পৃথিবী ছেড়ে চলে গেছেন ৫০ বছর আগে। দিনটি ছিল ৩ ফেব্রুয়ারি। দুনিয়া ছেড়ে গেলেও হারিয়ে যাননি সংগীতপ্রেমীদের হৃদয় থেকে। আরব বিশ্বের মানুষের মুখে মুখে এখনো তাঁর গান। মিসরের ব্যস্ত সড়কে, ইরাকের পুরোনো ক্যাফেতে এবং মরক্কো থেকে ওমান পর্যন্ত লাখো মানুষের ঘরে ভেসে বেড়ায় তাঁর কণ্ঠ। এখনো তাঁর সুরের মুর্ছনায় মোহিত সংগীতপ্রেমীরা। প্রতিটি গানে, প্রতিটি সুরে তিনি জীবন্ত তাঁদের হৃদয়ে।

যাঁর কণ্ঠ এখনো আরব বিশ্বের মানুষের মনকে উদ্বেলিত করে, তিনি কিংবদন্তি শিল্পী উম্মে কুলসুম। এই গুণী শিল্পীর নামে প্রতিষ্ঠিত কায়রোর এক ক্যাফের ব্যবস্থাপক বার্তা সংস্থা এএফপিকে বললেন, যত দিন মানুষ গান শুনবে, তত দিন উম্মে কুলসুম বেঁচে থাকবেন। এখনো তিনি প্রতিটি গানে, প্রতিটি সুরে বেঁচে আছেন।

কায়রোতে আবু আহমেদের ক্যাফের দেয়ালজুড়ে উম্মে কুলসুমের বিভিন্ন কনসার্টের পোস্টার সাঁটা। পাশাপাশি রয়েছে শিল্পীর সেপিয়া-টোনের অনেক ছবি।

এএফপির প্রতিবেদক যখন ক্যাফের ব্যবস্থাপকের সঙ্গে কথা বলছিলেন, তখনো বেজে চলছিল কিংবদন্তি এই শিল্পীর জনপ্রিয় গান ‘আন্তা ওমরি’ (তুমি আমার জীবন)।  ঠিক তখনই পাশের এক টেবিলে বসে চা পান করছিলেন ৩৬ বছর বয়সী আয়াহ খামিস। অন্যদের যাতে মনযোগ নষ্ট না হয়, সে জন্য নিচু স্বরে তিনি বললেন, উম্মে কুলসুম জাতির কণ্ঠস্বর।

এই ক্যাফের বাইরেই ছিল কাঠের একটি স্টল। সেখানে থরে থরে সাজানো উম্মে কুলসুম ও তাঁর অর্কেস্ট্রার ছোট ছোট মূর্তি। তাঁর সংগীতভক্তরা সেখান থেকে কিনে নিচ্ছেন সেগুলো। প্রত্যেকটি শিল্পকর্ম ছিল নিখুঁত। এগুলোর মধ্যে রয়েছে স্যুট পরিহিত সংগীতশিল্পীরা, ঐতিহ্যবাহী বাদ্যযন্ত্র এবং স্কার্ফ ও সানগ্লাস পরিহিত উম্মে কুলসুমের মূর্তি। বিক্রেতা ৩৭ বছর বয়সী শাদি সাঈদ কুলসুমের একটি মূর্তি হাতে তুলে জানালেন, এগুলোই সবচেয়ে বেশি বিক্রি হয়।

ছেলের ছদ্মবেশে

এক হাজার কিলোমিটারেরও বেশি (৬০০ মাইল) দূরে, ঠিক একই কণ্ঠের সুর বাগদাদের উম্মে কুলসুম ক্যাফে থেকেও ভেসে আসছিল। এই ক্যাফেটি ১৯৭০ সালে তাঁর মৃত্যুর পাঁচ বছর আগে চালু হয়েছিল। ৭৬ বছর বয়সে মারা গিয়েছিলেন এই শিল্পী। তাঁর মৃত্যুতে পুরো আরব বিশ্ব শোকে মুহ্যমান হয়ে পড়েছিল।

মিসরের কায়রোতে রাষ্ট্রীয়ভাবে উম্মে কুলসুমের দাফন হয়েছিল। কিন্তু সে সময় কায়রো থেকে বহু দূরে বাগদাদের এই ক্যাফেতে নিজেদের মতো করে তাঁর শোকার্ত ভক্তরা স্মরণসভা করেছিলেন। সেই ভক্তদের একজন ছিলেন ইরাকি প্রকৌশলী ইউসুফ হামাদ। ৭৭ বছর বয়সী এই ব্যক্তি এখন অবসর জীবন কাটাচ্ছেন। তিনি এএফপিকে জানালেন, এখনো প্রতিদিন এই ক্যাফেতে আসেন শুধু উম্মে কুলসুমের কনসার্টের গানগুলো শুনতে। আর এর মধ্য দিয়ে কেটে যায় ঘণ্টার পর ঘণ্টা।

বাগদাদে উম্মে কুলসুমের নামে স্থাপিত একটি ক্যাফে.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: আরব ব শ ব বছর বয়স ক লস ম র এই ক য ফ

এছাড়াও পড়ুন:

এককালের প্রেম যখন উপেক্ষিত

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প তার পুরনো বন্ধু কিম জং উনের সাথে সাম্প্রতিক এশিয়া সফরে হঠাৎ করেই আলোচনার আশা করেছিলেন। কিন্তু উত্তর কোরিয়ার নেতা কিম জং উন এ ব্যাপারে কোনো সাড়া দেননি। 

ট্রাম্প তার এশিয়া সফরের সময় কিমকে বারবার আমন্ত্রণ জানিয়ে বলেছিলেন,  তিনি বৈঠকের জন্য শতভাগ উন্মুক্ত। এমনকি ট্রাম্প কয়েক দশক ধরে মার্কিন নীতির বিপক্ষে গিয়ে স্বীকার করেছেন যে উত্তর কোরিয়া ‘এক ধরণের পারমাণবিক শক্তিধর।’

কিন্তু পিয়ংইয়ং আমন্ত্রণে চুপ ছিল। এর পরিবর্তে তারা ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষা করেছে এবং রাশিয়া ও বেলারুশে তাদের পররাষ্ট্রমন্ত্রীকে পাঠিয়েছে, যাদের সাথে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে সম্পর্ক আরো গভীর হয়েছে।

হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয় এশিয়া সেন্টারের একজন ভিজিটিং স্কলার সিওং-হিওন লি বলেন, “নিষ্ঠুর বাস্তবতা হল যে কিম জং উনের অংশগ্রহণের কোনো উৎসাহ ছিল না। ওয়াশিংটনের বিশ্বাস করা যে তিনি আসবেন, এটি একটি মৌলিক ভুল হিসাব ছিল।”

লি জানান, ট্রাম্পের বারবার প্রস্তাব উত্তর কোরিয়ার নেতার জন্য একটি ‘বিজয়’ হিসেবে দেখা যায়, যা তাকে এবং তার পারমাণবিক কর্মসূচিকে বিশাল মাত্রার বিশ্বাসযোগ্যতা প্রদান করে।

তিনি বলেন, “প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প কিমকে একটি বিশাল, অপ্রাপ্ত ছাড় দিয়েছেন।”

২০১৯ সালে শেষবারের মতো ডিমিলিটারাইজড জোনের (ডিএমজেড) পানমুনজমে দেখা করেছিলেন ট্রাম্প ও কিম জং উন। ট্রাম্পের নেতৃত্বে পিয়ংইয়ংয়ের সাথে সেই বৈঠকে উত্তর কোরিয়ার পারমাণবিক নিরস্ত্রীকরণ এবং নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের সুযোগের ক্ষেত্রে ব্যর্থ হয়।

তারপর থেকে উত্তর কোরিয়া নিজেকে একটি‘অপরিবর্তনীয়’ পারমাণবিক রাষ্ট্র ঘোষণা করেছে এবং রাশিয়ার সাথে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক তৈরি করেছে, ইউক্রেনের বিরুদ্ধে যুদ্ধে মস্কোকে সমর্থন করার জন্য সেনা পাঠিয়েছে।

মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থা সিআইএ-এর সাবেক বিশ্লেষক সু কিম এএফপিকে বলেছেন, কিম এখন ‘বেশ স্বাচ্ছ্যন্দের জায়গায়’ আছেন।

তিনি বলেন, “রাশিয়ার সমর্থন সম্ভবত আজকাল উত্তর কোরিয়ার কৌশলগত হাতকে শক্তিশালী এবং দৃঢ় করার সবচেয়ে নির্ধারক কারণগুলোর মধ্যে একটি। তিনিই (উন) সর্বোচ্চ ক্ষমতা ধরে রেখেছেন, যার ফলে ট্রাম্পকে আমন্ত্রণ জানানো তার পক্ষে সহজ হয়ে যায়।”

দক্ষিণ কোরিয়া থেকে বাড়ি ফিরে চীনা নেতা শি জিনপিংয়ের সাথে বৈঠকের সময় ট্রাম্প জানিয়েছিলেন, তিনি কিমের সাথে দেখা করার জন্য খুব ‘ব্যস্ত’ ছিলেন।

দৃশ্যটি ২০১৯ সালের থেকে সম্পূর্ণ বিপরীত ছিল, যখন ভিয়েতনামের হ্যানয়ে পারমাণবিক নিরস্ত্রীকরণ এবং নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার আলোচনা নাটকীয়ভাবে ভেঙে পড়েছিল - কিমকে কোনো চুক্তি ছাড়াই পিয়ংইয়ং ফিরে যাওয়ার জন্য দীর্ঘ ট্রেন যাত্রা সহ্য করতে হয়েছিল।

অসলো বিশ্ববিদ্যালয়ের কোরিয়ান স্টাডিজের অধ্যাপক ভ্লাদিমির টিখোনভ এএফপিকে বলেছেন, “অভিজ্ঞতা পিয়ংইয়ংকে বেদনাদায়ক করে তুলেছে। তারা খুব তাড়াহুড়ো করে এগিয়ে যেতে চায় না।” 

তিনি জানান, পিয়ংইয়ং ট্রাম্পের কাছ থেকে আরো সুনির্দিষ্ট প্রস্তাবের জন্য অপেক্ষা করছে, যার মধ্যে রয়েছে আনুষ্ঠানিক কূটনৈতিক স্বীকৃতি এবং পারমাণবিক নিরস্ত্রীকরণ ছাড়াই নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার।
 

ঢাকা/শাহেদ

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • তাঞ্জানিয়ায় নির্বাচনী বিক্ষোভে নিহত ৭০০
  • এককালের প্রেম যখন উপেক্ষিত