রসুল মণ্ডলের ছিল একটি টগবগে ঘোড়া। শখ করে প্রাণীটির পিঠে বসে বিভিন্ন জায়গায় ঘুরে বেড়াতেন। সেই ঘোড়ায় চড়তেন তাঁর ছেলে মহাসিন মণ্ডলও। বাবার (রসুল) মৃত্যুর পর এবার নিজেই শখের বশে বাড়িতে ঘোড়া লালন-পালন শুরু করেন মহাসিন। পিঠে চড়ে ঘুরে বেড়ানোর পাশাপাশি ঘোড়দৌড় প্রতিযোগিতা ও জমি চাষের কাজে প্রাণীটিকে কাজে লাগানোর চিন্তা করেন তিনি।

প্রথমে নিজের জমি চাষের কাজে ঘোড়াটিকে প্রশিক্ষণ দেন মহাসিন। ধীরে ধীরে অন্যের জমিতে চাষাবাদে ঘোড়া ব্যবহার করে আয় শুরু করেন। সময়ের পরিবর্তনে লাঙল-জোয়াল উধাও হচ্ছে। কিন্তু ঘোড়া দিয়ে জমি চাষের মতো পুরোনো কৌশল ধরে রেখেছেন মহাসিন। তিন দশক ধরে তিনি ঘোড়ার হালে সচল রেখেছেন নিজের সংসারের চাকা।

মহাসিন মণ্ডলের (৬৫) বাড়ি দিনাজপুরের বিরামপুর উপজেলার ১ নম্বর মুকুন্দপুর ইউনিয়নের পটুয়াকোল গ্রামে। সেখানে গিয়ে দেখা যায়, দুটি লাল রঙের ঘোড়া দিয়ে গ্রামের মাঠের এক টুকরা সবজির জমিতে হালচাষ করছেন মহাসিন। জমিটির অবস্থান পাকা সড়কের পাশে। পথচারীরা যাওয়া-আসার পথে মহাসিনের হালচাষ দেখছেন। তাঁদের কেউ কেউ আগ্রহী হয়ে মহাসিনের কাছে নানা কিছু জানতে চাইছেন। স্থানীয় শিশুরা ঘোড়া দেখতে জমির আলপথে কৌতূহল নিয়ে বসে আছে। দীর্ঘদিন ধরে এভাবে ঘোড়া দিয়ে হালচাষের সুবাদে এলাকার মানুষ তাঁকে ‘ঘোড়া মহাসিন’ নামেও চেনেন।

ঘোড়াপ্রীতির বিষয়ে জানতে চাইলে মহাসিন মণ্ডল বলেন, ‘পাকিস্তান আমলে মোর বাপের ঘোড়া আছিলো। ছোটোত থাকিই মুই বাপোক (বাবা) ঘোড়ার পিঠোত চড়ে ঘুরাফিরা করা দেখিছু। বাপের ঘোড়া পালা (পালন) দেখে মুইও ঘোড়া পালা শুরু করিচু। মোর ঘোড়া পালা পিরায় ৩০ বছর হলো।’ একটু থেমে স্মৃতি হাতড়ে আবার বর্ণনা শুরু করলেন মহাসিন, ‘এখন দুটা ঘোড়া দিয়া জমি চাষ করো। ডেইলি সকাল থাকি দুপুর পর্যন্ত ঘোড়া দিয়া তিন বিঘার মতন জমি চাষ হয়। এক বিঘা জমি চাষ করে ৬০০ ট্যাকা ন্যাও। ডেইলি বারো শ থেকে আঠারো শ ট্যাকা ইনকাম হয়। কিন্তু ঘোড়ার তনে আবার দানাদার, ঘাস ও ছোলাবুট খাবার দিবার নাগে। এ্যাতে আড়াই শ থেকে তিন শ ট্যাকা খরচ হয়। ঘোড়া দিয়ে জমি চাষের ইনকাম দিয়ে তিন ব্যাটা আর এক বেটির লেখাপড়া ও বিয়েশাদি দিছু। বাড়িঘর বানাইছু। এই ইনকাম দিয়েই এখন মোর সংসার চলে।’

মুকুন্দপুর ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান আবুল কালাম আজাদ বলেন, মহাসিন দুই যুগের বেশি সময় ধরে ঘোড়া পালছেন। একসময় তিনি ঘোড়া নিয়ে বিভিন্ন এলাকায় ঘোড়দৌড় প্রতিযোগিতায় অংশ নিতেন। এ ছাড়া বিভিন্ন মেলায় গিয়ে ঘোড়া বেচাকেনা করতেন। এখন ঘোড়া দিয়ে এলাকায় জমি চাষ করে জীবিকা নির্বাহ করেন।

বর্তমানে কৃষিক্ষেত্রে আধুনিক যন্ত্রপাতির ব্যবহার বেড়ে যাওয়ায় হালচাষে গরু বা ঘোড়ার মতো প্রাণীর ব্যবহার প্রায় বিলুপ্তির পথে। মহাসিন মণ্ডল ঘোড়া দিয়ে জমি চাষের সনাতন এই পদ্ধতি বাঁচিয়ে রেখেছেন। এর ইতিবাচক দিক জানতে চাইলে মহাসিন বলেন, জমি চাষের জন্য ট্রাক্টর বা পাওয়ারটিলার মাঠের সব জমিতে যেতে পারে না। যেখানে জমিতে যাওয়ার রাস্তা সরু বা ট্রাক্টর যেতে পারে না, সেখানে ঘোড়ার হাল সহজেই নেওয়া যায়। আর চাষের জন্য গরুর চেয়ে ঘোড়ার ব্যবহার তুলনামূলকভাবে সাশ্রয়ী। বর্তমানে জমি চাষের জন্য এক জোড়া গরু কিনতে সর্বনিম্ন ১ লাখ টাকার প্রয়োজন, সেখানে প্রায় ২০ হাজার টাকা দিয়েই এক জোড়া ঘোড়া কেনা যায়। এতে এ পেশায় আয়ও বেশ ভালো হয়।

পটুয়াকোল গ্রামের বাসিন্দা বুলবুল আহমেদ বলেন, গ্রামে তো এখন গরুর হালের সংখ্যা দিন দিন কমে যাচ্ছে। অনেক সময় গ্রামে গরুর হাল পাওয়াই যায় না। এ জন্য গ্রামের বাসিন্দারা মহাসিনের ঘোড়া দিয়ে জমি চাষ করেন। গরু বা ঘোড়ার হাল দিয়ে জমি চাষ করতে একই রকম টাকা লাগে। ঘোড়ার শক্তি তুলনামূলকভাবে বেশি হওয়ায় তাড়াতাড়ি জমির হালচাষ হয়। তাই তাঁরা ঘোড়া দিয়েই জমি চাষ করেন।

এ বিষয়ে বিরামপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কমল কৃষ্ণ রায় প্রথম আলোকে বলেন, ‘বাড়িতে ঘোড়া পালনের পাশাপাশি মহাসিন বাড়তি আয়ের জন্য গ্রামে ব্যতিক্রমধর্মী একটি চাষপদ্ধতিতে কৃষিকাজে সহায়তা করছেন। এটি ভালো দিক। শৌখিনতা কিংবা প্রয়োজন, যেটিই হোক না কেন, তিনি সনাতন চাষপদ্ধতি টিকিয়ে রেখেছেন। খুব শিগগির আমি মহাসিন মণ্ডলের এলাকায় গিয়ে তাঁর সঙ্গে দেখা করব।’

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ব যবহ র র জন য চ ষ কর

এছাড়াও পড়ুন:

অফিসে আপনি কি ১১ ঘণ্টার বেশি কাজ করেন

প্ল্যান ওয়ান জার্নালে প্রকাশিত একটি গবেষণা নিয়ে চলছে আলোচনা। সেখানে দুই হাজার ফুলটাইম কর্মজীবীর ওপর একটা জরিপ পরিচালনা করা হয়। পেশাগত কাজ বা চাপের সঙ্গে মানসিক স্বাস্থ্যের সম্পর্ক নিয়ে পরিচালিত গবেষণাটি থেকে পাওয়া গেছে চমকপ্রদ তথ্য।

বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন, যাঁরা কর্মক্ষেত্রে ১১ ঘণ্টা বা তার বেশি কাজ করেন, তাঁদের খাদ্যাভ্যাস তুলনামূলকভাবে অস্বাস্থ্যকর, তাঁরা অন্যদের তুলনায় মানসিক চাপে ভোগেন বেশি। ঠিকমতো পানি খাওয়ার প্রবণতা কম। পরিবার, প্রকৃতি ও পোষা প্রাণীর সঙ্গে সময় কাটানোর প্রবণতাও কম। কম ঘুমান। আর যেকোনো মানসিক আঘাত থেকে সেরে ওঠার পর্যাপ্ত সময় বা সুযোগ পান না। এই মানুষেরাই বেশি হতাশায় ভোগেন।

শুধু তা-ই নয়, দ্রুত বুড়িয়ে যাওয়া এবং হৃদ্‌রোগ ও স্ট্রোকের মতো কার্ডিওভাস্কুলার রোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকিও বেশি। যাঁরা ১১ ঘণ্টা বা তার বেশি সময় অফিস করেন, তাঁদের মধ্যে কর্মক্ষেত্রে অসুস্থ হয়ে যাওয়ার সংখ্যাও অনেক।

আরও পড়ুন২৫ বছর ধরে অফিসে যাননি তিনি১৩ মার্চ ২০২৫যদি ১১ ঘণ্টা কর্মক্ষেত্রে থাকতেই হয়, তাহলে যেসব বিষয় খেয়াল রাখবেন

রাতে ৮ ঘণ্টা ঘুমাতেই হবে। তাতে শরীর ও মস্তিষ্ক দিনের শারীরিক ও মানসিক পরিশ্রমের ধকল কাটিয়ে ওঠার সুযোগ পাবে।

কাজের ফাঁকে ফাঁকে বিরতি নিন। সবুজের দিকে তাকান। ডেস্কে গাছ রাখতে পারেন। উঠে একটু হাঁটুন। ব্যায়াম করুন। সহকর্মীর সঙ্গে চা খেতে খেতে গল্প করুন। গবেষণা জানাচ্ছে, ছোট ছোট বিরতি কাজে মনোযোগ পুনঃস্থাপন করতে সাহায্য করে এবং কাজের গুণমান বাড়ায়।

দুপুরে খাওয়ার পর একটা ন্যাপ নিতে পারেন।

২ লিটারের একটা বোতলে পানি রাখবেন। প্রতিদিন ১ বোতল পানি অবশ্যই শেষ করবেন। তা ছাড়া পানি, শরবত, জুস, ডাবের পানি, তরমুজ, শসা, আনারস ইত্যাদি খাবেন। হাইড্রেটেড থাকলে এনার্জি ধরে রেখে কাজ করা সহজ হয়।

প্রক্রিয়াজাত খাবার, কার্বোনেটেড ড্রিংক, চিনিযুক্ত খাবার বাদ দিন। এসব কেবল আপনার ক্লান্তি বাড়াবে।

আর সম্ভব হলে কর্মক্ষেত্রে কথা বলে আপনার কর্মঘণ্টা ৮ ঘণ্টায় নিয়ে আসতে পারলে তো কথাই নেই।

সূত্র: এনবিসি নিউজ

আরও পড়ুনঅফিসের বাড়তি কাজকে যেভাবে ‘না’ বলবেন১৩ মার্চ ২০২৫

সম্পর্কিত নিবন্ধ