রূপগঞ্জে সদর ইউনিয়নের বাড়িয়া ছনি এলাকায়  আদালতের নিষেধাজ্ঞা  অমান্য করে  জোরপূর্বক  মসজিদ ও কবরস্থানের জায়গা জোর পূর্বক দখল করে স্থাপনা  নির্মাণের অভিযোগ পাওয়া গেছে। এ নিয়ে এলাকায় তীব্র ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। যে কোনো বড় ধরণের নাশকতার আশংকা করছেন স্থানীয়রা। 

জানাগেছে, রূপগঞ্জ সদর ইউনিয়নের টেকনোয়াদ্দা এলাকার বাসিন্দা রফিকুল ইসলাম লিটন তার পৈত্রিক ও ক্রয়কৃত জমি (টেকনোয়াদ্দা মৌজার ১০৯, ১১০ নং সিএস ও এসএ দাগের   আরএস ১৩০, ১৩১ নং দাগের) ১৬ শতাংশের মধ্যে ১০ শতাংশ মসজিদ ও কবরস্থানের জন্য দান করেন। বাকি ৬ শতাংশ নিজে ভোগ দখল করে আসছেন। 

এরমধ্যে সালফারাজ ও তার লোকজন ওই জমিটি দখলের জন্য স্থাপনা নির্মানসহ নানাভাবে পায়তারা করলে রফিকুল ইসলাম লিটন বাদী হয়ে সিরাজুল ইসলাম, সালফারাজ, আলী রাজ, রাজিব ও রাজিবকে বিবাদী করে আদালতে পিটিশন মামলা দায়ের করেন। যার নং-১০৬/২০২৫ইং। মামলা দায়েরের পর আদালত শান্তিশৃঙ্খলা বজায় রাখার জন্য ১৪৫ ধারা জারি করেন। 

এদিকে আদালতের আদেশের পর সালফারাজ ও তার লোকজন আরও বেপোরোয়া হয়ে মসজিদ ও রফিকুল ইসলাম লিটনের ব্যক্তিগত জায়গায় স্থাপনা নির্মাণ কাজ শুরু করে। এরপর থেকে ওই এলাকায় স্থানীয়দের মধ্যে চরম ক্ষোভের সৃষ্টি হয়।

এ নিয়ে ত্রিপক্ষীয় সংঘর্ষের পরিস্থিতি হলে খবর পেয়ে রূপগঞ্জ থানা পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে কথা বলে পরিস্থিতি স্বাভাবিক করেন এবং নির্মাণ কাজ বন্ধ করে দেন। 

এরপর পুলিশ চলে যাওয়ার পর পুনরায় সালফারাজ ও তার লোকজন নির্মাণ কাজ শুরু করেন। এদিকে আদালতের নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করে কাজ করায় যে কোনো সময় বড় ধরণের নাশকতার আশংকা করছেন স্থানীয় জন সাধারণ।   

এ বিষয়ে রফিকুল ইসলাম লিটন জানান, আমার পৈতিক ও ক্রয়কৃত সম্পদের উপর আদালত থেকে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছিলাম কিন্তু ওই সন্ত্রাসীরা জোরপূর্বক দখল করে বাড়ি নির্মাণ করছেন আমি তাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানাচ্ছি।

অভিযুক্ত সালফারাজ জানান, আদালত থেকে যে আদেশ আসছে আমরা অবগত আছি, তবে এই জমি আমাদের না।

ঘটনাস্থলে যাওয়া রুপগঞ্জ থানা পুলিশের তদন্তকারী কর্মকর্তা এস আই হাসান মাতুব্বর জানান, আদালতের আদেশ তামিল করতে গেলে উত্তপ্ত পরিস্থিতির সৃষ্টি হলে আমরা সকলকে বুজিয়ে চলে আসি।  পরদিন এই আদেশ তামিল করি। আদালতের আদেশ অমান্য করলে কাউকে ছাড় নয়। অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা নেয়া হবে। 

.

উৎস: Narayanganj Times

কীওয়ার্ড: র পগঞ জ ন র য়ণগঞ জ র পগঞ জ মসজ দ ও

এছাড়াও পড়ুন:

দুই বন্ধু ও দুটি স্বপ্নের বিদায় 

উত্তরার ১৭ নম্বর সেক্টরের ৬ নম্বর অ্যাভিনিউতে বিজিএমইএ ভবন। রপ্তানিমুখী তৈরি পোশাকশিল্প প্রতিষ্ঠান টিম গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আবদুল্লাহ হিল রাকিবের জানাজায় শোকাবহ পরিবেশ। প্রিয় মানুষকে চিরবিদায় জানাতে এসেছেন দীর্ঘদিনের সহকর্মী, বন্ধু, পরিবারের সদস্য ও পরিচিতজন। শোক ও অশ্রুতে তারা রাকিবকে নিয়ে স্মৃতিচারণ করছিলেন। রাকিবের অসমাপ্ত কাজ ও স্বপ্ন এগিয়ে নেওয়ার অঙ্গীকার করেন সহকর্মীরা। 

৯ জুন কানাডায় একটি লেকে ভ্রমণের সময় নৌকাডুবে মারা যান আবদুল্লাহ হিল রাকিব ও তাঁর বন্ধু বাংলাদেশ বিমানের ক্যাপ্টেন মো. সাইফুজ্জামান। কানাডায় বিশ্ববিদ্যালয়পড়ুয়া মেয়ের সঙ্গে সাইফুজ্জামান ঈদের ছুটি কাটাতে স্ত্রী ও আরেক মেয়েকে নিয়ে গিয়েছিলেন। সেখানে বন্ধু ব্যবসায়ী রাকিব ও তাঁর ছেলের সঙ্গে একটি লেকে ঘুরতে গিয়েছিলেন। অন্টারিও প্রদেশের স্টারজিয়ন লেকে ক্যানুতে (সরু লম্বা ছোট্ট নৌকা) চড়ে ভ্রমণে বের হন। নৌকাটি উল্টে গেলে পানিতে ডুবে প্রাণ হারান দু’জন। বিদেশের মাটিতে একসঙ্গে দুই বন্ধুর মৃত্যু, একই ফ্লাইটে ফেরা, দেশে ফিরে একই কবরস্থানে শেষ শয্যা! 

অশ্রুসজল চোখে রাকিবের কানাডাপ্রবাসী মেয়ে লামিয়া তাবাসসুম বলেন, ‘বাবা স্বপ্ন দেখতেন, দেখাতেন। তিনি যেসব স্বপ্ন আমাদের দেখিয়েছেন, যেসব কাজ রেখে গেছেন, আমরা যেন সুন্দরভাবে তা বাস্তবায়ন করতে পারি। পরিবারের সঙ্গে ঈদের আনন্দ ভাগাভাগি করতে কানাডায় গিয়েছিলেন বাবা।’ 

রাকিব ও সাইফুজ্জামান ঘনিষ্ঠ বন্ধু ছিলেন। তাদের মরদেহ বিমানের একই ফ্লাইটে শুক্রবার রাতে ঢাকায় আনা হয়। জানাজা শেষে ঢাকায় বিমানবাহিনীর কবরস্থানে দু’জনকে সমাহিত করা হয়। তাদের সহকর্মী ও বন্ধুরা বলছেন, এর মধ্য দিয়ে অকালে দুটি স্বপ্ন বিদায় নিল। 

রাকিবের সহকর্মীরা বলেন, বাংলাদেশের তৈরি পোশাক পণ্য রপ্তানিকে ১০০ বিলিয়ন বা ১০ হাজার কোটি ডলারে উন্নীত করার স্বপ্ন দেখতেন রাকিব। তারা সেই স্বপ্ন বাস্তবায়নে সর্বাত্মক সহায়তা করবেন বলে জানান। 

উত্তরায় জানাজার আগে বিজিএমইএর সাবেক সভাপতি ফারুক হাসান বলেন, ‘আবদুল্লাহ হিল রাকিবের সঙ্গে বেশ কয়েক বছর কাজ করেছি। সব সময়ই দেখেছি, তিনি নিজের পরিবার, বন্ধু, ব্যবসা ও বিজিএমইএকে সমান অগ্রাধিকার দিয়েছেন। তৈরি পোশাকশিল্প খাতের যে কোনো সমস্যা ও চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় তিনি সামনে চলে যেতেন। রাকিবের দর্শন ছিল– সফলতার মাত্রা নেই। তবে একজন ব্যক্তি কতটা সফল, সেটি তাঁর কর্মযজ্ঞ দেখলে বোঝা যায়।’ 

বিজিএমইএর সাবেক সভাপতি এস এম ফজলুল হক বলেন, রাকিব উজ্জ্বল প্রদীপ। স্বপ্ন ছিল অনেক। ঝোড়ো হাওয়ায় সেই প্রদীপ নিভে গেছে। সবাই তাঁর জন্য দোয়া করবেন। 

রাকিবের জন্য সবার কাছে দোয়া চান বিজিএমইএর সর্বশেষ নির্বাচনে বিজয়ী রাইজিং ফ্যাশনসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মাহমুদ হাসান খান। স্মৃতিচারণা করে বক্তব্য দেন রাকিবের বড় ভাই আবদুল্লাহ হিল নকীব। 

ক্যাপ্টেন সাইফুজ্জামানের সহকর্মীরা জানান, শুক্রবার তাঁর মরদেহ কানাডা থেকে ঢাকায় আনার সময় তাঁর সঙ্গে স্ত্রী, দুই মেয়ে, বোন এবং ভগ্নিপতি ছিলেন। মরদেহ পৌঁছার পর উপস্থিত পাইলটরা সহকর্মীর মরদেহে স্যালুট দেন। এর পর বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স ও পাইলটস অ্যাসোসিয়েশনের পক্ষ থেকে কফিনে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানানো হয়। পরে মরদেহ ঢাকার সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালের (সিএমএইচ) মর্গে রাখা হয়। সেখান থেকে মরদেহ নেওয়া হয় তাঁর বনানীর ডিওএইচএসের বাসায়। বেলা ১১টার দিকে বাংলাদেশ বিমানবাহিনীর ঘাঁটি বাশারের কেন্দ্রীয় মসজিদে জানাজা হয়। সাবেক বিমানবাহিনী প্রধান এয়ার মার্শাল মোহাম্মদ ইনামুল বারীসহ পাইলট, কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা এতে অংশ নেন। পরে জোহরের নামাজ শেষে ডিওএইচএস মাঠে একসঙ্গে ক্যাপ্টেন সাইফুজ্জামান ও রাকিবের জানাজা হয়। সাইফুজ্জামানকে বাবা-মায়ের কবরের পাশে দাফন করা হয়। একই কবরস্থানে দাফন করা হয় রাকিবকে। তাঁর বাবা বিমানবাহিনীর সদস্য ছিলেন। 
 

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • পাশাপাশি খোঁড়া হচ্ছে মা-ছেলের কবর, সেই দৃশ্য কাঁদাচ্ছে এলাকার মানুষকে
  • দুই বন্ধু ও দুটি স্বপ্নের বিদায় 
  • সরকারি হিসাবের চেয়ে করোনায় মৃত্যু ছিল বেশি
  • দেশে ফিরেছে ব্যবসায়ী রাকিব ও পাইলট সাইফুজ্জামানের মরদেহ