মৃত্যুর ৫০ বছর পরও উম্মে কুলসুমের গানে মোহিত আরব বিশ্ব
Published: 12th, February 2025 GMT
পৃথিবী ছেড়ে চলে গেছেন ৫০ বছর আগে। দিনটি ছিল ৩ ফেব্রুয়ারি। দুনিয়া ছেড়ে গেলেও হারিয়ে যাননি সংগীতপ্রেমীদের হৃদয় থেকে। আরব বিশ্বের মানুষের মুখে মুখে এখনো তাঁর গান। মিসরের ব্যস্ত সড়কে, ইরাকের পুরোনো ক্যাফেতে এবং মরক্কো থেকে ওমান পর্যন্ত লাখো মানুষের ঘরে ভেসে বেড়ায় তাঁর কণ্ঠ। এখনো তাঁর সুরের মুর্ছনায় মোহিত সংগীতপ্রেমীরা। প্রতিটি গানে, প্রতিটি সুরে তিনি জীবন্ত তাঁদের হৃদয়ে।
যাঁর কণ্ঠ এখনো আরব বিশ্বের মানুষের মনকে উদ্বেলিত করে, তিনি কিংবদন্তি শিল্পী উম্মে কুলসুম। এই গুণী শিল্পীর নামে প্রতিষ্ঠিত কায়রোর এক ক্যাফের ব্যবস্থাপক বার্তা সংস্থা এএফপিকে বললেন, যত দিন মানুষ গান শুনবে, তত দিন উম্মে কুলসুম বেঁচে থাকবেন। এখনো তিনি প্রতিটি গানে, প্রতিটি সুরে বেঁচে আছেন।
কায়রোতে আবু আহমেদের ক্যাফের দেয়ালজুড়ে উম্মে কুলসুমের বিভিন্ন কনসার্টের পোস্টার সাঁটা। পাশাপাশি রয়েছে শিল্পীর সেপিয়া-টোনের অনেক ছবি।
এএফপির প্রতিবেদক যখন ক্যাফের ব্যবস্থাপকের সঙ্গে কথা বলছিলেন, তখনো বেজে চলছিল কিংবদন্তি এই শিল্পীর জনপ্রিয় গান ‘আন্তা ওমরি’ (তুমি আমার জীবন)। ঠিক তখনই পাশের এক টেবিলে বসে চা পান করছিলেন ৩৬ বছর বয়সী আয়াহ খামিস। অন্যদের যাতে মনযোগ নষ্ট না হয়, সে জন্য নিচু স্বরে তিনি বললেন, উম্মে কুলসুম জাতির কণ্ঠস্বর।
এই ক্যাফের বাইরেই ছিল কাঠের একটি স্টল। সেখানে থরে থরে সাজানো উম্মে কুলসুম ও তাঁর অর্কেস্ট্রার ছোট ছোট মূর্তি। তাঁর সংগীতভক্তরা সেখান থেকে কিনে নিচ্ছেন সেগুলো। প্রত্যেকটি শিল্পকর্ম ছিল নিখুঁত। এগুলোর মধ্যে রয়েছে স্যুট পরিহিত সংগীতশিল্পীরা, ঐতিহ্যবাহী বাদ্যযন্ত্র এবং স্কার্ফ ও সানগ্লাস পরিহিত উম্মে কুলসুমের মূর্তি। বিক্রেতা ৩৭ বছর বয়সী শাদি সাঈদ কুলসুমের একটি মূর্তি হাতে তুলে জানালেন, এগুলোই সবচেয়ে বেশি বিক্রি হয়।
ছেলের ছদ্মবেশে
এক হাজার কিলোমিটারেরও বেশি (৬০০ মাইল) দূরে, ঠিক একই কণ্ঠের সুর বাগদাদের উম্মে কুলসুম ক্যাফে থেকেও ভেসে আসছিল। এই ক্যাফেটি ১৯৭০ সালে তাঁর মৃত্যুর পাঁচ বছর আগে চালু হয়েছিল। ৭৬ বছর বয়সে মারা গিয়েছিলেন এই শিল্পী। তাঁর মৃত্যুতে পুরো আরব বিশ্ব শোকে মুহ্যমান হয়ে পড়েছিল।
মিসরের কায়রোতে রাষ্ট্রীয়ভাবে উম্মে কুলসুমের দাফন হয়েছিল। কিন্তু সে সময় কায়রো থেকে বহু দূরে বাগদাদের এই ক্যাফেতে নিজেদের মতো করে তাঁর শোকার্ত ভক্তরা স্মরণসভা করেছিলেন। সেই ভক্তদের একজন ছিলেন ইরাকি প্রকৌশলী ইউসুফ হামাদ। ৭৭ বছর বয়সী এই ব্যক্তি এখন অবসর জীবন কাটাচ্ছেন। তিনি এএফপিকে জানালেন, এখনো প্রতিদিন এই ক্যাফেতে আসেন শুধু উম্মে কুলসুমের কনসার্টের গানগুলো শুনতে। আর এর মধ্য দিয়ে কেটে যায় ঘণ্টার পর ঘণ্টা।
বাগদাদে উম্মে কুলসুমের নামে স্থাপিত একটি ক্যাফে.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: আরব ব শ ব বছর বয়স ক লস ম র এই ক য ফ
এছাড়াও পড়ুন:
সাকিবের পথে হাঁটছেন মিরাজ
সাকিব আল হাসানের সঙ্গে নিজের তুলনাকে মেহেদী হাসান মিরাজ হয়তো উপভোগই করেন। কারণ, তাঁর স্বপ্ন সাকিবের মতো বিশ্বনন্দিত অলরাউন্ডার হয়ে ওঠা। সেই পথে বোধ হয় গুটি গুটি পায়ে এগিয়ে যাচ্ছেন। বিশেষ করে টেস্টে দেশে-বিদেশে সম্প্রতি ভালো করছেন। পাকিস্তানে দারুণ প্রশংসিত ছিলেন অলরাউন্ড পারফরম্যান্স করে। জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে দুই টেস্টের হোম সিরিজে উভয় টেস্টে নিজেকে ছাপিয়ে গেলেন। সিলেটের হারের ম্যাচেও ১০ উইকেট ছিল তাঁর। চট্টগ্রামে সেঞ্চুরি ও পাঁচ উইকেট নিয়ে সাকিব ও সোহাগ গাজীর কাতারে নাম লেখালেন। মূলত মিরাজের অলরাউন্ড নৈপুণ্যে ইনিংস ব্যবধানে টেস্ট জেতা সম্ভব হয়।
গতকাল শতকের ঘরে যেতে কম কসরত করতে হয়নি তাঁর। নব্বইয়ের ঘরে গিয়ে তো অনিশ্চয়তায় পড়ে গিয়েছিলেন হাসানের আউটের শঙ্কায়। ভাগ্য সুপ্রসন্ন হওয়ায় দ্বিতীয় শতকের দেখা পান তিনি। ২০২১ সালে এই চট্টগ্রামেই ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে প্রথম টেস্ট সেঞ্চুরি ছিল মিরাজের। গতকালের পারফরম্যান্স নিয়ে টাইগার এ অলরাউন্ডার বলেন, ‘ব্যাটিংয়ের সময় চেষ্টা করেছিলাম ২ রান নিয়ে ১০০ রানে যেতে। সেভাবে দৌড় দিয়েছিলাম। কিন্তু ফিল্ডারের হাতে বল চলে গিয়েছিল (হাসি)। তার পর তো আল্লাহর ওপর ছেড়ে দিয়েছিলাম। হাসান অনেক ভালো সাপোর্ট দিয়েছে। তানজিমও ভালো সাপোর্ট দিয়েছে। তাইজুল ভাইও। এই তিনজনকেই অনেক অনেক ধন্যবাদ। কারণ, ওদের জন্যই আমি ১০০ রান করতে পেরেছি।’
জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে করা সেঞ্চুরি ও পাঁচ উইকেট প্রাপ্তিকে নিজের সেরা পারফরম্যান্স দাবি মিরাজের, ‘ওয়েস্ট ইন্ডিজের সাথে ১০০ করেছিলাম, ৩ উইকেট নিয়েছিলাম। অল্পের জন্য ৫ উইকেট হয়নি। হলে ভালো লাগত। ওই ম্যাচ হেরেছিলাম এই মাঠে। সে জিনিসটা মাথায় ছিল। ভালো লাগছে ম্যাচটি জিতেছি।’ মিরাজ ১৬২ বলে ১১টি চার ও একটি ছয় মেরে ১০৪ রান করেন। ২১ ওভারে ৩২ রান দিয়ে নেন পাঁচ উইকেট।
টেস্টে এ রকম অলরাউন্ড পারফরম্যান্স বাংলাদেশে আর দু’জনের আছে। সাকিব আল হাসান দু’বার ম্যাচে সেঞ্চুরি ও পাঁচ উইকেট পেয়েছেন ২০১১ সালে পাকিস্তানের বিপক্ষে মিরপুরে আর ২০১৪ সালে খুলনায়। সোহাগ গাজী নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে সেঞ্চুরি ও পাঁচ উইকেট শিকার করেন চট্টগ্রামে। সেই মাইলফলক ছোঁয়া মিরাজকে সম্প্রতি অলরাউন্ডার ক্যাটেগরিতে ফেলা হয়। সাকিবের বিকল্প ভাবা হয় তাঁকে এখন।
এ ব্যাপারে মিরাজের অভিমত, ‘দেখেন একটা জিনিস, যখন সাকিব ভাই ছিলেন, ভিন্ন রোল ছিল। এখন ভিন্ন রোল। যেহেতু টিম ম্যানেজমেন্ট, সবাই ব্যাটিংয়ে আস্থা রাখে। আমিও ভেবেছি আমার ব্যাটিংটা গুরুত্বপূর্ণ। এখন হয়তো আমি লিডিং রোল প্লে করছি, আগে সাকিব ভাই করত। এখন আমাদের দায়িত্ব আরও বেশি।’
সিলেটে দুই ইনিংসে পাঁচ উইকেট করে নিয়েও দলকে জেতাতে পারেননি মিরাজ। চট্টগ্রামে সাদমান, তাইজুলের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে ম্যাচ জয়ের নায়ক হন। এই সাফল্য নিয়ে বলেন, ‘সত্যি কথা বলতে, প্রথম ম্যাচ হারার পর যেভাবে কামব্যাক করেছি, এটা খুবই দরকার ছিল। আমাদের সবাই ভেবেছিল, আমরা ভালো করব।’ মিরাজ কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছেন কোচিং স্টাফ ও সতীর্থের কাছে। আর তাঁর কাছে কৃতজ্ঞতা পুরো দলের।