নির্যাতন, চাঁদা দাবি ও মালামাল লুটের অভিযোগে চট্টগ্রাম নগরের পাহাড়তলী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) বাবুল আজাদসহ চার পুলিশ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে মামলা করেছেন বহিষ্কৃত এক বিএনপি নেতা। আজ মঙ্গলবার চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মো. আলমগীর হোসেনের আদালতে মামলাটি করেন মামুন আলী ওরফে কিং আলী। মামলায় পুলিশ কর্মকর্তা ছাড়াও আরও চারজনকে আসামি করা হয়।

মামলার অন্য আসামিরা হলেন পাহাড়তলী থানার উপপরিদর্শক (এসআই) মানিক ঘোষ, বন্দর থানার উপপরিদর্শক মো.

আসাদুল হক, বাকলিয়া থানার উপপরিদর্শক কিশোর মজুমদার, খাতুনগঞ্জের এসএস ট্রেডিংয়ের স্বত্বাধিকারী সাইফুল ইসলাম, ব্যবস্থাপক আরিফ মঈনুদ্দিন, উপব্যবস্থাপক মোহাম্মদ আমান এবং সুপারভাইজার দিদার হোসেন।

বাদীর আইনজীবী আশরাফুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, থানায় নির্যাতন, চাঁদা দাবি এবং মালামাল লুটের অভিযোগে করা মামলায় বাদীর বক্তব্য গ্রহণ করেছেন আদালত। পরে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি) তদন্তের নির্দেশ দেন।

মামলার অভিযোগে বলা হয়েছে, গত বছরের ১০ অক্টোবর বন্দর থনার জিএইচ এন্টারপ্রাইজ থেকে ২০ হাজার টন পাথর কিনে ৫ কোটি ৬০ লাখ টাকা পরিশোধ করে বাদী পাহাড়তলীর টোল রোডের কিং আলী গ্রুপের ডিপোতে এনে রাখেন। একই বছরের ১৭ অক্টোবর আসামিরা ডিপোর কার্যক্রমে বাধা দেন। প্রতিবাদ করলে পাহাড়তলী থানার এসআই মানিক ঘোষ ওসির সঙ্গে দেখা করতে বলেন। সন্ধ্যায় বাদী ওসির কাছে গেলে পাথর ক্রয়ের রসিদ ও বাদীর সব জায়গার মূল্য ১০০ কোটি টাকা নির্ধারণ করে ১ শতাংশ অর্থাৎ এক কোটি টাকা চাঁদা দাবি করেন। কিন্তু বাদী অসম্মতি জানিয়ে থানা ত্যাগ করেন। ওই দিন রাত ১০টার দিকে এসআই মানিক ঘোষ অতি দ্রুত থানায় গিয়ে চাঁদার টাকা দিতে বলেন। একই সঙ্গে বাদীর করা আগের একটি মামলা থেকে হালিশহর থানার সাবেক ওসি প্রণব চৌধুরীর নাম বাদ দিতে বলেন। তাতে রাজি না হওয়ায় বাদীকে থানায় আটকে অজ্ঞাতনামা তিন পুলিশকে দিয়ে মারধর করেন। এ সময় বাদীকে শ্বাসরুদ্ধ করে হত্যার উদ্দেশ্যে গলা টিপে ধরা হয় এবং সারা রাত নির্যাতন করা হয়। এতে বাদী অজ্ঞান হয়ে পড়েন। পরদিন তাঁকে একটি মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয়। এ ছাড়া আসামিরা বাদীর ডিপোর সামনে ৩০টি ট্রাক নিয়ে কেয়ারটেকারকে মারধর করেন এবং ৫ কোটি ৬০ লাখ টাকার পাথর, মাটি, ১০ লাখ টাকার স্কেলসহ বিভিন্ন মালামাল লুট করে নেন।

গত বছরের ১৬ অক্টোবর পাহাড়তলীর দক্ষিণ কাট্টলী এলাকায় ‘মোহাম্মদ ট্রেডিং’ নামে একটি ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে হামলা, ভাঙচুর, চাঁদা দাবির অভিযোগে বিএনপি নেতা মামুন আলী ওরফে কিং আলীকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। এ ঘটনায় ১৯ অক্টোবর মামুন আলী ওরফে কিং আলীকে নগর বিএনপির সদস্যসহ দল থেকে বহিষ্কার করা হয়।

জানতে চাইলে বাকলিয়া থানার এসআই কিশোর মজুমদার আজ প্রথম আলোকে বলেন, ‘বন্দর থানায় কর্মরত থাকাকালে কিং আলীর বিরুদ্ধে হওয়া একটি মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ছিলাম। ওই মামলায় তদন্তে তথ্য–প্রমাণ পাওয়ায় তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দেওয়া হয়। এই কারণে ক্ষোভ থেকে তিনি মামলা করেন।’ একই বক্তব্য বাকি আসামি পুলিশ কর্মকর্তাদেরও।

তবে এসব অভিযোগ অস্বীকার করে মামুন আলী ওরফে কিং আলী আজ প্রথম আলোকে বলেন, ‘তাঁরা চাঁদা চেয়েছেন। আমাকে মেরে ফেলতে চেয়েছেন। সব প্রমাণ আছে। মূলত হালিশহর–ডবলমুরিং আসন থেকে বিএনপির মনোনয়নপ্রত্যাশী হওয়ায় একটি পক্ষের হয়ে ষড়যন্ত্রমূলকভাবে আমাকে ফাঁসানো হচ্ছে।’

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ম ম ন আল তদন ত ব এনপ

এছাড়াও পড়ুন:

জ্ঞাত আয়বহির্ভূত ৫ কোটি টাকার সম্পদ অর্জনের অভিযোগে আসাদুজ্জামান নূরের বিরুদ্ধে দুদকের মামলা

জ্ঞাত আয়বহির্ভূত প্রায় সাড়ে পাঁচ কোটি টাকার সম্পদ অর্জন ও দেড় শ কোটি টাকার সন্দেহজনক লেনদেনের অভিযোগে সাবেক সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রী ও অভিনেতা আসাদুজ্জামান নূরের বিরুদ্ধে মামলা করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।

আজ বুধবার দুদকের ঢাকা সমন্বিত জেলা কার্যালয়ে সংস্থার উপপরিচালক মো. আজিজুল হক বাদী হয়ে মামলাটি করেন। দুদকের উপপরিচালক (জনসংযোগ) মো. আকতারুল ইসলাম প্রথম আলোকে এ তথ্য নিশ্চিত করেন।

মামলার এজাহারে বলা হয়েছে, আসাদুজ্জামান নূর ক্ষমতার অপব্যবহার করে ৫ কোটি ৩৭ লাখ ১ হাজার ১৯০ টাকার জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জন করেছেন এবং তা নিজের দখলে রেখেছেন। এ ছাড়া আসাদুজ্জামান নূরের নামে থাকা বিভিন্ন ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের ১৯টি হিসাবে ১৫৮ কোটি ৭৮ লাখ ৪৭ হাজার ৮৯৮ টাকার সন্দেহজনক লেনদেন হয়েছে। এই লেনদেনের মাধ্যমে অর্থ স্থানান্তর, রূপান্তর ও হস্তান্তরের অভিযোগ আনা হয়েছে, যা মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ আইন ও দুদক আইনে শাস্তিযোগ্য অপরাধ।

দুদকের অনুসন্ধানে আরও জানা যায়, ২০০৩-০৪ করবর্ষ থেকে ২০২৩-২৪ করবর্ষ পর্যন্ত আসাদুজ্জামান নূরের বৈধ আয় ছিল ৩২ কোটি ৯৬ লাখ ৮৩ হাজার ৬৮৮ টাকা। এ সময়ে তাঁর পারিবারিক ব্যয় ছিল ৯ কোটি ৩২ লাখ ২৫ হাজার ৭৬১ টাকা। সে অনুযায়ী নিট সঞ্চয় দাঁড়ায় ২৩ কোটি ৬৪ লাখ ৫৭ হাজার ৯২৭ টাকা। অথচ তাঁর অর্জিত স্থাবর ও অস্থাবর সম্পদের পরিমাণ ২৯ কোটি ১ লাখ ৫৯ হাজার ১১৭ টাকা। এতে ৫ কোটি ৩৭ লাখ টাকার উৎস পাওয়া যায়নি বলে দুদক জানিয়েছে।

এজাহারে আরও বলা হয়েছে, আসাদুজ্জামান নূরের বিভিন্ন ব্যাংক হিসাবে ৮৫ কোটি ৭২ লাখ ৬৬ হাজার ৫৯৩ টাকা জমা এবং ৭৩ কোটি ৫ লাখ ৮১ হাজার ৩০৫ টাকা উত্তোলন হয়েছে। এসব লেনদেনের উৎস অস্পষ্ট।

২০০১ সালে নীলফামারী-২ আসন থেকে আওয়ামী লীগের মনোনয়নে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন আসাদুজ্জামান নূর। এরপর ২০০৮, ২০১৪, ২০১৮ ও সর্বশেষ ২০২৪ সালের দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনেও তিনি নির্বাচিত হন। ২০১৪ সালে দশম সংসদ নির্বাচনের পর সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রীর দায়িত্ব পান তিনি।

২০২৪ সালের ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর সাবেক মন্ত্রী ও এমপিদের বিরুদ্ধে একে একে মামলা ও গ্রেপ্তার শুরু করে দুদক ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী সংস্থাগুলো। তারই ধারাবাহিকতায় গত ১৫ সেপ্টেম্বর রাতে রাজধানীর বেইলী রোডে নিজ বাসা থেকে আসাদুজ্জামান নূরকে গ্রেপ্তার করা হয়।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • ফারইস্ট লাইফ ইনস্যুরেন্সের সাবেক চেয়ারম্যানসহ ২৪ জনের বিরুদ্ধে দুদকের মামলা
  • জ্ঞাত আয়বহির্ভূত ৫ কোটি টাকার সম্পদ অর্জনের অভিযোগে আসাদুজ্জামান নূরের বিরুদ্ধে দুদকের মামলা