁয়া মিরাজকে সম্প্রতি অলরাউন্ডার ক্যাটেগরিতে ফেলা হয়। সাকিবের বিকল্প ভাবা হয় তাঁকে এখন। 

এ ব্যাপারে মিরাজের অভিমত, ‘দেখেন একটা জিনিস, যখন সাকিব ভাই ছিলেন, ভিন্ন রোল ছিল। এখন ভিন্ন রোল। যেহেতু টিম ম্যানেজমেন্ট, সবাই ব্যাটিংয়ে আস্থা রাখে। আমিও ভেবেছি আমার ব্যাটিংটা গুরুত্বপূর্ণ। এখন হয়তো আমি লিডিং রোল প্লে করছি, আগে সাকিব ভাই করত। এখন আমাদের দায়িত্ব আরও বেশি।’ 

সিলেটে দুই ইনিংসে পাঁচ উইকেট করে নিয়েও দলকে জেতাতে পারেননি মিরাজ। চট্টগ্রামে সাদমান, তাইজুলের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে ম্যাচ জয়ের নায়ক হন। এই সাফল্য নিয়ে বলেন, ‘সত্যি কথা বলতে, প্রথম ম্যাচ হারার পর যেভাবে কামব্যাক করেছি, এটা খুবই দরকার ছিল। আমাদের সবাই ভেবেছিল, আমরা ভালো করব।’ মিরাজ কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছেন কোচিং স্টাফ ও সতীর্থের কাছে। আর তাঁর কাছে কৃতজ্ঞতা পুরো দলের।

সম্পর্কিত নিবন্ধ